Honda X Blade 160 ৫,০০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ - রেজোয়ান হাসান
This page was last updated on 01-Jan-2025 03:52pm , By Raihan Opu Bangla
আমি এস এম রেজোয়ান হাসান । পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার । আজ আমি আমার জীবনের দ্বিতীয় বাইক Honda X Blade 160 প্রায় ৩ মাস রাইডের পর এবং প্রায় ৫০০০ কিলোমিটার পথ পারি দেয়ার ভাল মন্দ সব ধরনের অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করব।
Honda X Blade 160 ৫,০০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ
আমার জীবনের প্রথম বাইক ছিল Runner Bullet । বাইকটি রানার কোম্পানির আমার দেখা সবচেয়ে কম সমস্যা সম্পন্ন এবং অন্যতম সেরা বাইক। বাইকটি আমি ঢাকায় প্রায় ২.৫ বছরের মত ব্যবহার করি এবং প্রায় ২৯০০০ কিলোমিটার চালিয়ে বিক্রি করি। এ সময় আমি এই বাইকটি নিয়ে ঢাকা – চাপাইনবাবগঞ্জ, ঢাকা – সিরাজগঞ্জ, ঢাকা – বগুড়া , ঢাকা – চাঁদপুর সহ বেশ কয়েকটি লং রাইড করি।
Also Read: হোন্ডা সিবি ট্রীগার ৪,০০০কিমি মালিকানা রিভিউ
দীর্ঘ সময় একটি ১০০ সিসি বাইক চালানোর পর স্বভাবতই সবার ইচ্ছা করে এবার একটি উচু সিসির বাইক এ শিফট হবার। আর সে ইচ্ছে থেকেই খুজতে থাকি আমার বাজেটে সবটুকু সুখ আর সে সময় honda motorcycle বাংলাদেশ ঘোষনা দেয় Honda X Blade 160 বাইকটি লঞ্চ করার ।
প্রথম দেখায় ভালবাসা আর বাজেটে মিলে যাওয়ায় আর কিছু চিন্তা না করে বাইকটি আমি লঞ্চিং প্রোগ্রাম এ হোন্ডা লাইফ শোরুম এ বুকিং দেই এবং ডিসেম্বর এর ২৬ তারিখ কিনে ফেলি আমার দ্বিতীয় ভালবাসা। বারিধারায় অবস্থিত সেই হোন্ডা লাইফ শোরুম থেকেই ১,৭২,৯০০ টাকায় বাইকটি ক্রয় করি। রেজিস্ট্রেশন এর টাকা জমা দেওয়ার পর নাম্বার সহ সব কাগজপত্র পাই ৩ দিনেই। তারপর থেকেই শুরু আমার Honda X Blade 160 এর সাথে পথচলা ।
স্মার্টফোন যেমন মানুষ টার প্রয়োজন অনুযায়ী কেনে তেমনি সত্যি বলতে কম সিসির বাইক থেকে বেশি সিসির বাইক এ আপগ্রেড হতে গিয়ে আমার মোটামুটি যে সকল রিকোয়ারমেন্ট ছিল তার প্রায় সব ই পূরণ করেছে হোন্ডা এক্সব্লেড ১৬০।
Honda X Blade 160 বাইকটি শক্তিশালী ১৬২.৭ সিসির ইঞ্জিন এর সাথে ডায়মন্ড ফ্রেম, অসাধারন এরোডায়নামিক লুক এর সাথে নজরকাড়া মিটার কন্সোল প্রায় Honda CBR এর মত ।এছাড়া ব্রেকিং এর জন্য দেয়া হয়েছে ২৭৬ মিমি এর শক্তিশালী পেটাল ডিস্কব্রেক এর সাথে ১৩০ সেকশন এর টায়ার এর কম্বিনেশন। সবকিছুই মোটামুটি একটা ১৬০ সিসি এর বাইক থেকে এক্সপেক্ট করা যায়।
Also Read: ১ লক্ষ টাকার মধ্যে হোন্ডা বাইক এর দাম দেখুন
তাই আমার মতে এক্সব্লেড হচ্ছে একটি প্যাকেজ বাইক, সাধ্যর মধ্যে সবটুকু সুখ । আর কম সিসি থেকে যারা বেশি সিসির বাইক এ আপগ্রেড করে তাদের প্রথম চালানোর সেই সুখের অনুভূতি আসলে ভাষায় প্রকাশ এর মত না ।
মাইলেজঃ সাধারনত ঢাকায় আমি সামনের টায়ার চেঞ্জ এর আগে মাইলেজ পেতাম ৪৩ - ৪৫ কিলোমিটার প্রতি লিটার আর এখন পাচ্ছি ৪১ - ৪৩ কিলোমিটার প্রতি লিটার।
আর হাইওয়ে তে প্রথম লং ট্যুর এ মাইলেজ পেয়েছি ৫২ কিলোমিটার প্রতি লিটার আর শেষ লং ট্যুর পর্যন্ত আমি মাইলেজ পেয়েছি ৫৬.৫ কিলোমিটার প্রতি লিটার। এ থেকেই বুঝা যায় কেন এক্সব্লেড কে কমিউটার বাইক বলা হয় ।
টপ স্পিডঃ বাইকটিতে আমি এখন পর্যন্ত টপ স্পিড পেয়েছি ১১৪ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা ।
Also Read: হোন্ডা সিবি শাইন ১২৫ ভার্স বাজাজ ডিস্কোভার ১২৫ কম্পারিজন রিভিউ
