New Suzuki Gixxer বাইক নিয়ে মালিকানা রিভিউ - তামিম আহমেদ

This page was last updated on 31-Jul-2024 08:43am , By Shuvo Bangla

আমি তামিম আহমেদ, New Suzuki Gixxer বাইকটি ব্যবহার করি । আজ আপনাদের সাথে আমার বাইক নিয়ে রাইডিং অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো ।

new suzuki gixxer bike price

আমি ঢাকা কলেজের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী, আমার জীবনের প্রথম বাইক ছিলো বাবার কেনা Discover 125 যা দিয়ে আমার প্রায় ৫-৬ হাজার কিলোমিটার চালানোর অভিজ্ঞতা হয় । তারপর ব্যাক্তিগত ভাবে RTR150 বাইকটি ক্রয় করি ২০১৭ সালে , যা দিয়ে আমি প্রায় ১০ হাজার কিলোমিটারের রাইডিং অভিজ্ঞতা অর্জন করি।

RTR বাইকে সবচেয়ে বেশি সমস্যা অনুভব করতাম ব্রেক করলে হঠাৎ চাকা স্লিপ করতো। অনেক বড় বিপদে পড়তে গিয়েও বেচে গিয়েছি মফস্বল শহরে।

কয়েকটা কারণে আমি বাইকিং ভালোবাসি-


আমি বাইকিং ভালোবাসি কারণ আমার কাছে মুক্ত পরিবেশ ভালো লাগে প্রাইভেট কার এর বদ্ধ পরিবেশ অপেক্ষা। আমি বাইকিং ভালোবাসি কারণ বাইক নিয়ে আমি ইচ্ছে করলেই শহরের অলিতে গলিতে যখন খুশি ঘুরতে যেতে পারি। আমি বাইকিং ভালোবাসি কারণ আমার কাছে বাইকে চড়ে ঘুরতে ভালো লাগে পড়ন্ত বিকালে বা কোনো এক বৃষ্টির দিনে।

বাইকে বসে বাইক চালিয়ে মাওয়া রোডে বৃষ্টিতে ভেজার স্বাধ আমি যা পেয়েছি যা পৃথিবীর সব টাকা আমায় দিয়ে দিলেও তাঁর সমতুল্য হবে না।

new suzuki gixxer black

আমি যেভাবে আমার বাইকটি বেছে নিয়েছি -


মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হিসেবে আমার বাজেট ছিলো ২ লক্ষ ৫০ হাজার আমার পূর্বের বাইক থেকে প্রাপ্ত ১ লক্ষ ২০ হাজার ও বাকি টাকা টিউশনি করে এবং হাত খরচ করে জমানো, বাইক কেনার জন্য আমার এমন মাস গিয়েছে ২০২০ সালের মতন সময়ে আমি ৩০০ টাকা দিয়ে অনার্স পড়ুয়া যুবক মাসের হাত খরচ চালিয়েছি, এবং বন্ধুদের কাছ থেকে কৃপণ উপাধি পেয়েছি।

আমার বাজেটে আমার পছন্দ হিসেবে বাজারে জনপ্রিয় বাইক ছিলো FZS V3 ও Gixxer FI ABS। আমি লুকস এবং থ্রটল রেস্পন্স এর বিষয়টি বিবেচনা করে আমি জিক্সার বাইকটি পছন্দ করি।

আমি বাইকটি বেছে নিয়েছি কারন -

আমি উপরে বলেছি লুকস এবং থ্রটল রেস্পন্স এর বিষয়টি বিবেচনা করে আমি বাইকটি পছন্দ করি। বর্তমান সময়ে আমি গতি অপেক্ষা ব্রেকিং এর দিকে বেশি গুরত্ব দেই এজন্য আমি এবিএস মডেলটি ক্রয় করি।

আমার বাইকটি ২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকায় ক্রয় করি । বাইকটি আমি সুজুকির শোরুম ওমেগা মোটর বংশাল থেকে ক্রয় করি ।


বাইক কিনতে যাওয়ার দিনটি স্মরণীয় আমার কাছে কারন - 


২০২১ সালের মার্চ মাসে আমি বাইকটি ক্রয় করি , তখন ঢাকায় কোথায়ও বাইকটি পাওয়া যাচ্ছিলো না, সারাদিন খুঁজে শেষ চেষ্টা করতে আমি তেজগাঁও সুজুকি এর ডিলার র‍্যাংকন মোটরস এ যাই, খোঁজ নিতে যে বাইক কবে এভেইলএবেইল হবে এটা জানতে, কিন্তু বিকাল ৪.০০ টায় গিয়ে শুনি বংশাল এ ওমেগা মোটরস এ বাইক আছে ২ টি, তখন দ্রুত গিয়ে সেখান থেকে সংগ্রহ করি।

