Lifan KPR 150 ৫০০০কিমি মালিকানা রিভিউ লিখেছেন জুন সাদিকুল্লাহ
This page was last updated on 04-Jul-2024 01:09pm , By Shuvo Bangla
Lifan KPR 150 নেওয়ার পর থেকে অনেকেই আমার কাছে এই বাইকটা সম্পর্কে খুব আগ্রহের সাথে জানতে চেয়েছেন, কিন্তু সময়ের অভাবে বিস্তারিত বলতে পারিনি। আবার অনেকই বিস্ময়সুচকভাবে প্রশ্নও করেছেন নিলেন যখন তখন কে.পি.আর কেন? পরের প্রশ্নের উত্তরটাই আগে দিয়ে নেই…. আমার একটা অভ্যেস আছে নতুন কোন বাইক বাজারে আসলে তা খুব ভালোভাবে চালিয়ে দেখা।
Lifan KPR 150 ৫০০০কিমি মালিকানা রিভিউ লিখেছেন জুন সাদিকুল্লাহ
আর সামর্থে থাকলে কিনে ব্যবহার করে দেখা। কারন চেয়েচিন্তে আর কতটুকই বা চালানো বা জানা যায়। আর Lifan KPR 150 নেবার আগ্রহের কারন কে.পি.আর যে নিজেই সেটা সকলেই বোঝেন…তা না হলে কেউ এতোটা আগ্রহভরে প্রশ্ন করতেননা। এবার আসা যাক সবার আগ্রহের প্রথম বিষয়ে। মাত্র এই সপ্তাহে ৫০০০ কিলোমিটার পার করলাম। তাই ঠিক করেছি আজ কে.পি.আর সম্পর্কে আমার কিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করা করবো।
একজন বাইকার বাইক কেনার আগে কি কি দ্যাখে ?!
অনেকে আনেক কিছুই দেখে, আবার অনেকের কাছে বিষয়টা বিয়ের পাত্রপাত্রী দেখার মতোই গুরুত্ব বহন করে।তবে আমার মনে হয় সবাই সবকিছুর আগে অবশ্যই দেখে বাইকের লুক ... লুক বিশাল একটা ফ্যাক্টর। এটার প্রমান পেয়েছি যখন কাউকে হোন্ডা ট্রিগার নিতে বলেছি, তখন শুনতে হয়েছে “ভাই বাইক নিয়ে কোন কমপ্লেইন নেই কিন্তু লুকটা তেমন জোস্ না”। যাই হোক আমার কাছে এই কে.পি.আর লুকে পাবে পাঁচের মধ্যে চার। যদিও এটা রেসিং লুকের বাইক, কিন্তু রেসিং বাইকে কিছু সুন্দর স্পন্সর স্টিকার আর রেসিং নাম্বার থাকে….ওইটার অভাব বোধ করেছি। তাই রাসেল ইন্ডাস্ট্রিকে জিজ্ঞেস করেছিলাম ওইরকম ডিজাইনের কে.পি.আর পাবো কবে? রাসেল ইন্ডাস্ট্রি মাস দুয়েক সময় চেয়েছে।
এরপর আসা যাক ইঞ্জিন পারফর্মেন্সে…..
যেটা সবাই গুরুত্ব সহকারে দ্যাখে। আমার কে.পি.আর নিয়ে হাজার কিলোমিটার পার করার আগেই গিয়েছিলাম দিনাজপুর, সাথে ছিল আরেকটা এফ.জেড.এস। তবে এক্সিলারেসন আর টপ স্পীডের কারনে বারবার এফ.জেড.এস পিছে পড়ে গিয়েছিলো। আর আন্তত দুশো কিলো নাইট রাইড ছিল হাইওয়েতে, যেখনে অত্যন্ত চমৎকার সাপোর্ট ছিল জোড়ালো প্রজেক্টর হেডলাইটের...... আর সবার বড় একটা প্রশ্ন ছিল-লং ট্যুরে কোন সমস্যা? নাহ্ কোন রকম সমস্যা অনুভব করার সুযোগ দেয়নি কে.পি.আর। উপরোন্ত ওয়াটার কুল ইঞ্জিন আলাদা একটা কনফিডেন্স দিয়েছিল এই চরম গরমকালে। এই ট্যুরের সময় একবার মাগরিবের নামাজ আর নাস্তার জন্য আধাঘণ্টা ব্রেক নিয়েছিলাম ... ব্রেকের পর আবার যখন স্টার্ট করলাম তখন কৌতূহল বসত আমাদের দুই রাইডারের দুই বাইকের ইঞ্জিনে হাত দিয়ে দেখি কে.পি.আর এর ইঞ্জিন তুলনামূলক ভাবে অনেক ঠাণ্ডা।......
