TVS Apache RTR 160 ২০,০০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ - আরিফুল
This page was last updated on 31-Jul-2024 12:26pm , By Ashik Mahmud Bangla
আমি আরিফুল । আমি নাটোর লালপুর থাকি। আমি আমার ব্যবহার করা TVS Apache RTR 160 বাইকটি নিয়ে কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো । চলুন শুরু করা যাক।
TVS Apache RTR 160 ২০,০০০ কি.মি. রাইড রিভিউ
আমার জীবনের প্রথম বাইক ছিলো Xingfu । খুব পছন্দের ছিল বাইটা যত্ন নিতাম অনেক ।প্রথম বাইক আমাকে আমার আব্বু কিনে দিয়েছিলো । তখন আমি অষ্টম শ্রেনীতে পড়ি । তখন বাইকটাকে বেশ যত্ন করতাম কিন্তু কিছু পার্টস নষ্ট হলে সহজে সেটা ঠিক করতে পারতাম না আব্বু কে বলে বলে ঠিক করতে হতো, কারণ আমার আব্বু বাইক চালাতে পারে না। পরবর্তিতে আমার এক মামার কাছে বিক্রি করে দিয়েছি এখনো আছে ।
বাইক কেনো ভালোবাসিঃ বাইক হলো আমার কাছে ছোটবেলা থেকে ভালোবাসার একটি জিনিস । বাইক দেখলে নানা ধরনের প্রশ্ন জাগতো মনে , ভাবতাম বাইক কবে কিনবো । বাইকিং করাটা হলো আমার নেশা, এই নেশা সব নেশাকে হার মানায়। বাইকিং করাটা আমার কাছে একটা নেশা । দূরে দূরে বাইক নিয়ে ঘুরতে আর ও বেশি ভালো লাগে । কাজের জন্য অনেক সময় বাইক ব্যবহার করি, তখন আমাকে বাইক অনেক সাহায্য করে ।
TVS Apache RTR 160 বাইকটি আমি কি করে বেছে নিলামঃ আমি আগে থেকে জানতাম TVS Apache RTR 160 বাইকটার দাম আমার সামর্থ্য এর মধ্যে হবে তাই আমি এই বাইকটা বেছে নিয়ে ছিলাম। বাইকটির লুক আমার বেশ পছন্দ হয়ে ছিলো। প্রথমে শোরুম এর মধ্যে গিয়ে অনেক বাইক দেখে একটার চাবি অন করে স্টার্ট দিয়েছিলাম। এই বাইটার সাউন্ড অনেক ভালো লাগছিলো অনেকটা আলাদা একটা সাউন্ড। তাই বাইক শোরুম থেকে নামিয়ে আরও একবার স্টার্ট দিয়ে সাউন্ড দেখলাম এবং বাইকটার সব কিছু ভালো করে দেখলাম। এই বাইকটা খুব ভালো লাগলো । এবারে আসি আমার পছন্দের বাইকটি কত দামে কিনছিলাম - আমার বাইকটার বেশি দাম ছিলো না তখন ঈদের জন্য কিছু অফার ছিলো তাই বাইকটির দাম ছিলো ১ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা মাত্র । বাইকটা আমি কিনছিলাম নাটোর বড়হরিশপুর গণি হাউজ থেকে। বাইকটিতে আমি তখন ১০ হাজার টাকা ডিস্কাউন্ট এ কিনে ছিলাম।
