Roadmaster Rapido টেস্ট রাইড রিভিউ - টিম বাইকবিডি
This page was last updated on 28-Jul-2024 12:24pm , By Saleh Bangla
Roadmaster Rapido টেস্ট রাইড রিভিউ
রোডমাস্টার হচ্ছে বাংলাদেশের মোটরসাইকেল কোম্পানির মধ্যে অন্যতম। কিছু সংখ্যক কোম্পানির মধ্যে তারাও আছে যারা তাদের মোটরসাইকেল গুলোতে মেইড ইন বাংলাদেশে ট্যাগ দিয়ে থাকে। তারা কমিউটিং সেগমেন্টে অনেক জনপ্রিয় তাদের রোডমাস্টার ভেলসিটি এবং প্রাইম মোটরসাইকেলের কারনে। বর্তমানে তারা প্রিমিয়াম মোটরসাইকেল তৈরিতে নজর দিচ্ছে। আর সেই সূত্র ধরে তারা নিয়ে এসেছে Roadmaster Rapido 150cc । তাই আজ আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসছি Roadmaster Rapido টেস্ট রাইড রিভিউ । টেস্ট রাইড রিভিউ শুরু করার আগে রোডমাস্টার র্যাপিডো ১৫০সিসি মোটরসাইকেলটি সম্পর্কে কিছু বলতে চাই। র্যাপিডোর বেশ কিছু ফিচার এমন রয়েছে যা খুব কম সংখ্যক ইন্ডিয়ান মোটরসাইকেল গুলোতে পাওয়া যায়। আমরা এই বাইকটিকে নেকড স্পোর্টস বাইকের ক্যাটাগরিতে ফেলতে পারি এর ডিজাইন ও স্টাইলের উপর ভিত্তি করে।
Roadmaster Rapido টেস্ট রাইড রিভিউ – ইঞ্জিন ও গিয়ারবক্স
- ১৫০সিসি এয়ারকুল্ড সিঙ্গেল সিলিন্ডার ইঞ্জিন
- দুটি ভালব এবং ফুয়েল সাপ্লাই কার্বুরেট
- ১৩.৬বিএইচপি @ ৮৫০০আরপিএম
- ১২.২এনএম টর্ক @ ৬০০০আরপিএম
- ৫স্পিড গিয়ারবক্স
- ইলেক্ট্রিক ও কিক দু ধরেনের স্টার্ট অপশন
বাইকটির ইঞ্জিন পুরো সলিড। তবে সবচেয়ে দারুন ব্যাপার হচ্ছে যে এর সাউন্ড ডুয়েল এক্সহস্ট দিয়ে যখন শোনা যায় তখন। আমার মনে হয় বাইকটির সাউন্ড বাংলাদেশে ১৫০সিসি সেগমেন্টে অন্যতম বেস্ট সাউন্ড। গিয়ারবক্স একটু হার্ড। আমাদের ২০০০কিমি টেস্ট রাইডে আমরা দেখেছি যে গিয়ারবক্স হার্ড থাকে এবং ক্লাচের সাথে এডজাস্ট করে নিতে হয়। যদিও বাইকের ইঞ্জিন জংসেনের তৈরি। তবে এর দীর্ঘস্থায়ীত্ব নিয়ে তেমন কোন ইস্যু তৈরি হবে না। জংসেন হচ্ছে অন্যতম জনপ্রিয় চাইনিজ মোটরসাইকেল ব্র্যান্ড।
Roadmaster Rapido টেস্ট রাইড রিভিউ – ফিচার ও স্টাইল
- এক্সটেন্ডেড ফুয়েল ট্যাঙ্ক এয়ার স্কুপ
- ফুয়েল ট্যাঙ্কের দু পাশে পার্কিং এলইডি লাইটস
- পাইপ হ্যান্ডেল বার
- স্ট্যান্ডার্ড সুইচ গিয়ার
- এলএইডি ইন্ডিকেটর
- রেয়ার টায়ার মাড গার্ড
- কোন স্লিট সিট নেই
- ১২ লিটারের ফুয়েল ট্যাঙ্ক
- হাফ চেইন কভার
- ফুল ডিজিটাল স্পিডোমিটার সাথে কালার চেঞ্জ
- বাইকের ওজন ১৩৯ কেজি
সামনের দিক থেকে বাইকটি দেখতে অনেক এগ্রেসিভ ও পেশীবহুল। স্টাইলের ক্ষেত্রে তারা কোন ধরনের লুপ হোল বা কমতি রাখেনি। তারা যেখানেই পেরেছে স্টাইলের জন্য কিছু না কিছু এড করেছে যাতে করে বাইকটিকে দেখতে সুন্দর লাগে। বাইকের টেল সাইড কার্ভড করে তৈরি করা হয়েছে যাতে করে মোটরসাইকেলটিকে দেখতে ভারী মনে হয়। বাইকটি ১৫০সিসির কমিউটিং সেগমেন্টে বড় এবং লম্বা অন্য মোটরসাইকেলের গুলোর তুলনায়। বাইকটি প্রথম দেখায় আপনার বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে যে বাইকটি বাংলাদেশের তৈরি।
