Lifan KPT 150 নিয়ে তেতুলিয়া টু টেকনাফ - মিরাজ মল্লিক
This page was last updated on 29-Jul-2024 02:44pm , By Raihan Opu Bangla
তেতুলিয়া থেকে টেকনাফ (টিটি) করার বিষয় দীর্ঘদিন যাবত আমার পরিকল্পনার মধ্যে ছিল। বিশেষ করে যখন থেকে Lifan KPT 150 আমি ব্যবহার করছি। যেহেতু Lifan KPT 150 একটি টুরিং বাইক, আমার মনের মধ্যে একটা জিনিস কাজ করছিল যে লিফান কেপিটি দিয়ে আমি খুব আরামে টিটি কমপ্লিট করতে পারব। যদিও টিটি (তেতুলিয়া টু টেকনাফ) ভ্রমণটি একেবারে সহজ কাজ ও নয়। পূর্ব পরিকল্পনা চিন্তা থেকেই আমি সিদ্ধান্ত নেই তেঁতুলিয়া থেকে আমি আমার ভ্রমণ শুরু করব।আল্লাহর ইচ্ছায় ০৩.০৮.২০২০ সকাল ৭টায় ঢাকা থেকে তেতুলিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করি। সরাসরি ঢাকা থেকে চলে যাই বগুড়া। বগুড়া এক বাইকার ছোট ভাই প্রিন্স এর সাথে দেখা করে খানিকটা বিরতির নিয়ে সরাসরি চলে যাই রংপুর। রংপুরের আরেকজন বাইকার ভাই সেও টিটি কমপ্লিট করেছেন তানভীর আহমেদ রোমান ভাইয়ের সাথে খানিকটা সময় কাটিয়ে সরাসরি চলে যাই সৈয়দপুর।
সৈয়দপুরে আরেকজন প্রিয় বাইকার ভাই জয়, তার সাথে দেখা হয় এবং খানিকটা সময় সৈয়দপুরে কাটিয়ে সরাসরি চলে যাই পঞ্চগড়। পঞ্চগড়ে আরেকজন বাইকার ভাই পঞ্চগড় বাইকার্স ক্লাবের এডমিন রেজাউল করিম রাজু সে আমাদের জন্য আগে থেকেই হোটেল বুকিং করে রেখেছিল। তো সেদিন রাতে আমি পঞ্চগড়ে রাত্রি যাপন করি।
সেদিন রাতে পঞ্চগড়ের বাইকার ভাই রেজাউল করিম রাজু আমাকে বলল আমাদের পঞ্চগড় জেলাটা একটু ঘুরে দেখেন। যদিও এর আগে ২০১৮ তে আমি Lifan KPR নিয়ে পঞ্চগড়ে এসেছিলাম। তখন বাংলাবান্ধা ঘুরে আমি ঢাকা চলে আসি। তখন চিন্তা করলাম পঞ্চগড় জেলাটা একটু ঘুরে দেখা যেতে পারে। রেজাউল করিম রাজু ভাইয়ের সাথে একমত হয়ে তখন আমি বললাম আগামীকাল আমি পঞ্চগড় থাকবো পঞ্চগড় জেলা যতটুক ঘুরে দেখা যায় আমি ঘুরব।পরের দিন ০৪.০৮.২০২০ সকালে ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরি হয়ে যায় কারণ ঢাকা থেকে পঞ্চগড় সরাসরি জার্নি করে শরীরটা একটু ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলো বিশেষ করে ওই দিন মনে হয় বাংলাদেশের সর্বোচ্চ গরম পড়েছিল। তো সেইদিন পঞ্চগড়ের কিছু উল্লেখযোগ্য স্থান আমি পঞ্চগড় বাইকার ভাইয়ের সাথে থেকে আমাকে নিয়ে ঘুরে দেখিয়েছে। তার পরের দিন সকালে অর্থাৎ ০৫.০৮.২০২০ ইংরেজি তারিখে, আমি সরাসরি হোটেল ত্যাগ করে চলে যাই তেতুলিয়া দিকে।
আমার ইচ্ছা ছিল আমি মাগরিবের নামাজের পরে তেতুলিয়া টু টেকনাফ এর যাত্রা শুরু করব। তো সারাদিন কি করবো, তেতুলিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি বাদশা ভাই ও তার ছোট ভাই সোহাগ সাংবাদিক আমার সাথে পরিচিত ছিল। সে আমাকে নিয়ে তেঁতুলিয়ায় খুব বিখ্যাত কাজী এন্ড কাজী টি গার্ডেনে আমাকে নিয়ে গিয়েছিল।
