Yamaha FZ-S V2 ১৭ হাজার কিলোমিটার রাইড রিভিউ - সাব্বির হোসাইন
This page was last updated on 30-Jul-2024 05:23pm , By Ashik Mahmud Bangla
আমি মোহাম্মদ সাব্বির হোসেন । আমার বয়স ২৪ বছর । বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট এ অধ্যয়নরত আছি । আমি ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ থানায় বাস করি । আমার জীবনের প্রথম বাইক হচ্ছে Yamaha FZ-S V2 Double Disc Armada Bule। আজ আমি আমার বাইকটি ১৭ হাজার কিলোমিটার রাইডের অভিজ্ঞতা নিয়ে কিছু কথা বলবো।
Yamaha FZ-S V2 ১৭ হাজার কিলোমিটার রাইড রিভিউ
ছোটবেলা থেকেই আমার বাইকের প্রতি একটা ভালবাসা ছিল, ছোট থেকেই আমি মামা এবং বড় ভাইদের বাইকের পিছনে বসে ঘুরতাম ঠিক তখন থেকেই আমার বাইকের প্রতি একটা আকর্ষণ আসে এবং বাইক চালানো শেখার আগ্রহ জাগে। তারপর আমি আমার মামার বাইক দিয়ে ২০১১ সালে বাইক চালানো শিখি। বাইক চালানো শেখার পরই বাইক কেনার আগ্রহ জাগে, তারপর আমি আমার আব্বুকে বললাম আব্বু বাইক কিনবো কিন্তু আমি তাদের একমাত্র ছেলে তাই খুব ভয় পেত যদি এক্সিডেন্ট করি কিছু হয়ে যায় তাই প্রথমে বাইক দিতে রাজি হয়না। কিন্তু আমি বাইকের আশা ছাড়িনি আব্বুর কাছে বলতে বলতে সে এক পযার্য়ে বাইক দিতে রাজি হয় । আব্বু প্রথমে Bajaj Pulser 150cc twin disc দিতে চায় কিন্তু আমার পছন্দ ছিল Gixxer । কিন্তু আব্বুর জিক্সার বাইকটি দেখে ভালো লাগেনি।
পরে আব্বু আমার খুব কাছের এক বাইকার বড় ভাইর কাছে গিয়ে জিজ্ঞাস করলো ছেলে তো বাইক কিনতে চায় কোন বাইকটা ভালো হবে পরে ভাই বলে ইয়ামাহা বাইক দিন বাইক ও ভালো হবে লং লাস্টিং ও করবে। পরে আব্বু বাসায় এসে আমাকে বললো তোকে Yamaha FZ-S বাইক কিনে দিবো পরে আব্বু নিজের পছন্দে করে Yamaha FZ-S V2 Armada Blue রং এর বাইকটা আমাকে কিনে দেন। আব্বু বাইক কেনার জন্য আমাকে চেক দিয়ে বলে টাকা উঠিয়ে আন কাল বাইক কিনতে যাবো ।কিন্তু টাকা উঠানোর পরে আমার আর অপেক্ষা করতে ইচ্ছে করতেছিল না । আব্বুকে বললাম চলো আজকেই বাইক কিনেতে যাই । পরে আব্বু ,আমি,আমার এক কাছের বড় ভাই আর বন্ধুদের নিয়ে বাইক কিনতে যাই ,খুব ভালো একটা অনুভুতি ছিল সেই দিনটা ।
জীবনের প্রথম বাইক কেনার দিনের অনুভূতিটা ছিল অসাধারণ।এখনো মনে পরে দিনটির কথা। জীবনের স্মরনীয় মূহুর্ত গুলোর মধ্যে একটা। বাইকটির কিছু ভালো দিকঃ
- অসাধারণ লুকিং এবং কালার
- বেশ ভালো মাইলেজ পাচ্ছি
- ব্রেকিং সিস্টেম খুবি ভালো
- কর্নারিং এ খুব বেশি কনফিডেন্স পাই
- কন্ট্রোলিং খুব ভালো
বাইকটির কিছু খারাপ দিকঃ
- সিটিতে বাইকটি বেশি চালানো হলে বেশ গরম হয়
- লং রানে পার্ফমেন্স ড্রপ এবং ইঞ্জিনের শব্দ বেড়ে যায়
- আরপিএম ৬০০০ এর বেশি হলে পা দানিতে ভাইব্রেশন ফিল হয়
- ১৫০ সি সি সেগমেন্ট এর বাইক হওয়ার পরেও হাইওয়েতে স্পিড সল্পতা ফিল করি
