Honda XBlade 160 নিয়ে ভ্রমন কাহিনী - সাকিব আব্দুল্লাহ
This page was last updated on 03-Aug-2024 05:27am , By Ashik Mahmud Bangla
সেই ক্লাস নাইনে বাইক চালানো শেখার পর থেকেই বাইকে ঘোরাঘুরির ইচ্ছেটা প্রবল হয়ে ওঠে। বড় মামার বাজাজ সিটি ১০০ ও ছোট মামার হিরো স্পেলেন্ডার ছিল আমার নিত্যসঙ্গী । আমি বড় হয়েছি নেত্রকোনায় । আশেপাশের দুর্গাপুর, হালুয়াঘাট, শেরপুর, গজনী ইত্যাদি সব জায়গায়ই ঘুরেছি এই দুইটা বাইক নিয়ে । অবশেষে ইউনিভার্সিটির তৃতীয় বর্ষে উঠে আমি পেলাম প্রথম পার্সোনাল বাইক Honda XBlade 160 ।
Honda XBlade 160 নিয়ে ভ্রমন কাহিনী
Honda XBlade 160 কিনি গত ডিসেম্বরে । ঐ মাসেই এক্স ব্লেড বাংলাদেশে আসে । আশেপাশের কারো হোন্ডা এক্স ব্লেড ছিল না। চালানোর সুযোগ হয়নি কেনার আগে, বাংলাদেশে তেমন রিভিউও হয়নি তখনো বাইকটার। দেখে ভালো লাগায় কিনে ফেলি। ভাবছিলাম যদি খারাপও হয় তবে আর কতটাই বা খারাপ হবে, আফটার অল ইটস আ হোন্ডা! কেনার পর বাইকের ওডোতে ১০০ কিলো হওয়ার আগেই নেত্রকোনা থেকে ঢাকা আসি ১৬১ কিলো চালিয়ে । পড়াশোনা ও চাকরি সূত্রে থাকি ঢাকায় । ঢাকা এসে তেমন কোথাও যেতে পারিনি, বাসা-ভার্সিটি- অফিসের মধ্যেই চলাচল সীমাবদ্ধ ছিল । একটা লং ট্যুরের জন্যে মনটা আঁকুপাঁকু করছিল । হুট করেই ১১ ফেব্রুয়ারী সিদ্ধান্ত নিই যে পরদিন আমার অফ ডে-তে ট্যুরে যাব, সঙ্গীসাথী নাই যেহেতু তাই একাই যাব। তেমন কোনো রাইডারের সাথে চেনা পরিচয়ও নাই, ফ্রেন্ড সার্কেলেও এমন কেউ নাই তো একলা চলো রে।
আগের রাতে ফুল ট্যাংক করার সময় ভাবছিলাম কোথায় যাওয়া যায় । বুধবার আমার চাকরির অফ ডে ঠিকই তবে আবার বিকেল তিনটে থেকে ক্লাস আছে ভার্সিটিতে । সুতরাং তিনটের মধ্যেই ফিরতে হবে । ঠিক করলাম যমুনা সেতু পেরিয়ে ফুড ভিলেজ পর্যন্ত যাব, রেস্ট নিয়ে আবার ব্যাক করব । আপডাউনে ২৫০ কিলোর কাছাকাছি হবে ম্যাপে দেখলাম । তো বেরিয়ে পড়লাম পরদিন। ভেবেছিলাম সকাল ছটায় বেরোব । কিন্তু ঘুম থেকে উঠে রেশ কাটিয়ে নাস্তা করে বেরোলাম পৌনে আটটায় ।
Honda XBlade 160 First Impression
টেকনিক্যাল পর্যন্ত হেভি জ্যাম পাইলাম, পিক আওয়ারের এই সময়টা আমার খুব বিরক্ত লাগে । আমিনবাজার ব্রিজের পর থেকে জ্যাম কমে গেল তবুও রাস্তায় ট্রাফিক বেশি ছিল । চন্দ্রা পর্যন্ত একই অবস্থা । চন্দ্রা পর্যন্ত আসতে আসতে ঠান্ডা বাতাসে গ্লাভসের মধ্যেই হাত বরফ হয়ে গেল । এসময় ক্রস উইন্ডের মুখেও পড়েছি, বসন্ত শুরু হচ্ছে সাথে শুরু হয়েছে ক্রস উইন্ড।
Also Read: Honda XBlade 160 4,500 Km User Review - Mohammad Nipun
