Runner Bike RT ২০,০০০ কিলোমিটার রাইড - রাহাত আলম
This page was last updated on 28-Jul-2024 01:59pm , By Raihan Opu Bangla
"Two wheels move the soul" আজ থেকে প্রায় ৫ বছর আগে সাইকেল দিয়ে শুরু হয় এই soul movement এর যাত্রা | যাত্রাটা বেশ ভালই চলছিল কিন্তু বিপত্তি আসে তিন বছরের মাথায় | আমার soul movement এর বাহনটি চুরি হয়ে যায় | ব্যথিত মনকে শান্ত করার জন্য সিদ্ধান্ত নিলাম একটি বাইক কিনবো, Soul movement এ একটু গতি আনব | শুরু হলো যুদ্ধ, যুদ্ধ পরিবারের সদস্যদের সাথে যেখানে কেউ চায় না আমি বাইক কিনি। কোন রকম যুদ্ধে জয়ী হয়ে শুরু হলো বাইক কেনার কার্যক্রম বাজেট ছিল কম আর এই কম বাজেটেই কিনে ফেললাম বাংলাদেশের সবচাইতে কম দামি বাইক Runner Bike RT । আজ লিখব কম দামী এই বাইক দিয়ে ২০ হাজার কিলোমিটার পথ চলার কাহিনী।
কেন Runner Bike RT? প্রতিটি বাইকের ই চারটি বিভাগ রয়েছে যার মাঝে যে কোন একটি বিভাগে এটি সেরা। কিছু বাইক দেখতে খুব সুন্দর আবার কিছু বাইকের পাওয়ার অনেক বেশি কিছু বাইকের মাইলেজ বেশি আর কিছু বাইকের দাম তুলনামূলক কম Runner Bike RT বাইকের ক্যাটাগরিতে সবচেয়ে কম দামি বাইক যেহেতু আমার বাজেট ছিল কম তাই কম বাজেটে কিনেছি বাইক আরটি আমি যখন বাইকটি কিনি তখন এর দাম ছিল ৫৮ হাজার টাকা।
প্রথম বাইক চালানোর অভিজ্ঞতা আমি যখন বাইক কেনার সিদ্ধান্ত নেই তখন আমি বাইক চালাতে পারি না | যেহেতু সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম রানার বাইক আরটি কিনবো তাই সেখানে যোগাযোগ করে জানতে পারলাম তারা যে কাউকেই ফ্রিতে মোটরসাইকেল চালানো শেখান। যেহেতু সাইকেল চালাতে পারতাম তাই মোটরসাইকেল চালানো শিখতে খুব বেশি সমস্যা হয়নি। এখানে শুধু একটি পার্থক্যই চোখে পড়েছিল সেটি হল সাইকেল চালাতে প্রয়োজন হয় শারীরিক শক্তির আর মোটরসাইকেল চালাতে প্রয়োজন হয় তীব্র মনোযোগ।
প্রথমবার Runner Bike RT চালানোর অনুভূতি ২০১৭ সালের দিকে বাইক কোম্পানি গুলো টেস্ট রাইড এর অপশন দিত না আর এটি আমার জীবনের প্রথম বাইক যেহেতু পূর্বের বাইক চালানোর অভিজ্ঞতা নেই বললেই চলে। সেহেতু খুব বেশি চিন্তা না করে ২০১৭ সালের ৫ই নভেম্বর বাবা-মায়ের Sponsorship নিয়ে তেজগাঁওয়ের রানার শোরুম চলে গেলাম। Runner Bike RT ওরফে আমার লাল সুন্দরী কে ঘরে আনতে। যেহেতু প্রথম বাইক ছিল এবং আমি নতুন বাইকার সেহেতু প্রথমবার নিজের বাইক চালানোর অনুভূতি এক কথায় অসাধারণ।
Runner Bike RT Price In Bangladesh
মানি রিসিট এবং রেজিস্ট্রেশন পেপার আমি বাইকের রেজিস্ট্রেশন এর কাজ শোরুম এর মাধ্যমেই করতে দেই । বাইক কেনার আট দিন পরে পাই ব্যাংকে জমা টাকার মানি রিসিপ্ট আর তার ২৬ দিন পর পাই রেজিস্ট্রেশন পেপার। কারণ স্বরূপ বলা হয়েছিল যেহেতু আমি ১০ বছরের রেজিস্ট্রেশন করছি তাই সময় একটু বেশি লাগছে।
