Roadmaster Prime রিভিউ-বাংলাদেশের অন্ন্যতম সস্তা বাইক

This page was last updated on 18-Jan-2025 06:07pm , By Shuvo Bangla

তেল সাশ্রয়ী অল্প সিসির কমিউটার বাইকগুলো বাংলাদেশে খুব জনপ্রিয়। ৫০ থেকে ১০০ সিসির এই বাইকগুলো রাস্তায় অহরহ দেখা যায়। বড় সিসির বাইকগুলো নিয়ে বাইকারদের উচ্ছ্বাস থাকলেও নিত্যদিনের সঙ্গী এই কমিউটার বাইকগুলো নিয়ে আলোচনা কম হয়। প্রতিদিনের প্রয়োজনে ব্যবহার করতে আগ্রহীরা বাইকবিডির ফেসবুক পেজে অসংখ্যবার এই অল্প সিসির বাইকগুলো নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

সম্প্রতি বাংলাদেশে ৮০ সিসির বাইক সেগমেন্টে একটি নতুন বাইক সবার আলোচনায় আছে। সেটি হচ্ছে Roadmaster Prime । অল্পদামে সব প্রয়োজনীয় ফিচার সহ বাইকটি বাজারে আসায় এটি অনেকেরই আগ্রহের জন্ম দিয়েছে। তাই আসুন, আজকে বাংলাদেশের অন্যতম কমদামের বাইক প্রাইম নিয়ে আমরা একটি রিভিউ করি।

Also Read: Roadmaster Showroom in Rajshahi: Surovi Enterprise

একনজরে রোডমাস্টার-প্রাইম : 

রোডমাস্টার প্রাইম বাংলাদেশের বাজারে সম্পূর্ণ নতুন একটি কমিউটার মোটরসাইকেল। তেল সাশ্রয়ী এই বাইকটির দামও অবিশ্বাস্য রকম কম। মূলত প্রতিদিনের যাতায়াতের জন্য যারা বাইক কেনার কথা ভাবছেন, তাঁদের কথা মাথায় রেখেই এই বাইকটি বাজারে আনা হয়েছে। বড় ব্যাপার হচ্ছে বাইকটিতে বেশ কিছু প্রয়োজনীয় ফিচার যুক্ত করা হয়েছে, যা চালকের জন্য অনেক সুবিধা করে দেবে। যাই হোক, আসুন কথা বাড়ানোর আগে আমরা রোডমাস্টার প্রাইমের অফিশিয়াল স্পেসিফিকেশনটা একনজরে দেখে নেই। রোডমাস্টার প্রাইম এর ইঞ্জিন ৮৪.৪১ সিসি।

Also Read: Roadmaster Showroom in Sylhet: Khan Motor

এটি সিঙ্গেল সিলিন্ডার ফোরস্ট্রোক এয়ার কুল ইঞ্জিন। পাওয়ার হচ্ছে ৪.৫@৮০০০ আরপিএম, কমিউটার বাইক হিসেবে যা বেশ ভালো। এই সেগমেন্টে অন্যান্য বাইকগুলোর ফুয়েল ট্যাংক সাধারন গোলাকার হলেও প্রাইমের ফুয়েল ট্যাংকটি কার্ভ ডিজাইন করা, যা মডার্ন। দেখতে যদিও শক্তপোক্ত লাগে বাইকটি, তবে ডিজাইনের বাদবাকি প্রচলিত এই সেগমেন্টে অন্যান্য বাইকগুলোর তুলনায় খুব ভিন্ন কিছু নয়। কিন্তু যে কথা আগেই বলেছি, এর ফিচারগুলো অন্যান্য অনেক বাইকের তুলনায়ই আধুনিক। তাহলে আসুন, এবারে এই ফিচারগুলো সম্পর্কে জানা যাক ।

Roadmaster Prime Specification

রোডমাস্টার প্রাইমের ফিচারগুলো : 

বাংলাদেশের যে কোনো প্রান্তে ব্যবহার উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে রোডমাস্টার প্রাইম। সিট বড় এবং প্রশ্বস্থ। দুজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ বেশ আরামদায়কভাবেই ভ্রমন করতে পারবেন এই বাইকে। সিটের শেষ প্রান্তের মেটাল ক্যারিয়ার আছে। আর আছে ধরে বসার মতো রেইল। মেটাল ক্যারিয়ারটি বেশ শক্তপোক্ত, ভারি জিনিসপত্র বহনে কোনো সমস্যাই হবে না। সহযাত্রীর নিরাপত্তার জন্য বাইকটিতে বড় ফুটরেস্ট সহ শাড়িগার্ড আছে। ড্রাইভ চেনটি পুরোটাই মেটাল বক্স করা, যা নিরাপত্তার জন্য খুবই প্রয়োজনীয়।

Also Read: Roadmaster's Boishakhi Tufan Offer

চেনটি বক্সের ভেতরে থাকায়, এটি চেনকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখে, আর দুর্ঘটনায়ও ক্ষতির কারন হয় না। অতিরিক্ত নিরাপত্তা হিসেবে এগজস্ট পাইপেও ধাতব মাফলার লাগানো আছে। কিছু কিছু সময়ে এটি চালককের নিরাপত্তায় জরুরি হয়ে উঠে। প্রাইমের ফুয়েল ট্যাংকটি ৭ লিটারের। জ্বালানি সাশ্রয়ী বাইকে ৭ লিটারের ফুয়েল ট্যাংক থাকলে আর ভাবনা কী, একবার জ্বালানি ভরে নিলে নিশ্চিন্তে পাড়ি দিতে পারবেন মাইলের পর মাইল।