সারাদিন সেখানে ঘুরে, দুপুরের দিকে চলে আসি তেতুলিয়া শহরে Lifan KPT 150 এর কিছু টুকটাক কাজ সেরে এসে দুপুরে খাওয়া-দাওয়া শেষ করি। তারপর তেতুলিয়া ডাকবাংলো তে অবস্থান নেই। খানিকটা সময় বিশ্রাম করার জন্য, এগুলো সব তেতুলিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি বাদশা ভাই নিজ দায়িত্বে ম্যানেজ করেছেন, যা আমার জন্য খুবই উপকার হয়েছে যা কখনোই ভোলার নয়।
এক ঘন্টা বিশ্রাম নিয়ে সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে, তেতুলিয়া জিরো পয়েন্টে অবস্থান করি, সেখান থেকে আমি আমার ফেসবুক থেকে সরাসরি লাইভে চলে আসি এবং সবাইকে জানাই যে আমি Lifan KPT 150 নিয়ে তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ এর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করতেছি আমার জন্য যেন সবাই দোয়া করে।খানিকটা সময় ফেসবুকে লাইভ কাটিয়ে, মাগরিবের নামাজের পরে আল্লাহর ইচ্ছায় যাত্রা শুরু করি । তখন খুব সম্ভবত সন্ধ্যা ৭.১৫ মিনিট, সরাসরি তেঁতুলিয়া থেকে রংপুরে চলে আসি, যখন রংপুরে আসি তখন হালকা হালকা বৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছে, বৃষ্টির জন্য কিছুটা সময় বিরতি নিয়ে রেইনকোট না পড়েই সামনের দিকে এগোতে থাকলাম, আসতে আসতে বগুড়া চলে আসলাম।
বগুড়া শহরের একটু আগে এসে একটা তেলের পাম্পে অবস্থান করি ও একটা ফেসবুক লাইভ করে, বাইকের ফুয়েল নিয়ে খানিকটা বিরতি ও নেই। তারপর সামনের দিকে আবারও এগোতে শুরু করলাম। দুই তিন কিলো সামনে আগানোর সাথে সাথেই, যখন বগুড়া শহরের দিকে ঢুকে গিয়েছিলাম তখন ঝুম বৃষ্টি শুরু হল। ঝুম বৃষ্টি দেখে একটা ছাউনির নিচে অবস্থান করলাম রেইনকোট পড়ার জন্য, তখন ঘড়িতে রাত দুটো।
রেইনকোট পরে ঝুম বৃষ্টির মধ্যে বাইক চালানো শুরু করলাম ততক্ষণে রাস্তায় পানি জমে গিয়েছে পুরো রাস্তা জুড়ে। তখন আস্তে আস্তে রাইড করছিলাম।প্রচন্ড বৃষ্টির কারণে সামনে কিছুই দেখা যাচ্ছিলো না হেলমেট ঘোলা হয়ে যাচ্ছিল সবকিছু মিলিয়ে গাড়ির স্পীড ছিল ৩০/৪০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা। আগে থেকেই চিন্তা করছিলাম বগুড়ার রাস্তাটা একটু সাবধানে চালাতে হবে। যেখানে বাঘের ভয় সেখানে রাত পোহায়। বগুড়ার রাস্তা
যেহেতু একটু বাজে, এবং মধ্যরাত সাথে ঝুম বৃষ্টি। অপর দিকে ঈদের ছুটির পরে ঢাকাগামী বাস এর প্রচন্ড চাপ এবং সব গাড়ি বগুড়া রাস্তায় ঢুকে খানিকটা আস্তে চালাচ্ছিল কারণ রাস্তা একটু বাজে থাকার কারণে, সেই কারণেই বাসগুলো একটার সাথে আরেকটা খুব ক্লোজ হচ্ছে।
