Yamaha FZS V3 রিভিউ | ১২,০০ কিলোমিটার রাইডিং অভিজ্ঞতা - Asif Khan Surjo

This page was last updated on 10-Oct-2023 02:05am , By Ashik Mahmud Bangla

অনেকদিন ধরেই Yamaha FZS V3 এর রিভিউ লিখব করেও দেওয়া হয়না। আজ ছোট করে লিখেই ফেললাম আমার চালানো Yamaha FZS V3 নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা। ব্যাক্তিগত ভাবে আমার কাছে ঠিক যা যেমন লেগেছে আমি তেমন ভাবেই তুলে ধরছি যা অন্য সবার সাথে ভিন্নতা থাকতেও পারে।

  yamaha fzs v3 abs user review

আসা যাক প্রথমে Yamaha FZS V3 বাইকটির পজিটিভ সাইড গুলো নিয়েঃ

ব্যালেন্সঃ বরাবর Yamaha ব্যালেন্সের জন্য সবচেয়ে এগিয়ে। এই বাজেটে বাজারে যত গুলো বাইক রয়েছে, আমার মনে হয় সবচেয়ে ভালো মানের ব্যালেন্স এই বাইক টি তে দেয়া হয়েছে । ঢাকা সিটি রাইড বা হাইওয়েতে আপনি এই বাইকের ব্যালেন্সের সত্যিই প্রেমে পড়বেন যা সেই ২০০৯ থেকে এফজেড সিরিজে দিয়ে আসছে।  যদি ১০ এর মধ্যে ব্যালেন্সিং এ এই বাইকের রেটিং করি তাহলে মার্ক ১০/১০। 

Also Read: Yamaha FZS Vs Honda CB Trigger Comparison

ব্রেকিংঃ এই বাইকটি কাস্টমারদের কাছে জনপ্রিয় হওয়ার মুল কারন হচ্ছে ব্রেকিং। বরাবর এফজেড সিরিজ ব্রেকিং এ সেরা আর এবার সেই সেরার মধ্যে যোগ হয়েছে সেরা ব্রেকিং সিস্টেম এবিএস। তাই এক কথায় বলাই যায় এই বাজেটে সেরা ব্রেকিং সিস্টেমের বাইক বাংলাদেশে Fzs V3। যদি ব্রেকিং এর মার্ক করি সেইক্ষেত্রে এর ব্রেকিং এর মার্ক ১০/১০। 

yamaha fzs fi v3 abs user review

স্মুথনেসঃ বাইক যখন টপ গিয়ারে ৬০ স্পিডে চলে তখন সত্যিই বোঝাই যায়না যে বাইক চলছে। যদি এই বাজেটে যে কোনো বাইকের সাথে তুলনা করেন স্মুথনেসের দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে । স্মুথনেসের দিক থেকেও এই বাইকের রেটিং ১০/১০ । 

কমফোর্টনেসঃ যেহেতু ব্যালেন্স, ব্রেকিং এ এগিয়ে রয়েছে সেহেতু বাইকের এজ ইউজাল কমফোর্ট লেভেল বেটার হবে এটাই নরমাল । এর মধ্যে তুলনামুলক বাইকটা অনেক স্মুথ যার ফলে আপনি রাইড করে খুবই কমফোর্ট ফিল করবেন। তাছাড়া এর হ্যান্ডেল বারটা কিছুটা আগের এফজেডের তুলনায় আপরাইড পজিশনে আছে আর তার সাথে ম্যাচ করেই খুব পারফেক্ট একটা সিটিং পজিশন। যার ফলে লং রাইডে আপনি আরো ইজি ফিল করবেন।

  yamaha fzs v3 ownership review

 এছাড়াও একটা বাইকের শকাপ খুবই জরুরী একটা এলিমেন্ট। আমাদের দেশের রোড কন্ডিশনের কথা চিন্তা করলে এইধরনের শকাপ দিয়ে ভাংগা রাস্তায় চালালে খুব অনেকটাই ঝাকি কম লাগে আর কমফোর্টেবল। তাই এক কথায় বলাই যায় ব্যালেন্স, ব্রেকিং, হেন্ডেলবার এন্ড সিটিং পজিশনের কম্বিনেশন আর পিছনের সুন্দর মনোশকের কারনে বাইকটি একটি কমফোর্টের প্যাকেজ হিসেবে তৈরি হয়েছে। তাই এর রেটিং-ও আমার কাছে ১০/১০। 

Also Read: আমার মোটরসাইকেল রাইডিং অভিজ্ঞতা

পিলিয়ন সিটঃ তুলনামুলক ভাবে পিলিয়ন সিট অনেক বড় আর কমফোর্টেবল লাগে বসতে। এটাকে কোনো রেটিং এ ফেললাম না কারন এখানে এক এক জনের চয়েজ এক এক রকম। কিন্তু আমার ভালো লেগেছে। 

মাইলেজঃ এই সেগমেন্টে ফুয়েল ইঞ্জেকশন বাইক হিসেবে এক্সপেক্টেড মাইলেজ পেয়েছি। ঢাকার মধ্যে স্মুথ ভাবে চালালে ৩৭-৪০ এর মধ্যে থাকে। আর রাফ চালালে ৩২ থেকে ৩৫ এর মধ্যে থাকে। মাইলেজ রেটিং ৯/১০। 

yamaha motorycle price in Banglaesh 

বাইকে অনেক গুলোই ডিজিটাল সেন্সর আপডেট করা হয়েছে আর মিটার সম্পূর্ণ ডিজিটাল। এটা একটা ভালো দিক বলা যায়।

