Lifan KPR 150 V2 ১৫,০০০ কিলমিটার রাইড - নাঈম হাসান
This page was last updated on 28-Jul-2024 01:23pm , By Raihan Opu Bangla
প্রতিটা মানুষেরই কিছু বিষয়ের প্রতি দুর্বলতা থাকে, মাঝে মাঝে সেই দুর্বলতা পরিনত হয় নেশায়, পরিনত হয় আবেগে, ভালবাসায়, পরিনত হয় এক হৃদয়ের বন্ধনে। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক, সুস্থ সবল মানুষ হিসেবে (আলহামদুলিল্লাহ) আমি ও তার ব্যাতিক্রম নই। আমার ও আছে সেই নির্দিষ্ট বিষয়ের প্রতি দুর্বলতা যা নেশা, আবেগ, ভালবাসা থেকে এখন পরিনত হয়েছে এক সুদৃঢ় বন্ধনে। আমি আমার সেই আবেগ কে তুলে ধরছি এখানে। Lifan KPR 150 V2 ইউজার রিভিউ ।
Lifan KPR 150 V2 ১৫,০০০ কি.মি. রাইড
আসসালামু আলাইকুম, আমি নাঈম হাসান। দেশের বাড়ি খুলনা হলেও পড়াশুনা এবং রিযিকের তাগিদে ১৩-১৪ বছর ধরেই ঢাকা অবস্থান করছি। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশুনা শেষ করেছি। আপাতত এর বেশি পরিচয় দেয়ার মত কিছু নেই।
তবে বেকার, শান্ত-শিষ্ট, ভদ্র, আদর্শ বাইকার বললেও মন্দ হবে না। আর এই আদর্শ বাইকার হিসেবে বাইক জিনিসটা আমার দৈনন্দিন জীবনের আবশ্যিক চাহিদায় পরিনত হয়েছে । হ্যা, আমার সেই আবেগ হল আমার এই বাইক। যেটা আমার জীবনের একটা অংশ হয়ে আছে।
প্রথম বাইক চালানোর অভিজ্ঞতা ও অনুভুতিঃ যদি বলি প্রথম বাইকে উঠে চালানোর চেষ্টার কথা তাহলে সেটা অনেক ছোট বেলায়। বাবা একটা কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন, সেই কলেজের ছাত্র সংসদের ভিপি ছিলেন বিপ্লব ভাই। উনার বাইক। আর ওই সময় বাইক এখনকার মত এত এভেইলএবল ছিল না। হাতে গোনা কিছু মানুষের ই ছিল। বিপ্লব ভাইয়ে বাইক হোন্ডা সিডিআই তে প্রথম চেষ্টা। তখন স্কুলেও ভর্তি হইনি।
একবার উনার বাইকের চাবি নিয়ে একটা কাঠের পোলের উপর “বাইক বাইক” খেলতে গিয়ে সেই চাবি খালের পানিতে ফেলে দেই। আর হা, পরে কিন্তু সে চাবি পাওয়া গিয়েছিল স্থানীয় কিছু ডুবুরির সহযোগিতায়। আর যদি বলি একদম বাইক একা একা চালানো। তাহলে সেটা ক্লাস সিক্সে থাকাকালীন সময়ে। দুলাভাইয়ের বড় ভাইয়ের কাছ থেকে শিখা। কলেজের মাঠে কয়েক রাউন্ড দেই।
এই সব অনুভুতি ঠিক লিখে প্রকাশ করার মত না। অন্য রকম এক ভাল লাগা কাজ করে। এটা মনে আছে ভাল করে যে, বাইক থেকে আর নামতে মন চায়নি, শুধু চালাতেই মন চেয়েছে।
