Honda CB150R Streetfire ১২,০০০ কিলোমিটার টেস্ট রাইড রিভিউ
This page was last updated on 18-Aug-2024 11:07am , By Shuvo Bangla
সারাজীবন ধরেই আমি চাইতাম এমন কিছু একটার মালিক হতে যেটা হবে দ্রুতগতিসম্পন্ন এবং একই সাথে আরামদায়ক। গতবছর আমি Yamaha FZ150i টেস্ট করেছি যেটা আমাকে অভিভূত করেছে এবং একইসাথে আমাকে নতুন করে শিখিয়েছে যে দ্রুতগতি ঠিক কতটা অসাধারন হতে পারে!
এর কিছুদিন পরেই বাংলাদেশে আসে বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ১৫০ সিসি নেকেড স্পোর্টস বাইক, Honda CB150R Streetfire. এখন পর্যন্ত ১২,০০০ কিলোমিটারেরও বেশি টেস্ট রাইড করার পরে আজ আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি, Honda CB150R Streetfire টীম বাইকবিডি টেস্ট রাইড রিভিউ নিয়ে।
Honda CB150R Streetfire ১২,০০০ কিলোমিটার টেস্ট রাইড রিভিউ
আমি সর্বদাই নেকেড স্পোর্টস বাইকের প্রতি আকৃষ্ট হতাম, এবং হোন্ডা স্ট্রীটফায়ার আমার পছন্দের শীর্ষে ছিলো। ২০১৫ এর অক্টোবরের দিকে হোন্ডা বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেড আমাদেরকে জানায় যে তারা ২০১৬ এর ফেব্রুয়ারী নাগাদ বাংলাদেশে Honda CB150R Streetfire লঞ্চ করবে।
Also Read: Honda Museum Showroom in Beanibazar, Sylhet, Bangladesh
তাই, আমি বাইকটির অপেক্ষায় টাকা জমাতে থাকি। তবে, দুঃখের বিষয় হচ্ছে, BHL পরবর্তীতে আমাদেরকে জানায় যে তারা হোন্ডা স্ট্রীটফায়ার বাংলাদেশে আনবে না। এবং আমার বাজেট ৩.৫ লাখ এর মতো হওয়ায় আমি একটি সিবিআর১৫০আর কিনতে পারছিলাম না, তাই আমার হাতে একজন আমদানীকারক এর থেকে Honda CB150R Streetfire কেনা ব্যতিত অন্য কোন উপায় ছিলো না।
Honda Streetfire হচ্ছে Honda CBR150R এর একটি নেকেড ভার্শন। স্ট্রীটফায়ার সর্বপ্রথম ২০১২ সালে লঞ্চ করা হয়েছিলো, এবং পরবর্তীতে ২০১৫ তে বাইকটির আউটলুক রিডিজাইন করা হয়। এছাড়াও এর ইঞ্জিন এবং বেশিরভাগ পার্টসই পরিবর্তন করা হয়।
বাইকটির ইঞ্জিন হচ্ছে সিঙ্গেল সিলিন্ডার DOHC ওয়াটার কুলড ইঞ্জিন।এর ইঞ্জিনটি Honda CBR150R এর ইঞ্জিনের মতোই, কেবলমাত্র সামান্য ডিটিউন করা। বাইকটির ইঞ্জিন ১৬.৭ বিএইচপি এবং ১৩.৮ এনএম টর্ক উতপন্ন করে। বাইকটির ৬-স্পীড গিয়ারবক্স অসাধারনভাবে তৈরী করা হয়েছে এবং এটা খুবই স্মুথ। বাইকটির ইঞ্জিন প্রচুর সেন্সর দিয়ে কন্ট্রোল হয় এবং সকল সেন্সর বাইকটির সেন্টার কমান্ডে রিপোর্ট করে, যেটা PGM-Fi নামে পরিচিত।
বাইকটির ওজন ১৩৬ কিলোগ্রাম এবং এতে অপশনাল হিসেবে কিকস্টার্ট দেয়া হয়েছে। তবে, বাইকটিতে অনেক কিছুই মিসিং রয়েছে, যেমনঃ
- কোন পাস লাইট সুইচ নেই
- কোন ইঞ্জিন কিল সুইচ নেই
- স্পীডোমিটারে কোন গিয়ার ইন্ডিকেটর নেই
HondaCB150R Streetfire এ আরো অনেক ফিচার রয়েছেঃ
- নতুন এলইডি লাইটিং সিস্টেম
- অটো ফ্যান সমৃদ্ধ লিকুইড কুলড ইঞ্জিন