Roadmaster Rapido টেস্ট রাইড রিভিউ – চাকা, ব্রেকস এবং সাসপেনশন
- ফ্রন্ট টেলিস্কোপিক সাসপেনশন
- রেয়ার মনোশক সাসপেনশন
- ২৪০মিমি ফ্রন্ট ডিস্ক ব্রেক
- ২০০মিমি রেয়ার ডিস্ক ব্রেক
- সিবিএস সিস্টেম
- ১৩০ স্পেসিফিকেশন রেয়ার টায়ার
- এলয় হুইল
- টিউবলেস টায়ার
সকলের মনে একটি প্রশ্ন উকি দিচ্ছে, যে এত বড় একটি বাইকের পক্ষে কি সম্ভব স্ট্যান্ড, রান এবং এক সাথে সময়মত থামা। এই সব প্রশ্নের উত্তর দিতে রোডমাস্টার র্যাপিডোতে সিবিএস সিস্টেম ইনষ্টল করেছে। এই সিস্টেমটি বাইককে অনেক বেশি দ্রুত গতিতে থামার কনফিডেন্স দেবে, তাছাড়া রেয়ার টায়ার ভালো ফিডব্যাক দেয়।
Roadmaster Rapido টেস্ট রাইড রিভিউ – রাইডিং অভিজ্ঞতা চলুন রোডমাস্টার র্যাপিডোর রাইডিং অভিজ্ঞতা থেকে বাইকটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাক। শুরুতেই সিটিং পজিশনে আসা যাক। যদিও এটি কমিউটিং সেগমেন্টের বাইক, তবুও এর সিটিং পজিশন স্পোর্টি অনেকটা অফ রোড বাইকের মত। হ্যান্ডেলবার প্রশস্ত হওয়ার কারনে আপনাকে হাত ছড়িয়ে দিতে হবে। রিয়ার ভিউ মিরর মোটামুটি সঠিক জায়গায় আছে। আপনি পিছন থেকে আসা যানবাহন দেখতে পাবেন। সিটিতে ছোট হুইল বেস হওয়ার কারনে রাইডিং করা অনেক আনন্দায়ক। তাছাড়া ভালো ভাবে কর্নারিং ও করা যায়, তবে হাই স্পিড কর্নারিং এর জন্য বেশি ভাল নয়। কিন্তু লো বা মিডিয়াম স্পিডে কর্নারিং এবিলিটি দারুন। আপনি ট্র্যাফিক জ্যাম থেকে সহজেই বের হয়ে যেতে পারবেন।
সাসপেনশনের কথা যদি বলি, তবে ফ্রন্ট এবং রেয়ার সাসপেনশন দুটো ভালো ফিডব্যাক দেয়। তবে আমরা প্রথম ১০০০কিমি তে কিছুটা শক্ত মনে হতে পারে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সাসপেনশন ভালো ফিডব্যাক দেয়া শুরু করে। আমার মনে হয় ডায়ামিটার উচু হওয়ার কারনে খারাপ রাস্তাতেও ভালো ফিডব্যাক দেয়। যদি আপনি একা রাইড করেন তবে তেমন কোন সমস্যায় পরবেন না। কিন্তু পিলিয়ন নিয়ে রাইডিং এর ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যায় পরতে পারেন। রিয়ার সাসপেনশনের ফিডব্যাক কিছুটা কমে যেতে পারে। যদিও মনে হতে পারে পিলিয়ন নিয়ে রাইডিং সমস্যার, আসলে তা নয়। এছাড়া পিলিয়নের বসার সুবিধার জন্য পিছনে গ্রিব রেইল দেয়া হয়েছে।
