Honda CB Hornet 160R CBS ১৮,০০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ - রুহুল কুদ্দুস
This page was last updated on 31-Jul-2024 11:36am , By Ashik Mahmud Bangla
আমি রুহুল কুদ্দুস। একজন বেসরকারী চাকুরীজীবি। বর্তমানে Clarke Energy Bangladesh Ltd কোম্পানিতে সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কর্মরত আছি। আজ আমি আপনাদের সাথে আমার Honda CB Hornet 160R CBS বাইকটি নিয়ে কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করব।
ছোট বেলা থেকেই সাইকেলের প্রতি খুব বেশী টান ছিল। আব্বা, ভাইয়ারা স্কুল কলেজ, বাজার থেকে ফিরলেই আমি সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়তাম। ক্লাস নাইনে পড়া অবস্থায় অনেক বার সাইকেল নিয়ে সাতক্ষীরা থেকে খুলনা যাতাওয়াত করেছি। অনেক দিন যাবত বাইক রাইড করি। কখনো ভাইয়ার বাইক, কখনো অফিসের বাইক। অফিসের বাইক নিয়ে কয়েকবার ঢাকা-সাতক্ষীরা, ঢাকা-শ্রীমঙ্গল রাইড করেছি ২০১৪ সালের দিকে।
যখন আমি ক্লাস সিক্স এ পড়ি, বড় ভাই তার বাইক Bajaj Platina বাড়ির উঠানে রেখে বাহিরে কোথায় গিয়েছেন। চাবি কোথায় রাখেন, আগে থেকে আমার আমার জানা ছিল। আমি আস্তে করে বাইক ঠেলে বাড়ির বাহিরে নিয়ে স্টার্ট করি। কারন মা বুঝতে পারলে চালাতে দিবে না। এরপর আমি ৬-৭ কিলোমিটার বাইক রাইড করে ফিরে এসে যায়গামত রেখে দিই। যতটুকু যা শিখেছি সেটা বড় ভাইয়ের পিছনে বসেই।
আমি ২০১৯ সালের জুন মাসের ১৪ তারিখে উত্তরার মৌসুমী মোটরস থেকে Honda CB Hornet 160R CBS ভার্সন গ্রে কালারের বাইক কিনি। তখন আমি Atlas Energy Ltd এ জব করি। আমি গ্রাজুয়েশন কম্পিলিট করতে পারি নাই অফিসের কাজের চাপে। ভাল জব পেতে হলেও গ্রাজুয়েশন দরকার। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে একটা বাইক কেনার খুব আগ্রহ অনুভব করলাম। পরিকল্পনা অনুযায়ী বৃহঃস্পতিবার ব্যাংক থেকে টাকা উঠিয়ে রাখলাম কারন পর দিন বাইক কিনবো। সকাল যেন হচ্ছে না। সময় পার হচ্ছে না। সকালে আমি আর হাসিব ভাই উত্তরায় মৌসুমী মোটরস এ গেলাম। মডেল, কালার সব আগে থেকেই পছন্দ করা ছিল। আমি CB Hornet কেনার আগে টেস্ট রাইড দেবার সুযোগ হয়নি কখনো। বাইক কেনার জন্য সমস্থ পেপারস কম্পিলিট করা হলো। টাকা পেইড করে দিলাম।
বাইক রেডি করে দিতে কিছুটা সময় নিলো। শো রুম থেকে বাইকের চাবি যখন আমার হাতে দিলো তখন কান্না করে দিয়েছিলাম কারন বাইকের জন্য টাকা জমাচ্ছিলাম বিগত ২ বছর ধরে।
বাইক নিয়েই প্রথম দিনে ৪৫ কিলোমিটার রাইড করে ভালুকা নিয়ে গেলাম। খুব ভাল ভাবেই ২০০০ কিলোমিটার ব্রেক ইন পিরিয়ড মেনটেইন করলাম। মাঝে মাঝে ট্যুর দেওয়া ছাড়া ভার্সিটি যাবার জন্য বাইকটি কেনা হয়। একটা বড় উদ্দেশ্য হলো ঈদের সময় বাসের টিকিট পেতে খুব ভোগান্তি হয়। বাইক নিয়ে খুব আরামে গ্রামে চলে যেতে পারি। আমার Honda CB Hornet 160R বাইকটির বয়স ১১ মাস হতে চলেছে। আমি ১৮ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি জমিয়েছি।