তবে প্রথমে যখন এই Lifan KPR 150 নিয়েছিলাম তখন ইঞ্জিন দেখতাম অনেক গরম হয়ে যেতো আর একটু চালানোর পর রেডিয়েটর এর লাইট জলে উঠত... নুতুন অবস্থায় বাইকের ইঞ্জিন গরম হয় এটা স্বাভাবিক কিন্তু মনটা খুঁত খুঁত করছিলো রেডিয়েটর এর লাইটের কারনে। তাই মনে খুঁত খুঁত কমানোর জন্য একসময় গেলাম ও রাসেল ইন্ডাস্ট্রিতে। ওখানে রেডিয়েটর চেক করে দেখা গিয়েছিল কুলিং লিকুইড কম থাকার কারনে লাইট জ্বলে থাকতো । কুলিং লিকুইড দিয়ে দিলাম… তারপর সমস্যা সমাধান… এরপর ইচ্ছে করে অনেক রাফ ড্রাইভ করেছি কিন্তু লাইট জলেনি। আবার লং রাইডে কুমিল্লা গিয়েছিলাম একটানা চালিয়ে তখনো লাইট জলেনি। সমস্যার সমাধান।
Lifan KPR 150 এপর্যন্ত চালাতে খেয়াল করেছি ১১৫/১২এ চালানোর সময় হালকা ভাইব্রেসন হয়, যেটা খুব খেয়াল না করলে বোঝা যায়না। ইঞ্জিন অনেকখানি স্মুথ, যতটা আশা করেছিলাম তার চাইতে স্মুথ। মার্কস দিলাম পাঁচের মধ্যে সাড়ে পৌনে চার।
এরপর আসা যাক মাইলেজে...
যেটা সবারই বিবেচ্য। কাজের প্রয়োজনেই আমাকে সপ্তাহের ছয় দিন ঢাকা নারায়নগঞ্জ আর ভুলতা দৌড়াতে হয়, তাই হাইওয়ে আর ঢাকা সিটির জ্যাম দুটাই পাই বলার অপেক্ষা রাখেনা। আর ১৫০ সিসির বাইকে লিটারে ৩৫ থেকে ৪০ পাওয়া গেলে আর কি লাগে J তাই এখানে দিলাম পাঁচের মধ্যে চার। তবে যারা একটু রাফ রাইড কম করেন তারা ৪০ এর উপরে পাবেন।
এরপর আসা যাক কমফোর্টে...
এই ক্ষেত্রে Lifan KPR 150 এর সিটিং পজিশন ভি-টু আর সি.বি.আর এর মাঝামাঝি। ঢাকা-দিনাজপুর-ঢাকা করলাম টানা প্রায় ৮০০ কিলোমিটার, কোন সমস্যা হয়নি। আর সামনের সপ্তাহে যাবো লং ট্যুরে হিলট্র্যাকস…দেখি কি অবস্থা হয়। রেসিং হ্যান্ডেল পজিশন আর একটু চাপা হ্যান্ডেল এর কারনে প্রথম অবস্থায় একটু হাত ব্যথা করে তবে পরে অভ্যাস হয়ে যায়।আর যারা স্ট্রিট বাইক চালাতে অভ্যস্ত এই সমস্যা তাদেরই বেশি।
কে.পি.আর এর হ্যান্ডেল রুপালি কালার, তাই সূর্য যখন মাথার উপরে থাকে তখন রিফ্লেক্ট করে চোখে রোদ লাগে। তাই আমি হ্যান্ডেল কালো কালার করে নিয়েছি। আর কে.পি.আর এর একটা অন্যতম সমস্যা একটু বেশী জায়গা লাগে বাইকটা ঘুরাতে, আর সমস্যা জ্যাম এর মধ্যে ফুরুৎ ফুরুৎ করে নড়াচড়া করতে (যেটা আমরা অনেকেই করি, অনেকসময় ফুটপাথেও বাইক তুলে দেই)।
Also Read: বাইক রিভিউ নিউজ বাংলাদেশ
কনসোল / মিটার…
কে.পি.আর এর মিটারে ট্রিপ মিটার মাত্র একটা যেটা হাজার কিলোমিটার পর আবার জিরো হয়ে যায় হোন্ডা ট্রিগারের মতো। আর ডিজিটাল ওডো তো আছেই, সাথে ঘড়ি, ফুয়েল মিটার, গিয়ার, রেডিয়েটরের কুল্যান্ট এর সিগন্যাল, আর হাই বিম সিগন্যাল তো আছে। মিটারের লাইট দুটো কালারে বদলানো যায়। মিটারের লুকটা ভালোই লাগে কিন্তু ডিসপ্লেটা আরেকটু বড় হলে বেশী ভালো লাগতো। তবে সি.বি.আর এর মিটারের কথা চিন্তা করলে ডিসপ্লে আসলেই অনেক বড় (জাস্ট কিডিং J)।
ফ্রন্ট ফেন্ডার (মাডগার্ড)….
