Roadmaster Velocity টেস্ট রাইড রিভিউ বাই বাইকবিডি টীম

This page was last updated on 06-Jul-2024 11:26am , By Shuvo Bangla

বাংলাদেশে মোটরসাইকেল এর ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। গত বছর প্রায় ২৫০,০০০+ মোটরসাইকেল বিক্রি হয়েছে। এবং, এবছরের প্রথম চার মাসেই বিক্রি হয়েছে প্রায় ১২৫,০০০+ বাইক। শতকরা ৭০ ভাগ বাইক হচ্ছে ৮০-১২৫সিসি ক্যাটাগরির এবং অনেক কোম্পানি এই ক্যাটাগরিকে ফোকাস করেই তাদের ব্যবসা করছে। আজ আমরা বাংলাদেশের অন্যতম মোটরসাইকেল কোম্পানি রোডমাস্টারের বাইক ভেলোসিটি নিয়ে আলোচনা করব। চলুন শুরু করি বাইকবিডি Roadmaster Velocity টেস্ট রাইড রিভিউ।

roadmaster velocity red and black

রোডমাস্টার – কমিউটার সেগমেন্টের নতুন ধারা

Roadmaster motorcycle কোম্পানির সাথে যুক্ত হয়ে কমিউটার সেগমেন্টের মোটরসাইকেল বাংলাদেশে নিয়ে এসেছে। তারা মূলত অফিশিয়ালি দায়ুন ব্রান্ডের মোটরসাইকেলের পরিবেশক। এর আগে আমরা দায়ুন ডিফেন্ডার মোটরসাইকেল স্টেট রাইড করেছি। এ বছর আন্তর্জাতিক বানিজ্যমেলায় তারা নতুন মোটরসাইকেল প্রদর্শন করে রোডমাস্টার নামে।  সেখানে তারা নতুন দুটি বাইক লঞ্চ করে। দুটি বাইক নতুনভাবে ডেভেলপ করা এবং নতুনভাবে রি-ব্র্যান্ড করা হয়েছে তাদের নিজেদের ব্র্যান্ডে। দুটি বাইকের একটি হচ্ছে রোডমাস্টার রেপিডো, আর যে বাইকটি সবার নজর কেড়েছে সেটি হলো Roadmaster Velocity। 

roadmaster velocity turn signal light

Roadmaster Velocity –  নতুন কমিউটার

Roadmaster Velocity হচ্ছে সম্পূর্ন নতুন একটি বাইক ১০০সিসি সেগমেন্টে, যা রোডমাস্টার বাংলাদেশের মার্কেটে নিয়ে এসেছে। বাইকটি কমিউটার সেগেমেন্টে নতুনত্ত্ব এনেছে। এর লুক অসাধারন এবং এতে অনেক নতুন ফিচার যুক্ত করা হয়েছে। বাইকের ইঞ্জিন হচ্ছে ৯৯.৭১ সিঙ্গেল সিলিন্ডার, দুটি ভালভ ভার্টিক্যাল দেয়া হয়েছে যা সিডিআই কার্বুরেটরের মাধ্যমে অপারেট করা হয়। Roadmaster Velocity এর ইঞ্জিন ৮.৫ বিএইচপি এবং ৭.৫ এনএম টর্ক সমৃদ্ধ। বাইকটিতে ৪টি গিয়ার এবং গিয়ার রেশিও ছোট। তাই প্রতিদিনের চলাচলের জন্য অনেক আরামদায়ক। ইঞ্জিন অনেক স্মুদ ৪৫০০ আরপিএম পর্যন্ত, যদিও এরপর সামান্য ভাইব্রেশন অনুভব হয়।

roadmaster velocity engine

Roadmaster Velocity – এপিয়ারেন্স

বাইকটির এপিয়েন্স এর কথা যদি বলি। তবে এটি দেখতে অনেকটা পেশীবহুল যা  ১০০ সিসি বাইকে খুব কম দেখা যায়। এর সাথে আছে বিশাল হেড লাইট। এছাড়াও ১৪ লিটারের ফুয়েল ট্যাঙ্ক এবং দুই পাশে এয়ার স্কুপ রয়েছে। এয়ার স্কুপ এর উপর এবং ফুয়েল ট্যাঙ্ক এর সাথে ইন্ডিকেটর দেয়া হয়েছে। বাইকের হ্যান্ডল বার একটু উঁচু এবং এর টার্নিং রেডিয়াস অনেক কম। তাই ভারী জ্যামের মধ্যেও আপনি অনায়াসে পার হয়ে যেতে পারবেন। স্পিডোমিটার সম্পূর্ন ডিজিটাল, এবং এর সাথে ডিজিটাল রেভ কাউন্টার, গিয়ার ইন্ডিকেটর, ফুয়েল কাউন্টার এবং ঘড়ি আছে। আপনি চাইলে স্পিডোমিটারের কালার চেঞ্জ করতে পারবেন। 

roadmaster velocity meter console

Roadmaster Velocity  বাইকটিতে সব রকমের সুইচ দেয়া আছে। যদিও ১০০সিসি সব বাইকের মত ইঞ্জিন কিল সুইচ ও পাস লাইট দেয়া আছে। এছাড়াও বাইকে কিকস্টার্ট এবং সেলফস্টার্ট দেয়া আছে। যদি বাইকটির টায়ার টিউবলেস হতো তবে আরো ভালো হতো। ফিনিশিং এবং কালার কোয়ালিটি উন্নত। তবে হয়ত সুইচ গিয়ার আর একটু  উন্নত করা যেত, এবং ফিনিশিংটায় ভালো হতে পারত।

roadmaster velocity exhaust

Roadmaster Velocity –  ফিচার

এপিয়ারেন্স ও লুকের দিক থেকে ১০০সিসি এই বাইকটি স্পোর্টস ডিজাইন সম্পন্ন এবং বডি প্যানেল অন্য বাইকের তুলনায় এগ্রেসিভ। প্রথম দেখায় বাইকটি অনেকটা ১২৫সিসি বাইকের মত দেখায়। কারণ রোডমাস্টার বাইকের ডিজাইন অনেকটা ১২৫সিসি বাইকের মত করে করেছে। বাইকের বেসিক কিছু ফিচার হচ্ছেঃ

