Yamaha FZS Fi V2 মালিকানা রিভিউ লিখেছেন সাকিব
This page was last updated on 18-Aug-2024 04:01pm , By Shuvo Bangla
সবাইকে শুভেচ্ছা। আমি নাজমুস সাকিব আশিক, বয়স ২৮ বছর, ঢাকার মতিঝিলে থাকি।আমার মনে হয় মানুষ বাইক ছাড়া অপূর্ণ, ছোটবেলা থেকেই বাইকের প্রতি আলাদা টান ও ভালোবাসা ছিল, আর সময় বাচানো, কম খরচ, স্মার্টনেস সব মিলিয়ে বাইক আমার কাছে জীবনের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ মনে হয়। আমার প্রথম চালানো বাইক ছিল ডায়াং ৫০ সিসি যেটার মালিক ছিলেন আমার বন্ধু সফিক এর বাবা। আমি বর্তমানে যেই বাইকটি চালাচ্ছি সেটা হলো Yamaha FZS Fi V2 - Black Edition । আজ আমি আমার Yamaha FZS Fi V2 বাইকটি নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করতে চাই।
২০১০ সাল থেকেই ইচ্ছা ছিল Yamaha FZS বাইকটি কেনার, কিন্তু বয়স, আর্থিক অবস্থা সব কিছু মিলিয়ে তখন সম্ভব ছিল না। আমি বাইক কেনার আগে অনেক বাইকার বড়ভাই, BikeBD Group, সব যায়গাতেই রিভিউ পরামর্শ নিয়েছি, FZS বাইকটাতে ফুয়েল বেশী লাগে এটা ছাড়া অন্য মেজর প্রব্লেম এর কথা কেউ বলে নাই। Yamaha FZS Fi V2 বাইকটার সিটিং পজিশন, কম্ফোর্ট এর গল্প আমাকে বারবার এই বাইকটার দিকে টানতো। আর Yamaha এর বাইকের লং সার্ভিস তো আশা জাগানিয়া। এরপরে যখন জানতে পারলাম যে এই বাইকটির মাইলেজ শহরে গড়ে ৪০+ , তখনই আমি বাইকটি কেনার জন্য মনস্থির করলাম। আমার বাসা মতিঝিল এবং অফিস নিউ ইস্কাটন। বাসা থেকে অফিস, একটু ঘুরাঘুরি, সামাজিকতা রক্ষা, এসবের জন্যই মুলত বাইকটা নেওয়া। এই ঢাকা শহরে বাইক ছাড়া একজন সামাজিক মানুষ হিসাবে নিজেকে উপস্থাপন করা আসলেই খুব কঠিন।
আমি এই বাইকটা ২,৬০,০০০.০০ টাকা দিয়ে কিনেছিলাম। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর এর ১ তারিখে ACI Motors এ বুকিং দিয়ে সেপ্টেম্বর এর ২৭ তারিখ ঢাকার রামপুরাইয় Toky Trade International থেকে বাইকটা ডেলিভারি নিয়েছিলাম। আমার বাড়ি খুলনা, আমরা দুই ভাই ঢাকাতেই জব করি। বাইক ডেলিভারির জন্য ছোট ভাইটা খুলনা থেকে ২৬শে সেপ্টেম্বর আসলো আমার কাছে। টাকা রেডি ছিলো। বারবার তারিখ পরিবর্তন করে ACI Motors ২৮ তারিখ Toky Trade থেকে বাইকটা ডেলিভারি নিতে বললো। ২৬ তারিখ সন্ধ্যায় Toky Trade থেকে কল দিয়ে বললো স্যার আপনার বাইক রেডি, আপনি কি কাল নিবেন? আমি বললাম, আমি কালই নিবো।
Also Read: Yamaha FZs FI এর মালিকানা রিভিউ
একদিন আগে বাইক পাবার আনন্দটা ছিলো আসলেই অসাধারণ। রাতে ঘুম কেমন হলো জানি না। পরদিন অফিসে আসলাম, ছোট ভাই টাকে বললাম ১২ টার পর অফিসে আসতে। লাঞ্চ করে অফিস থেকে বের হলাম। ২.৩০ এর দিকে Toky Trade এ গেলাম। বাইক সিলেক্ট করে ৩.৩০ এর দিকে শোরুম থেকে বের হলাম। সাথে কাজিন আরাফাত & ওর দুইটা বন্ধু ছিলো। ছোট ভাই শাকিল এ প্রথম রাইড করলো। বাইক নিয়ে মধ্যবাড্ডা থেকে ১০ লিটার ফুয়েল নিয়ে হাতিরঝিল এ গেলাম, সাথে যারা ছিলো সবাই এ একটু রাইড দিলো। হাতিরঝিলের মহানগর প্রজেক্ট এর সামনে সবাই নাস্তা করলাম। তারপর বাসায় চলে আসলাম। প্রথম দিনে সর্বোমোট ৬৯ কিমি রাইড হয়েছিলো।