এখন আমার আছে সবচেয়ে বেশি বা সমস্যার মনে হয়েছে তা হলো স্পিড! যেহেতু এর ওজন ১৩৯ কেজি এবং রেয়ার টায়ার ১৩০ সেকশন ও নেকেডের সাথে এরোডাইনামিক না হওয়াতে টপ স্পিড আমরা তেমন বেশি পাইনি। আমাদের টেস্ট রাইডের সময় আমরা টপ স্পিড পেয়েছি ১১৫ কিমি প্রতি ঘন্টায়। টায়ারের গ্রিপ গুলো হাই স্পিডে ভালো ফিডব্যাক দেয়। তবে আমরা ব্রেক নিয়ে আলাদা ভাবে কথা বলব। বাইকের ব্রেক গুলো দারুন কাজ করে থাকে। যেহেতু সিবিএস সিস্টেম ইনষ্টল করা হয়েছে, তাই আপনি রেয়ার ব্রেক বেশি চাপ দিলে আপনার রেয়ার হুইল লক হয়ে যাবে। আপনাকে স্মুথ ব্রেকিং এর জন্য ব্রেক সঠিক ভাবে ব্যবহার করতে হবে। যদি টায়ার গুলো একটু চিকন হতো তবে ভালো হতো বাইকটি হাই স্পিডে কন্ট্রোলিং ও রাইডিং এর জন্য। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাইকটি ইয়ামাহা এম স্ল্যাজ এর কথা মনে করিয়ে দেয়। র্যাপিডোর বিল্ড কোয়ালিটি যদিও এম স্ল্যাজের মত নয় কিন্তু এর রাইডিং কম্প্যাটিবিলিটি ও এর গেসচার অনেকটাই ম্যাচ করে। অফরোডে রেয়ার সাসপেনশন ভালো ফিডব্যাক দেয়। রেয়ার সাসপেনশনের দিক থেকে আপনি রাইডিং এর ক্ষেত্রে কফিডেন্স পাবেন। তবে ব্রেকিং এর ক্ষেত্রে একটু সতর্ক হতে হবে। শর্ট হাইটের মানুষের জন্য বাইকটি রাইড করা একটু কষ্ট হবে। র্যাপিডোতে রেডি পিক আপ নেই। কিন্তু ০-৮০ কিমি প্রতি ঘন্টায় খুব দ্রুত উঠে যায়। তবে এরপর স্পিড আপ করতে অনেক সময় লাগে। অন্যদিকে আমরা বাইকটির সিটিতে মাইলেজ পেয়েছি ৩৫কিমি প্রতি লিটার আর হাইওয়েতে পেয়েছি ৪০কিমি প্রতি লিটার।
আপনাকে ফুয়েল এর ব্যাপারে একটু সর্তক থাকতে হবে। কারন এই বাইকটিতে ভালো মানের ফুয়েল ব্যবহার না করলে কার্বুরেটরে সমস্যা হতে পারে। মাঝে মাঝে এক্সেলারেশন হার্ড হয়ে যায় তখন মনে হতে পারে যে বাইকে কার্বুরেটর থেকে ফুয়েল ঠিক ভাবে সাপ্লাই হচ্ছে না। তবে আমার কাছে বাংলাদেশে তৈরি বাংলাদেশের মোটরসাইকেল কোম্পানি মধ্যে বেস্ট মোটরসাইকেল মনে হয়েছে। বাইকটি আমাকে আমার অন্যতম পছন্দের একটি বাইক রেস ফিয়েরো ১৫০এফআর বাইকের কথা মনে করিয়ে দেয়। র্যাপিডোর হ্যালোজেন লাইটি সিটি এবং হাইওয়েতে ভালো ফিডব্যাক দেয়। পার্কিং লাইটস গুলো মনযোগ ভঙ্গেরগ কারন হয়ে দাড়াতে পারে রাতের বেলা। কিন্তু আপনি নিয়মিত রাইড করলে অভ্যাস হয়ে যাবে।
রোডমাস্টার র্যাপিডো ১৫০ একটি দারুন বাইক। এর বেস্ট পার্ট হচ্ছে এটি একটি বাংলাদেশী কোম্পানির তৈরি একটি বাইক। বাইকটি যদিও কমিউটার বাইক নয়, তবে নেকেড স্পোর্টস বাইক হিসেব অসাধারন। হ্যা এটা বলা যায় যে এর স্পিডে কিছু কমতি রয়েছে এবং মাইলেজ যদি আর একটু ভালো হতো তবে এর প্রতিযোগীদের থেকে অনেক বেশি এগিয়ে থাকত। তবে এছাড়া এর ক্রেজি এটিচুইড ও এগ্রেসিভ ভাব বাইকটিকে অন্যরকম করে তুলেছে। ফাইনালি ১৫৩,৯০০/- টাকায় নেকেড স্পোর্টস বাইক হিসেবে কোন অভিযোগ থাকার কথা নয়।
আজকের মত এই পর্যন্ত, এই ছিল আমাদের Roadmaster Rapido টেস্ট রাইড রিভিউ । আশা করছি খুব দ্রুত আমরা এর ভিডিও রিভিউ প্রকাশ করতে পারব।