বাজেটের মধ্যে পারফর্মেন্স স্পোর্টস বাইক Lifan KPR 165R-তসলিম
This page was last updated on 25-Jul-2024 06:23am , By Raihan Opu Bangla
আমার নাম তসলিম । আমি যশোর জেলার অভয়নগর থানায় বসবাস করি । আমার জীবনের প্রথম বাইক Lifan KPR 165R । বাইকটি কার্বোরেটর ভার্সন । বাইকটিতে নতুন প্রযুক্তির NBF2 ইঞ্জিন দেওয়া হয়েছে । এখন আমার বাইকটি 10 হাজার কিলোমিটার রানিং । আজ আমি আমার Lifan KPR 165R বাইকটি ১০ হাজার কিলোমিটার রাইডের কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে চাই ।
Lifan KPR 165R বাইকটি ১০ হাজার কি.মি. রাইডের অভিজ্ঞতা
বাইকের প্রতি প্রথম থেকে তেমন একটা ভালোবাসা ছিল না যখন আমি ফেসবুক চালাতে শিখি এবং চালাই তখন বিভিন্ন গ্রুপে বাইকিং ভিডিও ও বিভিন্ন বাইক স্টান্ট ভিডিও দেখতাম এবং ভালো লাগতো । এরপর আব্বু একটি বাইক কিনে সেটা থেকে বাইক চালানো শিখলাম। তারপর আস্তে আস্তে বাইকিং এর প্রতি একটা আলাদা আগ্রহ এবং ভালোবাসা জন্মায় । একটি কথা আছে আপনার কাছে একটি কার থাকলে আপনি ইচ্ছামত যেখানে ইচ্ছে যেতে পারবেন না । কিন্তু আপনার কাছে একটি বাইক থাকলে আপনি নিজের ইচ্ছেতে যখন খুশি যেখানে খুশি যেতে পারবেন । বাইক এবং বাইকিং ভালোবাসার পিছনে এটি একটি কারণ ।
Lifan Kpr 165R বাইকটি আমি ইউটিউবে ভিডিও দেখে প্রথম পছন্দ করি এর আগে আমার অন্য মডেলের বাইক পছন্দ ছিল প্রধানত এর লুকস দেখেই আমি প্রথমে পছন্দ করি কারণ আমার কাছে স্পোর্টস বাইক খুব ভালো লাগতো তাই আমার বাজেট এর ভেতরে এই বাইকটি আমার কাছে সেরা মনে হয়েছে । বাইকটি আমি ট্যুর এবং কলেজ, প্রাইভেট আসা-যাওয়ার কাজে ব্যবহার করি । আমি যখন Lifan Kpr 165R বাইকটি কিনি তখন বাইকটির দাম ছিল ১,৯৯,০০০ টাকা। কিন্তু আমি ১০ হাজার টাকা ডিসকাউন্ট পেয়ে ১,৮৯,০০০ টাকায় বাইকটি কিনেছিলাম । বাইকটি কিনেছি বরিশাল কর্ম উন্নয়ন শো-রুম থেকে ।
বাইক কিনতে যাওয়ার দিন খুবই উৎসাহী ছিলাম আমি সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে গোসল করে রেডি হয়ে বসে ছিলাম আব্বুকে নিয়ে সকাল দশটার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে যাই বাবার চাকরির সূত্রে আমাদের বরিশাল থেকে 50 কিলোমিটার দূরে থাকা হয় মোটামুটি বারোটার দিকে আমরা বরিশাল পৌঁছেছি । বরিশালের কিছু ভাই বন্ধু ছিল তাদের নিয়ে শো-রুমে চলে গেলাম বাইক কিনতে সবকিছু শেষ করতে করতে আসরের আযান দিয়েছে সবাইকে মিষ্টি খাইয়ে আপুকে বাইকে নিয়ে বাসার দিকে রওনা হই ।
Click To See Lifan KPR 165R Test Ride Review In Bangla – Team BikeBD