Also Read: Roadmaster Prime price in BD

অডো কনসোল বা প্রচলিত ভাষায় আমরা যাকে স্পিডোমিটার বলে থাকি, সেটি এই বাইকের আরেকটি ভালো ফিচার। দুটো গোলাকার অডো কনসোল যুক্ত আছে বাইকটিতে। এনালগ এই কনসোলে অডো, স্পিডো মিটার, ট্রিপ মিটার, রেভ কাউন্টার এবং ইন্ডিকেটর যুক্ত আছে।

রোডমাস্টার প্রাইম এর বিশেষ বৈশিষ্ট :

যদিও রোডমাস্টার একটি বেসিক কমিউটার বাইক হিসেবে বাজারে এসেছে, তবু এর বেশ কিছু আলাদা ফিচার আছে যা এই বাইকটিকে এই ধারার বাকি বাইকগুলো থেকে করেছে স্বতন্ত্র আর আকর্ষনীয়। বাইকটিতে আছে মডার্ণ সেলফ স্টার্টার বা ইলেক্ট্রিক স্টার্ট। কিকস্টার্টের পাশাপাশি সেলফ স্টার্ট আছে, যা এই দামের আশেপাশে থাকা বাকি বাইকগুলোর নেই। আরেকটি আকর্ষনীয় বিষয় হচ্ছে এর ডিজিটাল মিটার ইন্ডিকেটর।

Also Read: Top 10 Motorcycle Parking Tips For Safe Parking - BikeBD

দ্রুতগতিতে বাইক চালানোর সময় অনেকেই বাইকটি কত নম্বর গিয়ারে আছে, সেটি নতুন চালকরা বুঝতে পারেন না। ডিজিটাল গিয়ার ইন্ডিকেটর তাঁদের জন্য একটি ভালো ফিচার। ব্যাটারি চার্জ ডিসপ্লে আরেকটি সুন্দর ফিচার। ব্যাটারির চার্জ বুঝে চালক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন যে তিনি ইউএসবি পোর্ট ব্যবহার করবেন কী না। বেশ মজার একটি ফিচার হচ্ছে ইউএসবি পোর্ট বা ইউএসবি চার্জার। রোডমাস্টার প্রাইমের ইউএসবি পোর্টে লাগিয়ে সহজেই মোবাইল ফোন, এমপিথ্রি জাতীয় ডিভাইসগুলো চার্জ করা যাবে। অনেক সময় দীর্ঘ যাত্রায় কিংবা তাড়াহুড়োয় বাড়িতে মোবাইল চার্জ দিতে না পারলেও চালকের কোনো সমস্যা হবে না, পথেই মোবাইল চার্জের কাজটি সেরে ফেলতে পারবেন অনায়াসে।

প্রাইম এর চাকা ও সাসপেনশন : 

রোডমাস্টার প্রাইম এ ব্যবহার করা হয়েছে এলয় রিম। এই সেগমেন্টের অন্যান্য বাইকগুলোতে পুরোনো স্পোক হুইল থাকলেও প্রাইমের ক্ষেত্রে এলয় হুইল ব্যবহার করা হয়েছে। এলয় হুইল স্পোক হুইলের তুলনায় অনেক হালকা, তাই তেল খরচ কমিয়ে উন্নত মাইলেজ পেতে সহায়তা করে। স্পোক হুইলে ছোটখাটো দুর্ঘটনাতেই স্পোক কেটে যায় কিংবা চাকা বাঁকা হয়ে যায়। কিন্তু এলয় রিম দীর্ঘস্থায়ী এবং দুর্ঘটনায় চাকার কোনো ক্ষতি হয় না।

Also Read: YObykes Edge price in BD - BikeBD

রোডমাস্টার প্রাইমে টায়ারগুলোতে স্ট্রং গ্রিপ টায়ার ব্যবহার করা হয়েছে। বাংলাদেশের অনেক জীর্ণশীর্ণ রাস্তায় বা কাদামাটিতে বাইকটি পিছলে যাবে না, সহজেই চালানো যাবে। বাইকটিতে ড্রাম টাইপ ব্রেক ব্যবহৃত হয়েছে। সামনে পেছনে দুই চাকাতেই ড্রাম ব্রেক লাগানো আছে। সামনের সাসপেনশনটি টেলিস্কোপিক হাইড্রোলিক। পেছনে এসএনএস সাসপেনশন ব্যবহার করা হয়েছে যাকে সাধারনভাবে ডাবল স্প্রিং বলা হয়। এসএনএস সাসপেনশন বাইক চালানোকে আরামদায়ক করে। ছোটসাইজের স্প্রিংটি সাধারন ঝাঁকুনিতে কাজে আসে এবং মোটা স্প্রিংটি বড় ধরনের ঝাঁকুনিতে বাইকটিকে স্থির রেখে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমায়। ডাবল সাসপেনশন থাকায় বাইক টেকসই এবং দীর্ঘদিন ব্যবহার উপযোগী থাকে।

পাঠকদের জন্য এটিই ছিল Roadmaster Prime এর সাধারন দৃশ্যমান বৈশিষ্ট নিয়ে আলোচনা। ভবিষ্যতে আমরা বাইকটি চালিয়ে ব্যবহারিক রিভিউ দেয়ারও চেষ্টা করব। যারা দৈনন্দিন যাতায়াতের জন্য কমদামে একটি জ্বালানি সাশ্রয়ী বাইক খুঁজছেন, তাঁরা রোডমাস্টার প্রাইম কেনার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখতে পারেন। দেখতে শক্তসামর্থ ও সুন্দর এবং অনেক ফিচার সমৃদ্ধ এই বাইকটি চালাতেও আরামদায়ক হবে, এটাই আশা করি আমরা।