Honda CB Hornet 160R CBS (SE) ৩৩০০ কিলোমিটার রাইড - Azad
This page was last updated on 25-Jul-2024 04:56pm , By Raihan Opu Bangla
আমি আজাদ বিন রাশিদ শুভ। ঢাকার এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এ পড়ার পাশাপাশি নিজেই ওয়েডিং ফটোগ্রাফি করি। কাজে সুবিধার জন্যে বাইকের দিকে মনোযোগ দেওয়া হয় আমার। ধানমন্ডিতেই থাকি, তবে রাত বিরাতে ইভেন্ট এর কাজ শেষ করে বাসার ফেরার জন্যে এর চেয়ে ভালো সমাধান দরকার ছিল।
বর্তমানে আমি Honda CB Hornet 160R CBS Special Editon বাইকটি রাইড করছি। বাইকটি নিয়ে আমার ভাল খারাপ অভিজ্ঞতা আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করব।
ছোটবেলায় বাবা যখন অফিসে যেতেন Honda CG 125 বাইকটা নিয়ে, আমি সবসময় বসে থাকতাম বাবা কখন বাইক নিয়ে বাসায় ফিরবে। বাইকের শব্দেই বুঝতাম যে হ্যা আমার বাবাই আসছে। দৌড়ে বের হয়ে যেতাম প্রতিদিন বাইক দেখার জন্যে, এবং বাইকের পিছনে ছুট লাগাতাম। সেখান থেকেই কিভাবে যেনো বাইকের প্রতি ভালোবাসা কাজ করা শুরু করলো। সেই থেকে শুরু।
যখন বাইক কেনার কথা ভাবতে থাকলাম তখন সব কিছু হিসেব করে নিয়েই ফেললাম Honda CB Hornet 160R CBS Special Editon বাইক। তো আমার জীবনে এটাই নিজের নামে প্রথম বাইক। বিস্তারিত এখনই বলবো আপনাদের কেনো নিলাম এই বাইকটি।
প্রথমত আমি খুজছিলাম যে কোন বাইকটা একটু ভালো মাইলেজ দিবে এবং সেই সাথে লো মেইন্টেইনেন্স কস্ট ও হবে। আবার অন্য দিকে একটু পাওয়ারফুল বাইক ও দরকার আমার। আবার বাবা ও সাপোর্ট করছিলো হোন্ডার রিলায়েবিলিটির জন্যে। বাজেট মধ্যবিত্ত পরিবারের ক্ষেত্রে একটু ম্যাটার করে।
এর চেয়ে ভালো কোনো অপশন এভেইলেভেল খুজে পাইনি আমি। এরপরও বন্ধুদের কাছে পরামর্শ আর ইউটিউবে বিস্তর গবেষনার পর একদিন মোহাম্মদপুরের Grey MC থেকে লাল রঙ এর হর্নেট বাইকটি ক্রয় করি। স্পেশাল এডিশন হবার কারনে দাম পরেছিলো ১৮৯৯০০/= টাকা ।
তো এখনো অবধি আমার Honda CB Hornet 160R CBS Special Editon বাইকটি ৩৩০০ কিলোমিটার রাইড করা হয়েছে। ব্রেক ইন পিরিয়ড ২০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত মেইন্টইন করেছি। তো এর মধ্যে বাইকে শুধু মাত্র ইঞ্জিন অয়েল ছাড়া আর কিছুই পরিবর্তন করা হয়নি। প্রথম ৩৫০ কিলোমিটার এরপর একটা, পরে ৫০০ কিলোমিটার ২য় , এবং পরের ৬০০ কিলোমিটারে এবং পরে ৭০০ কিলোমিটারে ইঞ্জিন অয়েল চেঞ্জ করেছি।
প্রাথমিক দিক থেকেই মাইলেজ আমি বেশ ভালো পাচ্ছি। হাইওয়েতে ৫৫ কিলোমিটার প্রতি লিটার এভারেজ মাইলেজ পেয়েছি , সিটিতে ৪৫ কিলোমিটার প্রতি লিটার এভারেজ মাইলেজ পেয়েছি। আরপিএম (৪-৫ হাজার) ২৫০০ কিলোমিটার পরও মাইলেজ সেইম পাচ্ছি।
বাইক চালানোর সময় আমাকে সবচেয়ে যেই বিষয়টা মন্ত্রমুগ্ধ করে তা হলো এর কন্ট্রোলিং। আমি একটু ধীরে সুস্থে বাইক রাইড করি। ৭০/৮০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা এভারেজ চালালে বাইক খুবই স্ট্যাবল থাকে। তবে রাইডার সিট এর চেয়ে এর পিলিয়ন সিট বেশি কম্ফোর্টেবল মনে হয়েছে আমার একান্ত মতামত । বাইকের পেইন্ট আর প্লাস্টিক কোয়ালিটি নিয়ে আমি সন্তষ্ট। অনেকেই বলে বিল্ড কোয়ালিটি খারাপ।
