Honda CB Hornet 160R CBS ৩০০০ কিলোমিটার রাইড - নাহিদ রায়হান
This page was last updated on 28-Jul-2024 06:33am , By Raihan Opu Bangla
আমি মোঃ নাহিদ রায়হান নিশাত। হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের অনার্স ২য় বর্ষের একজন শিক্ষার্থী। আমার দেশের বাড়ি নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া থানায় অবস্থিত। আজ আমি আমার Honda CB Hornet 160R CBS বাইকটি নিয়ে কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো ।
আমার বাবা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি অবসরে আসার পর একটা ছোটখাট ব্যবসা শুরু করে। বাবার দোকান বাসা থেকে দূরে হওয়ায় তার একটি বাইকের খুব বেশি প্রয়োজন ছিল। তখন আমি ক্লাস ৮ এ পড়ি। একদিন সন্ধ্যায় হঠাৎ বাবা কল করে বলল বাইক কিনেছে। বাইকটি ছিল FREEDOM 100। আমি অনেক খুশি হলাম দেখে। তখন আমি ভালো করে বাইক চালাইতে পারি না।
আব্বুকে বললাম বাইক চালানো শিখাতে, তিনি আমাকে সামনে বসিয়ে পিছনে তিনি উঠে বাড়ির পাশে একটা মাঠ এ এক চক্কর দিলেন। তারপর আমার জানার আগ্রহ এতো ছিলো যে, তাকে আর পিছনে বসতে হয়নি। পরের বার আমি নিজেই চালিয়ে শিখে ফেললাম। এই বাইকটাই ছিল আমার জীবনের প্রথম বাইক। বাইক হলো এমন একটা যানবাহন যেটা আমাকে কমফোর্ট দেয়, আর অন্য রকম একটা অনুভুতি দেয়।
যা অনেক বড় এবং দামী গাড়িতেও পাওয়া যায় না। খোলামেলা আবহাওয়া, প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্যকে অনুভব করা যায়। মনের তৃপ্তি প্রকাশ পায়। এটা আমার একটা বড় রকমের শখ।
প্রায় এক বছর আগে ফেইসবুকে দেখলাম এক ছেলের বাবা মা তার ছেলেকে জন্মদিনে বাইক উপহার দিচ্ছে। আমার মনে হলো আব্বু যদি আমার জন্মদিনে একটা বাইক উপহার দিতো। পরে আমি তখনি আম্মুকে কল করে বলেছিলাম আমাকে যদি জন্মদিনে একটা বাইক উপহার দিতে। আম্মু আমাকে বলল ধৈর্য ধর ইনশা আল্লাহ দিব। আমি সেই অপেক্ষায় রইলাম । মাঝে মধ্যে আমার বন্ধুরা যখন বাইক নিয়ে আসত।
আমার খারাপ লাগতো,আর আমি আম্মুকে কল করতাম। আম্মু আমাকে অনেক স্বান্তনা দিত, আর বলত একটু অপেক্ষা করো। এভাবে করেই আব্বু জানতে পারলো যে আমি বাইক কিনতে চেয়েছি।
২০২০ এর ১৭ এ মার্চ আমি বাড়িতে চলে এলাম করোনার জন্যে, এসে বাইক এর কথা বললাম। আব্বু আমার কথাটা বুঝতে পারলো। অনেক রিভিউ দেখলাম, তার মধ্যে আমার বাজেট ছিলো ২০,০০০০ এর মদ্ধে। আমার পছন্দ হলো Suzuki Gixxer SF Fi ভার্সন। আমি মন স্থির করলাম এটাই কিনব। এটা নিয়েই স্বপ্ন দেখতে লাগলাম। ১৫/৬/২০২ রাত এ আব্বু আমাকে ২৩০০০০ টাকা দিয়ে বললো বাইক নিয়ে আসতে ।
আমি অবাক হয়ে কিছুক্ষন ভাবলাম পরদিন সকালে কল করলাম শো-রুমে,বললো কোথাও Suzuki Gixxer SF Fi বাইকটি নেই। আব্বু আমাকে ঢাকায় যাইতে দিতে চাইতেছিলো না। বলেছিলো নেত্রকোনা বা ময়মনসিংহ থেকে নিয়ে নিতে। কিন্তু কোথাও ছিলো না। আমি ময়মনসিংহ এর উদ্দ্যেশ্যে রওনা হলাম। এসে বাইক পেলাম না। শোরুম একদম ফাকা অনেক বললাম ঢাকা যেতে দিলো না। তারপর Honda এর শোরুমে গেলাম। একটা Honda CB Hornet 160R CBS বাইক ছিলো সেটিই নিয়ে নিলাম।