ভালোবাসার পছন্দের বাইক প্রথম চালানোর অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়, তবে কিছুটা বেগ পেতে হয়েছিল প্রথম প্রথম চালাতে কারণ এর আগে আমার স্পোর্টস বাইক চালানোর অভিজ্ঞতা ছিলনা । তবে এই অবস্থায় আমি বাইকটি 50 কিলোমিটার চালিয়ে বাসায় নিয়ে আসি আমার বন্ধুরা আমার বাসার কাছের বাজারে দাঁড়িয়েছিল আমার বাইক দেখার জন্য । বাসায় পৌঁছাতে আমাদের রাত দশটা বেজে যায় তখন আমরা বাইক দেখে ঘুমিয়ে পড়ি ।
বাইকটি পছন্দ করার পিছনে ছিল বাইক এর ফিচারসমূহ একমাত্র lifan ই এই টাকার মধ্যে লিকুইড কুল ইঞ্জিন দিচ্ছে এরপর ডুয়েল ডিস্ক ব্রেক যার সামনে একটি হলো 300 মিলিমিটারের বিশাল ডিস্ক এবং পেছনে 130 সাইজের টায়ার এবং সামনে 90 সাইজের টায়ার এবং একটি স্টাইলিশ স্পোর্টস লুক । Lifan KPR 165R বাইকটি এই নিয়ে দুইবার সার্ভিস করিয়েছি যার ভেতর একবার বরিশাল থেকে 2500 কিলোমিটার এর সময় আরেকটি ৭ হাজার কিলোমিটারের সময় খুলনা থেকে দুটি সার্ভিস lifan মোবাইল সার্ভিস টিম সুমন ভাইয়ের মাধ্যমে করানো । সুমন ভাই এক কথায় এক্সপার্ট লোক তবে শো-রুমে পর্যাপ্ত সুবিধা না থাকার কারণে এবং সার্ভিসে প্রচুর চাপ থাকার কারণে পর্যাপ্ত সার্ভিস না পাওয়া এবং সুমন ভাইকে একা পাঠানোর জন্য এবং খুব অল্প সময়ে বেঁচে থাকার জন্য অনেকেই পর্যাপ্ত সার্ভিস না পেয়ে অসন্তুষ্ট । তাই ওদিকে কর্তৃপক্ষের নজর দেয়া উচিত ।
ঢাকার বাইরে রাসেল ইন্ডাস্ট্রিজ এর কোন অথোরাইজ সার্ভিস সেন্টার না থাকার কারণে কোন বড় ধরনের সমস্যা হলে বাইক নিয়ে ঢাকা যেতে হয় তাই অন্তত প্রতিটা বিভাগে একটি করে সার্ভিস সেন্টার বা ট্রেনিংপ্রাপ্ত লোক নিয়োগ দেয়া উচিত যাতে আমরা পর্যাপ্ত সার্ভিসটি পেতে পারি । Lifan KPR 165R বাইকটিতে ২৫০০ কিলোমিটার এর আগে আমি মাইলেজ পেতাম ৩২ এবং হাইওয়েতে মাইলেজ পেয়েছি ৩৫। সার্ভিস করানোর সময় কার্বোরেটর টিউনিং করাই এর পরে মাইলেজ পাচ্ছি শহরে ৩৫ এবং হাইওয়েতে ৪০।
সবকিছুরই যত্ন নিতে হয় , আর যত্ন না নিলে বাইকের কোন কিছুই ঠিক থাকেনা । তবে আমি বাইকের প্রতি একটু বেশি যত্নশীল কারণ জীবনের প্রথম বাইক বলে কথা । সময় মত ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন ১০০০ কিলোমিটার পর পর এয়ার ফিল্টার ওয়াস, চেইন ওয়াস, পর্যাপ্ত হাওয়া ইত্যাদি চেক করি । আর এর কারণে ভালো পারফরমেন্স পাচ্ছি । বাইকের জন্য সবসময় ভালো ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করা দরকার । আমি আমার Lifan KPR 165R বাইকে ৫০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত Petronas 20w40 মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করতাম ।
