Yamaha FZS Fi V3 ৫২০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ - এরফান চৌধুরী
This page was last updated on 31-Jul-2024 12:48pm , By Ashik Mahmud Bangla
আমি এফরান চৌধুরী । বাংলাদেশের সুপরিচিত হাওড় অঞ্চল কিশোরগঞ্জের বাসিন্দা। আজ আমি আপনাদের আমার নতুন Yamaha FZS Fi V3 বাইকটি নিয়ে ৫০০০কিলোমিটার রাইড করার পর বাইকটি সম্পর্কে কিছু কথা শেয়ার করবো ।
ছোটবেলা থেকেই বাড়ির পাশের রাস্তায় Yamaha RX 100 এর শব্দ শুনে শুনে বেড়ে উঠা । বাবা বা নিকট আত্মীয়ের কারও বাইক না থাকায় সেই ভাবে চালানোর সুযোগ হয়ে উঠেনি। তার ফলে নিজে প্রথম বাইক চালানো শিখি ২০১৬ সালে। বলে রাখা ভলো বাইক চালানো শেখার আগ পর্যন্ত যানবাহন হিসেবে বাইকে আমার সবচেয়ে বিপদজনক পরিবহন মনে হত। পারিবারিক কোন প্রাইভেট কার না থাকায় বিদেশে ও দেশে উবার পাঠাও এর কল্যানে চার চাকায় চড়া হয় অনেক।
প্রথম দিকে একটা চার চাকার অভাব অনুভব করলেও পাঠাও এর বাইকে চড়ে জীবনের অনেক বড় ধরনের পরিবর্তন লক্ষ্য করি । চার চাকার বন্ধ জানালার ভিতর শুধু আভিজাত্য থাকে । জীবন ছুটে চলে বাইকের দু’চাকায়। ২০১৯ এ গ্রেজুয়েশন শেষ করে আসার পর কয়েকজন বন্ধুর সাথ বাইকে ঘুরতে গিয়েছিলাম। উল্লেখ্য যে বন্ধুদের সাথে বাইকে ঘুরতে আমার অনেক পছন্দ আগে থেকেই । সেদিনই প্রথম Yamaha Fazer version 2 চালাই ।
বৃষ্টি ভেজা সেই দিনে নিজের একটা বইক হবে স্বপ্ন বুনতে থাকি । ব্যক্তিগতভাবে আমি টাকা বেশি দিয়ে হলেও ভালো প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে পছন্দ করি । ছোট বেলা থেকে Yamaha দেখে বড় হওয়া, ব্যবহারকারীদের মুখ থেকে সন্তুষ্টতার কথা শুনে এই ব্র্যান্ডের প্রতি একটা বড় আস্থার জায়গা তৈরী হয়ে যায় । আর ঐদিন Yamaha Fazer চালানোর পর মনে হলো যে আর যাই হোক Yamaha ই কিনবো ।
আমি খুব সিম্পল থাকতে পছন্দ করি । তাই কিট সহ বাইক আমার কখনই পছন্দ ছিলো না। তাই FZS ই আমার ব্যক্তিগত পছন্দ ছিলো । তখনকার বাজারে FZS এর V3 launch হয়েছে বেশিদিন হয়নি । বাইকটির মাস্কিউলার ফুয়েল ট্যাংকের সাথে ছোট হেডলাইটের সুপার এগ্রেসিভ লুকের সাথে ABS সিস্টেম আমাকে দারুন ভাবে আকর্ষন করে । তার তিন মাস পর ১৯/১১/২০১৯ Yamaha FZS Fi V3 ম্যাট ব্লু বাইকটি ক্রয় করি।
বর্তমানে আমি Yamaha FZS Version 3 Matt Blue বাইকটি ব্যবহার করতেছি । এটি Yamaha এর খুবই জনপ্রিয় FZ সিরিজ এর তৃতীয় প্রজন্মের বাইক। এটির প্রধান বিশেষত্য হলো এর সিঙ্গেল চ্যানেল ABS সিস্টেম। যা সামনের চাকায় সংযোজিত। এর সামনের দিকরে সুপার এগ্রসিভ লুক এবং অত্যাবশ্যকিয় ভাবে Yamaha এর অতুলনীয় কন্ট্রোলিং। আমি আগেই বলেছিলাম ব্যক্তিগত ভাবে যানবাহন হিসেবে বাইককে সবচেয়ে বিপদজনক মনে করতাম।