আমার বাইক কেনার দিনের রাতের ঘটনাঃ আমার আব্বু বললো বাইক কিনতে যাবে আমার মন তো অনেক খুশি, সকালে উঠে ফ্রেশ হয়ে আব্বু বললো এক দাদা এর কাছে যেতে ওখানে কিছু টাকা দিবে নিতে হবে। গেলাম উনি টাকা দিলো এসে আমি আর বড় ভাই বাইকে যাচ্ছিলাম শোরুম। আমার আব্বু আর এক চাচা আমাদের আগে চলে গেছে। আমি যাচ্ছিলাম আর ভাবছিলাম ওখানকার সবচেয়ে দামী এবং ভালো বাইকটাই নিবো। বাইকে করে আমাদের এখান থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে শোরুম যাচ্ছিলাম আর বড় ভাই এর রাইড করা দেখছিলাম। সেদিনের দিনটা ছিলো অনেক আনন্দের দিন । সব প্রসেস শেষে বাইকটা যখন আমাকে বের করে দিলো আমি তখন টেষ্ট ড্রাইভ দিলাম। ভালো লাগছিলো যখন নতুন বাইকে উঠলাম তখন মনে হচ্ছিলো আমি ভাবছি স্বপ্নে আছি কিন্তু আমি বাস্তবে ছিলাম। বাইকে উঠে বাইক স্টার্ট করলাম বাইকে গিয়ার দিলাম অনেক ভালো লাগছিলো। নতুন বাইক বেশি স্পিডে চালানে যাবে না বলে দিয়ে ছিল তাই আস্তে চালাম। খুব ভালো লাগলো প্রথম বাইক চলানের অনুভুতি ।
আমার বাইকটা চালানোর মূল কারণ আমি পেশায় একজন চিকিৎসক। তাই আমাকে অনেক দূরে যেতে হয় বাইকে, অনেক পরিমান সুবিধা হয় । আর তাছাড়া আমি বাইক ছোটবেলা থেকে অনেক ভালোবাসি । আমি একজন বাইক লাভার বাইক নিয়ে সব ধরনের কাজ করে অনেক সুবিধা পাওয়া যায় অল্প সময়ে যে কোন জায়গায় ভ্রমন করা যায় তাই বাইক চালাই । Apache RTR 160 বাইকে আছে ১৬০ সিসি একটি পাওয়ারফুল ইঞ্জিন, ৫ গিয়ার, ১৬ লিটার ধারন ক্ষমতার একটি ফুয়েল ট্যাংক, এলইডি ব্যাক লাইট, হেড লাইট নন এলইডি, ইন্ডিকেটর গুলো ভাল্ব । বাইকের সামনের চাকায় ডিক্স ব্রেক পিছনে ড্রাম ব্রেক । উভয় টায়ার টিউবলেস, থ্রি পার্ট হ্যান্ডেলবার । আমি প্রতিদিন বাইকটি রাইড করি আর বাইকটি রাইড করার সময় মনের মধ্যে অন্য রকম একটা ভালো লাগার অনুভুতি আসে । বাইকটি প্রতিদিন না রাইড করলে ভালো লাগে না । বাইকটার দ্রুত স্পিড ওঠে এটার জন্য আর ও বেশি ভালো লাগে । বাইকটি নিয়ে ওভারটেক করতেও আমার অনেক ভালো লাগে, সব মিলিয়ে বাইকটা নিয়ে আমার অনেক ভালো লাগার অনুভুতি আছে ।
সার্ভিসিংঃ আমি আমার বাইক টা ৬ বার সার্ভিসিং করেছি । আমি আমার বাইকটা যেখান থেকে কিনছিলাম নাটোর গনি হাউজ ওখান থেকেই সার্ভিসিং করেছি । আমি সার্ভিস সেন্টারে সমস্যা গুলো বলি সার্ভিস টিম টেস্ট রাইড দেয় এর পরে আমার সমস্যা গুলো সমাধান করে দেয় । সার্ভিস টিম খুব যত্ন সহকারে আমার বাইকটাকে সার্ভিসিং করে দেন । সার্ভিস নিয়ে আমি সন্তুষ্ট ।
মাইলেজঃ ২৫০০ কিলোমিটার এর পূর্বে বাইকের মাইলেজ টা ছিলো ৩৫ এর মত । আর ২৫০০ কি মি পর থেকে মাইলেজ ৪০ । মাইলেজ নিয়ে আমি সন্তুষ্ট । যে পরিমান থ্রটল রেস্পন্স সেই হিসেবে বেশ ভালো মাইলেজ পাচ্ছি ।