আর রাস্তায় চালানোর কথা যদি বলা হয়, তাহলে সে ক্ষেত্রে আমার ওস্তাদ হল আমার হবু বউ। তিনি একজন বাইকার। তিনি আমাকে মিরপুরের লাভ রোডে বাইক চালানো শিখালো । যেহেতু হালকা চালানোর অভিজ্ঞতা ছিল আগেই, এজন্য অল্পতেই শিখে গেলাম। ওইদিন এক্সাইটেড হয়ে মিরপুর থেকে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় ওকে নিয়ে চালালাম । স্কুলে থাকা কালীন দুইবার বাইক কিনার জন্য প্রস্তুত হয়েছিলাম।
তখন হিরো স্পিলিন্ডার পছন্দ করেছিলাম। কিন্তু দূর্ভাগ্যবসত আর মজার ব্যাপার হল, সেই দুইবারেই পরিচিতদের মধ্যে আমার বাইক কিনার ঠিক আগের দিন বাইক এক্সিডেন্ট এর খবর পাওয়া যায়। এইসব কারনে আর কেনা হয় নাই। আর ঢাকায় বাইক চালানোকে আমি খুবই দুঃসাহসিকতার বিষয় মনে করতাম। পরে আমার হবু বউয়ের কাছ থেকে চালানো শেখার পরে বাইকের মজা হাড়ে হাড়ে টের পেলাম, এবং বাসায় বাইক কেনার কথা বললাম ।
অনেক কাহিনীর পর বাবাকে মানাতে পারলাম। তারপরে শুরু হল আমার বাইক নিয়ে গবেষনা। আব্বা বললেন দুই লাখের উপরে একটা টাকাও দিবেন না। তো সে অনুযায়ী রিসার্চ করা শুরু করলাম। অনেক রিসার্চ করে আমি আমার কাঙ্ক্ষিত বাইক Lifan KPR 150 V2 খুজে পেলাম। অনেক সিনিয়র বাইকার বড় ভাইদের কথা উপেক্ষা করে নিয়ে নিলাম Lifan KPR 150 V2 লাল কালো বাইকটি।
আর আমার এই রিসার্চের পিছনে BikeBD.com এর অবদান অনেক। এছাড়া, Club KPR Bangladesh ফেসবুক গ্রুপ এর কথা না বললেই না। এটাকে গ্রুপ বললে ভুল হবে এটা একটা পরিবার। অনেক সাপোর্ট পেয়েছি কেপিআর গ্রুপের এডমিন, মডারেটর, মেম্বারদের কাছ থেকে।
মনে আছে, বাইক বুকিং দেয়ার পর প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর টাইমে শুভ্র সেন দাদার Lifan KPR 150 এর রিভিউ দেখে ঘুমাতাম। বাইক কিনার আগে নিজে বুঝার চেষ্টা করলাম, আমি কেন বাইক কিনছি!? আমার বাইকের দাম পরেছিল দুই বছরের রেজিস্ট্রেশন সহ দুই লক্ষ টাকা। দাম এখন আরো অনেক কমে গিয়েছে। বাইকটি কিনেছিলাম লিফানের কালশী রোডের শো-রুম থেকে, কিন্তু সেটা এখন নেই।
এখন এটি GearX Bangladesh এর শো-রুমে পাওয়া যায়। বাইক কিনতে গিয়েছিল আমার দুই বড় ভাই আর আমার এক ফ্রেন্ড। মনে আছে, এক্সাম চলাকালীন অবস্থায় শো-রুমের নাম্বার থেকে কল আসায় বুঝতে পেরেছিলাম আমার স্বপ্ন শো-রুমে হাজির হয়েছে। এক্সাম দিয়ে, বাসায় গিয়ে টাকা নিয়ে সন্ধ্যায় শো-রুমের হাজির।
