Suzuki Intruder টেস্ট রাইড রিভিউ - টীম বাইকবিডি
This page was last updated on 13-Jul-2024 12:41pm , By Ashik Mahmud Bangla
Suzuki Intruder টেস্ট রাইড রিভিউ
বাংলাদেশের মোটরসাইকেল মার্কেটে সর্বদাই কমিউটার মোটরসাইকেলই রাজত্ব করে আসছে, এবং এর পরবর্তী অবস্থানেই রয়েছে স্পোর্টস বাইক। অনেকেই আছেন যারা মাঝেমধ্যেই ক্রুজার বাইক রাইড করতে চান, ইনফ্যাক্ট বর্তমানে বাংলাদেশের মার্কেটে ক্রুজার বাইকের পরিমান ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আজ আমরা আপনাদের সামনে নিয়ে এসেছি সুজুকির মডার্ন ক্রুজার বাইক, Suzuki Intruder এর টেস্ট রাইড রিভিউ নিয়ে।
Suzuki Intruder বাংলাদেশে লঞ্চ করা হয়েছিলো ২০১৮ সালের মে মাসে। তখন থেকেই বাইকটি মার্কেটে বেশ উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলছে। যদিও ইতিমধ্যেই সুজুকি বাইকটির এফ-আই এবিএস এডিশনটি লঞ্চ করেছে, আজ আমরা আলোচনা করবো বাইকটির নন- এফআই এবিএস এডিশনটি নিয়ে। সুজুকি ইনট্রুডার এর কার্বুরেটর ভার্শনটি বর্তমানে এভিলেবল আছে দুটি কালারে – কালো এবং সিলভার। বর্তমান অফারে বাইকটির প্রাইজ হচ্ছে ২,৭৫,০০০ টাকা। ছোট এই ইনট্রুডার এর ইন্সপারেশন এসেছে অরিজিনাল সুজুকি ইনট্রুডার থেকে, যেটাতে ১৮০০ সিসি ইঞ্জিন রয়েছে এবং ড্রাইভ শ্যাফটের মাধ্যমে বাইকটি চলাফেরা করে।
ইঞ্জিনের ব্যাপারে বলতে গেলে, বাংলাদেশে সুজুকি ইনট্রুডার এর ইঞ্জিনটি সুজুকি জিক্সার এর মতোই একই ইঞ্জিন। ইঞ্জিনটি ১৪.৬ বিএইচপি শক্তি এবং ১৪ নিউটন মিটার টর্ক উতপন্ন করে। ১৫৫ সিসি ইঞ্জিনটি সিঙ্গেল সিলিন্ডার এয়ার কুলড ইঞ্জিন, এবং ফুয়েল পাস করার জন্য কার্বুরেটর ব্যবহার করে। বাইকটিতে স্টার্টিং মেথড হিসেবে শুধুমাত্র ইলেকট্রিক স্টার্ট রয়েছে, কোন কিকস্টার্ট নেই। বাইকটির ইঞ্জিন ৭০০০ আরপিএম এর পরে কিছুটা ভাইব্রেশন দেয়, এবং সেটা পরিমানে খুবই কম। আমি খুবই অবাক হয়েছিলাম যখন আবিষ্কার করলাম যে ইঞ্জিনটি কোনপ্রকার ডিটিউন করা হয়নি, এই বাইকটি ঠিক সুজুকি জিক্সারের মতোই রেডি পিকাপ দেয়। যারা তাদের ক্রুজার বাইকে রেডি পিকাপ ভালোবাসেন, তাদের জন্য এটি একটি বোনাস! বাইকটির গিয়ার চেঞ্জ বেশ স্মুথ। ইঞ্জিনের চারপাশে প্রচুর প্যানেল ও ইত্যাদি থাকার পরেও ইঞ্জিনটি কোনপ্রকার ওভারহীট হয় না।
বাইকটিতে হ্যালোজেন হেডলাইট, মাসকুলার ফুয়েল ট্যাংক, এবং সরাসরি সুজুকি জিক্সার থেকে নিয়ে আসা স্পিডোমিটার রয়েছে। বাইকটির রাইডিং পজিশন বেশ লো, এবং ফুটপেগগুলো বেশ সামনের দিকে বসানো হয়েছে, ক্লাসিক ক্রুজার বাইকের মতো। শুরুর দিকে বাইকটি রাইড করে কিছুটা আনকমফোর্টেবল মনে হলেও ৩/৪ দিন চালাবার পরে এটা কমফোর্টেবল হয়ে পড়ে। ব্যক্তিগতভাবে আমার এই ডুয়েল এক্সহস্টটি খুবই পছন্দ। যদিও এটা বেশ বড় এবং বাইকের ডানদিকে প্রচুর পরিমানে জায়গা দখল করে কিন্তু একটু দূর থেকে এটাকে মারাত্মক দেখায়। অবাক করার বিষয় হচ্ছে, লো রাইডিং পজিশন থাকার পরেও বাইকটিতে ১৭০ মিলিমিটার এর গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স রয়েছে। এমনকি পিলিয়ন নিয়ে রাইড করার পরেও ঢাকা শহরের স্পীডব্রেকারে বাইকের নিচে কোনপ্রকার ঘষা খায় না।
