Yamaha FZS FI Sp Edition ১২,০০০কিমি মালিকানা রিভিউ-মোঃ জামাল উদ্দিন
This page was last updated on 15-Jul-2024 08:31am , By Saleh Bangla
আমি মোঃ জামাল উদ্দিন বয়স ২৯ বছর । বর্তমানে আমি পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের সমৃদ্ধি কর্মসূচিতে সৃজনী বাংলাদেশের ঝিনাইদহ জেলাধীন মহেশপুর থানার পান্তাপাড়া ইউনিয়নে সমৃদ্ধি স্বাস্থ্য পদে কর্মরত আছি । আমি মোটামুটি বাইক প্রেমী তাই আজ আমার বর্তমানে ব্যবহৃত বাইক Yamaha FZS FI Sp edition যা আমি প্রায় ১১৫০০+ রাইড করেছি। বাইকটি ভাল খারাপ দিক নিয়ে আলোচনা করব ।
Yamaha FZS FI Sp Edition ১২,০০০কিমি মালিকানা রিভিউ
আমার বাবা এখনও একজন বাইক রাইডার । বাবার প্রথম বাইক টিভিএস ভিক্টর দিয়ে আমার বাইক চালানো শেখা । বাবাকে দেখেই মূলত আমার এতটা বাইকের প্রতি প্রেম । পরবর্তীতে আবার ডিস্কভার ১২৫সিসি দিয়ে হাতকে আরো ভালভাবে ক্লিয়ার করি । আর আমার জীবনের প্রথম বাইক ২০১৩ সালে সেকেন্ড হ্যন্ড কেনা পালসার ১৫০। যে বাইকটি দিয়ে ২০১৬ পর্যন্ত আমি ২০০০০ কি.মি. পাড়ি দিয়েছি । পালসারের ব্যলেন্স খুব খারাপ ছিল ফলে প্রচুর চাকা স্কিড করত । তবে একটা ভাল ব্যপারও ছিল সেটা হল এর পার্টস সবখানেই পাওয়া যায় ও দাম কম । তাই মনে মনে সেরা লুক ও ব্যলান্সড বাইক খুজতাম ।এরপর শুরু করলাম বিভিন্ন ভাবে সার্চ আর চোখে পড়ল সবার আস্থার ব্র্যান্ড ইয়ামাহা । আর তখনই এসিআই লিমিটেড বাংলাদেশ মার্কেটে লঞ্চ করে Yamaha FZS FI, Fazer Fi, R15 v2। তাই মোটামুটি বাজেট নিয়ে ঝুকে গেলাম Yamaha Fzs Fi Sp edition matt green এর দিকে । ইউটিউব ও অন্যান্য ওয়েব সাইট দেখে দেখে তফাত করতাম Fz এর সাথে অন্যান্য বাইকের । অবশেষে সিদ্ধান্ত নিয়েই নিলাম Yamaha FZS FI Sp edition কিনব বলে ।
০১-১০-২০১৬ তারিখে যশোরের খান অটোতে ৫০০০০/- টাকা দিয়ে বুকিং দেই আমার স্বপ্নের বাইক হাতে পাব বলে । সেইদিন থেকে শুরু হয় মনে মনে নানা ধরনের জল্পনা কল্পনা । তারপর ০৩-১২-২০১৬ তারিখে খান অটোর সুজন ভাই ফোন করে বলে আপনার বাইক এসে গেছে । তখন প্রতিউত্তরে আমি বলি আপনার ফোনের অপেক্ষা আমি এত দিন ধরে করছিলাম উনি আমাকে মজা করে বলে আমি আপনার গার্লফ্রেন্ড ? আর আমি বলি আপনি তো আমার গার্লফ্রেন্ডকে নিয়েই বসে আছেন । এরপর ০৪-১২-২০১৬ তারিখ সকালে আমি আর আমার বাবা যশোরে গিয়ে বাইকটি কিনতে যায়।
সকল ব্যবস্থাপনা শেষ করে বেলা ২ টার দিকে হাতে পায় আমার কাংখিত বাইকটি । প্রথম দিনেই আমি প্রায় ৫০কি.মি. রাইড করি । প্রথম বাইক চালানোর অনূভুতি বলতে গেলে একটা কথাই মনে আসছিল যে একটা বাইকের ইঞ্জিন এত স্মুথ হয় ? আর প্রথম দেখাতেই আমি সামনাসামনি বাইকটি দেখে টাস্কি খেয়ে গিয়েছিলাম যেমনটা মানুষ সুন্দরী নারীদের দেখলে খায় । আসুন এবার জেনে নেই এই বাইকের স্পেসিফিকেশন । ১৪৯সিসি Yamaha Fzs Fi Sp edition matt green বাইকটিতে এয়ার কুল্ড, ৪ স্ট্রোক, ১-সিলিন্ডার, এসওএইচসি, ২ ভাল্ব দেওয়া আছে । বাইকটি প্রায় ১২.৯ বিএইচপি @৮০০০ আরপিএম পাওয়ার এবং ১২.৮ এনএম টর্ক দিতে সক্ষম । বাইকটির বোর x স্ট্রোক ৫৭.