Honda Wave Alpha এর মালিকানা রিভিউ- লিখেছেন মোঃ মোয়াম্মার
This page was last updated on 07-Jul-2024 10:25am , By Shuvo Bangla
Honda Wave Alpha এর মালিকানা রিভিউ
আমি আম্মার মোঃ মোয়াম্মার। Honda Wave Alpha নিয়ে আমার রিভিউতে স্বাগতম। পেশায় সরকারী চাকুরীজিবী। থাকি নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর উপজেলায়। ছোটবেলা থেকেই বাইকিং আমার অন্যতম শখ। সেই ক্লাশ এইটে থাকতে আব্বুর অফিসিয়াল বাইক দিয়ে শুরু। স্টুডেন্ট অবস্থায় বন্ধু বান্ধব থেকে শুরু করে যখন যারই বাইক পেয়েছি চালিয়েছি।
তারপর ২০০৮ সালে চাকুরী জীবনে প্রবেশের পর থেকে বাইকিং এর সুযোগ খুব একটা আর হয়ে ওঠেনি। যদিও নিজের একটি বাইকের অভাব অনেকদিন থেকেই অনুভব করতাম, কিন্তু আমার মতো ছোট সরকারী চাকুরীজিবীর পক্ষে এখনকার বাজারে দৈনন্দিন সব প্রয়োজন মিটিয়ে একটি কোয়ালিটি বাইক কেনার শখ পূরণ করা অনেক কঠিন একটি ব্যপার।
আমার প্রয়োজন ছিল এমন একটি বাইক যেটি হবে তুলনামূলক ভাবে হালকা, কাজ চলার মতো শক্তিসম্পন্ন, ফুয়েল সাশ্রয়ী , টেকসই সাথে থাকতে হবে ভালো কন্ট্রোলিং এবং চলনসই কম্ফোর্ট। তাই আমার বাজেটের মধ্যে বিভিন্ন বাইক নিয়ে কিছুদিন গবেষণা করে দেখলাম যে ’Honda Wave Alpha’ কাব বাইক টি আমার চাহিদার প্রায় সবই মোটামুটি ভাবে পূরণ করে।
Honda Wave Alpha Test Ride Review By Team BikeBD
বাইক হিসেবে ‘হোন্ডা ওয়েভ আলফা’ কে সিলেক্ট করা আমার জন্য অত্যন্ত দুরূহ ছিল। কারণ, দেশের বাজারে এটি একেবারেই নতুন একটি বাইক তাই এটির পারফরমেন্স সম্পর্কে কারো মতামত বা তেমন কোন ধারনা পাচ্ছিলাম না এবং বাইকটির ধরণ ও সাধারণ বাইকের চেয়ে কিছুটা আলাদা।
তবে যখন জানতে পারলাম হোন্ডার পক্ষ থেকে বাইক বিডি কে ্েটস্টিং এর জন্য এই বাইকটি দেয়া হয়েছে তখন বাইক বিডি’র ফাউন্ডার আমাদের প্রিয় শুভ্র দা’র সাথে কথা বলি এবং উনার রাইডিং এবং ভিজুয়াল এক্সপেরিয়েন্স সম্পর্কে পজিটিভ মতামত পেয়ে আমি আমার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করি।
অবশেষে গত ৩০শে জুলাই আল্লাহর রহমতে নওগাঁর আহসান ট্রেডিং থেকে নিজের প্রথম বাইক হিসেবে ’হোন্ডা ওয়েভ আলফা’ বাইক টিকিনেছি। বাইকটির দাম পড়েছে ১৩৫০০০ হাজার টাকা। সাথে অফার থাকায় ১০ বছর মেয়াদী রেজিস্ট্রেশান ফ্রী পেয়েছি। আমার চলাফেরা মফস্বল এরিয়ায়, সাধারণত অফিস-বাসা-বাজার অথবা আশেপাশের ৩০-৩৫কি.মি. এর ভেতরে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
তবে মাঝে মাঝে মন খারাপ থাকলে বাইক নিয়ে বেড়িয়ে পড়ি। বেশী দূরে কোথাও যাবার প্রয়োজন বা সুযোগ তেমন একটা হয়না, বড়জোড় আমার কর্মস্থল থেকে বগুড়া পর্যন্ত ৭০ কি.মি আমার যাতায়াত। হোন্ডা ওয়েভ আলফা বাইকটির ওজন মাত্র ৯৮কেজি, রয়েছে ৯৭সিসির সিঙ্গেল সিলিন্ডার ৪স্ট্রোক এয়ার কুলড এঞ্জিন।
