Suzuki Gixxer ৪৭০০ কিলোমিটার মালিকানা রিভিউ - রাইয়্যান
This page was last updated on 01-Aug-2024 04:17am , By Shuvo Bangla
আমি রাইয়্যান আল আবির। আমার বাসা সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার সদরে অবস্থিত। বর্তমানে আমি Suzuki Gixxer বাইকটি ব্যাবহার করি। আজ আমি আমার বাইকটি নিয়ে আপনাদের সাথে কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো।
Suzuki Gixxer ৪৭০০ কিলোমিটার মালিকানা রিভিউ
আমার বাইকটি ৪৭০০+ কিলোমিটার রাইড করেছি। ছোট বেলা থেকে আমার সাইকেল এবং মোটরসাইকেলের প্রতি খুবই আগ্রহ কাজ করতো। আব্বুর বাইক চালানোর অভিজ্ঞতা থাকার কারণে আমাদের বেশ আগে থেকেই বাইক ছিল। আর সর্বপ্রথম আব্বুর হাত ধরেই থ্রোটলে হাত রাখা।
আব্বুর ইচ্ছা ছিল না এত তাড়াতাড়ি আমাকে বাইক চালানো শেখানোর। আমি আমার বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান হওয়ার কারণে হয়তো এত ভয় পেত। কিন্তু বাইকের উপর আমার ভালোলাগা দিনে দিনে বেড়েই চলেছিল। আমার আব্বু সাহস করে বাইক স্টার্ট দিয়ে নিউট্রাল করে থ্রোটাল হাতে দিত যেনো আমি না চালিয়ে ওখানে বসে থ্রোটাল দিতে পারি।
তারপর আমি যখন ক্লাস ৪ এ পড়ি তখন আমার জন্মদিনের দিন আমার বাসায় আমার ফুপা ফুপি, ভাই বোন, চাচু চাচিমা সবাই আমাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে আমার বাসায় চলে আসে। সবাই মিলে আমরা দুপুরে খাওয়া পরে আমার ছোট ফুপা আমাকে বলে যে তোমার আব্বুর বাইকের চাবি নিয়ে আসো। বাইরে থেকে ঘুরে আসি চলো।
যেহেতু বাইকের উপর আমার অনেক ভালোলাগা কাজ করতো সব সময় সেহেতু আমি এক মুহুর্ত অপেক্ষা না করে চাবি নিয়ে চলে আসলাম। তারপর কিছু দুর যাওয়ার পড়ে ফুপা আমাকে বললো যে আবির তুমি সামনে বসো আমি পিছনে বসছি, আজকে বাইক চালানো শিখিয়ে দেবো। আমি তো মহা খুশি। তখনও আমি বাইকের উপরে বসলে নিচ পর্যন্ত ঠিক ভাবে পা পাই নাহ।
গিয়ার কেস পর্যন্ত ঠিক ভাবে আমার পা যেত। তার পর আস্তে আস্তে আমাকে চালানো শিখিয়ে দিলেন। গেলাম ফুপার পিছনে বাইকে করে আর আসলাম আমার পিছনে ফুপাকে নিয়ে। আমার বাবা আমাদের এখানে একটা সনামধন্য কলেজের প্রফেসর। যার কারণে আমার বাবার পরিচিতি আনুপাতিক হারে বেশি হওয়ার কারণে কিছু সময়ের মধ্যে বাবার কাছে কল যায় যে স্যার আপনার ছেলে এত ছোট অবস্থায় গাড়ি চালাচ্ছে, যদি কোনো বিপদ হয়ে যায়।
বাসায় আসার পরে কিছু বকা শুনতে হলো। তার পরেও প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা ছিল অতুলনীয়। আমাদের প্রথম বাইক চালানোর অনুভূতি কখনো কোনো বাইকার ভুলতে পারে নাহ। আব্বু ২০১৩ সালে Hero Honda Splendor Pro কিনেছিল। এই বাইকটি দিয়েই আমার বাইক চালানো শেখা।
তার পর কিছু বছর পরে আমাকে এবং আম্মুকে নিয়ে আমার আম্মুর স্কুল থেকে বাসায় ফেরার পথে একটা দুর্ঘটনা ঘটে। তখন আমার আব্বুর একটি নখ উঠে যায়। আমার আব্বু ডায়াবেটিক পেশেন্ট হওয়ার কারণে কিছুদিন পরে আমাদের বাইকটি বিক্রি করে দেওয়া হয়। কারণ ডায়াবেটিক পেশেন্টের কোথাও কেটে গেলে বা ফুসকা পড়লে সেটা সারতে অনেকদিন সময় লাগে।
এরপরে ২০২৩ সালে সুজুকি জিক্সার আসার পরে কিছুদিনের মধ্যে বাসা থেকে আমাকে বাইকটি কিনে দেয়। বাইকটি কেনার পরে এখনও পর্যন্ত কোনো মডিফাই করার প্রয়জন হয়নি। বাইকটি এখনও সম্পূর্ণ স্টক অবস্থায় রয়েছে। সঠিক সময়ে ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন এবং শোরুমের ২ টা সার্ভিস করেছি।
আমার বাইকের টপ স্পিড পেয়েছি ১১৯ চুকনগর থেকে যশোরে যাওয়ার পথে। এর বেশি আর চেষ্টা করা হয়নি তবে আশা করি এর থেকেও বেশি উঠবে । আমার বাইকে যেমন ভালো দিক রয়েছে তেমন খারাপ দিকও রয়েছে । সেগুলো এখন আপনাদের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করবো।
Suzuki Gixxer বাইকের কিছু ভালো দিক -
- স্টাইলিশ লুক
- অসাধারণ পাওয়ার ডেলিভারি পাওয়া যায়
- বাইকটি যথেষ্ট জ্বালানি সাশ্রয়ী
- সকল লাইটিং সিস্টেম LED
Suzuki Gixxer বাইকের কিছু খারাপ দিক -
- সামনের সাসপেনশন কিছুটা শক্ত মনে হয়েছে , অভ্যস্ত না হলে কিছুটা সমস্যা হতে পারে বাইকারদের
- হেডল্যাম্প এর পাওয়ার বেশি হলেও রেঞ্জ কম যার কারণে রাতে হাইওয়ে রাইডের সময় সমস্যা হয়
- ইঞ্জিন কাউল নেই
- জ্বালানি ধারণ ক্ষমতা আরেকটু বেশি হলে ভালো হতো
- এবিএস নেই, ফুয়েল ইনজেকশন ভ্যারিয়েন্টে এবিএস ব্রেকিং সিস্টেম রয়েছে
যাই হোক বাইকটা আমার কাছে মোটামুটি সব দিক দিয়ে ভালো লেগেছে। অনেক স্মার্ট লুক । পরিশেষে আমি বলবো Ride Safe কারণ আপনি না থাকলে আপনার সখের বাইকটি থেকে কোনো লাভ হবে না , তাই সব সময় সতর্কতার সাথে বাইক চালাবেন।
বাইক এমন একটি জিনিষ , যে যেমন ভাবে ব্যাবহার করবে সে তেমন ফল পাবে। তাই সবাই ট্রাফিক আইন মেনে চলবেন বাবা-মায়ের কথা চিন্তা করে বাসা থেকে বের হবেন। বাইক রাইড করার আগে দোয়া পড়ে নিবেন। অবশ্যই অবশ্যই হেলমেট পরে বাইক রাইড করবেন। পরিশেষে ধন্যবাদ BikeBD কে , আমাকে আমার বাইকটি নিয়ে কিছু অভিজ্ঞতা লেখার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।
লিখেছেনঃ রাইয়্যান আল আবির