RKS 100 এর ২০,০০০ কিলোমিটার রাইডিং রিভিউ - তানভীর
This page was last updated on 08-Jul-2024 12:49pm , By Shuvo Bangla
Keeway RKS 100 হাঙ্গেরী অরিজিন আর বেনেলীর ডিজাইন করা বাইকটি আমি কিনি ১৩ই মার্চ ২০১৫ সালে, স্পিডোযের মেইন শোরুম মহাখালী থেকে। দৈনন্দিন যাতায়াতের পাশাপাশি আমি মাঝেমাঝে স্পিডিং ও ট্যুরিং করি। এভাবে পার হয়ে গেছে ২ বছরের বেশি, টোটাল মাইলেজ হয়েছে ২০,০০০+ আর আমার অভিজ্ঞতার ঝুলি হয়েছে ভারী। একটি বাইককে পুরোপুরি যাচাই করতে হলে যে সময়টি প্রয়োজন তা আমি নিয়েছি এবং মতামত প্রদানের ক্ষেত্রে সৎ থাকার চেষ্টা করেছি। আশা করছি লেখাটি আপনাদের কাজে আসবে, সবাইকে আমার লেখায় স্বাগত জানাচ্ছি।
RKS 100 এর ২০,০০০ কিলোমিটার রাইডিং রিভিউ
ব্রেক ইন পিরিওডের পর বাইকটি যতো চালাতে থাকলাম ততোই অবাক হতে থাকলাম। ১০০ সিসির বাইক অথচ ৮০+ স্পিডেও কোন ভাইব্রেশন অনুভব হয়না! অন্যান্য বাইক যেখানে ৮০-এর পর দম ছেড়ে দেয় সেখানে এটি একটানে ৯৩+ উঠে যায়!! ০-৬০ আমি পেয়েছি ১০ সেকেন্ডে (৮৫ কেজি ওজন + হাফ ট্যাঙ্ক ফুয়েল + মনো সাস্পেনশন)। আমার ধারনা সঠিক বাইক আর যথাযথ প্রস্তুতি নিলে এটি ৭ সেকেন্ড সময় নিবে। আর বাইকের কন্ট্রোল, ব্রেক, গ্রীপ খুব ভালো, তাই যেকোন স্পীডেই এটিকে সহজে নিয়ন্ত্রন ও থামানো যায়। লং রাইডের জন্য বাইকটি অসাধারণ, পিলিওন নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা চলে কিন্তু ইঞ্জিন ওভারহিট হয় না!
চাকা ঘুরতে ঘুরতে ১৩ মাসে ১০,০০০ কি.মি. হয়ে গেলো। ভাবলাম সেকেন্ড রিভিউ লিখি, কিন্তু কি লিখবো বুঝলাম না, বাইকের তখনো পর্যন্ত কোন পরিবর্তন আসেনি। তখনো আমি চালানোর উপর নির্ভর করে সিটিতে ৪৫-৫০ কি.মি./লিটার আর হাইওয়েতে ৫০-৫৫কি.মি./লিটার ফুয়েল মাইলেজ পাচ্ছিলাম। আমি তাই ভাবলাম একেবারে ২০,০০০ কি.মি. হলে ফাইনাল রিভিউ লিখবো।
বাইক নিয়ে আমার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ করি ১০ই মে ২০১৬ সালে। আমি আমার খালাতো ভাই নাহিদকে নিয়ে ঢাকা থেকে পতেঙ্গা-কক্সবাজার-টেকনাফ ট্যুর দেই। ৪ দিনের এই ট্যুরে আমরা টোটাল ১১২৫ কি.মি. কভার করি যার মধ্যে একদিনে সর্বোচ্চ ৪৭৫ কি.মি. চালিয়েছি। পুরো ট্যুরে বাইকটি এক মুহূর্তের জন্যও কোনপ্রকার ঝামেলায় ফেলেনি। ১৮ ঘন্টা লম্বা সেই ক্লান্তিকর কিন্তু উত্তেজনা ভরপুর রাইডের গল্প পড়ে নিতে পারেন এখান থেকে।
আমি সবসময় Keeway RKS 100 বাইকটির টপ স্পিড চেক করতে চাইতাম কিন্তু এয়ারপোর্ট রোডের ব্যস্ততা আর টেকনিকেরও অভাবে হচ্ছিলো না (তখনো পূর্বাচল উদ্বোধন হয়নি)। ১২ই অগাস্ট ২০১৬ সালে মাইলেজ যখন ১৩,০০০+ কি.মি. তখন সেই মাহেন্দ্রক্ষন ঘনিয়ে এলো। একদিন গ্রুপের একভাইয়ের সাথে রেস করতে করতে এয়ারপোর্ট আসছিলাম। বরাবরে মতোই একটানে ৯৩ উঠে গেলো, প্ল্যানমতো ঝুঁকে পড়লাম। একলাফে স্পিড ৯৬ উঠে গেলো। স্পিড উঠার স্পিড দেখে বুঝলাম আজ কিছু একটা হবে এরপর বিস্ফোরিত চোখে দেখলাম স্পিড একে একে বেঁড়ে ১০০ ছুঁয়ে গেলো!