Honda CB Hornet CBS ভার্সনে দেয়া হয়েছে ১৬২.৭সিসি এয়ার কুল্ড সিঙ্গেল সিলিন্ডার ইঞ্জিন। ইঞ্জিন থেকে 15.1 BHP এবং 14.76 NM টর্ক উৎপন্ন করতে সহায়তা করে। ইঞ্জিনের ক্ষেত্রে হোন্ডা তাদের HET (Honda Eco Technology) টেকনোলজি ব্যবহার করেছে। এছাড়া ইঞ্জিনের সাথে যুক্ত করা হয়েছে ৫ স্পিড গিয়ার বক্স। সামনের দিকে দেয়া হয়েছে ১০০ সেকশন এবং রেয়ারে দেয়া হয়েছে ১৪০ সেকশন টায়ার।
উভয় টায়ার টিউবলেস। CBS Version এ সামনের চাকায় ২৭৬মিমি এবং রেয়ারে দেয়া হয়েছে ২২০মিমি ডিস্ক ব্রেক। CBS মানে হলো Combo Breaking system। এটাতে পায়ের ব্রেক ইউজ করলে সামনের ব্রেকে ৪০% এবং পিছনের ব্রেকে ৬০% রেশিওতে কাজ করে। বাইকটির মিটার হচ্ছে পুরোপুরি ডিজিটাল ফাংশন RPM, ফুয়েল গজ, ট্রিপ মিটার, ঘড়িসহ অনেক তথ্য শো করে থাকে। এর সবচেয়ে আকর্ষনীয় দিক হচ্ছে রেয়ারের এক্স শেপের টেইল লাইট। যেটা অনেকটা এগ্রোসিভ লুক দেয়। বাইকটিতে সামনে টেলিস্কোপি সাসপেনশন এবং রেয়ারে দেয়া হয়েছে মনোশক সাসপেশন। বাইকের ফুয়েল ট্যাংকটি বাইকের সৌন্দর্য বর্ধনে অনেকটা ভুমিকা পালন করে থাকে।
বাইকটি নিয়ে ১৮ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দেবার সময় যে সকল পার্টস পরিবর্তন করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিঃ
- Air Filter -3 times
- Head Light - LED M8
- Spark plug - 1 time (13000km)
- Parking light - red
- Front Spoket - 1 time
হোন্ডার রিকোমেন্ডেশন অনুযায়ী ঠিক সময় মতই ৪টি ফ্রি সার্ভিস করা হয়েছে হোন্ডা সার্ভিস পয়েন্ট থেকে। ইঞ্জিন 0-8000km পর্যন্ত হোন্ডা ব্র্যান্ডের 10w30 মিনারেল লুব ওয়েল ইউজ করা হয়েছে। এর পর থেকে Motul এর 10w30 ফুল সিন্থেটিক ইউজ করে থাকি। বর্তমানে সিটিতে মাইলেজ পাচ্ছি ৩৬ - ৩৮ কিলোমিটার প্রতি লিটার এবং হাইওয়েতে পাচ্ছি ৩৮ - ৪১ কিলোমিটার প্রতি লিটার। টপস্পিড পেয়েছি ১১৪ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা। ঢাকা ময়মনসিংহ হাইওয়েতে। এর উপরে আর চেস্টা করিনি।
৫টি ভাল দিকঃ
- কমফোর্ট সিটিং পজিশন
- মাসকুলার এবং এগ্রেসিভ লুকিং
- কম্বাইন্ড ব্রেকিং সিস্টেম
- ইঞ্জিন সাউন্ড অনেক স্মুথ
- পাইপ হ্যান্ডেলবার কর্নানিং করার সময় কনফিডেন্স দিয়েছে
৫টি খারাপ দিকঃ
- নিম্ন মানের প্লাস্টিক কিট ইউজ করা হয়েছে
- চেইন সাউন্ড করে
- স্টক হেড লাইট প্রয়োজনের তুলনায় কম আলো উৎপন্ন করে
- হর্নের আওয়াজ খুবই অল্প যাহা বেশীরভাগ সময় মানুষের কানে পৌছে না এবং ইঞ্জিন কিল সুইচ নাই
- Honda 10W30 ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করলে বাইকটির ইন্জিন অতিরিক্ত গরম হয়
পরিশেষে বলতে পারি, Honda CB Hornet 160R CBS ১৮ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে আমি সব দিক বিবেচনা করে বলতে পারি যে আমি সন্তুষ্ট।
লিখেছেনঃ রুহুল কুদ্দুস
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। এছাড়াও honda bike bd এর সর্ম্পকে জানতে আমাদের BikeBD.Com দেখে আসতে পারেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।