রাত ১২ টা পর্যন্ত বাইক নিয়ে চিল করেছিলাম। বাইকটি নিয়ে র্যাব-৪ কোয়ার্টারের ভিতরে প্রথম চালাই। থামতে মন চাচ্ছিল না। এদিক সেদিক যেতে মন চাচ্ছিল। কাগজপত্র ছিল না এজন্য আর সাহস দেখাতে পারি নাই। আমার বাইক পছন্দের প্রথম প্রাইয়োরিটি ছিল বাইকের লুকস এবং পারফরম্যান্স। এই বাজেটে এই লুক আর এই পারফরম্যান্স! একদম ঠিকঠাক। আর আমি বাইকটা প্রথম দেখার পর ই প্রেমে পরে গিয়েছিলাম।
এর স্টাইলিশ লুক আমাকে মুগ্ধ করেছে । আর ফিচার ও স্পেসিফিকেশন এই বাজেট রেঞ্জের জন্য একদম পারফেক্ট আছে। আর আফটার সেল সার্ভিস নিয়ে কোন কথাই নাই; খুবই ভাল।
আমার মতে অনেক নামী দামী বাইক কম্পানিও এত ভাল আফটার সেল সার্ভিস দেয় কিনা সন্দেহ আছে। এইসব জানা এবং বুঝার পরই এই বাইক কিনব বলে মন স্থির করি।
বাইকটিতে যা আছে -
- ১৫০ সিসির একটি পাওয়ারফুল ইঞ্জিন
- লিকুইড কুলিং সিস্টেম
- ডুয়াল ডিক্স
- পাওয়ারফুল প্রজেকশন হেডলাইট
- 14.7 BHP Power, 14.8 Torque
- টিউবলেস টায়ার
- ৬টি গিয়ার
- ১৭ লিটার আয়তনবিশিষ্ট ফুয়েল ট্যাংক
- সামনের টায়ার ৯০-৯০-১৭ এবং
- পেছনের টায়ার ১২০-8০-১৭ সাইজের
প্রতিদিন বাইকময় জীবনঃ বাইক নিয়ে আমার প্রতিদিন ই বের হওয়া লাগে। বাসার জন্য বাজার থেকে শুরু করে প্রতিদিন ২-২.৫০ কিলোমিটার দূরে চা খাওয়ার সাথে আড্ডা দেয়া। সব কাজেই এই যন্ত্রটাকে সাথে নিয়ে যেতে হয়। আর এই বাইক চালানোর অনুভুতির কথা কি বলব! সেটা মুড এবং পরিবেশের উপর নির্ভর করে। তবে খারাপ অনুভুতির তেমন কোন ইতিহাস নেই।
টপ স্পিড এবং মাইলেজ - বাইকটি আমি প্রায় দুই বছরের কাছাকাছি সময় চালাচ্ছি। আমাকে কোন কিছুতেই হতাশ করেনি এই চাইনিজ কোবরা । মাইলেজ আমি শুরুর দিকে মানে ২৫০০ কিলোমিটার এর আগে ৩০ কিলোমিটার প্রতি লিটার এর আসে পাশে পেয়েছি।
পরে সার্ভিস সেন্টার থেকে সার্ভিস নেয়ার পর (২৫০০কিঃমিঃ এর পরে) তা বেড়ে ৩৩-৩৫ কিলোমিটার/লিটার সিটি তে এবং হাইওয়েতে ৩৭-৪০ কিলোমিটার/লিটার এর মত এসে পৌছায়। আমি কখনোই টপ স্পিড চেক করার পক্ষে না। তবে কোন একবার ভুলবশত করে ১২৫ কিলোমিটার/ঘন্টা স্পিড তুলেছিলাম ।
মেইনটেন্যান্স - আমি প্রতি ১০০০-১৫০০ কিলোমিটার পরপর নরমাল একটা চেকআপ দেই। আর প্রতি ২৫০০ কিলোমিটার পর পর ফুল সার্ভিস দেই। আর আমি শুরু থেকে এখন পর্যন্ত লিফানের মিরপুরের সার্ভিস সেন্টার থেকেই সার্ভিস করিয়েছি। কেননা তাদের সার্ভিস এক কথায় অসাধারন। আমি আজ পর্যন্ত নিরাশ হইনি। ব্রেকিং পিরিয়ডের সময় ৩০০, ১০০০ কিলোমিটার সার্ভিস নিয়েছিলাম। এখন পর্যন্ত ফুল সার্ভিস নিয়েছি ৭ টা।