বাইকটি প্রথমবার চালানোর অনুভুতি ছিলো বর্ননার বাহিরে আমার কারণ, প্রথম যখন বাইকটি চালাই তখন বেশ ভয় করছিলো ঢাকার এই জ্যামের শহরে আমার প্রিয় বাইকটিতে যদি কেউ আঘাত করে এটা ভেবে । কিন্তু নিজের জমানো টাকায় বাইক কেনার আনন্দ ছিলো অসাধারণ।

শখ এর কারণে আমি বাইক চালাই । বাইকটির এক্সিলারেশন দুর্দান্ত ভালো লাগে আমার। বাইকটির থ্রটল টানার সাথে সাথে এমন ভাবে গতি বেড়ে যায় মনে হয় বাইকটি ঠিক যেনো আমার মনের কথা শুনছে। এর ইঞ্জিন কুলিং সিস্টেম এয়ার কুল্ড যা আমার খুবই ভালো লেগেছে ।

new suzuki gixxer black

প্রতিদিন বাইকটি চালানোর সময় আমার মনের সাধারন অনুভুতি বাইকটি চালাতে বেশ ভালো লাগে। কারণ, প্রতিনিয়ত যখন আমি বাইক রাইড করি তখন আমার মনে হয় আমি আমার বাইকে যথেষ্ট সেফটি অনুভব করছি।

আমার বাইক আমি মিরপুর ৬০ ফিট রোড এ সুজুকি সার্ভিস সেন্টার থেকে সার্ভিসিং করাই, প্রতি ২মাসে আমি একবার সার্ভিসিং করাই।

বাইকের মাইলেজ এর বিষয়ে বললে -
২৫০০ কিলোমিটার এর পূর্বে ৩৫+ মাইলেজ পেয়েছি এবং পরবর্তীতে ৪০ মতন পেয়েছি। আমি আমার বাইক নিয়মিত পরিষ্কার রাখি, চেইন লুব করার চেষ্টা করি, টায়ার প্রেশার ঠিক রাখি। মতুল মিনারেল ৫০০ টাকার যে ইঞ্জিন অয়েল আছে সেটা ব্যাবহার করি।

বাইক এর পার্টস পরিবর্তন করেছি শুধু ব্রেক প্যাড পেছনের চাকার। কারণ চাকা খুলেছিলাম, পেরেক ফুটেছিলো সেটা বের করতে পরবর্তীতে লাগাতে গিয়ে লোকাল মস্ত্রী ব্রেকসু বাঁকিয়ে ফেলে,তারপর সেটি পরিবর্তন করতে হয়।

আমার বাইকের কোনো অংশ আমি মডিফাই করিনি, কারণ আমার অরিজিনাল লুক ভালো লাগে। বাইকটি দিয়ে আমার তোলা সর্বোচ্চ স্পীড ছিলো মাওয়া রোডে। আমার বাইকে সর্বোচ্চ আমি ১২১ গতি তুলেছি।

New Suzuki Gixxer বাইকটির কিছু ভালো দিক -

  • বাইকটি দেখতে খুবই সুন্দর
  • বাইকটির পারফরম্যান্স, ব্রেকিং সিস্টেম খুবই ভালো লাগে আমার কাছে।
  • বাইকের সিটিং পজিশন খুবই আরামদায়ক মনে হয় সবসময়।
  • প্রতি লিটারে মাইলেজ ৪০+ পেয়েছি ।
  • সিঙ্গেল চ্যানেল এবিএস থাকার কারণে ব্রেক ধরে খুবই কমফোর্ট ফিল করি আমি ।

New Suzuki Gixxer বাইকটির কিছু খারাপ দিক -

  • বিল্ড কোয়ালিটি আরেকটু মজবুত প্রয়োজন
  • মিরর এ পর্যাপ্ত লুকস আমি পাই না
  • ইঞ্জিন যদি অয়েল কুল করতো তবে হয়তো একটু বেশি ভালো হতো
  • ইঞ্জিন খুব তাড়াতাড়ি গরম হয়ে যায়।
  • ভাঙা বা একটু অসমতল রোডে বাইকটির ABS ব্রেকিং অর্থাৎ সামনের ব্রেক কাজ করে না, ছেড়ে দেয় হঠাৎ করে

new suzuki gixxer

বাইকটি দিয়ে লম্বা দুরত্বের ভ্রমন -
আমি বাইক দিয়ে একটানা একদিনে ৩৩০+ কিলোমিটার চালিয়েছি এবং যথাযথ আশানুরূপ সার্ভিস পেয়েছি আমার বাইকের কাছ থেকে গতি ও ব্রেকিং এ। সব কিছু মিলিয়ে আমি আমার বাইক নিয়ে সম্পূর্ণ ভাবে সন্তুষ্ট একটি ন্যাকেড বাইক হিসেবে আলহামদুলিল্লাহ । রিভিউটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ ।

লিখেছেনঃ তামিম আহমেদ
 
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।