৩ এবং ৫৭.৯। সীটের হাইট ৭৯০ মি.মি. এবং হুইল বেস ১৩৩০ মি.মি. । বাইকটির ওজন প্রায় ১৩১ কেজি । বাইকটিতে টপ স্পিড প্রায় ১১৫ কি.মি. পার আওয়ার এবং ফুয়েল সাপ্লাই হল ফুয়েল ইঞ্জেকশন টাইপের । Yamaha Fzs Fi বাইকটির ফ্রন্টে ২৬৭ মি.মি. হাইড্রোলিক ডিস্ক ব্রেক এবং রিয়ারে ১৩০ মি.মি. ড্রাম ব্রেক দেওয়া আছে । বাইকের ফ্রন্ট সাস্পেশনে টেলিস্কোপ ফর্কস এবং রিয়ারে মনোক্রস সুইং আরম সাস্পেনশন । বাইকটির ফ্রন্ট টায়ারে ১০০/৮০-১৭ এবং রিয়ারে ১৪০/৬০-১৭ ইঞ্চি । বাইকটার ফ্রেম ডায়মন্ড ফ্রেম টাইপের । আমি এখন পর্যন্ত ১১৫০০+ কি.মি. অতিক্রম করেছি । ২৫০০ কি.মি. পর্যন্ত ব্রেক ইন পিরিয়ড মেইনটেন করে সর্বোচ্চ আরপিএম ৪৫০০-৫০০০ রেখে চালায় । এ সময় মাইলেজ সিটিতে ৩৮-৪০ ও হাইওয়েতে ৪০-৪২ পেতাম । আশ্চর্যের বিষয় হল যে বর্তমানে আমি মাইলেজ সিটিতে ৪২-৪৫ ও হাইওয়েতে ৪৫-৪৮ পাচ্ছি । আমি প্রথম ৩৫০ কি.মি. তে ইঞ্জিন অয়েল ড্রেন দেই পরে ১০০০ কি.মি পরে ১৭০০ কি.মি. তারপর ২৫০০ কি.মি. তে ইঞ্জিন অয়েল ড্রেন দেয় । এসময় আমি ইয়ামালুব ১০/৪০ ব্যবহার করেছি ও সাথে সাথে প্রতিবার অয়েল ফিল্টার চেঞ্জ করেছি । এরপর থেকে সিনথেটিক ব্যবহার শুরু করি । মটুল ১০/৪০ ৭১০০ (দাম ১২০০/-টাকা) ২৫০০ কি.মি. করে ও মটুল ১০/৪০ ৩০০ভি (১৫৫০/- টাকা) ২৭০০ কি.মি. করে ব্যবহার করি । মটুল আমি দেওয়ান মটরস থেকে কুরিয়ার করে আনি । বাইকের ১০০০০ কি.মি. অতিক্রম করার পর আমি এয়ার ফিল্টার পরিবর্তন করি । আর প্লাগ ইরিডিয়াম ব্যবহার শুরু করি (দাম ৯৫০/- টাকা) । যশোর আর.কে অটো থেকে ইরিডিয়াম কিনি এবং এটার পার্ফমেন্স এক কথায় অসাধারন । থ্রোটল কুইক রেস্পন্স এর জন্য খুবই ভাল । তাছাড়া এখন পর্যন্ত সব স্টকেরই আছে । ছোট ছোট ট্যুর দিয়েছি সারাদিনে প্রায় ৪৫০ কি.মি. চালিয়েছি, মহেশপুর-খুলনা-ঝিনাইদহ-খুলনা । এছাড়াও আরো কয়েকবার এরকম চালিয়েছি তবে কোন রকম কোন অসুবিধা বা ব্যাক পেইন অনুভব করিনি । আমি সর্বোচ্চ ১১০কি.মি. পার ঘন্টা চালিয়েছি এর বেশী ওঠানোর সাহস পায়নি । বাইকটির খারাপ দিকঃ ১.একজনের বেশি পিলিয়ন নেওয়া যায় না । ২.২০-৩০ কি.মি. চলার পর ইঞ্জিনে এক্সট্রা সাউন্ড করে । ৩.স্টক হেডলাইটের আলো খুবই কম । ৪.ফুয়েল ইঞ্জেকটেড নিয়মিত পরিষ্কার না করলে গাড়ি ভার ভার লাগে । ৫.ইঞ্জিনের বাইরের অংশে খারাপ মানের ম্যটেরিয়াল দেয়া ফলে রং থাকে না এবং আমার চেইন স্প্রোকেট এর বোল্ট ভেঙ্গে গেছে । বাইকটির ভাল দিকঃ ১.লুক সবচাইতে আলাদা ও আর্কষনীয় । ২.ব্যালান্স ও কন্ট্রোলিং এ আমি ১০০% সন্তুষ্ট । ৩.মাইলেজ ভাল আমি গড়ে ৪৫ পার লিটার পায় । ৪.স্মুথ ইঞ্জিন টর্ক । ৫.বাইকটির সাস্পেনশন ভালো লেগেছে ভাঙ্গা রাস্তায় বোঝা যায় না । আমি মোট ১১৫০০+ কি.মি. শেষ করেছি । তবে খারাপ দিক আলোচনা করতে গিয়ে আমি কোন পয়েন্টই পাচ্ছিলাম না । কারন বাইকটি আমাকে হতাশ করেনি ছোট ছোট যত ট্যুর দিয়েছি তাতে তার আক্রমনাত্মক পার্ফমেন্স আমাকে মুগ্ধ করেছে তবে আমার এক কথায় মতামত চাইলে আমি বলব কেউ সেরা ব্যালান্সড বাইক চাইলে আপনার জন্য এটা বেস্ট অপশন ।