- হাইওয়েতে ফাকা রাস্থায় হেডলাইটের আলো কম।
আমি বাইকটি ২০১৯ সালে ২ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা দিয়ে ঢাকা জেলার দোহর থানার ইয়ামাহা ডিলার ডিএনএস মটরস থেকে কিনেছি ।
Yamah FZ-S V2 Armada Blue বাইকটি হচ্ছে ১৫০ সিসি সেগমেন্ট এর অনেক স্ট্রং এবং ভালো একটি বাইক । বাইকটিতে দেয়া হয়েছে ৫ টি গিয়ার, টিউবলেস টায়ার, মাস্কুলার লুক, কালার গুলো অনেক সুন্দর, আমার এই ভার্সন এ ব্রেকিং আরো ভালো করার জন্য ডুয়েল ডিক্স দেওয়া হয়েছে । সিটিং পজিশন হ্যান্ডেলবার লং রাইডেও বেশ ভালো কম্ফোর্ট দেয় । আমার বাইকটি আমি প্রথমে ৪০০ কিমি, ৮০০ কিমি এবং ১৫০০ কিমি তে ইঞ্জিন ওয়েল চেঞ্জ করি এবং ৯০০ কিমি তে প্রথম সার্ভিস করাই ইয়ামাহার ডিলার পয়েন্ট থেকে । এরপর থেকে ১০০০ কিমি পর পর ইঞ্জিন ওয়েল চেঞ্জ পরিবর্তন করি । ৩ হাজার কিমি পর পর ওয়েল ফিল্টার পরিবর্তন করি । আমি আমার বাইকে প্রথম থেকে 10w40 ইয়ামালুব ইঞ্জিন ওয়েল ব্যবহার করতেছি । বেশ ভালোই স্মুথ চলেছে বাইক । প্রাইস ৫০০ টাকা । প্রথম ২০০০ কিমি পর্যন্ত মাইলেজ পেয়েছি ৩৫-৩৮ কিমি প্রতি লিটার । এর পরে ব্রেকিং পিরিয়ড শেষে ফ্রি সার্ভিস করানোর পরে সিটিতে মাইলেজ পেয়েছি ৪৪-৪৮ । আর হাইওয়েতে পেয়েছি ৫২-৫৫ কি মি পার লিটার । আমি মনে করি ১৫০ সিসি সেগমেন্ট এ বেশ ভালো মাইলেজ পাচ্ছি ।
বাইকটি রেগুলার চালানোর পাশাপাশি আমি কিছু মেইন্টিনেন্স করি যেমন-এয়ার ফিল্টার নিয়মিত পরিস্কার করি, চেইন এডজাস্টমেন্ট, চেইন লুব, টাইম মত ইঞ্জিন ওয়েল চেঞ্জ, ২-৩ বার ইঞ্জিন ওয়েল চেঞ্জ করার পরে ওয়েল ফিল্টার চেঞ্জ করি ।সঠিক টায়ার প্রেশার দেই । আমি আমার বাইকটিকে অনেক বেশি ভালোবাসি তাই আমি আমার বাইকটি ভালো রাখার জন্য যা যা করা দরকার আমি তাই তাই করি এবং সঠিক যত্ন নেওয়ার চেষ্টা করি । আমি আমার বাইকটি নিয়ে যথেষ্ট খুশি । বাইকটি সিটিতেই বেশি চালানো হয় । এখন পর্যন্ত আমার লং ট্যুর হচ্ছে দোহর থেকে মানিকগঞ্জ হয়ে পাটুরিয়া ফেরি ঘাট সেখান থেকে রাজবাড়ি হয়ে ফরিদপুর সেখান থেকে গোপালগঞ্জ হয়ে ঢাকা ব্যাক । প্রায় ৩০০ কি মি + ভ্রমন ছিল । হাইওয়েতে এর ব্রেকিং কর্নারিং মাইলেজ ছিল প্রশংসা করার মত । তবে রেডি পিকাপ এবং টপ স্পিডের অভাব ফিল করেছি ।
বাইকটিতে আমি টপ স্পিড তুলেছি ১১৫ কিমি প্রতি ঘন্টা । খুবি স্মুথলি স্পিড উঠে যায় । তবে একটু টাইম নেয় রেডি পিকাপ এর প্রয়োজনটা খুব ফিল করি তখন ।অবশেষে বলতে চাই সবদিক থেকে Yamaha FZ-S V2 Armada Blue এর পারফর্মেন্স খুব ভালো । এই বাইকটি চালিয়ে আমি সেস্টিফাই । ১৭ হাজার কিমি পথ চলার অভিজ্ঞতা ছিল অসাধারন । সবশেষে একটি কথা - সবাই সবসময় সার্টিফাইড হেলমেট পরে বাইক চালাবেন ।সাবধানে নিয়ম মেনে সেফটি নিয়ে বাইক রাইড করবেন ।
লিখেছেনঃ সাব্বির হোসাইন
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।