  • হ্যালোজেন লাইট যা ৩৫ ওয়াট।
  • ১৮ ইঞ্চির এলয় রিম।
  • ১৩০০ মিমি হুইল বেস।
  • সিঙ্গেল পিস্টনসমৃদ্ধ ফ্রন্ট ডিস্ক।
  • ফ্রন্ট হাইড্রোলিক টেলিস্কোপিক সাসপেনশন।
  • রিয়ার সাসপেনশন মেকানিকাল স্প্রিং।
  • অনেক লম্বা সিট।
  • চেইন কাভার।
  • স্পোর্টি সাইলেন্সার ডিজাইন।
  • বড় গ্রেভ রেইল।
  • শাড়ি গার্ড এবং লেগ গার্ড।
  • ওজনে ১২০ কেজি।
  • ডিসি হেড লাইট।

roadmaster velocity headlight

Roadmaster Velocity – রাইডিং অভিজ্ঞতা

Roadmaster Velocity  রাইডিংরে অভিজ্ঞতা মজার ছিল। যদিও বাইকটির তেমন রেডি পিক আপ নেই কিন্তু ভারী জ্যামে খুব ভালো হ্যান্ডেল করা যায়। টায়ারের গ্রিপ মোটামুটি ভালো। হাই স্পিড কর্নারিং অনেক বেশি স্টেবল।  আমি ৭০-৭৫ স্পিডে কর্নারিং করেছি, একবারের জন্য মনে হয়নি বাইকটি স্লাইড করবে। ব্রেকিং পারফর্মেন্স অনেক ভালো। তবে আশা করেছি ডাবল পিস্টন ডিস্ক ব্রেক ভালো কনফিডেন্স দেবে। রিয়ার ড্রাম ব্রেক এই ক্যাটাগরিতে অনেক ভাল মানের করা হয়েছে। যদিও রোডমাস্টার দাবি করেছে Roadmaster Velocity এর মাইলেজ হবে ৬০ কিলোমিটার প্রতি লিটার, তবে ঢাকার রাস্তায় স্টেট করার সময় আমরা ৫০-৫৫ মাইলেজ পেয়েছি। যেহেতু ফুয়েল ট্যাঙ্ক ১৪ লিটারের তাই একবার ফুয়েল নিয়ে প্রায় ৭০০ কিলোমিটার রাইড করা যায়।

roadmaster velocity disc brake

আমরা সাসপেশন টেস্ট করে দেখেছি যে, সাসপেনশন মোটামুটি মানের। রাস্তায় এভারেজ পারফর্মেন্স দেয়। তবে পিলিয়ন সহ রিয়ার সাসপেনশন খুব ভালো পারফর্ম করে না। রিয়ার সাসপেনশন নিয়ে আমরা অভিযোগ জানানোর পর। তারা আমাদের কনফার্ম করেছে যে এই বছরের শেষ দিকে রিয়ার সাসপেনশন আপগ্রেড করা হবে। Roadmaster Velocity  এর ইঞ্জিন খুব বেশি রেস্পনসিভ নয়। ৪৫০০-৫০০০ আরপিএম এ বাইক ভাইব্রেট করে। আপনি প্রতি ঘন্টায় ৫০-৬০ কিলোমিটার রাইড করতে পারবেন। হাইস্পিডে বাইক অনেক বেশি স্টেবল কিন্তু কিছুটা ভাইব্রেট করে। আমরা এর টপ স্পিড পেয়েছি ৯০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা। 

roadmaster velocity 100cc red

Roadmaster Velocity –  সার সংক্ষেপ

টেস্ট রাইডের পর আমাদের মনে হয়েছে বাইকটি প্রয়োজনের তুলনায় একটু ওজনে ভারী । বাইকটি কেন ১২০ কেজি ওজন করা হয়েছে তার কোনো কারন খুঁজে পাইনি। এই বিষয়টি ছাড়া বাকি সব দিক থেকেRoadmaster Velocity কমিউটার বাইক হিসেবে অনেক ভালো। বাইকটির ওজন আরো ১০-১২ কেজি কম থাকলে পারফেক্ট হতো।  আজকাল এই সেগমেন্টের বেশির ভাগ ইন্ডিয়ান বাইকেই টিউবলেস টায়ার থাকে। তাই আশা করা যাচ্ছে রোডমাস্টার ভবিষ্যতে টিউবলেস টায়ার সংযুক্ত করবে। ডিসি হেড লাইটের কারনে রাতের বেলা ভালো আলো পাওয়া যায়। তাই ভেলোসিটি রাতের বেলা রাইড করার জন্য ভালো। 

roadmaster velocity handle bar

তাই, সবশেষে এটা বলা যায় যে, ১০০ সিসি সেগমেন্ট Roadmaster Velocity  অনেক ভালো কমিউটিং বাইক। বাইকটি আরামদায়ক, এর লুক এবং বডি অনেক ভাল।  আমাদের ১৫০০ কিলোমিটার রাইডে আমরা সেভাবে বড় কোন সমস্যা পাইনি। তবে আমরা পরামর্শ দেব যে ব্রেক ইন পিরিয়ড মেনে চলতে ১০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত যাতে ভালো মাইলেজ এবং পারফর্মেন্স পাওয়া যাবে।