Honda CB Hornet 160R CBS বাইকটি পছন্দ করার কয়েকটি কারন ছিল বাইকটির টায়ার অনেক চওড়া ছিলো। যেটায় আমি কর্ণারিং করে মজা পাব। দ্বিতীয়ত, বাইকটির লুকস ছিল সব বয়সের জন্য পার্ফেক্ট, যেহেতু বাইকটি বাবাও চালাবে মাঝে মাঝে। তৃতীয়ত, বাইকটি ছিলো অনেক নামকরা ব্র্যান্ড এর। অনেক বিশ্বস্ত ব্র্যান্ড এর। তখন Honda CB Hornet 160R CBS বাইকটির দাম নিয়েছিল ১লক্ষ ৯০হাজার টাকা।
মদিনা এন্টারপ্রাইজ, পাঠগুদাম, ময়মনসিংহ থেকে বাইকটি ক্রয় করেছিলাম। বাইকটি শো-রুম থেকে বের করার পর আমি প্রথম বাইকে বসি, আমি পেট্রোল নিয়ে একটু সামান্য রাইড করি। আমার অনেক খুশি লাগছিল এই ভেবে যে এটা আমার বাইক। বাইকটি এখন থেকে সব সময় আমি চালাবো।
বাইকটি ফোর স্ট্রোক ইঞ্জিনের ১৬০ সিসি হওয়াতে আমার অনেক ভালো লাগে। বাইকের টায়ার গুলো ১০০/৮০, আর ১৪০/৭০ হওয়াতে এটাই আমাকে বেশি অনুপ্রানিত করে। এর অডোমিটার আমার অনেক ভালো লাগে। যেটা সম্পুর্ন ডিজিটাল। আমার আরো ভালো লাগে এটার সাস্পেনশন। অনেক কম্ফোর্ট । এটার হেড লাইট এবং টেল লাইটের ডিজাইন আমাকে মুগ্ধ করে।
সিটং পজিশন ভালো থাকায় আমায় লং জার্নিতে কোন প্রব্লেম হয় না। যেটা আমাকে সবার আগে বলতে হয় তা হলো, এটার ব্রেকিংটা অসাধারন।যেহেতু আমার বাইকটি অফিসিয়ালি Honda Showroom থেকে নেয়া হয়েছে সেই ক্ষেত্রে বাইকটিতে ৪টি ফ্রি সার্ভিস দেয়া হয়েছে, এবং ২টি পেইড সার্ভিস দেয়া হয়েছে। যেখানে আমি আমার বাইকটি কেনার ১মাসের মাথায় ১০০০ কিলোতে ১টি সার্ভিস করিয়েছি। সেখানে আমার তেমন কোন কিছু করতে হয়নি। শুধু প্লাগ পরিস্কার, এয়ার ফিল্টার পরিস্কার, টায়ার প্রেসার চেক, এগুলো দেখেছে।
আমি ২৫০০ কিলোমিটার এর আগে মাইলেজ পেয়েছি ৪০ কিলোমিটার এর কিছু বেশি, আর ২৫০০ এর পরে প্রতি কিলোমিটারে মাইলেজ পাচ্ছি ৪৫ কিলোমিটার এর কিছু বেশি। বাইকটি আমি এখন পর্যন্ত ৩০০০ কিলোমিটার চালিয়েছি । এর মধ্যে বাইকে আমি টোটাল ৬ টা ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করেছি। আমি প্রথম ২৫০০ কিলো পর্যন্ত rpm ৪ এবং গতি ৪০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা এর মধ্যে রেখে রাইড করেছি । ২৫০০ কিলোমিটার এরপরে বাইকটি দিয়ে আমার তোলা সর্বোচ্চ গতি ৮৩ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা।
বাইকটির কিছু ভালো দিক -
- বাইকটি প্রিমিয়াম কমিউটার বাইক
- পাওয়ারফুল ১৬০ সিসি ইঞ্জিন
- CBS ব্রেকিং সিস্টেম
- ভালো সাসপেনশন এবং টায়ার
- ডিজিটাল ওডো মিটার
- কম্ফোর্ট সিটিং পজিশন
- LED লাইট
বাইকটির কিছু খারাপ দিক -
- হেডলাইট এর আলো হাইওয়ের তুলনায় কম
- ইঞ্জিন পাওয়ার খুব দ্রুত পাওয়া যায় না
- ওভারটেকিং এ সমস্যা
- ইঞ্জিন হিট খুব দ্রুত হয়
- বিল্ড কোয়ালিটি খুব ভালো মানের না
বাইকটি নিয়ে এখনো তেমন দুরে কোথাও যাইনি। কিন্তু নেত্রকোনা থেকে কাপ্তাই লেক এ ৪৫০ কিলোমিটারের লম্বা ভ্রমনের ইচ্ছে রয়েছে। আল্লাহ তৌফিক দিলে যেতে চাই । বাইকটি নিয়ে আমি অনেক ভালো অনুভব করছি। শখের জিনিস ১টাকা হলেও সবার কাছে দামি। আমি মনে করি নিজেরটা নিজের মতো করে রাখা উচিত, যেন অনেক বছর থাকে। অবশ্যই বলবো হেলমেট ব্যবহারের জন্যে, নিরাপত্তা সবার আগে। চলুন দেখে আসি All Honda bike price in Bangladesh এর সর্ম্পকে বিস্তারিত। ধন্যবাদ।
লিখেছেনঃ নাহিদ রায়হান
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে