Lifan KPR 150 ১০,০০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ - এ কে সবুজ
This page was last updated on 11-Jul-2024 08:27am , By Ashik Mahmud Bangla
আমি এ কে সবুজ । আমি আজ আপনাদের আমার Lifan KPR 150 বাইকটি নিয়ে ১০ হাজার কিলোমিটার পথ চলার কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো ।
Lifan KPR 150 ১০,০০০ কি.মি. রাইড রিভিউ অভিজ্ঞতা
আমি বর্তমানে রামপুরা, ঢাকায় থাকি। একটা সরকারি চাকুরী করি । আমার গ্রামের বাড়ি বরিশাল পটুয়াখালী জেলায়। আসলে চাকুরীর জন্যই ঢাকা থাকা হয়। আর ঢাকার ব্যস্ত শহরে জ্যাম থেকে মুক্তি পেয়ে রিলাক্স একটা লাইফ উপভোগ করার জন্যই বাইক কেনা । দুই চাকার প্রতি ছোট বেলা থেকেই ছিল অন্যরকম একটা ভালোবাসা । ছোট বেলায় সাইকেল নিয়ে অনেক ঘুরে বেড়িয়েছি । স্পিডটা একটু কম হয়ে যেত আর সেখান থেকেই বাইকের প্রতি ভালোবাসা শুরু । আমার বাইক চালানো শেখাটা আশ্চর্যজনক। বাইকের পিছনে পিলিয়ন হিসেবে রাইড করেছি কিন্তু নিজে চালানো হয়নি। ওই যে বললাম নেশা আর সেই নেশা থেকেই পিছনে যখন বসতাম তখন খেয়াল করতাম কিভাবে স্টার্ট দিতে হয় ক্লাচ ছাড়তে হয় গিয়ার দিতে হয় ব্রেক ধরতে হয়। পাশের বাসার কাকা অফিস থেকে একটা বাইক পেল ।
আমাকে বললো সবুজ বাইক তো পেয়েছি কিন্তু চালাতে তো পারিনা। তুমি কি চালাতে পারো। আমি বললাম বলেন কি কাকা আমি তো চালাতে পারি। তিনি তো অনেক খুশি। বললো আমাকে চালানো শেখানোর দায়িত্ব তাহলে তোমার। এবার তো পরলাম বিপদে । বিপদ যাই হোক কনফিডেন্স ছিল আমি পারবো । কারন সাইকেল চালানোর কারনে ব্যালেন্স কন্ট্রোল ভালোই ছিল। পরে কাকাকে পিছনে বসিয়ে স্টার্ট দিয়ে ক্লাচ ধরে গিয়ার দিয়ে ক্লাচ ছাড়লাম। আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছি, বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা একবারের জন্যও ক্লাচ আর এক্সেলারেশন নিয়ে তেমন সমস্যা হয়নি।
সেই ২০০২ সাল থেকে বাইক চালানো শুরু। শুরুটা হয়েছিল Honda CD 80cc দিয়ে। এর মধ্যে বেশ কিছু কমিউটার বাইক চালিয়েছি। এর পরে ইচ্ছে হলো স্পোর্টস বাইকের। কিন্তু স্বল্প বাজেটে আমাদের দেশে স্পোর্টস বাইক খুবই কম । রাস্তায় একদিন দেখলাম Lifan KPR 150 বাইকটি । প্রথম দেখায় বেশ ভালোই লাগলো । গুগল এ খুজে এর দাম দেখে আমি তো অবাক হয়েছি । এরপর থেকে শুরু হলো বাইকটি নিয়ে চিন্তা ভাবনা। যেহেতু এটা চাইনিজ বাইক তাই চিন্তাও ছিল একটু বেশি ।
এক এক করে ইউটিউওবে KPR 150 এর সব রিভিউ গুলো দেখলাম । তার মধ্যে সব থেকে বেশি ভালো লাগলো বাইকবিডিতে শুভ্র সেন দাদার Lifan KPR 150 বাইকের রিভিউটি । এরপর সিদ্ধান্ত নিলাম KPR 150 ই কিনবো । রাস্তায় কেপিআর নিয়ে কাউকে দাড়িয়ে থাকতে দেখলেই জিজ্ঞাস করতাম কেমন সার্ভিস দিচ্ছে সবাই খুব পজিটিভ বলতো । অবশেষে ২০১৯ সালের ৬ মার্চ নিয়ে নিলাম আমার স্বপ্নের বাইক Lifan KPR 150 V2 বাইকটি। বাইকটি নিয়ে চালানো শুরু করার পর এর পাওয়ার ডেলিভারি দেখে আমি তো অবাক। প্রথম দিনে বাইক কেনার অনুভুতি ছিল আসাধারন। এমন ভালো সময় গুলো লাইফে স্মরনীয় হয়ে থাকে সবসময়। বাইকটি কিনেছিলাম ১ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা দিয়ে। বাংলামটর নিউ বাইক সেন্টার থেকে। পেপার্স করাতে খরচ হয় ১৫ হাজার টাকা। KPR 150 হচ্ছে স্পোর্টস বাইক ১৫০ সিসি ইঞ্জিন, ডুয়াল ডিক্স, লিকুয়িড কুল ইঞ্জিন, ৬ গিয়ার, প্রজেকশন হেডলাইট, টিউবলেস টায়ার ঠিক যা যা আমার দরকার ছিল। সব ই পেয়ে গেছি এই বাজেটের মধ্যে ।
