Suzuki Gixxer SF ২৪,০০০ কিলোমিটার মালিকানা রিভিউ - শরীফ

This page was last updated on 28-Jul-2024 11:58am , By Shuvo Bangla

নিজেকে একজন বাইকার হিসেবে পরিচয় দিতে খুবই ভালো লাগে, কারণ ভালবাসি বাইক রাইডিং আর বাইককে। আমি শরীফ সুমন গাজীপুর কালিয়াকর মৌচাক থেকে আমার Suzuki Gixxer SF বাইকের মালিকানা শেয়ার করছি । আমার জন্মস্থান খুলনা, গাজীপুরে সেই ৮ বছর ধরে চাকরির খাতিলে অবস্থান করছি।

আমার বেড়ে ওঠা খুলনা শহরে, আর সেখানেই প্রথম বাইকের হাতে খরি দেই, ২০০৪-০৫ এর দিকে আমার মামার একটা HONDA CDI 100 বাইক ছিল, মামাকে বলে, না বলে বাইক নিয়া বের হইয়া যেতাম, জীবনে প্রথমবার যখন বাইক চালাই, আমার বাইক স্টার্ট করতেই অনেক ঝামেলা হচ্ছিল, অনেকবার কিক মেরে স্টার্ট করতে পারতেছিলাম না।

অনেক কষ্টে স্টার্ট করার পরে, চালাতে গিয়ে বারবার স্টার্ট বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল, বাইকের দক্ষতা বারে যখন নিজে প্রথম বাইক কিনি Apache RTR । বলতে পারি এটাই আমার প্রথম বাইক। জীবনের সকল রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা এই বাইককে ঘিরে। বাইকের পিছনে প্রিয় বন্ধুকে নিয়ে যখন ঘুরতে যেতাম, অনুভূতি আর আনন্দ বলে বুজানো যাবেনা।

যাইহোক HSC পাস করার পর ঢাকায় চলে আসি, সেখান থেকে অনিয়মিত হয়ে পড়ে আমার বাইক চালানো, খুলনায় গেলেই সুধু বাইক চালান হত। বাইক রাইডিং এর দ্বিতীয় অধ্যায়টা শুরু হয় যখন ২০২২ সালের শুরুর দিকে Suzuki Gixxer SF এর ২০২২ মডেল এর বাইক টা কিনি, আর এখন পর্যন্ত এই বাইক টি চালিয়ে যাচ্ছি। বাইকটি কেনার মূল কারন ছিল ব্র্যান্ড ভ্যালু আর স্টাইলিশ লুক।

বাইকটি মূলত অফিসে যাওয়া আসা আর ট্যুরের জন্য ইউজ করি। আমি প্রায় ২৪,০০০ কিলোমিটার এই বাইক টি চালাইছি, এই বাইকটি নিয়ে আমি মোটামুটি সন্তুষ্ট, কারন কোন বাইক ই ১০০% পারফেক্ট হয় না।

Suzuki gixxer SF 2022 মডেল এর বাইকটি ১৫৫ সিসির, ইয়ার কুল, ফোর স্টক বাইক, ডিটেইলস স্পেসিফিকেশন খুব সহজেই বাইক বিডি এর ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে, তাই এটা নিয়া বেশি কিছু বললাম না।

স্পোর্টস লুকের কারণে বাইকটা আমার কাছে খুবই ভালো লাগে, স্পোর্টস লুক হলেও বাইকটির সিটিং পজিশন অনেক কমফোর্টেবল, আমি গাজিপুর থেকে খুলনা রাইড করে গেছি প্রায় ৩০০ কিলোমিটার কোন প্রকার ব্যাক পেইন বা হাতের কবজিতে ব্যথা অনুভব করি নাই, যা আমার কাছে খুব ই ভাল লাগছে, বাইকটার আরেকটা ভালো দিক হচ্ছে এর মাইলেজ, হাইওয়েতে ৫৫+ মাইলেজ পেয়েছি, শহরে ৫০ এর কাছাকাছি থাকে।

বাইকটি দিয়ে আমি টপ স্পিড ১১৮ পর্যন্ত তুলতে পারছিলাম মাওয়া এক্সপ্রেস হাইওয়েতে। এয়ার কুল হওয়ার জন্য ওভারহিট হয়। অন্যান্য এয়ার কুল বাইক থেকে এই বাইক একটু ওভারহিট বেশি হয়, সম্ভবত এটার কীটের কারণে, ইঞ্জিনের গায়ে বাতাস ভালোভাবে লাগে না। যদি বাইকটি লিকুইডকুল হইত তাহলে অস্থির হইতো।

বাইকে নিয়ে ফ্যামিলি রাইডিং এর ক্ষেত্রে একটি অসুবিধায় পড়তে হয়। মেয়েদের বসতে একটু কষ্ট হয়। যার কারণে আমার বউ এই বাইক এ উঠতে চায় না।


আমি ২০২২ সালে জানুয়ারিতে বাইক কিনছিলাম ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা দিয়া। যদিও এখন বাইকটির দাম অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। আরেকটা কথা বলে রাখি আমার বাইকটি এফ আই এবিএস, এই ফিচার টা খুব ই ভাল, ABS থাকার কারণে অনেক বার দুর্ঘটনার হাত থেকে বেঁচে গেছি। তাই আমি বলব জারা স্ট্যান্ড করিনা, তারা জেন সবাই ABS ফিচারিং এর বাইক ব্যাবহার করি।