এটির টর্ক ৭.০এন এম এবং যা আমার জানামতে দেশে এভেইল্যাবল ১০০সিসি বাইক গুলোর তুলনায় কিছুটা কম। আমার মতে এটি কমপক্ষে ৮.০ বা তার কিছু বেশি হলে মানানসই হতো। অনেকে বলেছেন ওয়েট কম হওয়ায় এই টর্ক যথেষ্ট। কিন্তু পিলিয়ন থাকলে কম টর্কের সমস্যাটি বেশ ভালই অনুভূত হয়।
অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন এই বাইকটির বিল্ড কোয়ালিটি আমার কাছে অনেক সুন্দর ও ফাইন ফিনিশড মনে হয়েছে। এটির পেছনের সাসপেনশন বেশ ভাল মানের। তবে সামনের সাসপেনশন অনেক হার্ড হওয়ায় আমার কাছে অতোটা ভাল লাগেনি। তবে যেহেতু বাইকটি মূলতঃ সিটি কমিউটিং উপযোগী করে তৈরী সেহেতু এটির সাসপেনশন মোটামুটি বলা যেতে পারে।
তবে আমাদের দেশের কন্ডিশন বিবেচনায় এবং হোন্ডার বাইক হিসেবে সাসপেনশন অবশ্যই আরো ভালো হওয়া উচিৎ ছিল। হোন্ডা ওয়েভ আলফার ব্রেকিং প্রশংসা পাবার যোগ্য। সামনের ও পেছনের দুই চাকাতেই যদিও ড্রাম ব্রেক রয়েছে তবুও এটি অসাধারন ব্রেকিং এক্সপেরিয়েন্স দেয়। হেডলাইটের আলোও মোটামুটি মানের তবে ডিসি না হওয়ায় থ্রটল ছেড়ে দিলে আলো অনেক কমে যায় এবং ক্লাচ লিভার না থাকায় ঐ অবস্থায় অন্যান্য বাইকের মতো ক্লাচ চেপে হালকা থ্রটল টেনে আলো বাড়ানোর উপায় পাই নাই তাই প্রথমদিকে রাতে খুব সমস্যায় পড়তে হতো।
পরে আমি দেখেছি যে বাইকটিতে ক্লাচ লিভার না থাকলেও গিয়ার লিভারের উভয় প্রান্তে কিছুটা চাপ দিলে প্রথমে ক্লাচ হয় পরে একেবারে শেষপ্রান্তে যেয়ে গিয়ার শিফট হয়। তাই ঐ অবস্থায় গিয়ার লিভার হালকা করে চেপে ধরে হালকা থ্রটল টেনে আলো বাড়ানো যায় এবং এতে কোন সমস্যাও হয়না। বাইকটির সিট বেশ আরামদায়ক তবে আরেকটু নরম হলে ভালো হতো। রাস্তা ভালো হলে হোন্ডা ওয়েভ আলফায় রাইডিং খুবই ইজি এবং কম্ফোর্টেবল।
এটির কন্ট্রোলিং অত্যন্ত ভালো। বিশেষ করে আমার মতো হালকা পাতলা গড়নের ও কম হাইটের (৫২কেজি, ৫’১”) মানুষের জন্য ১০০ সি সি সেগমেন্টে এটাই সবচেয়ে উপযুক্ত বাইক বলে আমার ধারণা। বিশেষ করে বিজি ট্রাফিকে এর উপযোগীতা বেশ ভালো বুঝা যায়। অনেকেই হয়তো বলবেন যে এটি লং রাইডের জন্য উপযুক্ত না, কিন্তু বিগত তিন মাস চালানোর পর আমার মনে হচেছ যে সিঙ্গেল রাইড করলে এবং অন্যান্য এয়ারকুলড বাইকের মতো মাঝে মাঝে সামান্য রেস্ট দিলে এটা দিয়েও লং রাইডে তেমন সমস্যা হবেনা।
শুধু ড্রাইভিং লাইসেন্স হাতে পাবার অপেক্ষা, তারপরই আমি ইনশা আল্লাহ্ এটি নিয়ে রাঙ্গামাটি ট্যুরে যাবো। বাইক রাইডিং এর যে সাধারন ক্লান্তি তো এই বাইকে প্রায় টেরই পাওয়া যায় না। রাস্তা ভালো হলে ৭০-৮০ কি.মি. পর্যন্ত টানা চালনায় কোন ব্যাক পেইন ও অনূভব করি নি। খারাপ সাসপেনশন ও গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স একেবারে কম হওয়ার কারণে (১৩৫মি.মি.) বাইকটি অফরোডে একটু সাবধানে চালাতে হয়। অসাবধানতার কারণে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার ঘষা খেয়েছি।