বাইকের ফুয়েল মাইলেজ ১৫,০০০-এর পর থেকে কমতে থাকে, খেয়াল করলাম একজস্ট পাইপ দিয়ে কালো ধোঁয়া বের হতে শুরু করেছে। মনে মনে ভয় পেলাম খারাপ কিছুর...। কিওয়ে সেন্ট্রাল সার্ভিস সেন্টারের হেড মেকানিক বাইকটি ভালো করে যাচাই করে বললো, “পিস্টন ঠিক আছে, ভাল্ভ ক্ষয় হয়েছে।“ টোটাল মাইলেজ তখন ১৮,০০০+ এই সময়ে এইটুকু হতেই পারে আর ইঞ্জিনের মূল অংশে কিছু হয়নি ভেবে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। কোম্পানীর পলিসি অনুযায়ী ফ্রি অফ কস্টে সেটি মেরামতও করে দিলো! Keeway Bike এর আফটার সেলস সার্ভিস খুবই ভালো, কাস্টোমার ওরিয়েন্টেড।
আমার Keeway RKS 100 বাইকটি ২০,০০০ কি.মি.-এ চাকা দেয় ২৯ জুলাই ২০১৭ সালে। এই ২ বছর ৪ মাস সময়ে বাইকের নিয়মিত চেঞ্জ করা পার্টস (চেইন সেট, ব্রেক প্যাড/শু আর এয়ার ফিল্টার) ছাড়া শুধু ইঞ্জিনের ভাল্ভ একবার চেঞ্জ করতে হয়েছে, পিস্টন আর ক্লাচ প্লেট এখনো ভালো পারফর্মেন্স দিয়ে যাচ্ছে। এখনো আমি ১০০ কি.মি. স্পিড আর সিটিতে ৪৫-৫০ মাইলেজ পেয়ে যাচ্ছি। শুধুমাত্র এক্সেলারেশন সামান্য কমেছে যা উল্লেখযোগ্য নয়। আর বাইকের কোয়ালিটি খুবই মজবুত, কয়েকবার পড়লেও কিছুই হয়নি! এককথায় বলতে পারি, বাইকটি আমাকে সম্পূর্ণভাবে সন্তুষ্ট করতে পেরেছে।
পরিশেষে যারা সাধারণ থেকে একটু সৌখিন-স্টাইলিশভাবে চলতে চান, দৈনন্দিন যাতায়াতের পাশাপাশি স্পিডিং করতে ভালোবাসেন, সিটির পাশাপাশি হাইওয়েতে থ্রটল ঘুরাতে চান তাদের জন্য Keeway RKS 100 বাইকটি পারফেক্ট। এটি সিটির জ্যামে যেমন সহজে কাটতে পারবেন তেমনি হাইওয়েতে ব্যাকপেইন ছাড়া চালাতে পারবেন। মাইলেজ যেমন মোটামুটি পাবেন আবার স্পিডিংও করতে পারবেন। এর আধুনিক ফিচার এবং সেফটি ফাংশন আপনাকে যেকোন পরিস্থিতিতে আত্মবিশ্বাস যোগাবে। আমি আমার ১ম রিভিউয়ের মতো আবারো বলতে চাই, এটি এই সেগমেন্টের বেস্ট বাইক।। সবার উদ্দেশ্যে বলবো, বাইক মূলত একটি মেক্যানিক্যাল ডিভাইস যার পারফর্মেন্স ও লংজিভিটি নির্ভর করে মানসম্মত ব্রান্ডের পাশাপাশি সঠিক মেন্টেন্যান্সের উপর। তাই আপনার বাইকটি ম্যানুয়েল অনুসারে নিয়মিত সার্ভিস করান আর তা থেকে দীর্ঘদিন সুফল ভোগ করুন। ধন্যবাদ সবাইকে, হ্যাপি বাইকিং