সঠিক গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল ইউজ করেছি। আমার বাইকের জন্য 20W40/10w40 রিকমান্ডেট গ্রেড। আমি প্রথম ৮ হাজার কিলোমিটার। এর পর থেকে এখন পর্যন্ত Petronas 10W40 এর সেমি-সেন্থিটিক ব্যবহার করছি। আর ৮ হাজার কিলোমিটার এর আগে Motul 20W40 মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করেছি।
সেমি সেন্থিটিক ইঞ্জিন অয়েল ১২০০-১৩০০ কিলোমিটার পর পর পরিবর্তন করি এবং মিনারেল প্রতি ৮০০-১০০০ কিলোমিটার পর পর পরিবর্তন করতাম। টায়ার প্রেসার সামনের চাকায় ৩০ এবং পিছনের চাকায় ৩৫ দেই। এগুলো মেইন্টেইন করলে আশা করা যায় ভাল পারফরম্যান্স এবং মাইলেজ পাওয়া যাবে। আমার বাইক এই পর্যন্ত প্রায় ১৫ হাজার কিলোমিটার চালিয়েছি। এর মধ্যে ফুল চেইন সেট এবং রেয়ার ব্রেক প্যাড পরিবর্তন করেছি।
কারন পিছনের ব্রেক ভাল ভাবে কাজ করছিল না এবং স্পকেটের দাঁত ক্ষয় হয়ে গিয়েছিল। বাকি সব এখন ও স্টকে চলছে আলহামদুলিল্লাহ।
আমার বাইকের কিছু ভালো দিক - এই বাজেটে এই লুকের বাইক বেস্ট মানতেই হবে। এছাড়া বাইকের পাওয়ার। গ্রুপ ট্যুরে কখনো ই নিরাশ হইনি। এর পাওয়ার আমাকে অন্য সব বাইকের সাথে একত্রে রাইড করার কনফিডেন্স দেয় ।
প্রাইস - যে ফ্যাসিলিটি দিচ্ছে এই বাইকে, তাতে এই প্রাইস সত্যিই অবাক করার মত ।
থ্রটল রেসপন্স - যেটাকে আমরা রেডি পিকআপ বলি। এই থ্রটল রেসপন্স আমাকে ওভার টেকিং এ বেশ কনফিডেন্স দেয়। এলইডি প্রোজেকশন লাইট। এটা আমাকে দেয় সুপার আলো। রাতে রাডিং করার সময় এই আলোতে যে কেউই সন্তুষ্ট থাকতে বাধ্য। আমার জানা মতে বাংলাদেশে দুইটি বাইকের এই লাইট আছে। কেপিআর তার মধ্যে অন্যতম।
কমফোর্ট পিলিয়ন সিট - আমার পিছনে যারাই পিলিয়ন হয়ে বসেছে কেউ কখনো কোন অভিযোগ দেয়নি বরং কমফোর্ট, ভাল এগুলোই বলেছে।
লিকুড কুলিং সিস্টেম - এটা আমার বাইকের ইঞ্জিন কে ঠান্ডা করতে সাহায্য করে। লং ট্যুরে এটা খুবই কার্যকর।
বিল্ড কোয়ালিটি - বাইকটি আমার এক ফ্রেন্ড চালাতে গিয়ে এক্সিডেন্ট করে হাত ভেংগে ফেলেছিল, কিন্তু আমার বাইকের কিছু জায়গায় রং উঠে গিয়েছিল এছাড়া কিছুই হয়নি। তখনই বুঝতে পেরেছিলাম বাইকের বিল্ড কোয়ালিটি আসলেই অনেক ভাল।