সেখান থেকে একজন বাইক প্রেমী হয়ে উঠার নেপথ্যে প্রধান এবং একমাত্র ভূমিকা পালন করেছ Yamaha এর কন্ট্রোলিং সক্ষমতা এবং ABS সংযোজন। তাই সার্বিক দিক বিবেচনা করে FZS V3 আমার প্রথম পছন্দ ছিল। Yamaha FZS Fi V3 কিনার সময় বাজার মূল্য ছিলো ২,৯৫,০০০ টাকা । ১৮০০০ টাকা ক্যাশ ব্যক ও ৩০৬০ টাকা ড্রাইভিং লাইসেন্স বাবদ ছাড়ের পর মূল্য দাড়ায় ২,৭২,০০০ টাকা। ক্যাশ পেমেন্টের মাধ্যমে নরসিংদির জমজম মটরস থেকে ক্রয় করি ।
প্রয়োজনীয় পেপার ওয়ার্কের সাথে বাইক রেডি হতে থাকে। পেমেন্টের পর বাইক রেডি হওয়ার পর আমাকে চাবি দিয়ে চালানোর জন্যে বলে মেকানিক। ২০০ মিটারের মত চালিয়ে ছিলাম। আহ! জীবন। এ এক স্বর্গীয় অনুভূতি। ২টার মধ্যে সব কাজ শেষ করে আমরা রওয়ানা দেই । আমার এর আগে হাইওয়েতে বাইক চালানোর অভিজ্ঞতা না থাকায় আমার বন্ধু চালিয়ে আসে ।
পৌছানোর পর বাসায় এসে পরিবারের সবাইকে দেখাই সবাই বেশ পছন্দ করে । একজন বাইকারের জন্য তার মেশিনটি ব্যবহারের জন্য কিছু বিষয় অনুভূব করা জরুরী । যেমন মেশিনটি অপারেট করা আপনার সক্ষমতার মধ্যে কিনা , কন্ট্রোলিং top of the town কিনা, আপনি নিরাপদ অনুভব করছেন কি না ইত্যাদি তাহলেই সেটা আপনার জীবনের সাথে মিশে যাবে । যার সব কিছুই আমি FZS V3 তে পাই ।
FZS V3 একটি ১৪৯ সিসির ফুয়েল ইনজেকশন সিস্টেম বাইক
- এটির ইন্জিন ৮০০০ RPM এ সর্বোচ্চ 13 BHP power এবং ৬০০০ RPM এ 13 Nm টর্ক উৎপন্ন করতে পারে
- এটি সিঙ্গেল সিলিন্ডার এয়ার কুল্ড ইন্জিন
- এটির ফুয়েল ধারন ক্ষমতা ১২.৮ লিটার ও মাইলেজ ৪৫ কিলোমিটার প্রতি লিটার
- বাইকটির ওজন ১৩৭ কেজি ও গ্রউন্ড কলিয়ারেন্স ১৬৫মিমি
- এটিকে আছে ৫ স্পিড গিয়ার বক্স
- বাইকটির চেসিস টাইপ ডায়মন্ড সেপ
- এর ফ্রন্ট সাসপেনশন টেলিস্কোপিক ও পিছনে সুইংআর্ম সাসপেনশন
- সামনে এবং পিছনে উভয় চাকাতে যথাক্রমে ২৪০ ও ১৩০ মিমি ডিস্ক ব্রেক ব্যবহার করা হয়েছে
- সামনে সিঙ্গেল চ্যানেল ABS দেয়া হয়েছে
- এটির সামনে ১০০/৮০ সেকশনের টায়ার এবং পেছনে ১৪০/৬০ সেকশনের টায়ার ব্যবহার করা হয়েছে ।
- এর হেডলাইট ও টেল লাইট উভয়ই LED
প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই স্বাধারনত বাইক বের করি। It’s a confident start of the morning . তাছাড়া এলাকার সবাই বাইকটি বেশ আগ্রহের সাথে দেখে । এ এক অসাধারণ অনুভূতি।
Yamaha FZS Fi V3 সার্ভিসঃ বাইকটিতে এ পর্যন্ত দু’বার সার্ভিসিং করা হয়েছে । প্রথমবার আমার বন্ধুর গ্যারেজ থেকে । দ্বিতীয়তাটি কিশোরগন্জের Yamaha সার্ভিসিং পয়েন্ট থেকে । দুবারই আশানুরুপ ফলাফল পেয়েছি । বেশ দক্ষতার সাথে বাইকের বেসিক সব পয়েন্ট চেকাপের পর প্রয়োজনীয় এডযাস্টমেন্ট করা হয়েছে । সার্ভিসিংয়ের আগে ও পরে পরিবর্তন বেশ লক্ষনীয় ছিলো । তাছাড়া পারফর্মেন্সে ও ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ করা গেছে ।
