হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর নিয়ে বাইকবিডি টিমের একটি রিভিউ
This page was last updated on 03-Jul-2024 12:30pm , By Shuvo Bangla
হোন্ডা কোম্পানি বিশ্বের সেরা বাইকগুলো তৈরী করে থাকে । হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর (Honda CBR 150R) হল হোন্ডার তৈরী করা সর্বশেষ ও সর্বাধুনিক মোটরসাইকেল । মোটের উপর বিশ্বের এই প্রান্তের বাজারেও হোন্ডার একটি বিশেষ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে । বাংলাদেশের প্রত্যেক অভিজ্ঞ বাইক চালকই অ্যাটলাস দ্বারা জোড়া লাগানো হোন্ডার বাইকগুলোর কোয়ালিটি সম্পর্কে জানে । এটা হতে পারে সিডি ৮০, সিডি ১০০, সিডি ১২০ বা বিখ্যাত সিডি ১৮৫ সবগুলো বাইকই অত্যন্ত ভালমানের ।
হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর নিয়ে বাইকবিডি টিমের একটি রিভিউ
সবকিছুর উপরে বাংলাদেশের বাইকপ্রেমীরা জানে হোন্ডা কি ধরনের কোয়ালিটি বজায় রেখে বাইক তৈরী করে । যদিও কোম্পানিটি কিছু ভারতীয় কোম্পানি যেমন বাজাজ, টিভিএস এর কাছে বাজার হারাচ্ছে কিন্তু হোন্ডার প্রধান সমস্যা হল এর নিজ দেশেরই বিখ্যাত ব্র্যান্ড ইয়ামাহা । তারাও অত্যন্ত দক্ষ বাইক তৈরীকারক এবং কিছু পুরানো মডেল যেমন আরএক্স১০০ এর মাধ্যমে তারা স্থানীয় বাজারে সফলতাও পেয়েছিল । কিন্তু বর্তমানে বাইকের বাজার সম্পূর্ণভাবে বাজাজের তৈরী পালসারের নিয়ন্ত্রণে এবং খুব সম্প্রতি ইয়ামাহার বাজারজাত করা এফজেড সিরিজের বাইকগুলোও ব্যাপক সফলতা পেয়েছে । এর ফলে এমনকি বাজাজেরও বাজারের উপর নিয়ন্ত্রণ কমে গেছে । শধুমাত্র এ কারনেই বিখ্যাত এই কোম্পানিটি তার প্রতিযোগীদের হারানোর জন্য অপেক্ষা করছিল সঠিক সময়ের । এরই ফলাফলস্বরূপ কোম্পানিটি নিয়ে এসেছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ও অত্যন্ত উন্নত মানের হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর ।
Also Read: হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর ২০১৬ এখন বাংলাদেশে
যদিও হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর এখনও আমাদের দেশের বাজারে এসে পৌঁছায়নি। কিন্তু বাইক ভক্তদের এ বাইকটি সম্পর্কে একটি পর্যালোচনার ব্যাপক অনুরোধের কারনে এটা এখানে তুলে ধরা হল । এটি প্রথমবারের মত বাংলায় উপভোগ করুন শুধুমাত্র বাইকবিডি তে ।
স্টাইলঃ
হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর দেখতে প্রায় এর পূর্বের মডেল হোন্ডা সিবিআর ২৫০আর এর মত । এর স্টাইল যথেষ্ট আবেদনময় কিন্তু ১৫০ সিসি ইঞ্জিনের তুলনায় এর আকার যথেষ্ট বড় । এর Y আকৃতির কাল আবরণ দ্বারা ঘেরা হেডলাইট সর্বাধুনিক ভিআফআর-১২০০ প্রযুক্তি সমৃদ্ধ যদিও সিবিআর ১০০০ আরআর এ ট্যাঙ্ক পর্যন্ত বিস্তৃত উজ্জ্বল রঙের গ্রাফিক্স ব্যবহার করা হয়েছিল । এই ক্ষুদ্র পরিবর্তনটি একে এর পূর্বের মডেল হতে পৃথক করেছে ।
