TVS Radeon টেস্ট রাইড রিভিউ - টীম বাইকবিডি

This page was last updated on 15-Jul-2024 03:02pm , By Ashik Mahmud Bangla

TVS Radeon টেস্ট রাইড রিভিউ

গত বছরে বাংলাদেশে ৫ লক্ষ ৫০ হাজার বাইক বিক্রি হয়েছে, যার মধ্যে অর্ধেকের বেশি ছিলো ৮০-১১০ সিসি বাইক। কেনো এই সেগমেন্টটি বাংলাদেশের সবচাইতে জনপ্রিয় সেগমেন্ট? TVS Radoen এর টেস্ট রাইড রিভিউতে এই প্রশ্নেরই উত্তর দেবার চেষ্টা করবো।

tvs radeon price in bangladesh 

যারা একটি কমিউটার মোটরসাইকেল কেনেন মূলত মাইলেজ, কমফোর্ট, রাইডিং এক্সপেরিয়েন্স, এবং পারফর্মেন্স এর জন্য, তাদের জন্য TVS Radoen কেমন পারফর্ম করে? TVS Radeon একটি ১১০ সিসি কমিউটিং বাইক। এর ইঞ্জিনটি এয়ার কুলড এবং বিএসফোর স্ট্যান্ডার্ড মেইনটেইন করে। বাইকটির ইঞ্জিন ৮.২ বিএইচপি শক্তি এবং ৮.৭ নিউটন মিটার টর্ক উতপন্ন করে। বাইকটিতে একটি ৪-স্পীড গিয়ারবক্স রয়েছে। বাইকটির ইঞ্জিন যথেষ্ট শক্তিশালি, এবং হাই এন্ড এ বেশ ভালো পাওয়ার ডেলিভারি দেয়।

tvs radeon 110 

বাইকটির ইঞ্জিনটি খুবই স্মুথ, এবং এটি ৮০ কিমি/ঘন্টা পর্যন্ত খুব স্মুথলি এক্সেলেরেট করে। বাইকটির এক্সহস্ট এর সাউন্ড কিছুটা স্পোর্টি। বাইকটির ইঞ্জিন ৬৫-৭০ কিমি/ঘন্টা স্পীড পর্যন্ত বেশ স্মুথ থাকে, তবে ৭৫ কিমি/ঘন্টা স্পীডে বাইকে কিছুটা ভাইব্রেশন শুরু হয়। এই ভাইব্রেশন হ্যান্ডেলবার এবং ফুটপেগে বেশি টের পাওয়া যায়। অন্যান্য সকল আধুনিক বাইকের মতো TVS Radeon বাইকেও কিকস্টার্টার এবং সেলফস্টার্টার রয়েছে।

TVS Radeon রিভিউ

  বাংলাদেশে এমন কিছু কমিউটার বাইক রয়েছে যেগুলোতে পিলিয়নসহ লম্বা পথ ধরে বাইক রাইড করলে ইঞ্জিনটি বেশ অনেকটাই ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তবে, TVS Radoen এ এমনটা দেখিনি আমরা। একজন পিলিয়নসহও বাইকটির ইঞ্জিন শহরে এবং হাইওয়েতে যথেষ্ট পরিমান পাওয়ার ডেলিভারি দিচ্ছিলো। বাইকটির সীটটি যথেষ্ট বড় ও আরামদায়ক। TVS Radoen বাইকটির স্টাইলিং গড়পড়তা বাইকের চাইতে কিছুটা অন্যরকম। বাইকটিতে মেটালিক কালার অপশন রয়েছে, এবং বাইকটির সামনে ডিআরএল দেয়া হয়েছে। সামনে থেকে ভোর বা সন্ধ্যার আলোতে বাইকটিকে অসাধারন দেখায়! যদিও হেডলাইটটা এসি হেডলাইট, তবে থ্রটল অফ থাকলেও এটা সম্পূর্ন নিভু নিভু হয়ে যায় না।

tvs radeon

  বাইকটিতে অনেক অংশেই ক্রোম কালার ব্যবহার করা হয়েছে। হেডলাইটের  চারপাশে, চারকোনা স্পিডোমিটারে, এবং সাইলেন্সারে ক্রোম ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়াও এর ফুয়েল ট্যাংকের পাশে রাবারের ট্যাংক প্যাড দেয়া হয়েছে। বাইকটিতে স্ট্যান্ডার্ড লাগেজ হোল্ডার, শাড়ি গার্ড, গ্র্যাব রেইল এবং সাইড বাম্পার দেয়া হয়েছে। বাইকটির হ্যালোজেন হেডলাইট রাতের বেলা রাইড করার জন্য যথেষ্ট আলো দেয়।

radeon 110 price 

স্পীডোমিটারটি খুবই স্ট্যান্ডার্ড একটি ইউনিট, এতে স্পীডোমিটার, ফুয়েল গজ, এবং অন্যান্য ওয়ার্নিং লাইট রয়েছে। একইসাথে, স্পীডোমিটারে একটি সাইড স্ট্যান্ড ইন্ডিকেটর রয়েছে। এছাড়াও এখানে পাওয়ার এবং ইকো মোড এর ইন্ডিকেটর রয়েছে, যেটা আপনাকে বলবে যে আপনি কোন মোডে বাইক রাইড করছেন। রাত্রিবেলা স্পীডোমিটারের ইন্ডিকেটর সামান্য কনফিউজিং মনে হতে পারে, কারন ইকো মোড এবং নিউট্রাল ইন্ডিকেটর – দুটোই সবুজ রঙ এর। কিছুদিন রাইড করার পরে রাইডার এতে অভ্যস্ত হয়ে যাবেন।

