Yamaha FZS Fi V2 ৩৫,০০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ - নাইম রাজিব
This page was last updated on 13-Jul-2024 02:57pm , By Ashik Mahmud Bangla
আমি নাইম রাজিব । বর্তমানে আমি Yamaha FZS V2 বাইকটি রাইড করছি । বাইকটি আমি বর্তমানে ৩৫,০০০ কিলোমিটারের বেশি বাইকটি রাইড করেছি। আজ আমি আপনাদের এই বাইকটির ব্যাপারে কিছু শেয়ার করব বলবো।
আমি খুলনা ডুমুরিয়া বসবাস করি। খুব ছোট ছিলাম তখন আব্বুর একটা ইয়ামাহা ডিলাক্স হান্ড্রেড বাইক ছিল সেটা দিয়েই মোটামুটি হাতে খড়ি শুরু। তখন থেকেই ইয়ামাহা বাইক এর প্রতি ভালোবাসা শুরু হয়। নিজের প্রথম বাইক Yamaha FZS Fi V2। ঘোরাঘুরি প্রচুর পছন্দ করতাম ছোটবেলা থেকেই। স্কুল বন্ধের দিনে আব্বু কে সাথে নিয়ে এদিক ওদিক ঘুরতে চলে যেতাম। তখন থেকেই ইচ্ছা ছিল বড় হয়ে আমি আমার নিজের বাইক নিয়ে ঘুরে বেড়াবো। বাইকে ঘুরতে খুবই মজা লাগতো সেখান থেকেই বাইকের প্রতি একটা আলাদা ভালোবাসা জন্ম নেয়। ছোটবেলায় আব্বুর ইয়ামাহা ব্র্যান্ডের বাইকে ছিল সেখান থেকে ইয়ামাহা ব্র্যান্ডের প্রতি আলাদা একটা ভালোবাসা ছিলো। সেই ভালোবাসা থেকেই Yamaha FZS Fi V2 বাইকটি নেওয়া। বাইকটি স্মার্ট লুক এবং কন্ট্রোলিং অনেক ভালো সেজন্যই বাইকটি কেনা। ২,৫৫,০০০ টাকা দিয়ে খুলনার রিনস কনসর্টিয়া শোরুম থেকে বাইকটি কিনেছিলাম ।
Yamaha FZS Fi V2 Price In Bangladesh
বাইকটা কিনতে যাওয়ার আগের দিন রাতে আমার ঘুম হয় নাই এক্সাইটেড ছিলাম এতটাই অনেক দিনের স্বপ্ন পূরণ হতে চলছিল। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি প্রচুর বৃষ্টি বাসা থেকে বলে আব্বু আজ না কাল যেও আমি বললাম না আজকে যাব তুমি টাকা দাও। কিছুতেই টাকা দিতে রাজি ছিল না অনেক বলে কয়ে রাজি করিয়েছিলাম। আমি আর আমার তিন চারটা ফ্রেন্ড মিলে রওনা হলাম স্বপ্নপূরণের উদ্দেশ্যে। শোরুমে পৌঁছানো পর্যন্ত আমি আর আমার একটা ফ্রেন্ড প্রত্যয় প্রতীক বাদে আর কেউ জানতোই না আমি বাইক কিনতেছি। শোরুমে যাওয়ার পরে সবাই তো অবাক। পরে সবাই পছন্দ করে বাইকটি কিনে ফেললাম ।
আমার থেকে আমার ফ্রেন্ডরা বেশি এক্সাইটেড ছিল। বাইকটি কিনে বাসা পর্যন্ত আসার আগে আমি নিজে চালাতে পারি নাই, সবাই মিলেমিশে ড্রাইভ করে বাসা পর্যন্ত আসছিল। সব থেকে মজার ব্যাপার ছিল সবাই ভিজতে ভিজতে বাইকটা নিয়ে আসার মুহুর্তটুকু।
যেহেতু আমি আগে বাইক চালাতে পারতাম এবং অনেক বাইক চালিয়েছি তাই তেমন বেশি একটা আলাদা কিছু মনে হয় নাই। কিন্তু নিজের প্রথম বাইক ভিতরে আলাদা একটা আনন্দ কাজ করতেছিল, সেটা বলে বুঝানোর মত না। বাইকটি কেনার পিছনে কিছু কারন ছিল যেমন আমার বাইক চালাতে ভালো লাগে। বাইক নিয়ে ঘুরতে ভালো লাগে। ব্যবসায়িক কাজে বাইকটি লাগে।
বাইকটির কিছু ভালো দিক-
- ফুয়েল ইনজেক্টর
- মনো শক সাসপেনশন
- মোটা চাকা