এমনকি হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর এর পিছনের লাইটও সিবিআর২৫০ আর এর মত যেটা একটি নন-এলইডি বাতি । ১৫০আর ও ২৫০আর এর মধ্যে একমাত্র পার্থক্য হল এদের এগজস্ট নলের আকার কিছুটা ভিন্ন এছাড়াও হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর এ রয়েছে কালো রঙের অ্যালয় হুইল ( চাকা ) । আপনি যতই বাইক দুটির দিকে গভীরভাবে তাকাবেন ততই আপনি বুঝতে পারবেন যে হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর একটি দারুন মোটরসাইকেল ।
Also Read: হোন্ডা সিবি ট্রিগার এর মালিকানা রিভিউ
সামনের টায়ারগুলো ১০০/৮০-১৭ এবং পিছনের টায়ার গুলো ১৩০/৭০-১৭ যেগুলো সিবিআর ২৫০আর এর টায়ারগুলো হতে কিছুটা ছোট । এছাড়াও কাঁদা প্রতিরোধ করার প্লেটগুলোও যথাযথভাবে স্থাপন করা হয়নি ফলে উঁচু রাস্তার মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় এগুলো লেগে যায় । হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর এ অত্যন্ত ভিন্ন একটি রঙ ব্যবহার করা হয়েছে যেটা সিবিআর ২৫০আর হতে সম্পূর্ণ আলাদা । এতে দ্বিস্তর বিশিষ্ট রঙের প্রলেপ রয়েছে যা সিবিআরটিকে একটি তরুনের মত লুক দিয়েছে । এই বাইকের স্ট্যান্ডার্ড ও ডিলাক্স শ্রেণী দুটির মধ্যে কেবল রঙের পার্থক্য রয়েছে ।
ইনসট্রুমেন্ট ক্লাস্টার ও সুইচ গিয়ারঃ
হোন্ডা সিবিআর ১৫০ ও সিবিআর ২৫০ এর কনসোলও ( যেখানে সকল যন্ত্রাংশ সাজানো থাকে ) একই কিন্তু হোন্ডা সিবিআর ১৫০ তে সিলভারের আবরণটি নেই । যদিও হোন্ডা সিবিআর ২৫০ তে নিয়ন রঙের অ্যানালগ টেকোমিটার রয়েছে ,একই টেকোমিটার রয়েছে হোন্ডা সিবিআর ১৫০তেও কিন্তু এটা কালো রঙের । হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর এর টেকোমিটারটি ১৩০০০ আরপিএম পর্যন্ত গুনতে পারে যেখানে সিবিআর ২৫০ এর টেকোমিটারটি গুনতে পারত ১২০০০ আরপিএম পর্যন্ত ।
এর ডিজিটাল ডিসপ্লে অনেকগুলো তথ্য যেমন ওডোমিটার, স্পিডোমিটার, ফুয়েলমিটার, ট্রিপমিটার ও ইঞ্জিনের তাপমাত্রা অত্যন্ত সুন্দরভাবে প্রদর্শন করে । ডিজিটাল ডিসপ্লের নিচেই রয়েছে মুড ও অন্যান্য সুইচ । সুইচ গিয়ারের মান অতটা আকর্ষণীয় নয় এবং এগুলো সরাসরি সিবিএস স্টানার হতে অনুকরন করা হয়েছে । এমনকি ফুট-পেগ পর্যন্ত স্টানার হতে অনুকরন করা হয়েছে ।
হেডলাইট চালু করার সুইচটি গতানুগতিকতার বাইরে গিয়ে বাম পাশে স্থাপন করা হয়েছে এবং এখানে ইঞ্জিন থামানোর কোন সুইচ নেই । একটি প্রিমিয়াম ১৫০ সিসি বাইকের জন্য এটি কোনভাবে গ্রহণযোগ্য নয় । হোন্ডা সিবিআর ২৫০ এর সুইচ গিয়ারটি এতে স্থাপন করা যেত কেননা এটা তুলনামুলকভাবে অনেক ভালো ।
