Runner Bullet ১০,০০০কিমি মালিকানা রিভিউ লিখেছেন - শাম্মী নুরে আলম
This page was last updated on 13-Jul-2024 04:24am , By Saleh Bangla
বাইক কেনার স্বপ্ন ছিলো সেই ছোট বেলা থেকে। প্রথম বাইক চালানোর হাতেখড়ি বাবার ইয়ামাহা 100সিসি ডিলাক্স মোটরবাইক দিয়ে। এরপর সময়ের পরিক্রমায় অনেকগুলো বছর কেটে গেছে কিন্তু বাইক কেনার স্বপ্নটা স্বপ্নই রয়ে গেছে। যাহোক ২০১৬ সালের মাঝামাঝি এসে হাতে কিছু টাকা জমে গেলো। তখন সিদ্ধান্ত নিলাম এবার আমার স্বপ্নপূরন করতে হবে। তারপর আমি কিনে ফেলি Runner Bullet ১০০ সিসি। যেহেতু আমার বাজেট কম ছিল তাই শুরু থেকেই ইন্ডিয়ান বাইক কেনার চিন্তা বাদ দিলাম। প্রথম দিকে ইচ্ছা ছিলো ওয়াল্টন এর বাইক কিনবো।এই বাইক নিয়ে বেশ কয়েক মাস ঘাটাঘাটি করার পর জানতে পারলাম ওয়াল্টন এর প্রডাকশন বন্ধ হয়ে গেছে। তখন দ্বিতীয় অপশন হিসাবে রানারকে বেছে নিলাম।আবার শুরু হলো আমার বাইক নিয়ে ঘাটাঘাটি। বাইকবিডি.কম, মটোরসাইকেল ভ্যালি এই দুটো সাইটের আর্টিকেলগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তে লাগলাম। বিশেষকরে মোটরবাইকের ওনারশীপ রিভিউ গুলো পড়তাম।
Runner Bullet ১০,০০০কি.মি. মালিকানা রিভিউ
এরমাঝে ফেসবুকে রানার বাইকার্স ক্লাব-আরবিসি নামে একটি গ্রুপ দেখলাম এবং এখানে এড হয়ে গেলাম।এই গ্রুপের মেম্বাররা সবাই রানার বাইক ব্যবহার করেন তাই তাদের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে পারলাম। রানারের বাইকগুলোর মধ্যে আমার তিনটি বাইক পছন্দ ছিলো, এক. রানার রয়েল প্লাস, দুই. রানার বুলেট এবং তিন. রানার চিতা। রয়েল প্লাস বাইকটা কেনার আগ্রহ বেশী থাকলেও যেদিন বাইক কিনতে গেলাম সেদিন বুলেট বাইকটা সরাসরি দেখে নিজের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলাম। তেজগাঁও শোরুমে যেয়ে রয়েল প্লাস না কিনে Runner Bullet ১০০ সিসি কিনে ফেললাম। আমার পছন্দ ছিলো লাল কালারটা কিন্তু এই কালারের বাইক না থাকায় বাধ্য হয়ে কালো কালারের বাইক কিনতে হলো। শোরুম থেকে এক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে বলেছিলো কিন্তু আমার আর ধৈর্যে কুলায়নি।কালো বুলেট নিয়েই বাসায় ফিরলাম। ২০ নভেম্বর, ২০১৬ থেকে আজ পর্যন্ত বাইকটা ১০০০০+ কিলোমিটার চালিয়েছি। এখন পর্যন্ত আমার বাইক আমাকে অসন্তুষ্ট করেনি। ভালো রাস্তা, ভাঙ্গা রাস্তাসহ যে কোনো রাস্তায় চালিয়েছি কোনো প্রকার সমস্যা ছাড়া।