আমি এপর্যন্ত ৪৩০০+ কি.মি. চালিয়েছি। এখন পর্যন্ত সার্ভিস বাদে শুধু দু’বার চেইন টাইট করতে হয়েছে এবং একবার পেছনের ব্রেক চাপলে ব্রেক লাইট না জ¦ালার মতো মাইনর দু একটা সমস্যা ছাড়া তেমন কোন সমস্যায় পড়তে হয়নি। তবে স্থির অবস্থা থেকে হ্যান্ডেল বার কোন এক দিকে কিছুটা ঘোরানো অবস্থায় একটু জোরে এক্সিলারেট করতে গেলে এবং খারাপ রাস্তায় চালানোর সময় বাইকটি কিছুটা বেন্ড হয়ে যায় বলে আমার কাছে মনে হয়, যা প্রথম ১০০০ কি.মি পর্যন্ত অনুভব করি নি।
পরে শুভ্রদা’র সাথে কথা বলেও এর সত্যতা পেয়েছি। তবে সার্ভিস সেন্টারে দেখিয়ে কোন সমাধান পাওয়া যায়নি। ওরা টেস্ট করে আমাকে বলেছে কোন সমস্যা নাই। হোন্ডার শিডিউল অনুযায়ী ১০০০ কি.মি. তে প্রথম এবং ৪০০০ কি.মি. তে দ্বিতীয় সার্ভিস টি করিয়েছি। কোন পার্টস এখনো চেঞ্জ করতে হয়নি। হোন্ডার নির্দেশনা অনুযায়ী প্রথমবার ৪০০কি.মি তে এঞ্জিনঅয়েল চেঞ্জ করেছি।
তার পরেরবার ১২০০কি.মি. এবং এরপর থেকে প্রতি ১০০০কি.মি. পর পর এঞ্জিনঅয়েল চেঞ্জ করছি। হোন্ডা ওয়েভ আলফা তে এঞ্জিনঅয়েল চেঞ্জ করার সময় অয়েল লাগে মাত্র ৭০০ এম এল। আর হ্যা, আমি কিন্তু হোন্ডার ১০ডব্লিউ ৩০ গ্রেডের এঞ্জিনঅয়েল ব্যবহার করি এবং হোন্ডা অনুমোদিত শপ থেকে কিনি। এখানে দাম নেয় ৪৫০ টাকা।
এখন আসি মাইলেজ এর বিষয়ে। অফিসিয়ালি হোন্ডা ওয়েভ আলফার মাইলেজ ৮০কি.মি./লি. হলেও এপর্যন্ত স্টক সেটিং এ হাই রোডে ৪০-৫০কি.মি/ঘন্টা স্পিডে আমি পেয়েছি সর্বোচ্চ ৭২.৩০কি.মি./লি. এবং সিটি এরিয়াতে ৪৮-৫২কি.মি./লি.।একটু বেশি স্পিডে চালালেই মাইলেজ ড্রাস্টিক্যালি কমে যায়। ৬৫-৭৫কি.মি/ঘন্টা স্পিডে আমি মাইলেজ পাই ৪৫-৪৮কি.মি./লি।
তবে ৩০০০কি.মি.র পর মাইলেজ আরো কিছুটা কমে যাওয়ায় সার্ভিস সেন্টারে দেখিয়ে ফুয়েলের নব অ্যাডজাস্ট করার পর আবারো প্রায় আগের মতো মাইলেজ পাচ্ছি। আমি এপর্যন্ত সর্বোচ্চ স্পিড তুলেছি ৯৮কি.মি/ঘন্টা। ৯৫+ স্পিডেও বাইকটির কন্ট্রোল ছিল অসাধারণ। কোন অতিরিক্ত ভাইব্রেশনও ছিল না।
হোন্ডা ওয়েভ আলফার কয়েকটি ভালো দিক ঃ-
১। রাইডিং সহজ আরামদায়ক।
২। অসাধারন কন্ট্রোলিং।
৩। ভালো ব্রেকিং।
৪। ঘন ট্রাফিকে চলার জন্য আদর্শ বাইক।
হোন্ডা ওয়েভ আলফার কয়েকটি খারাপ দিক ঃ-
১। তূলনামূলক খারাপ সাসপেনশন।
২। চালানোর সময় বাইকটি কিছুটা বেন্ড হয়ে যায়।
৩। গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স খুবই কম হওয়ায় অফ রোডের জন্য প্রায় অনুপযুক্ত।
৪। ওজনে হালকা ১০০সিসি বাইক হিসেবে প্র্যাকটিকাল মাইলেজ কম।
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com - এই ইমেইল এড্রেসে।