- অনেক সুন্দর রং যেন মনোমুগ্ধকর
- ব্রেকিং
- কন্ট্রোলিং
বাইকটির কিছু খারাপ দিক-
- বাইকের আলো অনেক কম সেজন্য রাতে বাইকটি চালাতে অনেক কষ্ট হয়।
- এক্সেলেরেশন খুব কম।
- ট্যাপেট এডজাষ্ট খুব অল্প সময় ঠিক থাকে।
- ২,৫৫,০০০ টাকা দামটি বেশি মনে হয়েছে।
- সামান্য উচু স্পীড ব্রেকার পিলিয়ন সহ রাইড করলে বাইকের নিচে ঘষা লাগে।
প্রতিদিন বাইকটি চালানোর সময় মনে হয় ব্র্যান্ডের একটা বাইক চালাচ্ছি যেটা দেখতে অনেক সুন্দর এবং কম্ফোর্টেবল নিজের মনের ভিতর একটা ফুরফুরে ভাব অনুভব করি। আমি এখন পর্যন্ত ইয়ামাহা শো-রুম থেকে ফ্রি চারটা সার্ভিস এবং পেইড তিনটা সার্ভিস করিয়েছি এছাড়া বাইরে থেকে আরও দুইবার সার্ভিস করিয়েছি। বাইকটি প্রথম ২০০০+কিলোমিটার পর্যন্ত মাইলেজ ৪২/৪৩ কিলোমিটার প্রতি লিটার পেতাম। পরে ৪৫+ কিলোমিটার প্রতি লিটার মাইলেজ পেতাম কিন্তু বর্তমানে আমি ৪৭+ সিটিতে এবং লং ড্রাইভ ৪২/৪৩ কিলোমিটার প্রতি লিটার এর মত মাইলেজ পাচ্ছি।
আমি আমার বাইকটি প্রতিদিন একবার নিজে নরম কাপড় দিয়ে মুছে পরিষ্কার করি। মাসে একবার বাইকটি ওয়াশ করাই, প্রতি ১০০০০ কিলোমিটারে ক্লাস ক্যাবল এক্সেলেটর কেবল এয়ার ফিল্টার ব্রেক সু চেঞ্জ করি, চেইন এ চেইনলুব ব্যবহার করি। প্রথম আমি ইয়ামালুব এর 10W40 mineral ইঞ্জিন অয়েলটি ব্যবহার করতাম কিন্তু বর্তমানে আমি ইয়ামালুবের 10w40 সিন্থেটিক ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করছি। বাইকটি তে এখন পর্যন্ত ৩ বার ক্লাস ক্যাবল, ৩ বার এক্সেলেটর কেবল, ৩ বার এয়ার ফিল্টার, ১ বার চেন স্প্রোকেট এবং ১ বার টায়ার চেঞ্জ করেছি।
টুকটাক কিছু স্টিকার করছি তাছাড়া কোনো মডিফাই এর কাজ করি নাই। বাইকে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ স্পীড ১২৭ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা সিঙ্গেল এবং ১১৯ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা পিলিয়নসহ। সিটিং পজিশন টা অনেক সুন্দর, ব্রেকিংটাও অনেক সুন্দর। বাইকটি অনেক স্মুথ, অনেক সময় রাইড করার পরেও শরীরে কোনো ব্যথা অনুভব হয় না। অনেক কম্ফোর্টেবল । বাইকটা নিয়ে আমি দেশের বিভিন্ন স্থানে গিয়েছি সবথেকে লং ট্যুর ছিল খুলনা টু চিটাগাং, চিটাগাং টু কক্সবাজার, কক্সবাজার টু বান্দরবান, বান্দরবান টু সাজেক। টোটাল ১৪৭৪ কিলোমিটারের ভ্রমণ ছিল।
সর্বোপরি বাইকটা বর্তমান সময়ের বাংলাদেশের অন্যতম সেরা একটি বাইক। কেউ যদি নতুন বাইক কিনতে চান আমি তাদেরকে সাজেস্ট করবো অবশ্যই বাইকটি একবারের জন্য হলেও চালিয়ে দেখবেন। বাইকটি অনেক সুন্দর একটি বাইক। সবাই নিরাপদে বাইক চালাবেন সব সময় হেলমেট এবং সেফটি কিট এর ব্যবহার করবেন, সিগন্যাল মেনে চলবেন। ধন্যবাদ সবাইকে।
লিখেছেনঃ নাইম রাজিব
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।