ব্রেকিং সিস্টেম - সামনে এবং পিছনে ডিক্স ব্রেক থাকাতে খুবই সুন্দর ব্রেক করা যায় কনফিডেন্টলি।
ব্যালেন্সিং - ওয়েট ব্যালেন্স চমৎকার, স্পিডিং এবং কর্নারিং এর সময় কোন প্রকার সমস্যার সম্মুখীন হয়নি।
রাইডিং কমফোর্ট - আমি ঘন্টার পর ঘন্টা রাইড করেও কখনো ব্যাক পেইন ফিল করিনি।
৬ টা গিয়ার - বাইকের ৬ নাম্বার গিয়ারেও আমি যথেষ্ট পাওয়ার পেয়েছি। যেটা খুবই ভাল লাগে আমার।
আমার বাইকের কিছু খারাপ দিক -
- ফুলেয় মিটার ঠিক ভাবে রিড দেয় না। যদিও সব ডিজিটাল মিটারেরই একই অবস্থা।
- টার্নিং রেডিয়াস বিরক্তিকর, যদিও আমি এটা নিয়া এখন পর্যন্ত কোন ঝামেলাতে পরিনি।
- জ্যামের মধ্যে হিটিং সমস্যা দেখা যায়। যদিও এটা এক সময় অভ্যাস হয়ে যায়।
- চেইন লুজ হয়ে যায় দ্রত। ৩০০-৫০০ কিলোমিটার পর পর টাইট দিতে হয়।
- স্টক টায়ার ভিজা এবং কাদা রাস্তায় ভাল পারফর্ম করে না।
- লুকিং গ্লাসের ভিউ ভাল না।
মডিফাই - বাইকে এখনো ওইভাবে মডিফিকিক্যাশন করা হয় নাই। শুধু লুকিং গ্লাস পরিবর্তন করা হয়েছে। আমি R15 V2 এর লুকিং গ্লাস ইন্সটল করেছি, যেটাতে বেশ ভাল ভিউ পাওয়া যায়। তবে কিছু মডিফাই করার ইচ্ছে আছে । উইন্ড শিল্ড, টায়ার চেইঞ্জ করা আর লাইট এবং হর্ন এড করা ইত্যাদি।
বাইক যত্নের কিছু টিপস -
- সময়মত ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করা
- ব্রেক প্যাড সময়মত পরিবর্তন করা
- স্পার্ক প্লাগ, ক্লাচ ক্যাবল, এক্সিলারেশন ক্যাবল, এয়ার ফিল্টার, ব্রেক-ফ্লুইড, টায়ার প্রেসার ইত্যাদি সর্বদা তদারকি ও
- সময়মত পরিবর্তন করা উচিৎ
- বাইক পরিষ্কার রাখা
- চেইন পরিষ্কার করে লুব দেয়া
- ভাল মানে তেল ব্যবহার করা
লং ট্যুরের অভিজ্ঞতা -
- আমার প্রথম লং ট্যুর দেয়া হয় ঢাকা-খুলনা, খুলনা- ঢাকা। এই লং রাইডিং এ
- আমার বাইকটি একবারের জন্য ও আমাকে হতাশ করেনি। মাঝে মাঝে মনে হয় এটা বুঝি হাইওয়ে স্পেশালাইজড বাইক
- শত শত কিলোমিটার চালিয়েছি কিন্তু এর কন্ট্রোলিং, ব্রেকিং আমাকে কনফিডেন্স দিয়েছে
- কোন দিক দিয়েই আমাকে হতাশ করেনি । এবং একবারের জন্য ও আমার ব্যাক পেইন হয়নি।
লিফান কেপিআর বাইকটি হাইওয়ে তে রাইড করার জন্য একদম পারফেক্ট একটা বাইক। এর পাওয়ার, ব্রেকিং, ব্যালেন্সিং সবকিছু মুগ্ধ হওয়ার মত। তাই, আমি মনে করি যারা, ট্যুর দিতে পছন্দ করেন বাইক রাইড করে, যাদের লং রাইড করা দরকার, তাদের জন্য আদর্শ একটা বাইক Lifan KPR 150 V2 ।