Suzuki Gixxer SF বাইকের কিছু ভাল দিক -

  • এই বাইক টার সবথেকে ভালো দিক হল এর লুকস।
  • আমার বাইক টি Fi , অসাধারণ একটি মাইলেজ দেয়।
  • ABS এবং তিন পার্টের হ্যান্ডেল স্মুথ রাইডিং এর একটা এক্সপেরিয়েন্স দেয়, ব্রেকিং এর ক্ষেত্রে অসাধারণ কনফিডেন্স পাওয়া যায়।
  • বাইকে হাই স্পিডে রাইডিং এর সময় কোন ধরনের ভাইব্রেট করেনা।
  • এই সেগমেন্টের অন্য বাইকগুলোর তুলনায় এই বাইকটির মোটামুটি পাওয়ারফুল।
  • স্পোর্টস লুকের হলেও বাইকটির রাইডার সিটিং পজিশন অনেক কমফোর্ট, আর বাইকটিতে ৮৫০ মি:লি: ইঞ্জিন অয়েল লাগে

Suzuki Gixxer SF বাইকের কিছু খারাপ দিক -

  • বাইকটার সব থেকে খারাপ দিক হলো এর কুলিং সিস্টেম। একটানা 40-50 কিলোমিটার চালালে বাইকের সাউন্ড চেঞ্জ হয়ে যায় এবং পাওয়ার লস করে।
  • বাইকটির বিল্ড কোয়ালিটি আমার মোটেও ভালো লাগে নাই, অনেক নিম্নমানের প্লাস্টিক ইউজ করা হয়েছে
  • বাইকটির ফিচার অনুযায়ী বাইক টি ওভারপ্রাইজ।
  • বাইকে গিয়ার শিফটিং অনেক হার্ড, এটা সুজিকের জন্মগত সমস্যা।
  • বাইকটিতে ৩ এম্পিয়ারের ব্যাটারি ইউজ করা হয়েছে যেটা আমার কাছে খুব বিরক্ত কর লাগছে
  • বাইকটি যদি লিকুইড কুল আর ডুয়েল চ্যানেল এবিএস হতো , তাহলে ভালো হতো।

বাইকটি কেনার পরে ফ্রি সার্ভিস গুলো আমি সব সুজুকির সার্ভিস পয়েন্ট থেকে করাইছি, এবং চারটি পেইড সার্ভিস করাইছি, কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে সুজুকির সার্ভিস পয়েন্ট বাংলাদেশের সব থেকে বাজে সার্ভিস পয়েন্ট। এদের সার্ভিস আমার মোটেও ভালো লাগে নাই, হুদাই হুদাই বিভিন্ন পার্টস চেঞ্জ করে যেগুলো আদৌ চেঞ্জ করা লাগতো না। পরবর্তীতে রাগ হয়ে সেন্টার থেকে সার্ভিস করানো বাদ দিয়ে দিছি, এখন কালিয়াকরে বাইক মাস্টার থেকে সার্ভিস করাই এবং আমি মোটামুটি সন্তুষ্ট।

বাইক কেনার পর থেকে এখন পর্যন্ত আমি মেজর কোন প্রবলেম ফেস করি নাই, কিন্তু ২০০০ কিলোমিটার চলার পরেই আমার বাইক এর গিয়ার রিলে নষ্ট হয়ে যায়, যা আমাকে হাতাস করেছে। আর সুজুকি বাইকের স্পেয়ার পার্টস ওভার প্রাইজ। জা খুবই বিরক্তিকর ।

বাইক কেনার পর থেকে যে সকল পার্টস পরিবর্তন করেছি -

  • সামনে পিছনে ব্রেক শু একবার
  • এয়ার ফিল্টার ৫ বার
  • ফুয়েল ফিল্টার দুইবার
  • স্পার্ক প্লাগ তিনবার
  • গিয়ার রিলে ২০০০ কিলোমিটার চালার পরে একবার
  • অয়েল ফিল্টার যতবার ইঞ্জিন অয়েল চেঞ্জ করেছি
  • বাইটার হর্ন এর সাউন্ড অনেক কম ছিল, তাই চেঞ্জ করে ডেনসো এর দুটি হর্ন লাগাইছি, আর একটি রিলে

আমি প্রতি ৩ হাজার কিলোমিটার পর পর এফ আই ক্লিন করাই, প্রতি ১০০০ কিলোমিটার পর পর একটি জেনারেল সার্ভিস ও প্রতি তিন হাজার কিলোমিটার পর পর একটি মাস্টার সার্ভিস দেই। আলহামদুলিল্লাহ এখন পর্যন্ত বাইকে কোন প্রবলেম নেই ।

আমি আমার বাইকে মতুলের 10W40 গ্রেড এর মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করছি ১০ হাজার কিলোমিটারে , প্রথমবার ৫০০ এরপর থেকে প্রতি ৮০০ কিলোমিটারের ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করছি। ১০ হাজার কিলোমিটার এর পর থেকে মতুল এর ৭১০০ ফুল সিন্থেটিক ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করি, যা প্রতি ১৫০০ কিলোমিটার পর পর পরিবর্তন করি।

আলহামদুলিল্লাহ আমি বাইক টা নিয়া সন্তুষ্ট। ধন্যবাদ ।

 

লিখেছেনঃ শরীফ সুমন 

আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।