সার্ভিসিংঃ আমার এক্সব্লেড বাইকটি আমি শুরু থেকেই সার্ভিস করছি হোন্ডা লাইফ এ। আমার দেখা অন্যতম সেরা হোন্ডা সার্ভিস সেন্টার । বাইকটি আমি হোন্ডা বাংলাদেশ এর দেওয়া নিয়ম মেনে প্রথম সার্ভিস করি ১০০০ কিলোমিটার এবং দ্বিতীয় সার্ভিস করি ৩৯০০ কিলোমিটার এ। এ পর্যন্ত আমার বাইকের কোন পার্টস পরিবর্তন এর দরকার পরেনি ।
Click To See Honda X Blade 160 In Bangladesh – Honda X Blade First Impression
মেইন্টেনেন্সঃ একটি বাইকের মূল বেপার হল বাইকের মেইন্টেইনেন্স। ভালভাবে মেইন্টেইন করলে একটি বাইক নির্বিঘ্নে ৫০০০০ কিলোমিটারেও নতুনের মত পারফর্মেন্স দিবে। আমি এখন পর্যন্ত বাইকটির প্রতি ১০০০ কিলোমিটারে ওয়াশ, এয়ার ফিল্টার ক্লিন, চেইন ক্লিন এবং টাইটিং, ২৫০০ কিলোতে স্পার্ক প্লাগ ক্লিন ছাড়া ও সময়মত প্রতিবার ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন এবং নিয়মিত ভাল পেট্রোল পাম্প থেকে তেল নেবার চেষ্টা করি। আমি মনে করি একটি বাইকের সঠিক সময়ে সার্ভিসিং বাইকের জীবনী শক্তি বাড়িয়ে দেয়।
Honda X Blade 160 এর ৫ টি ভাল দিকঃ
- ONE LOOK IS ENOUGH, কথাটি যথার্থ অর্থাৎ দেখতে নজরকাড়া
- অসাধারন মাইলেজ , সিটি এবং হাইওয়ে ২ জায়গায়ই
- খুবই ভাল সিট কম্ফোর্ট। আরামদায়ক সিট সামনে এবং পিছনে
- স্মুথ ইঞ্জিন পারফর্মেন্স। হাই আরপিএম এ ভাইব্রেশন ফ্রি এক্সেলেরেশন
- অসাধারন ব্রেকিং। সামনের ডিস্ক এবং পিছনের ড্রামের কম্বিনেশন অসাধারন
Honda X Blade 160 এর ৫ টি খারাপ দিকঃ
- সামনের চাকা প্রয়োজনের তুলনায় ছোট সাইজের
- হেডলাইটের আলো কম, আরেকটু বেশি হলে ভাল হত
- ইঞ্জিন কিল সুইচ নেই ।
- সামনের সাস্পেনশন এর পারফর্মেন্স আশানুরূপ না
- বাইকটিতে প্লাস্টিকের পরিমান বেশি। প্লাস্টিক কোয়ালিটি খুব ভাল মনে হয়নি ।
মডিফিকেশনঃ পেশার খাতিরেই হোক আর পুরনো অভ্যাস আমি আমার হাতের কাছের সবকিছু নিয়েই ঘাটাঘাটি গবেষণা করতে পছন্দ করি । আর এর ফলশ্রুতিতে আমি আমার বাইক নিয়ে প্রথম যে এক্সপেরিমেন্ট করি তা হল এর ফ্রন্ট টায়ার। বাইকটি নতুন হওয়ায় এর সম্বন্ধে সবার ধারনা অনেক কম। শোরুম থেকেও মেকানিক সবাইকে বলে সামনের টায়ার আপগ্রেড করা যাবে না।
Also Read: Honda To Showcase Honda X Blade & Unicorn160 at Dhaka Bike Show
আর এক্সব্লেড এর যদি কোন একটি কমতি থাকে তা হল এর সামনের টায়ার। তাই রিস্ক নিয়ে হলেও আমি এর সামনের টায়ার পরিবর্তন করার মনস্থির করি এবং শেষ পর্যন্ত সফল হই । এখন আমার বাইকের সামনে টায়ার ৯০/৯০/১৭ সাইজের টিভিএস রেমোরা টায়ার চলছে এটিই এখন পর্যন্ত করা আমার বাইকের একমাত্র আপগ্রেডেশন ।
লং ট্যুরঃHonda X Blade 160 বাইকটি নেকেড স্পোর্টস সেগমেন্টের বাইক। যদিও এর কিছু বিষয় কমিউটার বাইকের সাথে মিলে যায় তাই একে স্পোর্টস কমিউটারও বলা যায়। কিন্তু এটি নিয়ে শুরু থেকেই আমি লং রাইড করছি যার মধ্য উল্লেখযোগ্য হল ঢাকা – ব্রাহ্মণবাড়িয়া – ঢাকা , ঢাকা – চাঁপাইনবাবগঞ্জ – বগুড়া ট্যুর । আমার দেখা ১৬০ সিসি বাইকের মধ্যে এক্সব্লেড অন্যতম সেরা বাইক ।
বাইকের লুক , ব্রেকিং , মাইলেজ সহ আরো কিছু দিকে অবশ্যই এটির সেগমেন্টে এ অন্যান্য বাইক থেকে সেরা । তাই কেউ নিতে চাইলে নিশ্চিন্তে নিতে পারেন তবে অবশ্যই আপনার সব রিকোয়ারমেন্ট এর সাথে বাইকটি মিলছে কিনা দেখে নেবেন । অবশ্যই সর্বদা ফুলফেস হেলমেট পরে বাইক রাইড করবেন, সামনে ও পিছনে সর্বদা সতর্ক দৃষ্টি মূলমন্ত্রে বাইক রাইড করবেন । ধন্যবাদ ।
লিখেছেনঃ রেজোয়ান হাসান
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।