- প্রশস্ত টিউবলেস টায়ার এবং উভয় চাকাতেই Nissin ব্রেক রয়েছে
- প্রো-লিংক রিয়ার সাসপেনশন
- Tuss ফ্রেম
- রিয়ার গ্র্যাব রেইল
- এলুমিনিয়াম ক্যাপসমৃদ্ধ আধুনিক এক্সহস্ট
- ১২ লিটার ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন মাসকুলার ফুয়েল ট্যাংক
- অটো সিকিউর কী শাটার
- বাইকটিতে এঙ্গেল সেন্সর লাগানো রয়েছে। যদি বাইকটি ৬০ ডিগ্রী এর বেশি কাত হয় তবে বাইকটির ইঞ্জিন অটোমেটিক শাট ডাউন হয়ে যাবে
- ফুইচারিস্টিক ডিজিটাল মিটার প্যানেল
- পাইলিয়নের জন্য স্পোর্টি গ্র্যাব রেইল
- স্পোর্টি আন্ডার কাউয়েল, এগ্রেসিভ ভাইজর, লাল রঙ এর রিম এবং রেডিয়েটর গার্ড (স্পেশাল এডিশন এর জন্য)
ফিচার এর দিক দিয়ে এটি নিজের প্রতিদ্বন্দীদের থেকে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে, এছাড়াও বাইকটির বিল্ড কোয়ালিটি ইয়ামাহা ভিক্সিয়ন এর মতো অসাধারন নয়। বাইকটির সবচাইতে খারাপ দিক হচ্ছে এর চেইন স্প্রকেট সেট, এছাড়াও এর এয়ার ফিল্টার খুব দ্রুতই নোংরা হয়ে যায়।
Honda CB150R Streetfire Review By Team BikeBD
বাইকটির ইঞ্জিন সম্পূর্ন নতুন ডিজাইনের এবং এর ফলে এতেও বেশকিছু সমসয়া রয়েছে। আমি ১০/১২টি মোটরসাইকেল দেখেছি যেগুলোতে টাইমিং চেইন এর সমস্যা রয়েছে, এবং এক্ষেত্রে বাইকের ইঞ্জিন ঠান্ডা থাকা অবস্থায় খুবই জোরে একটি নক নক শব্দ করে। তবে এখন পর্যন্ত আমি আমার বাইক নিয়ে কোনপ্রকার সমস্যায় পড়িনি এবং আমার বাইকের পারফর্মেন্স বা মাইলেজে কোনপ্রকার পার্থক্য আসেনি।
Honda CB150R Streetfire এর কালার কোয়ালিটি ভালো, তবে সেরা নয়। কালার কোয়ালিটি আরো একটু ভালো হবা উচিত ছিলো। বাইকটির রেডিয়েটর সম্পূর্ন উম্মুক্ত এবং যদি ঠিকমতো যত্ন না নেয়া হয়, তবে এটা খুব সহজেই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বাইকটির নতুন Tuss ফ্রেম এলুমিনিয়াম দিয়ে তৈরী করা হয়েছে, যা বাইককে একই সাথে স্ট্রেংথ এবং ফ্লেক্সিবিলিটি প্রদান করে। এবং একই সাথে যেকোন ধরনের রাস্তা ও স্পীডে বাইককে কন্ট্রোল করায় প্রচন্ড সমর্থন দেয়।
বাইকটির ব্যালেন্স আসলেই অনেক ভালো। Honda CB150R Streetfire এর পাশাপাশি আমি Yamaha M-Slaz এবং Honda CBR150R রাইড দেবার সুযোগ পেয়েছিলাম এবং আমার মতে স্ট্রীটফায়ার নিজের সেগমেন্টের অন্যতম সেরা ব্রেকিং সিস্টে সমৃদ্ধ একটি বাইক। উভয় টায়ারই উচ্চগতিতে কর্নারিং এর সময় অসাধারন গ্রিপ প্রদান করে। এবং , বাইকটতে সেট করা আন্তর্জাতিকমানের Nissin ব্রেকদুটোও অসাধারন পারফর্ম করে।
Honda CB150R Streetfire –রাইডিং এক্সপেরিয়েন্স
এই বাইকটির সাথে ১২,০০০ কিলোমিটার রাইডিং ছিলো আমার জন্য অন্যতম সেরা রাইডিং এক্সপেরিয়েন্স। বাইকটির যেসকল বিষয় আমার কাছে ভালো লেগেছে তা হলোঃ
- ইঞ্জিনের গর্জন অসাধারন; বাইকটি ০-১০০ গতি তোলার সময় খুবই অসাধারনভাবে পারফর্ম করে।
- বাইকটির ইঞ্জিন কোনপ্রকার ভাইব্রেশন করে না।