আমার কাছে এর প্লাস্টিক কোয়ালিটি এই সেগমেন্ট এর অন্যসব বাইকের মতোই লেগেছে। ধোয়ার পর আমি শুধুমাত্র পলিশ আর ড্যাশবোর্ড ওয়্যাক্স স্প্রে ব্যবহার করি। সমস্যা বলতে এখন পর্যন্ত আমি বাইকের ট্যাপিট এ হাল্কা শব্দ চলে আসাটাকেই পেয়েছি। যদিও এ সমস্যা ৬০০/৭০০ কিলোমিটারে পেয়েছি। সার্ভিস সেন্টার থেকে বলেছিলো শব্দ খুব বেশি না নিয়মিত স্মুথলি রাইড করেন। ৩০০০ কিলমিটার পর এডজাস্ট করে দিবো।
কিন্তু ধীরে ধীরে মনে হচ্ছে শব্দটা একদম নাই হয়ে যাচ্ছে ২৫০০ কিলোমিটার পর থেকে। এখন অবধি HONDA mineral 10w30 ইঞ্জিন অয়েল ইউজ করতেছি। যদিও আমি সর্বোচ্চ স্পিড টেস্ট করিনি আর করার তেমন ইচ্ছা ও নেই। তবে হাইওয়ে রাইডে ইজিলি ১০০/১০৫ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা টাচ করে। তবে পিলিয়ন নিয়ে একটু সময় সাপেক্ষ ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় ।
বাইকের পাচটি ভালো দিকঃ
- ব্রেকিং সিস্টেম - আমি এর আগে Yamaha FZ V1, TVS Apache RTR 160 4V, Bajaj Pulsar 150 twin disc বেশ কিছুদিন ব্যবহার করেছি। কিন্তু এই সিবিএস এ যতোখানি সন্তষ্ট, আর কারো ব্রেকিং সিটেম এই এতো সন্তোষ্ট না। ABS এর অভাব কোন রকমেই ফিল করিনি। Yamaha FZ কিছু ক্ষেত্রে FZ V1 এর চেয়েও ভালো লেগেছে আমার।
- সিটিং পজিশন - এক কথায় অসাধারন, লং রাইডের জন্যে অসাধারন জিনিস।
- ইঞ্জিন - যথেষ্ট স্মুথ একটা ইঞ্জিন, কিন্তু হাই রেভ করলে একটা বিস্ট এ পরিনত হয়
- মেইন্টেইনেস আর মাইলেজ
- টায়ার সাইজ ও আউটলুক এবং হ্যাজার্ড লাইট
বাইকটির ৫টি খারাপ দিকঃ
- ও-রিং চেইন দেবার পরও কেমন জানি একটু বেশিই মেইন্টেইন করা লাগে চেইন। একটু ময়লা লাগলেই শব্দ করতে শুরু করে
- যদিও LED হেডল্যাম্প কিন্তু আগের আলো অল্পের ইস্যু এখনও যায়নি। হাইওয়েতে যা খুব বিরক্তির কারন হয়, গ্রামের রাস্তায় বেশ আরামেই চলে যায়। আর চেইঞ্জ ও করা যাবেনা বাল্ব এবার।
- ইঞ্জিনে ট্যাপিড এ সাউন্ড আসাটা আমার ভালো লাগেনি। যদিও ইঞ্জিন অয়েল ও ভালো মানের অকটেন ব্যবহার করেছি ।
- রাইডিং পজিশন ও্যান অফ দ্যা বেস্ট কিন্তু সিটটা কনফোর্টেবল না
- রেডি পিকাপ নেই হাইওয়েতে ইমারজেন্সী ওভারটেক করা একটু কষ্টসাধ্য। যদিও আমার রেডি পিকাপ দরকার পরেনা বললেই চলে ।
বাইক নিয়ে লং ট্যুর দেয়া খুবই আরামদায়ক। ঢাকা থেকে পটুখায়াখালী একটানা রাইডে শুধু মাঝপথে ২ বার ব্রেক দিয়েছি, কিন্তু কোন রকম আনিজি ফিল করিনি। প্রচুর কনফিডেন্স দিয়েছে পুরো সময়। বাইক নিয়ে আমার চুড়ান্ত মতামত হচ্ছে, যারা ঠান্ডা মাথায় রাইড করতে পছন্দ করেন এবং একটা কম্ফর্টেবল বাইক চান ভালো মাইলেজ সহ, সাথে রিলায়েবল এবং বাজেট ২ লাখের নিচে ।
তাদের জন্যে এর চেয়ে বেস্ট চয়েজ অন্য কিছু হবে বলে আমি মনে করিনা। এর চেয়ে ভালো ব্রেক এই বাজেটে কেউ প্রোভাইড করবেনা আপনাকে। সবাই সেফলিও রাইড করবেন এবং অবশ্যই হেলমেট পরে রাইড করবেন। চলুন দেখে আসি Honda all bike price in bangladesh এর সর্ম্পকে বিস্তারিত। ধন্যবাদ সবাইকে।
লিখেছেনঃ আজাদ বিন রাশিদ শুভ
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।