প্রথম ২ হাজার কিলোমিটার ব্রেকিং খুব ভালো ভাবে নিয়ম মেনে চালালাম। এরপর মাইলেজের ব্যাপারটা চেক করলাম একটু অবাক হলাম আমার হিসেবে মাইলেজ পাচ্ছিলাম ২২ থেকে ২৩ কিলোমিটার প্রতি লিটার। বাইক নিয়ে কোন প্রকার সমস্যায় ছিলাম না শুধু মাত্র এই মাইলেজ এর সমস্যা ছাড়া । সমাধান এর জন্য পোস্ট করলাম ক্লাব কেপিয়ার বাংলাদেশ এর ফেসবুক গ্রুপে। ক্লাব কেপিয়ার এর প্রিয় মুখ শুভ মিয়া যথারীতি তার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল । নিজেই সাথে করে নিয়ে গেল লিফান সার্ভিস সেন্টারে এবং মেকানিক সুমন ভাইকে দিয়ে কার্বুরেটর টিউন করিয়ে শুভ মিয়া আমাকে সাথে করে ১ লিটার ফুয়েল নিয়ে আমাকে নিয়ে ৪১.২ কিমি রাইড করে দেখিয়ে দিল আমার বাইকের মাইলেজ। একটু অবাক হয়েছিলাম। আর কি চাই মাইলেজ প্রব্লেম সলভ হয়ে গেলো। বাইকটিতে আমি বর্তমানে সিটিতে মাইলেজ পাচ্ছি ৩৫+ কিলোমিটার এবং হাইওয়েতে ৪০+ কিলোমিটার প্রতি লিটার।
বাইকের সিঙ্গেল রাইডে টপ স্পিড পেয়েছি ১২৯ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা এবং পিলিয়ন সহ ১১৬ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা। রেডি পিকাপ এর রেস্পন্স আর ব্রেকিং টপ স্পিডে কনফিডেন্স অনেক বাড়িয়ে দেয়। ১০০+ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা স্পিডে এ বাইকটিতে কোন প্রকার ভাইব্রেশন পাইনি বরং অসাধারন ব্যালেন্সিং পেয়েছি । কোম্পানির থেকে ৮ টা ফ্রি সার্ভিস পেয়েছি। আমি সার্ভিস গুলো লিফান সার্ভিস সেন্টার থেকে রেগুলার করিয়ে নেই। স্পোর্টস বাইক মেইনটেন্যান্স একটু বেশি করতে হয়। আমি নিয়মিত বাইকের এয়ার ফিলটার, প্লাগ ক্লিন করি। সময় মত ইঞ্জিন ওয়েল চেঞ্জ করি। টায়ার প্রেশার সঠিক রাখি, চেইন এডজাস্ট করি । এই ১০ হাজার কিমির মধ্যে একবার ক্লাচ প্লেট পরিবর্তন করেছি, একবার লক সেট পরিবর্তন করেছি, একবার ব্রেক সু ২টা পরিবর্তন করেছি এ ছাড়া তেমন কিছু করতে হয়নি। বড় কোণ সমস্যায় ও পরতে হয়নি ।
প্রথম ২ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত মতুল মিনারেল ইঞ্জিন ওয়েল ব্যবহার করি 20w40 গ্রেডের। ২ হাজার কিলোমিটার পর 10w40 গ্রেডের মতুল সেন্থেটিক ব্যবহার করতাম। এখন পেট্রোনাস 10w40 গ্রেডের সেমি সেন্থেটিক ব্যবহার করি। আগের থেকে অনেক বেটার পার্ফরমেন্স পাই ।
বাইকটির ভালো কিছু দিকঃ
- দ্রুত থ্রটল রেস্পন্স
- ব্রেকিং সিস্টেম
- লিকুয়িড কুল ইঞ্জিন
- স্পোর্টস লুক
- টুরের জন্য পার্ফেক্ট একটি বাইক
বাইকটির খারাপ কিছু দিকঃ
- টার্নি রেডিয়াস
- সিটি রাইড হিটিং ইস্যু
- সব পার্টস এভেইলেভেল নয়
- ব্যাক সাইডে স্পোর্টস লুক পাওয়া যায়না
- চেইন খুব দ্রুত লুজ হয়ে যায়(৫০০-৭০০ কিলোমিটার পর পর চেইন টাইট করতে হয়)
বাইকে এখন পর্যন্ত কোন প্রকার মডিফাই করিনি ।
বাইকটি নিয়ে বেশ কিছু ট্যুর করি । ঢাকা-পটুয়াখালী , ঢাকা সিরাজগঞ্জ আরো অনেক ট্যুর করি । সব থেকে বড় ট্যুর ছিল ঢাকা-সাজেক-খাগড়াছড়ি-রাংগামাটি-চট্রগ্রাম-কক্সবাজার-টেকনাফ। একবারের জন্যও মনে হয়নি আমার KPR এর বিশ্রাম দরকার । আমি ক্লান্ত হয়ে পরলেও আমার কেপিআর এর ক্লান্তি কখনোই ফিল করিনি । আমি আমার বাইকটা নিয়ে যথেষ্ট খুশি। সাধ্যের মধ্যে সবটুকুই দিয়েছে আমাকে Lifan KPR 150 V2 । আপনাদের বাজেট যদি হয় ২ লক্ষ টাকার তাহলে আমি বলবো এই বাজেটে আমাদের দেশে KPR 150 ছাড়া এমন ভালো পারফর্মেন্স দেওয়ার মত অন্য কোন বাইক আছে বলে আমি বিশ্বাস করিনা। ধন্যবাদ।
লিখেছেনঃ এ কে সবুজ
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।