পারফর্মেন্স ও গিয়ারবক্সঃ
হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর এর রয়েছে একটি ১৪৯.৪ সিসি, লিকুইড কুল্ড, ডিওএইচসি, ৪ ভালভ বিশিষ্ট ইঞ্জিন যেটার রয়েছে শক্তি উৎপন্ন করার অত্যন্ত ভিন্ন ধরনের ক্ষমতা। এতে রয়েছে হোন্ডার তৈরী “প্রোগ্রামড ফুয়েল ইনজেকশন” প্রযুক্তি যার মাধ্যমে হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর এ জ্বালানীর সাস্রয় নিশ্চিত হয় । এটি ১০,৫০০ আরপিএম এ সর্বোচ্চ ১৭.৬ বিএইচপি শক্তি উৎপন্ন হয়।
এই সংখ্যাগুলো আপনাকে বাইকটি চালাতে উদ্বুদ্ধ করবে না কিন্তু আপনি যখন রাস্তায় চালাবেন তখন পার্থক্য আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন । যদিও হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর খুব বেশী টর্ক( ঘূর্ণন ) উৎপন্ন করতে পারে না কিন্তু এর ওজন মাত্র ১৩৮ কেজি হওয়ায় এই পরিমাণ টর্কই ওজন অনুপাতে ভালো শক্তি উৎপন্ন করতে পারে । এর যতই ওজন অনুপাতে ভালো শক্তি উৎপন্ন করার ক্ষমতা থাকুক শহর এলাকায় চালানোর সময় এটি খুবই ধীরে শক্তি উৎপন্ন করে যদিও সিবিআর ১৫০ খুব দ্রুত টর্কের গতি বাড়াতে পারে । হোন্ডা মোটরকে এই গতি বৃদ্ধির প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার জন্য অনেক ধন্যবাদ । বাইকটি যদি একবার চলতে শুরু করে দ্রুত ৮০০০ আরপিএম এ পৌঁছে যায় এবং আরও কিছুক্ষন চালালে এটা খুব দ্রুত এর বিপদজনক সীমা ১১৭০০ আরপিএম এ পৌঁছে যায় ।
Also Read: ২.৫ লক্ষ টাকার মধ্যে হোন্ডা বাইক এর দাম | বাইকবিডি September 2023
হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর এ ১২ সেকেন্ডেরও কম সময়ে ০-১০০ কিলোমিটার গতি তোলা যায় । এটি এর পর আরও দ্রুত গতি তুলতে পারে এবং ১৩০ কিলোমিটারের আগ পর্যন্ত এর গতি সহজে অনুভূত হয় না । ৬-স্পিড গিয়ারবক্সই অত্যন্ত মসৃণ ফলে এগুলো অত্যন্ত নিখুঁতভাবে কাজ করে । এর ক্লাচ অত্যন্ত হালকা । একটি ১৫০ সিসি মোটরসাইকেল হিসেবে যা অত্যন্ত বাজে । যখন গতি বাড়তে থাকে তখন ইঞ্জিন ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে যায় এবং অন্যান্য হোন্ডা ইঞ্জিনগুলোর মত এটিকে অত্যন্ত বিশুদ্ধ ইঞ্জিন বলেই মনে হয় । ইঞ্জিনটি এর বিপদজনক সীমায় পৌঁছালেই শব্দ করে । অনেকেই হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর হতে মাইলেজ আশা করতে পারে প্রতি লিটারে ৩৫- ৪০ কিলোমিটার, কিন্তু এটা যে মাইলেজ দেয় তা হল জ্বালানী ট্যাঙ্ক সম্পূর্ণ ভর্তি অবস্থায় প্রায় ৫০০ কিলোমিটারের কাছাকাছি ।
চালানো, নিয়ন্ত্রণ ও ব্রেকিং
