TVS Apache RTR 160 4V ১৩,০০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ-সিয়াম

This page was last updated on 15-Jan-2025 08:00pm , By Shuvo Bangla

আমি মোঃ নাফিজ ইকবাল সিয়াম। আপনাদের সাথে আমার TVS Apache RTR 160 4V বাইকের মালিকানা রিভিউ শেয়ার করবো ।

tvs apache rtr 160 4v

Also Read: Top 5 100cc Moped Bikes In Bangladesh - Bikebd 

আমি বর্তমানে রাজশাহী জেলার তানোর উপজেলার  মহাদেবপুর গ্রামে বসবাস করছি। আমার প্রথম বাইক এটি বাইকটি আমি ১৩,০০০  কিলোমিটার এর বেশি রাইড করছি।


 
আমার জীবনের প্রথম বাইক চালানো শেখা Honda CD80  বাইক দিয়ে। আমি যখন ৫ম শ্রেণীতে পড়তাম তখন বাইকের প্রেমে পড়ে যাই। বাইক চালাতে না পারলেও বাইকে উঠে বসে থাকতাম বার বার। তখন ছোট ছিলাম তাই বাইকে বসে ঠিক মতো পা দিয়ে মাটি ছুঁতে পারতাম নাহ!
 
প্রচন্ড বাইক চালানোর ইচ্ছা ছিল। একদিন ছোট চাচাকে নিয়ে সাহস করে বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম, সবকিছু আগে থেকেই জানা ছিল তার জন্য প্রথম দিনে বাইক চালাতে খুব একটা সমস্যা হয়নি আমার, এভাবে আস্তে আস্তে পুরো পরি চালানো শিখে গেলাম। জীবনের প্রথম বাইক চালানোর অভিজ্ঞতাটা সত্যিই অসাধারণ ছিল ।
 
বাইকিং ভালোবাসার কয়েকটি কারণ এর মধ্যে অন্যতম কারণ হচ্ছে বাইকিং এর মধ্যে রয়েছে স্বাধীনতা। যা অন্য কোন কিছুর মধ্যে নেই। আপনি চাইলেই বাইক যেভাবে চাইবেন সেভাবেই চলবে, আস্তে চাইলে আস্তে চলবে, দ্রুত চাইলে দ্রুত চলবে। যখন যা ইচ্ছা তাই করা যায় বাইক নিয়ে।

tvs apache rtr 160 4v red

Also Read: Tvs bike showroom in Thanapara: Kushtia TVS Gallery (Khustia) 

আমি একাকী ভ্রমন করতে ভালোবাসি তার জন্যও বাইক আমার কাছে খুব প্রিয়। যখন আমার বয়স ১৬ হয় তখন বাইক নেওয়ার খুব ইচ্ছা ছিল। কিন্তু এক বাপের এক ছেলে হওয়ার কারণে বাসা থেকে বাইক দিতে চাইত না। তাও বাবাকে রাজি করিয়ে বাইক নেওয়ার চিন্তা করি।


 
কোণ বাইক নিব তা সিলেক্ট করা ছিল না। অনেক ভাই ব্রাদার এবং বাইকবিডি ইউটিউব চ্যানেলের পরামর্শ নিয়ে TVS Apache RTR বাইকটা কেনার সিদ্ধান্ত নেই এবং TVS Brand এর বাইক বেছে নেওয়ার কারণ কম্ফোর্ট, স্পিড, রেডিপিকাপ, সকলের পছন্দ,  সার্ভিস সেন্টারে জেনুইন পার্টস পাওয়া যায়, সার্ভিস শোরুমেই করানো যায়, কোন জায়গায় ঘুরতে হয় না।
 
আমি ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের ৮ তারিখে আমার বর্তমান বাইকটা TVS Showroom তাজ এন্টারপ্রাইজ থেকে ২,০০,০০০ টাকায় ক্রয় করি যা ছিল আমার জন্মদিনে আমার চেয়ে নেয়া উপহার! বাইকটি যেদিন ক্রয় করেছি তার আগের রাতে ঘুম হয়নি। শুধু চিন্তা করেছি কখন সকাল হবে। সকাল হওয়ার পর আব্বুকে নিয়ে তাজ এন্টারপ্রাইজ টিভিএস শোরুমে বাইক এর জন্য প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র টাকা জমা দিয়ে বাইকটি ক্রয় করি।



আমি মুলত ছোট বেলা থেকেই বাইক এবং প্রকৃতি প্রেমি ছিলাম তবে কেন এতটা ভালোবাসি বা পছন্দ করি তা আমার এখনো অজানা! আমার জীবনের ব্যক্তিগত কিছু কারনে আমি একটা লম্বা সময় হতাশায় ভুগছিলাম এ সময় আমার একমাত্র সঙ্গী ছিল আমার বাইকটা, আমি এখনো মন খারাপ হলেই বাইক নিয়ে বেড়িয়ে পড়ি একা একা সর্ট টুর দেই মাইন্ড ফ্রেস হলে আবার বাসায় চলে আসি ।
 