এক কথায় বলতে গেলে যেখানে বাঘের ভয় সেখানে রাত পোহায় বিষয়টা এমন বলা যেতে পারে। তো বাসের প্রচন্ড পেশার থাকার কারণে ওই রাস্তায় কিছুক্ষণ পর পরই জ্যামের সৃষ্টি হচ্ছে এবং বাসের জটলা লেগে যাচ্ছে। তো আস্তে আস্তে করে এভাবেই চলতে থাকল সিরাজগঞ্জ ফুড ভিলেজ পর্যন্ত সিরাজগঞ্জে খানিকটা বিরতি নিয়ে সরাসরি চলে গেলাম যমুনা ব্রিজে। ওখান থেকে সরাসরি ফেসবুক লাইভে চলে গেলাম। তখন ঘড়িতে রাত চারটা, যমুনা ব্রিজ দিয়ে সরাসরি আসতে থাকলাম টাঙ্গাইলের দিকে।
এলেঙ্গায় আসতে না আসতেই আমার কো-রাইডার তার একটু সমস্যা হয়, তখন এলেঙ্গায় আরেকটা বিরতি নিতে হয়। আমার কো-রাইডারের সমস্যার কথা চিন্তা করে আমাকে খুব আস্তে আস্তে ড্রাইভ করতে হচ্ছিল। ওইখানে খানিকটা সময় আমাদের বিলম্বিত হয়, তখন ঘড়িতে ভোর পাঁচটা, তখন আস্তে আস্তে টাঙ্গাইল থেকে সরাসরি চলে যাই কুমিল্লা আর কোথাও বিরতি না দিয়ে।
তখন ঘড়িতে সকাল ৯টা, কুমিল্লায় বিরতি দিয়ে বাইকের কিছু কাজ করিয়ে একটু রেস্ট নিয়ে ১১টার দিকে আবার আমার যাত্রা শুরু করি, কুমিল্লা থেকে সরাসরি চলে যাই চট্টগ্রামের দিকে, চট্টগ্রাম শহরের কাছাকাছি যখন আসি তখন প্রচন্ড বৃষ্টি শুরু হয় এবং এই বৃষ্টির মধ্যেই আমাকে রাইড করতে হয় যদিও স্পীড কম রেখে। তখন সরাসরি চলে আসলাম শাহ আমানত ব্রীজ চট্টগ্রাম ওখানে একটা ছোট বিরতি নিলাম। আমার কো -রাইডার্স তাকে আমি বললাম তুমি আস্তে আস্তে করে টেকনাফের দিকে আগাতে থাকো।
আমি রওনা হলাম সরাসরি চলে গেলাম কক্সবাজারের দিকে, কক্সবাজার অতিক্রম করে যখন মেরিন ড্রাইভ রাস্তায় ঢুকলাম তখন শুরু হলো প্রচণ্ড বৃষ্টি যা সামনে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। বৃষ্টিতে ভিজি রাস্তায় কোনো বিরতি না দিয়ে সরাসরি চলে গেলাম টেকনাফ জিরো পয়েন্টে।সেখান থেকে সরাসরি লাইভে চলে গেলাম এবং আমার ভ্রমণ তেতুলিয়া টু টেকনাফ শেষ করলাম, তখন ঘড়িতে বিকেল পাঁচটা আর বেশি, সবমিলিয়ে ২১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিটের মত সময় লাগলো, আমার কাছে সময় কোন বড় ব্যাপার না ভ্রমণ সম্পন্ন করছি আলহামদুলিল্লাহ। সেই দিন রাতে টেকনাফ অবস্থান করি,পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি প্রচন্ড বৃষ্টি টেকনাফে। সেদিন তার পরের দিন রাতে ও টেকনাফ অবস্থান করি এবং রেস্ট নিয়ে সরাসরি কক্সবাজারের দিকে চলে যাই।
কক্সবাজারে একরাত অবস্থান করে তার পরের দিন সকালে বান্দরবানের ডিম পাহাড় এর উদ্দেশ্যে রওনা করি। ডিম পাহাড় হয়ে বান্দরবান শহরে চলে যাই। তারপরের দিন অর্থাৎ ১০ই আগস্ট সকালে বান্দরবান শহর ত্যাগ করে সরাসরি চলে যাই পাহাড়ি রাস্তা ধরে। কাপ্তাই রাঙ্গামাটি, সেখানে গিয়ে দেখা হয়ে গেল রাঙ্গামাটি বাইকার ভাইদের সাথে। তাদের সাথে খানিকটা সময় কাটিয়ে সরাসরি চলে যাই ভাটিয়ারী ক্যান্টনমেন্ট হয়ে চিটাগাং হাইওয়ে দিকে। চিটাগাং হাইওয়ে এসে খানিকটা বিরতি নিয়ে সরাসরি চলে যাই কুমিল্লা ছোট একটি বিরতি নিয়ে সরাসরি ঢাকায় চলে আসি।
লিখেছেনঃ মিরাজ মল্লিক
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।