আমি এখন পর্যন্ত ২ বার সার্ভিস করিয়েছি। ২টাই Toky Trade থেকে। প্রথমবার ১১২৩ কিমি & দ্বিতীয়বার ৩৮৫৫ কিমি চলার পর। আমি নিজে বাইক যত্ন নেবার সময় খুব কম পাই। কিন্তু ভালোবাসার জিনিষ হওয়াতে যতটুকু পারি যত্ন নেই। আমার অফিসের পাশে একটা মিস্ত্রি আছে, ও আমার বাইক পরিস্কার, লুব পরিবর্তন সহ অন্যান্য কাজ গুলা খুবই আন্তরিকতার সহিত করে। আমি Yamalube, 10W40 Mineral টা ব্যবহার করি। এটার মার্কেট প্রাইস ৬০০/৬৫০ টাকা, কিন্তু FZS/Fazer Fi Club Bd এর মেম্বর হবার জন্য দেওয়ান মটরস আমাদের একটু কম মূল্যে মবিলটা সরবরাহ করে। আমি এখন পর্যন্ত কোন পার্টস পরিবর্তন করি নাই।
Also Read: Yamaha FZS Fi ১০,০০০কিমি মালিকানা রিভিউ
এটা একটা Gentle লুকের Bike হবার কারনে কোনো মডিফাই ও করি নাই। ২৫০০ কিমি পর্যন্ত আমি ৪০+ মাইলেজ পাচ্ছিলাম, তবে স্পিড ৭০ এর নিচে থাকলে এবং হাইওয়ে রাইড দিলে ৪৫+ মাইলেজ পাইছি। ২৫০০ কিমি এর পরেও আমি ৪০+ মাইলেজ পাচ্ছি কিন্তু খুলনা ট্যুর এ আমি ৩৬ এর মতো মাইলেজ পেয়েছি যদিও এ্যভারেজ স্পিড ছিলো ৯৫/১০০ কিমি। আমি এটা দিয়ে ১২০ টপ স্পিড পেয়েছি পিলিয়ন ছাড়া (মাওয়া-খুলনা রোড) এবং পিলিয়ন সহ ১১৬ পেয়েছি (ঢাকা-কুমিল্লা রোড)।
আমার দৃষ্টিতে বাইকটি সবচাইতে ভালো দিক হচ্ছে এর অসাধারন কমফোর্ট এবং কন্ট্রোল। এছাড়াও এর অসাধারন লুকের কথা বলতেই হয়, এর নতুন স্টাইলিং এফজেড সিরিজকে নিয়ে গেছে এক অনন্য উচ্চতায়। আগের এফজেড এর তূলনায় এর মাইলেজও অনেক বেশি, এর গ্রেট ফুয়েল এফিশিয়েন্সি একে দিয়েছে ভালোমানের কমিউটার হবার যোগ্যতা। এতোদিনের চলার পথে বাইকটির বেশকিছু খারাপ দিকও আমার চোখে পড়েছে ! সবচাইতে বেশি যেই সমস্যাটা বোধ করি, সেটা হচ্ছে এর গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স অত্যান্ত কম, ঢাকার রাস্তায় অনেক বেশি সমস্যা করে। এছাড়াও এর টপ এন্ড এ টর্ক কম হওয়ায় স্পীড দ্রুত তুলতে পারে না, যা হাইওয়েতে সমস্যা করতে পারে।
এখন পর্যন্ত আমার Yamaha FZS FI V2 নিয়ে আমি বেশকিছু ট্যুর দিয়েছি, এর মধ্যে সবচাইতে বড় ট্যুরটি হচ্ছে ঢাকা টু খুলনা ট্যুর। ২০১৭ এর জানুয়ারীর ৩১ তারিখ ঢাকা থেকে খুলনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। সাথে ছিলো আরো ১০ বন্ধু। গন্তব্য আমার বাড়ি খুলনার ডুমুরিয়ায়। সকাল ৭.৩০ মিনিটে TSC থেকে যাত্রা শুরু করলাম। ৮.২০ এ মাওয়া ঘাটে পৌছালাম। ৯.০০ টার সময় ফেরী কুমিল্লা আমাদের নিয়ে যাত্রা শুরু করলো। ১০.০৫ এ আমরা কাঠালবাড়ি ঘাটে পৌছালাম। ওখান থেকে ১০.৩০ এ খুলনার উদ্দেশ্যে পুনরায় যাত্রা শুরু করলাম ১১.৪৫ এ ভাটিয়াপারায় গিয়ে নাস্তা শেষ করে আবার যাত্রা শুরু করলাম। ১.২৫ এ আমরা রূপসা ব্রীজ এ পৌছালাম, ওখানে কিছু ছবি তুলে আমরা ২.৩০ এ আমার বাড়ি পৌছালাম। এই সময়ে একটানা ৯০ কিমি চলেছে আমার বাইকটি। টপ স্পীড পেয়েছি ১২০ পিলিয়ন ছাড়া। কিন্তু ও আমাকে কোনো ঝামেলায় ফেলে নাই। আমাদের ৮ টা বাইকের কোনটাতেই ঝামেলা পোহাতে হয় নাই।
ফুয়েল ইঞ্জেক্টর ইঞ্জিন হবার কারনে এটা অনেক সেন্সিটিভ মনে হয়। আমার প্রায় ৬৮৩৬ কিমি চলার পরেও ACI এখনো Injector Cleaner Machine টা চালু করতে পারে নাই। অনেকেই বলেছে ব্যাটারিটা ভালো মানের না। ঢাকা শহরে হেড লাইটটা কার্যকর লাগে না যদিও হাইওয়ে তে ঠিক আছে। তবে এখন পর্যন্ত আমার সাথে এই বাইকটা যা করেছে তাতে আমি সন্তুষ্ট। যে কেউ যদি এই বাজেটে একটা অলরাউন্ডার বাইক কিনতে চান, যেটা তাকে শহরে অসাধারন কমফোর্ট দেবে এবং হাইওয়েতে দেবে অসাধারন ক্রুজিং পারফর্মেন্স, তবে আমি তাকে Yamaha FZS Fi V2 বাইকটি কিনতে সাজেস্ট করবো। লিখেছেনঃ নাজমুস সাকিব আশিক আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com - এই ইমেইল এড্রেসে।