প্রথম নিজের বাইকটি চালানোর অভিজ্ঞতা ছিল অসাধারণ যা কখনো ভোলার নয়। মনের ভিতরে একটা অন্যরকম তৃপ্তি কাজ করছিল। আমি কেশরহাট তাজ এন্টারপ্রাইজ টিভিএস শোরুম থেকে বাইকটি ক্রয় করার জন্য বাইকটিতে এক বছরে পাঁচবার ফ্রি সার্ভিস করিয়েছি।
 
নতুন অবস্থায় মাইলেজ খুবই ভালো পেতাম ৪৫ থেকে ৫০ এর মধ্যে। কিন্তু বাইকটি যখন ৩৫০০ কিলোমিটার রানিং হয়, তারপর থেকে আস্তে আস্তে মাইলেজ কমতে শুরু করে, আমার বাইকটি সাড়ে ১৩ হাজার কিলোমিটার চলেছে বর্তমানে মাইলেজ ৩৫ থেকে ৩৭ পাই।

tvs apache rtr 160 4v headlight

Also Read: TVS Bike showroom in Bogura: Chowdhury Enterprise

আমি প্রথম থেকে টিভিএস রেকোমেন্ডেড ট্রুফোর 10w30 গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করেছি যার বর্তমান বাজার মূল্য 1050 টাকা । ১টি ইঞ্জিন অয়েল দিয়ে ২০০০ কিলোমিটার চালাই। আলহামদুলিল্লাহ আমি এই ইঞ্জিন অয়েলে সন্তুষ্ট, যেমন স্মুথ, তেমন হাই কোয়ালিটি।


 
আমি প্রথম ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করি ৩০০ কিলোমিটারে, দ্বিতীয়বার ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করি ১৫০০ কিলোমিটারে, তৃতীয়বার পরিবর্তন করি ২০০০ কিলোমিটার এবং চতুর্থবার পরিবর্তন করি ২০০০ কিলোমিটারে এখনো একই নিয়মে চলতেছে  । চেইন স্প্রোকেট সেট পরিবর্তন করি ১০ হাজার কিলোমিটারে ,  বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ছোট খাটো সামনে-পিছনে বিয়ারিং, হাইড্রোলিক এবং ক্লাস,বল, এয়ার ফিল্টার অয়েল ফিল্টার, পরিবর্তন করেছি।
 
৭০০০ কিলোমিটারের সময় নাটোর গ্রিন ভ্যালি পার্ক ভ্রমণ করি তখন বাইকের টপ স্পিড ছিল ১৩৯। কিন্তু বর্তমানে বাইকটি সাড়ে ১২ হাজার কিলোমিটার চালানোর পরেও বাইকটির টপ স্পিড পাই ১৩৭ (সিঙ্গেল) ১২৯ পিলিওন সহ ।
 

TVS Apache RTR 160 4V বাইকের কিছু ভালো দিক -

  • বাইকটি আমার জন্য যথেষ্ট কমফর্টেবল।
  • বাইকের মাইলেজ এবং রেডিপিকাপ আলহামদুলিল্লাহ!
  • বাইকটি দিয়ে সর্ট ট্যুরে খুবই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করা যায় কিন্তু লং ট্যুরে একটু কষ্ট হয়ে যায় তবে বিরিতি নিয়ে চালালে সমস্যা হয়না। বাইকটির কন্ট্রোলিং খুবই ভালো লেগেছে আমার ।
  • বাইক টির লুক খুবই ভালো লেগেছে এবং ব্রেকিং সিস্টেমেও আমি সন্তুষ্ট ।

tvs apache rtr 160 4v bike

Also Read: TVS Apache RTR 160 16,000 KM User Review - Sk Jubayeer

TVS Apache RTR 160 4V বাইকের কিছু খারাপ দিক -

  • টপ স্পিডে সামান্য ভাইব্রেশন অনুভব করেছি।
  • টায়ারে গ্রিপ খুবই কম।
  • চেইন সেট দ্রুত ক্ষয় হয়ে যায়।
  • হেড লাইটের আলো খুবই কম।
  • ১০ হাজার কিলোমিটারে সাইলেন্সারের পাটিশন ফেটে গিয়েছিল । যা খুব কষ্ট দিয়েছে আমাকে ।
 
বাইকটি দিয়ে আমি ৩ টির বেশি লং ট্যুর করেছি। তার মধ্যে অন্যতম হলো নওগাঁ পাহাড়পুর ভ্রমণ, নাটোর গ্রীন ভ্যালি পার্ক ভ্রমণ, এবং মুজিবনগর ভ্রমণ ।

tvs apache rtr 160 4v bike picমাইলেজ , কম্ফোর্ট , ব্রেকিং সিস্টেম সবকিছু মিলিয়ে একটি অসাধারণ বাইক। বাইকটিতে তেমন কোন বড় ধরনের সমস্যা  হয়নি। চাকার গ্রিপ বাদে বাইকটি সেরা ছিল। মনে হয় বাংলাদেশের রাস্তার জন্য ১০০ থেকে ১১০ স্পিড বেস্ট। কথায় আছে যত গতি তত ক্ষতি। অবশ্যই চোখ কান খোলে রেখে রাইড করবেন। সর্বদা হেলমেট পরিধান করে বাইক রাইড করবেন । ধন্যবাদ ।

 
লিখেছেনঃ মোঃ নাফিজ ইকবাল সিয়াম 
 
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।