এখন পর্যন্ত Petronas 10w40 সেমি সিন্থেটিক ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করতেছি । মিনারেল এর মূল্য ৩৮০ টাকা এবং সেমি সিন্থেটিক এর মূল্য ৫০০ টাকা । মিনারেল প্রতি ১০০০ কিলোমিটার পর পর পরিবর্তন করতাম এবং সেমি সিন্থেটিক প্রতি ১৪০০ কিলোমিটার পরপর পরিবর্তন করি । পারফরম্যান্স আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো পেয়েছি । বাইকের কোন পার্টস এখন পর্যন্ত পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয়নি যেমন আছে তেমনি রয়েছে । এক কথায় বলতে গেলে বাইকের পার্টস ভাল মানের ১০ হাজার কিলোমিটার শুধু পেছনের বেরেক সু এবং কুলেন্ট পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয়েছে । এবং পার্টস সব সময় এভেলেবেল থাকে ঢাকায় তাদের সার্ভিস সেন্টারে যোগাযোগ করলে কুরিয়ারের মাধ্যমে তারা পৌঁছে দেয় ।
Lifan KPR 165R বাইকটিতে পিলিয়ন নিয়ে আমি সর্বোচ্চ স্পিড পেয়েছি 125 কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায় ভাঙ্গা মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে । তবে সিঙ্গেলে বাইকের টপ স্পিড তোলার মত রাস্তা এবং সুযোগ হয়নি তবে আমার দেখা মতে টপ স্পিড ১৪০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা উঠেছিল আমার এক পরিচিত লোকের । টপ স্পিডে বাইকের কন্ট্রোল পারফরমেন্স এক কথায় অসাধারণ । এই বাইকের কোন ভাইব্রেশন নেই , মনে হচ্ছিল না যে আমার বাইক 125 কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায় ছুটে চলেছে । এক কথায় বাইকের কন্ট্রোল এবং ব্রেকিং অসাধারণ ।
Lifan KPR 165R বাইকের কিছু ভালো দিক-
- কন্ট্রোল
- লুক্স
- ব্রেকিং
- লিকুইড কুলিং সিস্টেম
- বিল্ড কোয়ালিটি
- হেডলাইট
- ইনফরমেটিভ মিটার
- পিছনে 130 সাইজের টায়ার
Lifan KPR 165R বাইকের কিছু খারাপ দিক-
- কালার কোয়ালিটি কিছুটা লো করা হয়েছে যা অল্প ব্যবহারের উঠে যাচ্ছে
- পিছনের ব্রেক প্যাড খুব দ্রুত ক্ষয় হচ্ছে
- কিছু কিছু পার্টস আছে যা আলাদাভাবে পাওয়া যায় না
- টার্নিং রেডিয়াস
- চেইন দ্রুত লুজ হয়ে যায়
Lifan KPR 165R বাইকটি দিয়ে আমার এক দিনে সর্বমোট 300 কিলোমিটার চালানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে এই 300 কিলোমিটারে একদিনে যশোর থেকে পদ্মা সেতু দেখে আবার যশোর ফিরে এসেছিলাম যা ছিল আমার সবচেয়ে মনে রাখার মত একটা দিন । এই 300 কিলোমিটারে বাইকের পারফরম্যান্স ছিল অসাধারণ প্রতি 30 সেকেন্ডে এক কিলোমিটার করে অতিক্রম করছিলাম । হাইওয়েতে রাইড করার সময় বাইকটির প্রকৃত ফিল পাওয়া যায় । আমি আমার Lifan KPR 165R বাইকের পারফরম্যান্স নিয়ে সন্তুষ্ট এবং বুঝতে পেরেছি এই বাইক পছন্দ করা আমার কোন ভুল সিদ্ধান্ত ছিল না । আমার মতে বাইকটির সব ঠিক আছে তবে বাইকের কালার কোয়ালিটি এবং সার্ভিস সেন্টারের দিকে একটু বিশেষ মনোযোগ দেওয়া দরকার না হলে ব্যবহারকারীরা তার কাঙ্খিত সার্ভিসটি না পেয়ে হতাশ হবে । ধন্যবাদ ।
লিখেছেনঃ তসলিম
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।