বাইকটির ডিজাইন ফিচার ও স্পেসিফিকেশন ৮০ সিসি বাইকের মধ্যে আমার মতে এটি সব থেকে সুন্দর দেখতে একটি বাইক। এটাকে আকর্ষণীয় করার জন্য ট্যাংকের পাশে ব্যবহার করা হয়েছে সাইড স্কুপ। এতে ফিচার হিসেবে যুক্ত করা হয়েছে ইউএসবি, পোর্ট ডিজিটাল ফুয়েল মিটার। যদিও মাপ সঠিক দেখায় না এবং ইন্ডিকেটর সাউন্ড। এর স্পেসিফিকেশন হিসেবে এটির রয়েছে ৮৬ সিসির এয়ার কুলিং ইঞ্জিন যা উৎপন্ন করে ৫.৯ হর্সপাওয়ার এবং ৫.৫ এনএম টর্ক। এতে দেওয়া হয়েছে ৪ স্পিড গিয়ার বক্স। এর ফুয়েল ট্যাংকে তেল ধারণ ক্ষমতা ৯লিটার ও রিজার্ভ এর ক্ষমতা ১লিটার।
টপস্পিড যেহেতু এটি হালকা বাইক সেহেতু আমি নিজে একা কখনো এর টপ স্পিড তোলার চেষ্টা করিনি। তবুও একা সর্বোচ্চ ৭০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা স্পিড তুলেছি। এর বেশিও উঠতে পারত কিন্তু তা উঠতে সাহস পায়নি কারণ বাইকটি ৬৫ এরপর ভাইব্রেশন এর পরিমাণ অনেক বেশি। যা বাইকটিকে অনেক বেশি Unstable করে তোলে, কিন্তু পিলিয়ন সহ টপ স্পিড প্রায় ৭৮ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা স্পিড পেয়েছি।
মাইলেজ আমি ঢাকা শহরে মাইলেজ পেয়েছি ৪০ কিলোমিটার প্রতি লিটার আর হাইওয়েতে মাইলেজ পেয়েছি ৪৫/- কিলোমিটার প্রতি লিটার এবং এই মাইলেজ পাওয়ার জন্য আমি ২০০০ কিলোমিটার ব্রেক ইন পিরিয়ড সম্পন্ন করেছি। ৪০০০ কিলোমিটার পর থেকে সেমি সিনথেটিক ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করছি। তার সাথ ভাল মানের অকটেন ব্যবহার করছি। এত কিছু মেনেও ৮০ সিসি বাইক থেকে এ ধরনের মাইলেজ একটু কষ্ট দেয়।
Runner Bike Price In Bangladesh
মেইনটেনেন্স রানার থেকে প্রথম বছর চারটা পরের বছর তিনটা এর পরের বছর দুইটা ফ্রি সার্ভিস পাওয়া যায় যার ফলে ইঞ্জিন অয়েল এয়ার ফিল্টার ব্রেক সু এগুলো ছাড়া তেমন বেশি খরচ হতনা, কিন্তু বর্তমানে রানার তাদের সার্ভিস কার্টে বড় কিছু পরিবর্তন এনেছে। এখন রানারের ফ্রি সার্ভিসে শুধু মাত্র ফ্রিতে ট্যাপেট, ব্রেক সু , এয়ার ফিল্টার এর মত ছোট এ্যাডজাস্টমেন্ট এর কাজ ফ্রি তে করা হয় এছাড়া বাকি সকল কাজের জন্য তারা চার্জ নেন। যেমন যদি কারও এক পাশের ফর্ক অয়েল সিল নষ্ট হতে তাহলে অয়েল সিলের দাম ১০০+ মজুরি ২০০ টাকা দিতে হবে।
বাইকটির ভাল দিকঃ আমার বিবরণটিতে বাইকের যাবতীয় ভাল লাগার দিক গুলোকে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছি তাই আলাদা করে আর লিখছি না। উপরেই মোটামুটি সব কিছু বর্ননা করার চেষ্টা করেছি।
বাইকটির মন্দ দিকঃ
- হেডলাইট খুবই দূর্বল যার ফলে আমাকে LED ব্যবহার করতে হচ্ছে
- মাইলেজ আশানুরূপ নয়
- সাইড কভারের প্লাস্টিকের কোয়ালটি ভাল নয়
- টিউবটাইপ চাকা
- সিটের কুশনিং বেশ শক্ত যা আমাকে পরবর্তী সময়ে সিটে আলাদা করে ফোম দিয়ে মডিফাই করতে হয়েছে
- কোন লেগ গার্ড এবং ফিমেল ফুটরেস্ট নেই
- পেইন্ট কোয়ালিটি অসন্তোষজনক
বাইকটি নিয়ে ট্যুর এবং ভবিষ্যৎ বাইকটি নিয়ে কুমিল্লা এবং চট্টগ্রাম শহরে ভ্রমণ করেছি। ট্যুরের সময় আল্লাহর রহমতে বাইক নিয়ে তেমন কোন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়নি। ভবিষ্যতে আশা আছে এই বাইকটি নিয়ে সব গুলো জেলা ভ্রমণ করব। ধন্যবাদ।
লিখেছেনঃ রাহাত আলম
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।