আমার বাইক বর্তমানে ৫২০০ কিমি রানিং। প্রথমে ৩০০ কিমি চলার পর প্রথম ইন্জিন ওয়েল চেন্জ করি । ৪০০০ পর্যন্ত Yamhalube 10w 40 গ্রেডের মিনারেল ও বর্তমানে Motul 7100 10w 40 ফুল সিন্থেটিক ইঞ্জিন ওয়েল ব্যবহার করতেছি । এখনও পর্যন্ত আমি বাইকের কোন পার্টস পরিবর্তন করিনি । কোন ধরনের মডিফিকেশন আমার পছন্দ না । বাইকটির মাইলেজ বেশ ভালো । এভারেজ ৩৮-৪২ কিলোমিটার পাই প্রতি লিটারে । আমি টপ স্পিড নিয়ে কখনই আগ্রহ প্রকাশ করি না। তবে ঢাকা থেকে আসার সময় পিলিয়ন ছাড়া সর্বোচ্চ ১১০ পেয়েছি এবং পিলিয়ন নিয়ে ১০৬ পেয়েছি । বাইকটিতে অনেক গুলো ভালো দিক আছে। এখানে পাচঁটি বিশেষ দিক হলঃ
- প্রথমে বলতে হয় এর ABS সিস্টেম এর কথা । আমাদের দেশের রাস্তায় বাইক চালানো রিতিমত যুদ্ধের সামিল। এ যুদ্ধে ABS ব্রেকিং সিস্টেম আমার আত্মরক্ষার অন্যতম হাতিয়ার ।
- এর ফ্রন্ট ও রেয়ার টায়ার বেশ বড় যা বাইকের স্ট্যাবিলিটি অনেক বৃদ্ধি করে
- লম্বা সময়ে বাইকটি চালানোর জন্য খুবই কম্ফোর্ট একটি বাইক । আর এর অন্যমত কারন হচ্ছে এর সিটিং পজিশন
- বাইকটির মাইলেজ বেশ ভালো । এভারেজ ৩৮-৪২ কিলোমিটার প্রতি লিটার ।
- বাইকটির মাস্কুলার লুক আপনাকে খুবই আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে। তাই আমি মনে করি এটি ও বাইকটির একটি ভালো দিক।
সবকিছুরই ভালো এবং খারাপ দিক থাকে। এখানে FZS V3 এর ৫টি বাজে দিক তুলে ধরা হলোঃ
- প্রথমে আসবে এর হেড লাইট । রাতে হাইওয়ে রাইডিংয়ের জন্য এর আলো পর্যাপ্ত মনে হয় না ।
- ABS On & OFF সুইচ না থাকাটা একটু অসুবিধার বিশেষ করে ভাঙা রাস্তায় চলাচলের ক্ষেত্রে ।
- ১৫০ সিসির বর্তমানে বাজারে যে সব বাইক পাওয়া যায় সেগুলোর তুলনায় এর টপস্পিড খুবই কম । ০-১০০ খুব স্মুথ হলেও ১০০ এর পর এটি খুবই স্লো হয়ে যায় ।
- অনেকরই এ বাইকটির পেছনের লুক পছন্দ না । আর একটু ভাল করা দরকার ছিলো ।
- এর রেডি পিকাপ খুবই কম । তাই হইওয়ে রাইডিংয়ে ওভারটেকিংয়ের সময় রেডি পিকাপ স্বল্পতা ফিল করি এবং অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়।
বাইক নিয়ে ঘুরাঘুরি আমার অনেক পছন্দের কাজ । অফিশিয়ালি লং ট্যুরে না গেলে ও ঢাকা-কিশোরগন্জ আসা যাওয়া হয়েছে কয়েকবার । তাছাড়া নিকলি হাওড়, বাঙ্গালপাড় হাওড়, বালিখোলা এসব এলাকায় ঘোরা হয়েছে অনেক । ৫০০০ কিলোমিটার রাইড করার পর আমার ব্যক্তিগত মতামত কন্ট্রোলং আর ব্রেকিং সিস্টেম দিক বিবেচনায় Yamaha FZS Fi V3 বাইকটি বাংলাদেশের ১৫০ সিসি সেরা নেকেড স্পোর্টস বাইক।
তাছাড়া ভালো মাইলেজ সাথে এগ্রেসিভ লুকিং বাইকটির বাড়তি সুবিধা। টপস্পিডের প্রতি মাথা না ঘামালে নিসন্দেহে আপনার সকল চাহিদা পুরন করবে এটি। একটি গুরত্ব পূর্ন তথ্য মনে রাখবেন যে, বাইকটির রেডি পিকাপ কম হওয়ায় হাইওয়ে রাইডিংয়ে ওভার টেকিংয়ের সময় খুবই সাবধানে ওভারটেক করবেন । ধন্যবাদ।
লিখেছেনঃ এরফান চৌধুরী আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।