পেরিমিটার ফ্রেম দ্বারা তৈরী হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর এর চালানো ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা অত্যন্ত চমৎকার । চড়ার ক্ষেত্রে এটি খুব কোমল না হলেও খুব শক্ত নয় । এর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এক কথায় বলা যায় অত্যন্ত চমৎকার । যে কেউ খুব দ্রুত হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর এর গতিপথ খুব দ্রুত বদলাতে পারবে এবং এটা সে অত্যন্ত নির্ভুলভাবেই করতে পারবে।
বসার সিটগুলো যথেষ্ট আরামদায়ক এবং বসার স্থানের অবস্থানের কারনে আপনাকে কিছুটা কুঁজো হয়ে বসতে হবে । কিন্তু এর ফলে আপনার কব্জি বা পিঠে কোন ধরনের ব্যথা হবে না ফলে আপনি দীর্ঘ সময় ধরে বাইকে বসে থাকতে পারবেন । এক্ষেত্রে বাইকের হালকা ওজনও আপনাকে সাহায্য করবে । উচ্চ গতিতেও ভালো নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার কারনে আপনি বুঝতেও পারবেন না আপনি কত গতিতে যাচ্ছেন । সামনে ও পিছনে ডিস্ক সেটআপ থাকার কারনে এর ব্রেকিং পারফর্মেন্স অনেক বেড়ে গেছে ।
সমাপ্তিঃ
হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর প্রায় প্রত্যেক ক্ষেত্রেই সিবিআর ২৫০আর হতে একটি ভিন্ন মোটরসাইকেল । এর ধার কিছুটা বাজে এবং এর দামও কিছুটা বেশী ( এর প্রতিদ্বন্দ্বী ইয়ামাহা আর১৫ এর সাথে তুলনা করে )। এটা কিছুটা ব্যয়বহুল হতে পারে কিন্তু উচ্চ গতিতে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা সত্যি অতুলনীয় ।
নিন্মে হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর এর সকল বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে তুলে ধরা হলঃ
*ইঞ্জিনঃ ১৪৯.৪ সিসি, লিকুইড কুল্ড, ৪- ভালভ বিশিষ্ট, ডিওএইচসি, ৪- স্ট্রোক
*ক্ষমতাঃ ১৭.৫৭ বিএইচপি @ ১০৫০০ আরপিএম
*টর্কঃ ১২.৬৬ এনএম @ ৮৫০০ আরপিএম
*ট্রান্সমিশনঃ ৬-স্পিড ম্যানুয়াল
*সর্বোচ্চ গতিঃ ১৩৪ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায়
*০-১০০ কিলোমিটার হতে সময় লাগেঃ ১১.৯৫ সেকেন্ড
*জ্বালানী দক্ষতাঃ প্রতি লিটারে ৩৫-৪০ কিলোমিটার
*সাসপেনসনঃ টেলিস্কপিক ফর্ক (সামনে), মনোশক ( পিছনে )
*টায়ারঃ ১০০/৮০-১৭ (সামনে), ১৩০/৭০-১৭ (পিছনে)
*ব্রেকঃ ২৭৬ মিলিমিটার ডিস্ক ব্রেক (সামনে), ২২০ মিলিমিটার ডিস্ক ব্রেক (পিছনে)
*ইগনিসনঃ ডিজিটাল ইসিও বেইসড
*ব্যাটারিঃ ১২ ভোল্ট – ৬ অ্যাম্পিয়ার
*হেডলাইটঃ ১২ ভি ৬০/৫৫ ডাব্লিউ এইচ ৪
হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর এর আকারঃ
*দৈর্ঘ্য X প্রস্থ X উচ্চতাঃ ২০০০ X ৮২৫ X ১১২০ মিলিমিটার
*চাকার দৈর্ঘ্যঃ ১৩০৫ মিলিমিটার
*গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্সঃ ১৯০ মিলিমিটার
*জ্বালানী ট্যাংকের ধারণ ক্ষমতাঃ ১৩ লিটার
*মোট ওজনঃ ১৩৮ কেজি
আশা করি হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর খুব দ্রুত বাংলাদেশের বাজারে পাওয়া যাবে ।