মতামত এবং পরামর্শ - আমি আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলছি আমি যখন লিফান কেপিআর বাইকটি কিনতে চেয়েছিলাম তখন আমার আসে পাশের বাইকার বড় ভাইরা কেউ ই এই বাইকটি কেনার পরামর্শ দেয়নি। তাদের মত ছিল খুবই হাস্যকর। কারন হল এটা চায়না বাইক, চায়না বেশি দিন যায় না, ঝংকার হয়ে যাবে ইত্যাদি ইত্যাদি।
মজার কথা হল, তারা কখনোই এই বাইকটি রাইড ই করেনি, মানে এই বাইক সম্পর্কে কোন ধারনা ই ছিল না। হাস্যকর ব্যাপার হল, সেই তারাই এখন লিফানের বাইক খুঁজে আর কারনটা হল আমার বাইকের কন্ডিশন এবং পারফর্মেন্স দেখে।
এলাকার এক মেকার বলেছিল এক বছরের মধ্যে বাইকের কন্ডিশন খারাপ হয়ে যাবে। আর এক বছর পর দেখা করে এসেছিলাম সেই মেকার ভাইয়ের সাথে এবং পরে তার সেই আল্টিমেটাম (আমার বাইক ঝংকার হওয়ার) আরো এক বছর বাড়িয়েছে। খুব শীর্ঘ্রই তার সাথে আবার দেখা করতে যাব। মনে রাখবেন, দুই-তিনটা বাইক চালালেই কেউ বাইক বোদ্ধা হয়ে যায় না। আমার এই কথাগুলো বলার কারন হল, প্রতিটি বাইকেরই ভাল-মন্দ দিক থাকে।
কিন্তু যদি সঠিকভাবে মেইনটেইন করতে পারেন বাইক, তাহলে সেটা বেস্ট পারফর্ম্যান্স দিতে বাধ্য। মানুষের কথায় কান না দিয়ে যাছাই বাছাই করে বাইক কিনুন নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে। আশা করি নিরাশ হবেন না, ঠকবেন না। লিফান কেপিআর আমার কাছে একটা আবেগের নাম। এই অনুভূতি একদিনে আসে নাই। এর পিছনে আছে নানা কারন।অনেক দূর যেতে চাই, এই চাইনিজ বাইক টিকে নিয়ে। ইচ্ছে আছে রেকর্ড করব, রেকর্ড সংখ্যক কিলোমিটার আমি এটাকে নিয়ে রাইড করব।
বাইক এড হবে কিন্তু এই অনুভুতিকে বিক্রি করতে পারব না। আর হা, ক্লাব কেপিআর বাংলাদেশ নামে যে ফেইস বুক গ্রুপ টি আছে ওইখানে পেয়েছি কিছু ভাই-বন্ধুদের, কোন প্রকার সমস্যা হলেই, কাছে পেয়েছি সবাইকে। এটা কে ফেসবুক গ্রুপ বললে ভুল হবে, এটা একটা ফ্যামিলি। আর একটা কথা না বললেই নয়, আমার এই জীবনের সেরা একটা জিনিস খুঁজে বের করে দেয়ার জন্য বাইক বিডি এর প্রতি থাকবে আন্তরিক ধন্যবাদ।
কেননা, তারা বাইকটি তুলে না ধরলে, হয় তো ওই গতানুগতিক বাইক ই ক্রয় করতে হতো। আমার বাইক থেকে যে চাহিদা আছে, সব কিছু অপূর্ণ থেকে যেত। ধন্যবাদ।
লিখেছেনঃ নাঈম হাসান
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।