চন্দ্রায় থামলাম হাত গরম করতে। তখন বাজে নটা পাঁচ। চা খেয়ে হাত গরম করে আবার বাইক স্টার্ট দিলাম সাড়ে নটায়। এবার একটানে ফুড ভিলেজ। চন্দ্রা থেকে যমুনা পর্যন্ত রাস্তা ভালো-খারাপ মিলিয়ে। কিছু জায়গায় চার লেন খুলে দেয়া হয়েছে, কিছু জায়গায় কাজ চলছে। যতটুকু চার লেন পেয়েছি ততটুকুতে ১০৫-১১০ স্পিডে টানতে পেরেছি। সেতুর ওপর উঠে ভাবলাম টপ স্পিড চেক করি। পশ্চিম ঢালে টপ উঠল ১২১। তখন ট্যাংকের সাথে বুক লাগিয়ে একদম নিচু হয়েছিলাম। আমার ধারণা, ঢালের কারণে ৪/৫ কিলো বেশি টপ দেখিয়েছে মিটারে। সেতুর পরের রাস্তা খুবই বিরক্তিকর। দুই লেনের রাস্তা, সারি ধরে বাস-ট্রাক আসছে। ওভারটেক করার চান্স কম পেয়েছি। সকাল দশটা পঞ্চাশে পৌঁছালাম ফুড ভিলেজ।
ফুড ভিলেজে লাঞ্চ করে নিলাম । রান্নার কোয়ালিটি খুবই বাজে । খিদে লেগেছিল, খেতে হবে তাই খেতে হল । এখানে খেয়েদেয়ে রেস্ট নিয়ে আবার ঢাকার দিকে রওনা দিলাম ঠিক বারোটায় । এবার রাস্তায় ট্রাফিক কিছু কম পেয়েছি। ক্লাস ধরার তাড়া ছিল তাই আর কোথাও ব্রেক দেইনি । ঠিক দুইটা চল্লিশে এসে থামলাম ধানমন্ডিতে। মাঝে একটা মজার ঘটনা ঘটেছে । চন্দ্রা পেরোনোর সময় ভুলে ফ্লাইওভারে উঠে পড়ি। ফ্লাইওভার আমাকে নামিয়ে দেয় কালিয়াকৈরের দিকে । আমি প্রথমে বুঝিনি যে ভুল রাস্তায় যাচ্ছি । অনেকটা যাওয়ার পর বুঝে আবার ব্যাক করি । আমার ওডো অনুযায়ী ট্যুরে ট্রাভেল করেছি ২৮৫ কিলোমিটার। এক্স ব্লেড আমার কাছে যথেষ্ট কমফোর্টেবল লেগেছে এই সময়ে। ব্যাক পেইন বা অন্য কিছু লাগে নি। Honda Xblade 160 পারফরম্যান্সও মুগ্ধ করেছে।
ইজিলি ওভারটেক করতে পেরেছি, কোনোরকম পাওয়ার লস ইস্যুও হয়নি বিশেষ করে ফুড ভিলেজ থেকে ধানমণ্ডি পর্যন্ত বিরতি ছাড়া প্রায় টপ স্পিডে চালানোর পরও পাওয়ার লস ধরনের কিছু হয়নি । ব্রেকিংটা কোম্পানি হয়ত আরেকটু ভালো করতে পারত তবে আমার জন্যে যথেষ্ট । এই গেল একটা ট্যুরের গল্প । এরকম ট্যুর আগামী একবছরে অন্তত আটটা দেয়ার ইচ্ছে আছে । আপাত দৃষ্টিতে উদ্দেশ্যহীন মনে হলেও এইটা আমার প্রস্তুতি । আমি টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া রাইড করতে চাই ১৫ ঘন্টায়। সম্ভব কি না তা বুঝতে হলে ফ্রিকোয়েন্ট লং ট্যুরের কোনো বিকল্প নেই ।
আমার রাইড ফিটনেস বাড়বে, রাস্তা চিনব ও বুঝব, বাইকের আচরণ বুঝব এই ট্যুর গুলো দিয়ে। যদি বুঝতে পারি হবে তাহলে এক/দেড় বছর পর ১৫ ঘন্টায় টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া করার চেষ্টা করব । একটাই তো জীবন, যা করতে চাই তা করার চেষ্টা না করলে আফসোস রাখার কোনো জায়গায়ই থাকবে না।
লিখেছেনঃ সাকিব আব্দুল্লাহ
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।