tvs radeon 110cc 

TVS Radeon এ সরাসরি TVS Apache RTR 160 4V এর সুইচ গিয়ার ব্যবহার করা হয়েছে, এবং এগুলো খুবই ভালো কোয়ালিটির সুইচ। বাইকের পেছনে সিটের সাথে গ্র্যাব রেইল রয়েছে, এবং এর সাথে একটি প্লাস্টিক ট্রে রয়েছে, যেখানে  রাইডার তার জিনিসপত্র ক্যারি করতে পারবেন। একটি কমিউটিং মোটরসাইকেল হওয়া সত্ত্বেও এর কালার কোয়ালিটি, প্লাস্টিক কোয়ালিটি, ফিনিশিং এবং বিল্ড কোয়ালিটি প্রায় টিভিএস এপাচি আরটিআর ১৬০ ৪ভি এর মতোই! বাইকের সিটিং পজিশন খুবই কমফোর্টেবল, এবং পিলিয়ন নিয়ে রাইড করার পরেও বাইকের সামনের টেলিস্কোপিক সাসপেনশন এবং পেছনের ৫-স্টেপ এডজাস্টেবল শক এবসর্ভার খারাপ রাস্তায়ও খুবই ভালো ফিডব্যাক দেয়। 

tvs radeon price

 এছাড়াও হাই গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স এর কারনে আপনি সহজের স্পীড ব্রেকার কোনপ্রকার সমস্যা ছাড়াই পার হতে পারবেন। এই বাইকটি নিয়ে শহরের ভারী ট্রাফিকেও মুভ করা কোন ব্যাপারই নয়। এছাড়াও এর ভালো টার্নিং রেডিয়াস এবং ভালো স্যাডল হাইট আপনাকে রাইড করার সময় খুবই ভালো ব্যালেন্স দেবে। বাইকের একটি বিষয়ে ঘাটতি রয়েছে, সেটা হচ্ছে এর সামনে ডিস্ক ব্রেক না থাকা। বাইকটিতে টিভিএস দিয়েছে সিনক্রোনাইজড ব্রেকিং সিস্টেম। বাইকটির সামনের এবং পেছনের চাকায় ড্রাম ব্রেক দেয়া হয়েছে, যেটা ৬০-৭০ কিমি/ঘন্টা স্পীডে রাইড করার জন্য বেশ ভালো হলেও এর চেয়ে বেশি স্পীড বা ইমার্জেন্সি ব্রেকিং এর জন্য এই ব্রেকিং সেটাপ যথেষ্ট নয়।

tvs radeon test ride review

  বাইকটির ওজন ১১২ কেজি, এবং এর ফুয়েল ট্যাংকে ১০ লিটার তেল ধরে। আমাদের টেস্টিং পিরিয়ডে আমরা টপ স্পীড পেয়েছি ১১০ কিমি/ঘন্টা। যদিও আমরা হাইওয়েতে ৬০ কিমি/লিটার এর মাইলেজ পেয়েছি, তবে সিটিতে আমরা মাইলেজ পেয়েছি ৫০-৫২ কিমি/লিটার।

tvs radeon top speed 

ভালো দিকসমূহঃ

  • শক্তিশালি ইঞ্জিন
  • ভালো বিল্ড কোয়ালিটি
  • ভালো প্লাস্টিক কোয়ালিটি
  • ভালো সাসপেনশন
  • শহরে ও হাইওয়েতে ভালো হ্যান্ডলিং
  • টিউবলেস টায়ারস
  • লম্বা ও কমফোর্টেবল সীট 

খারাপ দিকসমূহ

  • স্টাইলিং মডার্ন নয়, এটাতে কিছুটা ক্লাসিক লুক দেয়া হয়েছে।
  • সামনের ডিস্ক ব্রেকের অভাব টের পাওয়া যায়। আপনি হাই স্পিড ব্রেকিং এ কনফিডেন্স পাবেন না।
  • বাইকটিতে আরো একটু শক্তিশালি হেডলাইট দরকার ছিলো
  • স্পীডোমিটারে, নিউট্রাল এবং পাওয়ার লাইট রাতেরবেলা আপনাকে কনফিউজড করে দেবে। 

TVS Radeon একটি খুবই ভালো কমিউটিং মোটরসাইকেল। এতে আধুনিক ফিচারগুলোর পাশাপাশি সিনক্রোনাইজড ব্রেকিং সিস্টেম থাকার ফলে এটা কমিউটার বাইকারদের জন্য খুবই ভালো একটি অপশন। বর্তমান মহামারিতে যেখানে সারাবিশ্বেই গণপরিবহন পরিহার করার জন্য পরামর্শ দেয়া হচ্ছে, সেখানে ১ লাখ টাকা বাজেটে এই বাইকটি ভালো ভ্যালু ফর মানি।