Runner Bullet বাইকটা বড় হওয়ায় আমার ওয়াইফ এবং দুই বাচ্চাসহ ফুল ফ্যামেলী খুব সহজে যেখানে খুশি সেখানে মুভ করতে পারি। বুলেট বাইক নিয়ে অনেকের মাঝেই অসন্তষ দেখতে পাই মূলত এর কম মাইলেজের কারনে। কিন্তু আমি ব্যক্তিগত ভাবে বুলেটের মাইলেজ নিয়ে সন্তুষ্ট। এখন মাইলেজ পাই লিটারে ৫৪/৫৫ কিলোমিটার। প্রথম ২০০০ কিলোমিটার আমি নিয়োম মেনে ব্রেকইন পিরিয়ড শেষ করেছি। এরপর ৫০০০ কিলোমিটার পার করার পর প্রথম কারবোরেটর টিউনিং করাই। Runner Bullet থেকে কেউ যদি প্রথমদিন থেকেই বেশি মাইলেজ আশা করেন তবে ভুল করবেন। এক্ষেত্রে আপনাকে ধৈর্য ধরতে হবে। প্রথম অবস্থায় আমি মাইলেজ পেতাম প্রতি লিটার অকটেনে ২৭ কিলোমিটার। এরপর বেড়ে হলো ৩৩ কিলোমিটার। এরপর আরএকটু বাড়লো ৩৮ কিলোমিটার। প্রথম ৫০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত আমি এই মাইলেজ পেতাম। তারপর টিউনিং করানোর পর মাইলেজ বেড়ে হলো ৪৭ কিলোমিটার/লিটার। ৯০০০ কিলোমিটার রান করানোর পর আবার টিউনিং করাই এখন মাইলেজ পাই ৫৪ থেকে ৫৫ কিলোমিটার/লিটার। বাইকের ইঞ্জিনকে যদি প্রথম অবস্থায় তেল বেশি খাওয়ান তবে পরবর্তীতে আপনি এর সুফল পাবেন।
গত এক বছরে আমি যেসকল স্পেয়ার পার্টস চেঞ্জ করিয়েছি- ১. সাইড কভার তিনবার। বুলেটের সাইড কভার খুবই নিম্নমানের। কিছুদিন পরপর নিজে থেকেই ভেঙ্গে যায়। ২. বল রেসার একবার। আমার প্রতিদিনের চলার পথের প্রায় ৮ কিলোমিটার পথ খুবই ভাঙ্গাচুড়া। যার কারনে এত অল্প সময়ে বল রেসার চেঞ্জ করতে হলো। Runner Bullet ১০০সিসি বাইকের কিছু ভালো দিক- ১. বাইকটি আকারে অনেক বড় এবং ভারী।যার কারনে কন্ট্রোলিংএ সুবিধা পাওয়া যায় এবং ফুল ফ্যামেলী নিয়ে চলাচল করা যায়। ২. ইঞ্জিন খুব শক্তিশালী। রেডি পিকআপ ভালো। চারজন নিয়েও অনায়াশে ৭০ কিলোমিটার স্পিড উঠে যায়। ৩. লুকিংটা খুব সুন্দর। ৪. ইঞ্জিনের সাউন্ডটা খুব গম্ভীর। Runner Bullet ১০০সিসি বাইকের কিছু খারাপ দিক- ১. পাসিং লাইট নেই। ২. সাইড কভারের মান খুব নিম্ন। ৩. চাপার সুইচগুলো নিম্নমানের । ৪. হেড লাইটের আলো কম। রাতের বেলা রাইডিংএ সমস্যা হয়। এই ছিলো আমার রানার বুলেট ১০০সিসি নিয়ে এক বছরের পথচলার গল্প। এখন পর্যন্ত আমি বুলেট নিয়ে সন্তুষ্ট। ১০০০০+ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছি এই একবছর সময়ের মধ্যে। ইনশা আল্লাহ যেতে চাই আরো বহুদূর। সবার প্রতি শুভ কামনা রইলো। Thank You.
লিখেছেনঃ Shammi Noor A Alam