Lifan KPR 150 এর ফ্রন্ট ফেন্ডারটা আর একটু বড় দিলে কাদা ময়লা কম যেতো রেডিয়েটর এর খাছায়। আশাকরি নেক্সট লটে কিছুটা চেঞ্জ পাবো।
সাস্পেন্সন…
বাইক অনুযায়ী সাস্পেন্সন ভালো তবে আরও ভালো হলে বেশী ভালো লাগতো।
ফুয়েল অন/অফ সুইচ…
Lifan KPR 150 এর ফুয়েল অন/অফ সুইচ কিন্তু উল্টা। হিরো এক্সট্রিমের উল্টা সেটা কোন সমস্যা নয় কিন্তু রিজাভ থেকে অন অথবা অন থেকে অফ করলে কয়েক ফোটা তেল লিগ করে এটা সব সময় হয়না মাঝে মাঝে হয়। তাই আপনারা যদি এই বাইক কিনেন তাহলে কেনার সময় একটু চেক করে নিয়েন। ফুয়েল ট্যাঙ্ক রিজাভ সহ সতেরো লিটার ঢুকে স্টিলের ট্যাঙ্কে খারাপ না ভালোই। একবার ট্যাঙ্ক ফুল করলে রিজাভে আসার আগে প্রায় সাড়ে পাঁচশো কিলোমিটার চালানো যায়।
হেডলাইট…
আমার জানা মতে বাংলাদেশের যতগুলো বাইক আছে সবগুলোর চেয়ে নি:সন্দেহে কে.পি.আর এর হেডলাইট ভালো এটা বলতে পারি।
টপ স্পীড, এক্সিলারেসন, ব্রেক আর কন্ট্রোলিং…
এক্ষেত্রে ভিটু আর সিবিয়ার ছাড়া ড্রাগ রেসে Lifan KPR 150 বিট করা টাফ। আমি ১৩৩ পেয়েছি টপ, তবে রাস্তা থাকলে আরও একটু বেশী হতো। কে.পি.আর এ ১০০/ ১১০ খুব সহজেই উঠে যায় তবে ১১৫ পর সময় লাগে স্পীড উঠতে সময় লাগে। এক্সিলারেসন সত্যি ভালো, আর ছয় নাম্বার গিয়ারেও কিছু পাওয়ার পাওয়া যায়। দুইটাই হাইড্রলিক, তাই ব্রেকিং এ অন্য বাইকের চেয়ে এগিয়ে আছে, আর নির্ভাবনায় চলার জন্য টিউবলেস টায়ার তো আছেই। কন্ট্রোলিং খারাপ না যদিও এটা বাইকার এর উপর নির্ভর করে।
Also Read: Lifan Giving 10,000 BDT Cash Back Offer On KPR Series
এই বাইকের একটা খারাপ দিক আছে সেটা হল সুযোগ পেলেই করনারিং করতে ইচ্ছে করে J তবে চেইন স্প্রোকেটটা আরও ভালো করা উচিৎ ছিল। কে.পি.আর এর দাম এখন প্রায় দুইলাখ টাকা আর নুতুন বাজেটে বাড়তি ট্যাক্সের জন্য হয়তো সামনের লট আসার পর কিছুটা দাম বাড়তে পারে। যাদের বাজেট দুইলাখ, আর এই দামে যারা একটা ভালো স্পোর্টস লুক সহ ওয়াটারকুল ইঞ্জিনের বাইক খুঁজছেন, তারা এই বাইকটা ট্রাই করে দেখতে পারেন। একটু যত্ন নিলে অনেকদিন এই বাইক ব্যাবহার করতে পারবেন এটা আমার অভিজ্ঞতা থেকে বললাম।
কারন সপ্তাহের প্রায় ছয়দিনই আমাকে ৬০/৭০ কিলোমিটার রাইড করতে হয় আর সময় বাঁচানোর জন্য একটু রাফ ড্রাইভ করতে হয়, আবার মাসে একবার ঢাকার বাহিরে যেতে হয়, এভাবে ৫০০০ কিলোমিটার পার করে ফেললাম কোন সমস্যা ছাড়াই। তাই ধারনা করা যায় যদি এই বাইক কেউ যত্ন নিয়ে চালায় তবে অনেকদিন ব্যাবহার করতে পারবেন। যদিও এটা একটা চাইনিস ব্র্যান্ড, আর এই ব্র্যান্ডের প্রতি আমাদের দেশের বাইকারদের এমনিতেই আস্থা কম তাই রিসেল ভ্যালু পাবেন না যেটা কয়েক বৎসর আগে ইয়ামাহার ছিল। নুতুন যে কোন বাইক কেনার আগে অবশ্যই একবার ট্রায়াল দিয়ে নিবেন, যদিও আমাদের দেশে বাইক ট্রায়ালের সিস্টেম নেই বললেই চলে। এই দেশে হাজার টাকার শার্ট কিনলে ট্রায়াল দেওয়া যায় কিন্তু লাখ টাকার বাইকের ট্রায়াল দেওয়া সম্ভব না। L
যহোক, আমার অভিজ্ঞতা যতটুকু সম্ভব শেয়ার করলাম। আশা করি ভবিষ্যতে আরো হয়তো জানাতে পাবো। তবে এখন পর্য্ন্ত কে.পি.আর নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা যথেষ্ট আনন্দদায়ক। সবাই ভালো থাকবেন।
-জুন সাদিকুল্লাহ
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com - এই ইমেইল এড্রেসে।