বাইকের যত্নঃ বাইক হলো একটা শখের জিনিস কথায় আছে যত্ন নিলে রত্ন মিলে । আমি বাইকটি সপ্তাহে ১ বার করে ওয়াস, সঠিক সময়ে ইঞ্জিন ওয়েল পরিবর্তন করি , ব্রেক পার্ফরমেন্স এর দিকে খেয়াল রাখি , এয়ার ফিল্টার ,ক্লাচ ক্যাবেল লুব ,নিয়মিত চেইন লুব , চেইন এডজাস্ট, হাওয়ার প্রেশার চেক এগুলোর দিকে খেয়াল রাখি । আমি আমার বাইকে পার্ফরমেন্স চেক করার জন্য অনেক গুলো ইঞ্জিন ওয়েল ব্রান্ড চেঞ্জ করেছি । কোন সময় ক্যাস্ট্রোল একটিভ আবার কোন সময় মতুল, কোন সময় ভিসকো, কোন সময় ভ্যালভোলিন । এর মধ্যে ভিসকোটা অনেক ভালো লাগছে । এটাই এখন কন্টিনিউ করতেছি । আমি এটা ১৫০০ থেকে ২০০০ কিলোমিটার চালাই । স্মুথনেস টা খুব ভালোই ।
আমার বাইকটাতে কিছু কিছু পার্টস চেঞ্জ করেছি । আমার বাইকের চেইন স্পোকেট চেঞ্জ করেছি একবার, ডিস্ক ব্রেক শো চেঞ্জ করেছি ৩ বার । আমার বাইকে তেমন কোন মডিফাই করিনি । বাইক টা দিয়ে এখন পর্যন্ত আমার সর্বোচ্চ স্পিড ১২৯ । থ্রটল রেস্পন্স অসাধারন । আর স্পিড ও খুব দ্রুত উঠে । TVS Apache RTR 160 অনেক ভালো দিক আছে তার মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হিসাবে ৫ টি ভালো দিক উল্লেখ করা হলোঃ
- বাইকটির লুকস অসাধারণ
- রেডি পিক আপ এর কারনে স্পিড দ্রুত উঠে এবং ওভারটেক করতে বেশ কনফিডেন্স পাওয়া যায়
- রাইড করে বেশ কম্ফোর্ট
- মাইলেজও বেশ ভালো
- বাইকটির ইঞ্জিন যথেষ্ট মজবুত মনে হয়েছে
বাইকের কিছু খারাপ দিকও আছে এই বাইকটার খারাপ দিক গুলো হলোঃ
- উচ্চ আরপিএম এ প্রচুর ভাইব্রেশন ফিল করি
- বাইকের ব্রেকিং কন্ট্রোল খুব বেশি পছন্দ হয়নি
- স্পিডে হ্যান্ডেল এবং সিটে ভাইব্রেশন হয় যেটা বিরক্তিকর
- হেড লাইটের আলো কম
- ব্রেক ক্যালিপার এ মাঝে মাঝে প্রব্লেম করে
বাইকটি নিয়ে আমি অনেক জায়গাতে ভ্রমন করেছ। তার মধ্যে বগুড়া গিয়ে ছিলাম বাইকটা নিয়ে । খুব ভালো লাগছিলো বাইকটা নিয়ে পুরো বগুড়া শহর ঘুরছি । ভ্রমনে আমি একা ছিলাম । মহাস্থানগড় গিয়েছি, খুব ভালো ছিলো জায়গাটা । বাইকটি আমার কাছে অনেক শখের । আমার আব্বু আমাকে বাইকটা কিনে দেয়, বাইকটা কিনে দিয়ে সাবধানে চালাতে বলেছে । আমি সবসময় সেইফলি রাইড করতে পছন্দ করি । বাইকটা আমার কাছে বেশ ভালো লাগে, আপনারাও চাইলে এই বাইকটি নিতে পারেন । সব মিলিয়ে এটা অনেক ভালো একটা বাইক । আর এই বাইকটি আমার কাছে খুব প্রিয় একটা বাইক । আমি আমার বাইকটিকে খুব ভালবাসি । ধন্যবাদ ।
লিখেছেনঃ আরিফুল
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।