বাইকটির সামনে দেয়া হয়েছে হ্যালোজেন হেডলাইট এবং এর নিচে এলইডি পার্কিং লাইট রয়েছে। বাইকটির হেডলাইট ইলুমিনেশন হাইওয়ে এর জন্য বেশ ভালো এবং পেছনের এলইডি টেইললাইট ভালো একটি পজিশনে রাখা হয়েছে, যেখান থেকে পেছনের সকল যানবাহন সহজেই দেখতে পায়।
বাইকটির সামনে সুজুকি দিয়েছে ২৬০ মিলিমিটার এর ফ্রন্ট ডিস্ক ব্রেক, যাতে রয়েছে সিঙ্গেল চ্যানেল এবিএস। হাইস্পিড ব্রেকিং এর জন্য এবিএস খুবই প্রয়োজনীয় একটি ফিচার। ব্রেকিং এর সময় বাইকের কন্ট্রোলিং এ সামনের এবিএসটি ১০০% কনট্রিবিউট করে। এছাড়াও বাইকের পেছনে ২২০ মিলিমিটার এর ডিস্ক ব্রেক রয়েছে।
আমাদের টেস্টিং এর সময় আমরা দেখেছি যে বাইকটি সম্পূর্ন নিয়ন্ত্রনে রাখার জন্য এবিএস খুবই উপযোগী। আমার মনে হয় যারা বাইকটি রাইড করবে তাদের তূলনায় বাইকটিতে বেশি পাওয়ার দেয়া হয়েছে। যারা এই বাইকটি চালাবে, তাদের মধ্যে বেশিরভাগই স্পীডের চাইতে কমফোর্ট কে বেশি প্রাধান্য দেবে। হেভি ব্রেকিং এর ক্ষেত্রে বাইকের পেছনের অংশ কিছুটা স্লাইড করে, কাজেই পেছনের ব্রেক পেডাল চাপার সময় আপনার কিছুটা সতর্ক থাকতে হবে।
বাইকের সামনে দেয়া মনোশক সাসপেনশন বেশ ভালো কাজ করে। পেছনের মনোশক সাসপেনশনটি সুইং আর্ম এর সাথে সংযুক্ত এবং বেশ ভালো পারফর্মেন্স দেয়। বাইকের পেছনের সাসপেনশটি কিছুটা নরম, এবং বাংলাদেশের ভাঙা রাস্তার বিভিন্ন ঝাকুনি এটা বেশ ভালোভাবেই হ্যান্ডেল করে। সুজুকি এই বাইকটির সামনে দিয়েছে ১০০ সেকশন টায়ার এবং পেছনে দিয়েছে ১৪০ সেকশন টায়ার। যদিও এটি কর্ণারিং করার মতো বাইক নয়, কিন্তু বড় হুইলবেজ এবং পেছনের ১৪০ সেকশন টায়ারের কারনে আপনি চাইলি হাই স্পীড কর্নারিং করতে পারবেন।
শহরে এই বাইকটি রাইড করা কিছুটা ঝামেলার মনে হতে পারে, বিশেষত যদি আপনি ঢাকা শহরের ভারী ট্রাফিকের মধ্যে আটকা পড়েন। আপনি চাইলেই কমিউটার বাইকের মতো দ্রুত বাইকটির দিক বদলাতে পারবেন না, এবং বাইকটি বেশ প্রশস্থ হওয়ায় এবং টার্নিং রেডিয়াস বেশি হওয়ায় জ্যামের মধ্যে ছোটখাটো ফাকা দিয়ে বাইকটি নিয়ে বের হওয়া যায় না। য়ামার মনে হয় যারা এই বাইকটি কিনবে, তারা এই ইস্যুটি নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামাবে না। Suzuki Intruder তার চ্যাসিস, ইঞ্জিন, সাসপেনশন, স্পিডোমিটার, সবকিছুই ধার করে এনেছে সুজুকি জিক্সার থেকে। কাজেই, বাইকটির স্পেয়ার পার্টস পাওয়া কোন ঝামেলার হবে না। তবে, বাইকটির বডি প্যানেলে প্রচুর পরিমানে বডি কিট রয়েছে। যদিও এসকল বডি প্যানেলের কারনে বাইকটি দেখতে অনেকটাই আকর্ষনীয়, কিন্তু এটা আমার কাছে কিছুটা অতিরিক্ত মনে হয়েছে। এতোকিছুর পরেও বাইকটির ওজন ১৪৮ কিলোগ্রাম মাত্র, যা সেগমেন্ট অনুযায়ী ঠিকঠাক।