এবার আসি Yamaha FZS V3 বাইকটির নেগেটিভ সাইড নিয়েঃ

স্পিডিংঃ স্মুথ আর মাইলেজ বাড়াতে গিয়ে বাইকটার স্পিডিং অনেক টাই পিছিয়ে। এই সেগমেন্টের কোনো বাইকের সাথেই রেডি পিকাপে পেরে উঠবে বলে আমার মনে হয়না । প্রায় ৩ লাখ টাকার একটা বাইকে স্পিডিং টা এক্সপেক্টশন থাকে। ৯০ এর পরে গেলেই বাইক স্ট্রাগল করে। তবে হালকা ওজনের কেউ একটু দেড়িতে হলেও ১১৫-১১৮ টপ স্পিড পাবেন। তবে রেডি পিকাপে ১১০ সিসি অনেক বাইকের সাথে পারা কষ্টকর হয়ে যাবে এজ লাইক টিভিএস ফনিক্স এই ধরনের বাইক গুলো। তাই এর স্পিডিং রেটিং আমার মতে ৫/১০। 

হেডলাইটঃ যদিও সুন্দর শেপ করা LED তবুও হেডলাইটের আলো আমার কাছে খুব কম লেগেছে। হাইওয়েতে চালালে অনেকটা মোমবাতির মতো ফিল হয়। এক্সট্রা লাইট ছাড়া হাইওয়েতে চালানো প্রায় অসম্ভব । এর রেটিং ৩/১০। 

গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্সঃ বাইক তুলনামুলক ভাবে অনেক লো। ঢাকায় মাঝারি মানের স্পিড ব্রেকারে নিচে ঘষা খেয়ে যায়। এটা খুব পেইনফুল একটা জিনিস। yamaha fzs v3 price in bangladesh 2019 

বাম্পারের রং উঠে গেসে কয়েক জায়গায় অযথাই কোনো কারন ছাড়া। এতো দামী একটা বাইকে এমন নিন্মমানের বাম্পার কাম্য নয়। যদিও এটা কম্পানি বানায় না, থার্ড পার্টি মেক করে। তারপরেও এই রেঞ্জের বাইকে এটা যায়না। এই রেঞ্জের অন্যান্য বাইকের তুলনায় বাইকটা সামনের দিকে হ্যান্ডেল বার আর বাম্পারের কারনে বেশি জায়গা নেয়। তাই জ্যামের মধ্যে প্রায়ই চালানোতে কিছু টা পেইন লাগে। 

২ লাখ ৯৫ হাজার এই প্রাইজ টা কিছুটা বেশি মনে হয়েছে আমার কাছে। কিছুটা কম হলে বাইক হিসেবে অনেক ভালো হতো। যদিও Yamaha এর বাইক গুলোর বরাবরই দাম বেশি আর তারা স্টুডেন্ট অফার, ক্যাশ ব্যাক অফার সহ ভিন্ন ভিন্ন রাস্তায় ৫-১৫ হাজার টাকার ডিস্কাউন্ট দিয়েছে । তবে তারপরেও আমার কাছে কিছুটা ওভার প্রাইজিং মনে হয়েছে।

Yamaha Motorcycle Price BD

বাইকের সামনের দিকের লুক খুবই সুন্দর। তবে পিছনের শেপটা আমার কাছে অনেক টাই পুরাতন লেগেছে। যদিও আসলে লুক এক এক জনের কাছে এক এক রকম।

Yamaha FZS V3 First Impression Review

পরিশেষে বলতে চাই একটা বাইকে সবকিছু ১০০% থাকে না । ব্রান্ডেড প্রতিটা বাইক তার জায়গা থেকে ভালো ভালো জিনিস অফার করে। কেউ আপনাকে মাইলেজ দিবে, কেউ আপনাকে লুকস দিবে, কেউ স্পিড । আপনার বুঝতে হবে আপনি ঠিক কোনটা চান । সেই হিসেবেই বাইক কিনুন । এজ লাইক আমি এই বাইকের কাছ থেকে টান বা স্পিড আশা করি না । তাহলে TVS Apache RTR 4V  নিতাম অথবা সুজুকি জিক্সার। 

যাদের এক্সপেকটেশন স্পিডিং তাদের জন্য এই বাইক সুইটেবল না। আমার দরকার ছিলো স্মুথনেস, ব্রেকিং, ব্যালেন্স, কমফোর্ট তাই আমি এই বাইকটি নিয়েছি। ঠিক তেমনি আপনার এক্সপেকটেশন বুঝে যেটা আপনার জন্য সুইটেবল সেটিই নিবেন। Yamaha Fzs V3 এর ব্যাপারে সব মিলিয়ে বলতে গেলে আমার ভালো লেগেছে। চালিয়ে আরামদায়ক আর ট্যুরের ক্ষেত্রে সুইটেবল একটি বাইক।

  fzs v3 user review bikebd 

আপাদত এই ছিলো আমার ১২০০ কিলোমিটার চালানো পর, নিজের Yamaha FZS V3 সম্পর্কে আমার অভিজ্ঞতা । উপরোক্ত সবকিছু আমার ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা যা কেউর সাথে নাও মিলতে পারে। তবে আমার মনে হয় যত টুকু সম্ভব আমি আমার জায়গা থেকে অনেস্টলি একটা ইউজার রিভিউ আমার যা জ্ঞান আছে তা থেকে দিতে পেরেছি। পরেরবার হয়তো অন্য কিছু নিয়ে বলবো। সাবধানে বাইক চালাবেন আর অবশ্যই হেলমেট পড়বেন । ধন্যবাদ ।  

 লিখেছেন - Asif Khan Surjo   

আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। 


মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।