- হোন্ডা খুব কম সময়েই তাদের বাইকে এগ্রেসিভ ডিজাইন ব্যবহার করে, এবং Honda Streetfire এদিক দিয়ে অসাধারন আক্রমনাত্মক।
- বাইকটির টার্নিং রেডিয়াস খুবই ভালো, শহরের ঘন ট্রাফিক জ্যামের মধ্যেও কোনপ্রকার সমস্যাইয় মুখোমুহি হতে হয় না।
- রাইডার এবং পাইলিয়ন – উভয়ের সিটই অত্যান্ত আরামদায়ক।
- রাইডিং পজিশন সম্পূর্ন কমিউটিং স্টাইল এর, লং রাইডে কোনপ্রকার সমস্যার সৃষ্টি করে না।
- বাইকটির ব্রেক এবং টায়ার ভালো পারফর্ম করে, এবং হার্ড ব্রেকিং এর ক্ষেত্রে টায়ার এবং ব্রেক এর পারফর্মেন্স অসাধারনভাবে ম্যাচ করে।
- রিয়ার ভিউ মিরর হাইওয়ে এর জন্য ভালো নয়।
- এলইডি হেডলাইট হওয়া সত্ত্বেও বাইকটির হেডলাইট ভালো কাজ করে।
- ইন্ডিকেটরগুলো রাবার দিয়ে সংযুক্ত নয়, কাজেই যেকোন প্রকারের আঘাতে তারা বেকে যাবার বদলে সরাসরি ভেঙে যায়।
- গিয়ার রেশিও ছোট হবার ফলে শহরে বাইকটি ভালো পারফর্ম করে।
- যেকোন বয়সের রাইডারের জন্যই এটা একটি অসাধারন ফ্যামিলি বাইক।
- শহর এবং হাইওয়ে – উভয় ক্ষেত্রেই খুবই স্মুথলি পারফর্ম করে।
- অফ-রোডের ক্ষেত্রেও বাইকটির সাসপেনশন ভালো কাজে দেয়।
- ভেজা রাস্তায় ভালো পারফর্ম করলেও বাইকটির টায়ারগুলো অফরোডের জন্য উপযোগী নয়।
- এই দামের একটি আইকে পাস লাইট সুইচ এবং ইঞ্জিন কিল সুইচ না থাকা আসলেই হতাশাজনক।
- স্পীডোমিটারে একটি গিয়ার ইন্ডিকেটর থাকা প্রয়োজন ছিলো।
- রেডিয়েটরের সামনে কোন গার্ড দেয়া নেই যা সহজেই রেডিয়েটরের ক্ষতির কারন হতে পারে।
- ইনভার্স গিয়ারবক্স ।
Yamaha M-Slaz এর দাম বিবেচনা করলে হোন্ডা স্ট্রীটফায়ার নিঃসন্দেহে বেটার এবং আরো বেশি বাস্তবসম্মত বাইক। যেকেউ চাইলেই বাইকটিকে একটি কমফোর্টেবল কমিউটার হিসেবে ব্যবহার করতে পারে, আবার প্রয়োজন হলে বাইকটি যেকোন রাস্তাইয় উড়ে চলতে পারে।
আমার হোন্ডা স্ট্রীটফায়ারটি আমার বাবাও চালিয়েছেন, এবং তার মতে অনেক বছর পরে তিনি এরকম কমফোর্টেবল একটি বাইক রাইড করলেন। ইমপোর্টার এর থেকে বাইক কেনার কিছু নেতিবাচক দিক রয়েছে, যেমন, স্পেয়ার পার্টস না পাওয়া, কোনপ্রকার ইঞ্জিন ওয়ারেন্টি না পাওয়া, এবং উপযুক্ত সার্ভিসিং না পাওয়া। তবে, যখনই আপনি থ্রটল ঘোরাবেন, তখন আপনি এসকল সমস্যার কথা ভুকে যাবেন এবং বাইকটি রাস্তায় আগুন ধরিয়ে দেবে।
Honda CB150R Streetfire – পারফর্মেন্স
টপ স্পীড: ১৪২ কিমি/ঘন্টা মাইলেজ (সিটি): ৪০-৪২ কিমি/লিটার মাইলেজ (হাইওয়ে): ৪৬ কিমি/লিটার
Honda CB150R Streetfire হচ্ছে এমন একটি মেশিন যাকে সরাসরি কল্পনা থেকে বাস্তবে রূপ দেয়া হয়েছে, ছোটবেলা থেকেই আমার ইচ্ছে ছিলো এমন একটা কিছুর মালিক হওয়া যেটা কখনো থাকবে পোষা প্রানীর মতো শান্ত, আবার কখনো রূপ নেবে হিংস্র সিংহে। আশা করি হোন্ডা স্ট্রীটফায়ার এর ১২,০০০ কিলোমিটার টীম বাইকবিডি টেস্ট রাইড রিভিউ সকলকে বাইকটি সম্পর্কে আরো বেশি জানতে সহায়তা করবে।