বাইকটির সবচাইতে অদ্ভুত বিষয়টি হচ্ছে এর ইগনিশন কী এর অবস্থান। এখন পর্যন্ত আমি এই ইগনিশন কী হ্যান্ডেলবারের সামনের দিকে দেয়ার কোন কারন খুজে পাইনি। বাইকটির হ্যান্ডেলবারটি সোজা হবার বদলে যদি পেছনে অর্থাৎ রাইডারের দিকে একটি বাকানো থাকতো তবে রাইড করা আরো বেশি কমফোর্টেবল হতো। এই বাইকটি থেকে সর্বোচ্চ পরিমান ফিডব্যাক পাবার জন্য একে নিয়ে যেতে হবে হাইওয়েতে। বাইকটি খুব সহজেই ৮০-১০০ কিমি/ঘন্টা স্পীডে ক্রুজ করা যায়। বাইকটি নিয়ে সর্বোচ্চ স্পিড আমরা পেয়েছি ১২২ কিমি/ঘন্টা, যা ক্র্যুজিং এ কোন প্রভাব ফেলবে না।
বাইকটির পিলিয়ন সিটটি বেশ ছোট, এবং রাইডিং এর সময় ব্যালেন্সিং এর জন্য পিলিয়নের রাইডারের কাছাকাছি বসতে হবে। এছাড়াও বাইকটির রাইডিং হাইট নিচু হওয়ায় লম্বা যাত্রায় পিলিয়ন কিছুটা আনকমফোর্টেবল বোধ করতে পারে। প্রথম সার্ভিসিং এর পর থেকেই বাইকটির গিয়ারবক্স সফট হয়ে যায়। বাইকটির প্লাস্টিকের কোয়ালিটি এবং ফিট এবং ফিনিশিং আমাদের কাছে বেশ ভালোমানের মনে হয়েছে, তবে এর আসল মান বোঝা যাবে একবছর ব্যবহার করার পরে। ক্রুজার বাইক হিসেবে বাইকটির ১১ লিটারের ফুয়েল ট্যাংক কিছুটা কম, এখানে কমপক্ষে ১৫ লিটারের ফুয়েল ট্যাংক দরকার ছিলো। সুজুকি জিক্সার এর ইঞ্জিন এবং ১৪৮ কিলোগ্রাম ওজন হওয়া সত্ত্বেও সুজুকি ইনট্রুডার ঢাকা শহরে ৩৫ কিলোমিটার/লিটার এর মাইলেজ দেয়, এবং হাইওয়েতে ৪২ কিলোমিটার পর্যন্ত মাইলেজ পাওয়া যায়। মাইলেজ কিছুটা কম হবার মূল কারন এর বাড়তি ওজন, এবং বাইকটি আকারে বড় হবার কারনে একে অনেক বেশি বাতাস কেটে চলতে হয়।
Suzuki Intruder - ভালো দিকসমূহ
- জিক্সারের ইঞ্জিন হওয়ায় বেশ ভালো রেডি পিকাপ
- ইঞ্জিন থেকে খুবই কম ভাইব্রেশন
- ভালো প্লাস্টিক কোয়ালিটি, ফিট এবং ফিনিশিং
- কমফোর্টেবল রাইডিং পজিশন
- সিঙ্গেল চ্যানেল এবিএস এর কারনে ভালো ব্রেকিং স্ট্যাবিলিটি
- সফট সাসপেনশন সেটাপ
Suzuki Intruder - খারাপ দিকসমূহ
- বাইকটি অতিরিক্ত প্লাস্টিক কিট
- পিলিয়ন সিট ছোট এবং লং রাইডের জন্য কমফোর্টেবল নয়
- ২,৭৫,০০০ টাকা কিছুটা ব্যয়বহুল
- শহরের ট্রাফিকে নাড়াচাড়া করা খুবই কঠিন
বর্তমানে বাংলাদেশে কেবলমাত্র ২-৩টি ভালোমানের ক্রুজার মোটরসাইকেল রয়েছে, যারমধ্যে Suzuki Intruder অন্যতম। যারা ক্রুজার বাইকপ্রেমী, এবং ছুটির দিনে বা যেকোন সময় তাদের বাইকটি নিয়ে হাইওয়েতে ছুটে বেড়াতে চান, তাদের জন্য সুজুকি ইনট্রুডার বেশ ভালো একটি বাইক। আমি এখনো মনে করি বাইকের দামটা কিছুটা বেশি, এবং সুজুকির উচিত হবে মার্কেটের অন্যান্য ক্রুজার বাইকের সাথে মিলিয়ে বাইকটির দাম রাখা।