Honda Africa Twin 1100 – বিশ্বের অন্যতম সেরা মাল্টিপারপাস বাইক
This page was last updated on 17-Sep-2024 09:25am , By Badhan Roy
সারা বিশ্বে মোটো ট্যুরিস্ট বা এডভেঞ্চার প্রেমীদের আগ্রহের শীর্ষে বরাবরই থাকে ADV বা এডভেঞ্চার ট্যুরিং ক্যাটাগরির বাইক। উন্নত বিশ্বে হায়ার সিসির ট্যুরার বাইকগুলোর মধ্যে Honda Africa Twin বাইকটি বেশ জনপ্রিয় বটে। Africa ৮০ এর দশকের ডাকার র্যালীর আফ্রিকান র্যুট এবং Twin শব্দ দ্বারা এর আইকনিক টুইন সিলিন্ডার ইঞ্জিন এবং এর মাল্টিপারপাস ব্যাবহারের দিকটি নির্দেশ করে।
জাপানি গুণমানসম্পন্ন এবং রিলায়বিলিটির অনন্য উদাহরণ হিসেবে অন-রোড এবং অফ-রোড উভয়ই ক্ষেত্রেই Africa Twin এর নির্ভরতা অতুলনীয়। কিন্তু আফসোসের বিষয় সিসি লিমিট থাকার কারনে বাংলাদেশের রাস্তায় এডভেঞ্চার ট্যুরার লাভারদের জন্য এই ধরণের আইকনিক মোটরসাইকেল ব্যাবহারের সুযোগ নেই। তারপরেও সারা বিশ্বের বাইক এন্থুজিয়াস্ট দের প্রবল আগ্রহ ও এর পারফর্মেন্সের কারনে আন্তর্জাতিক বাজারে এর স্লোগান – Forged Through Toughness.
আজ আমরা Honda Africa Twin 1100 নিয়ে সার্বিক আলোচনা করার চেষ্টা করব।
Honda Africa Twin 1100 – ডিজাইন
Honda Africa Twin এর ডিজাইন এডভেঞ্চার ট্যুরার শেপ এর করা হয়েছে। আমাদের দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ট্যুরিং বাইক Honda CBX 150 এর সাথে ডিজাইন শেপের দিক দিয়ে বেশ কিছুটা মিল লক্ষ্য করা যায়। এই বাইক টির বিশেষত্ব হচ্ছে এটি কেবল ট্যুরার না বরং অফ রোডার ও বটে। অর্থাৎ, রাইডার এটিকে মাল্টিপারপাস ব্যাবহার করতে পারবেন। সিম্পল লুক, শক্তিশালী বিল্ড কোয়ালিটি, স্পোক এলয় রিম এবং আপরাইট এক্সহস্ট প্লেসমেন্ট এর কারনে এটার মাল্টিপারপাস দিকটি সহজেই বোঝা যায়।
সামনের ডুয়াল হেডলাইট টি দেখতে কিছুটা প্যাঁচার চোখের মত যা এর সিম্পল লুক কে অনেক এগ্রেসিভ করে তোলে। এতে দেওয়া হয়েছে এলইডি ইন্ডিকেটরস, হেড এবং টেইল ল্যাম্প যা দেখতে সাধারণ হলেও যথেষ্ট প্র্যাক্টিকাল এবং যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বাইকটির আধুনিকতা এবং উন্নত প্রযুক্তির প্রকাশ বেশ লক্ষণীয়।
Honda Africa Twin 1100 – ইঞ্জিন স্পেসিফিকেশন
Honda Africa Twin বাইকটির মূল আকর্ষন এর ইঞ্জিন। এতে রয়েছে ৬ স্পিড গিয়ারবক্সের সাথে ডুয়াল ওয়েট মাল্টিপ্লেট কয়েল স্প্রিং এসিস্ট এন্ড স্লিপার ক্লাচের সাথে ১০৮৪ সিসি টুইন-সিলিন্ডার, লিকুইড কুলড, ৮ ভাল্ভ, ৪ স্ট্রোক PGM-FI OHC ইঞ্জিন, যা ৭৫০০ আরপিএম-এ ১০১ বিএইচপি পাওয়ার এবং ৫৫০০ আরপিএম-এ ১১২ এনএম টর্ক উৎপন্ন করে।
বাইকটি রেগুলার ও DCT দুই ভ্যারিয়েন্টে আসে, DCT ভ্যারিয়েন্ট অটোমেটিক ট্রান্সমিশন যুক্ত অর্থাৎ এতে ক্লাচ ধরা ও গিয়ার শিফটিং হবে স্বয়ংক্রিয় ভাবে, গাড়ির মত ড্রাইভ মোডে দিয়ে অনায়েসেই পথ পাড়ি দেওয়া যাবে। হোন্ডা মোটরকর্প ইউকে এর দাবী বাইকটি সিটি, হাইওয়ে ও অফরোড ও র্যালী ট্র্যাক সবরকম রাস্তায় স্টেবল ও সেরা পারফর্ম করতে সক্ষম।
Honda Africa Twin 1100 – ফিচারস
Honda Africa Twin এর কিছু উল্লেখযোগ্য ফিচারস হলো:
সিট হাইট, ওজন ও গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স- ৮১০ মি.মি এর সিট হাইট, ২৫০ মি.মি এর গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স ও ২৪৪ কেজি ওজনের কার্ব ওয়েট থাকছে বাইকটিতে। তবে বাইকের ফ্রেম অনুযায়ী ওয়েট ডিস্ট্রিবিউশন অনেক চমৎকার হওয়ার কারনে বাইকটির ব্যালান্সিং বেশ ভাল বলে মনে হয় ও এত ওজন কোন প্রভাব ই ফেলে না।
ইগনিশন সিস্টেম- সেলফ স্টার্ট ইগনিশন।
ডিজিটাল ইন্সট্রুমেন্ট ক্লাস্টার: : এই বাইকে ইন্সট্রুমেন্ট ক্লাস্টার দুইটি। প্রাইমারি ৬.৫ ইঞ্চির বিশাল টিএফটি স্ক্রিন টি দেখে প্রথম দেখায় একটি স্মার্টফোন মনে হতে পারে। অত্যান্ত চমৎকার এই ডিজিটাল ক্লাস্টারটিতে ফুল কাস্টমাইজড, রাইডার নিজের পছন্দ মত যেভাবে ইচ্ছা এটিকে সেভাবে সাজাতে পারবেন। অত্যাধুনিক গাড়ির মত এই ক্লাস্টারটি তে রয়েছে অ্যাপল কারপ্লে ও অ্যান্ড্রয়েড অটো কানেক্টিভিটির সুবিধা।
ফলে রাইডার ক্লাস্টারকেই নিজের ফোন হিসেবে ব্যাবহার করতে পারবেন। বিভিন্ন সাধারণ তথ্যের পাশাপাশি এটা আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদর্শন করে যেমন তাপমাত্রা, ম্যাপ নেভিগেশন, একাধিক ট্রিপ মিটার, স্পিডোমিটার, ট্যাকোমিটার, গিয়ার, সার্ভিস ইন্ডিকেটর, এবিএস ইন্ডিকেটর, সাইড স্ট্যান্ড ইন্ডিকেটর, ঘড়ি ইত্যাদি। সেকেন্ডারি ক্লাস্টারে শুধুমাত্র স্পিড, ট্যাকোমিটার ও ফুয়েল লেভেল সো করে এবং সেটিও ডিজিটাল এবং অতি সাধারণ।
এলইডি লাইটিং: এলইডি ডিআরএল ও প্রজেক্টর হেডল্যাম্প, টেইল ল্যাম্প এবং টার্ন ইন্ডিকেটর বাইকটিকে আধুনিক এবং আর্কষণীয় করে তুলেছে। বাইকটির লাইটের শেপ প্যাচার চোখের মত যা ইতিমধ্যেই ডিজাইন সেকশনে বর্ণনা করা হয়েছে।
লাগেজ প্লেট ও গ্র্যাব রেইল: বেটার লাগেজ ক্যারিং এর জন্য বাইকটিতে বিল্ট ইন লাগেজ প্লেট দেওয়া আছে, পিলিওন এর জন্য থাকছে পকেট গ্র্যাব রেইল।
নকেল গার্ড ও র্যালি স্টাইল উইন্ডশিল্ড: নকেল গার্ড অনাকাঙ্ক্ষিত দূর্ঘটনায় হাতের কবজি কে রক্ষা করবে, র্যালি স্টাইল উইন্ডশিল্ড বাতাসের বাধা অনেকটাই কমিয়ে রাইডারের ক্লান্তি কিছুটা কমাবে ও রাইডিং এক্সপিরিয়েন্স বেটার করবে।
আপসোয়েপ্ট এক্সহস্ট প্লেসমেন্ট: কিছুটা উপরে এক্সহস্ট প্লেসমেন্ট হওয়ার কারনে অফ রোডিং এর ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যাবে, সেটা কর্দমাক্ত কিংবা জলাবদ্ধ এলাকা যাই হোক না কেন!
৫ টি রাইডিং মোড: Urban, Tour, Off-road, Gravel, User মোট ৫ টি রাইডিং মোড রয়েছে বাইকটিতে। রাস্তার কন্ডিশন ও রাইডার এর সুবিধামত রাইডিং মোডে নির্দিষ্ট টর্ক ও টপ স্পিড আউটপুট নিশ্চিত করা সম্ভব।
অটোমেটিক ক্রুজ কন্ট্রোল- গাড়ির মত Africa twin বাইকেও অটোমেটিক ক্রুজ কন্ট্রোল দ্বারা বাইকের নির্দিষ্ট একটি স্পিড সেট করে নিতে পারবেন যার মাধ্যমে নির্ধারিত গতিসীমার রাস্তায় বাইক নিজে থেকেই তার গতি নিয়ন্ত্রিত রাখবে এবং রাইডিং প্রেশার কে কমিয়ে দিবে। অনেকে এই ফিচারটিকে বিমানের অটোপাইলট মোডের সাথেও তুলনা দিয়ে থাকেন।
টিউবলেস টায়ার: বাইকটির টায়ার সাইজ- সামনের টায়ার 90/90-21, পিছনের টায়ার: 150/80-18. বাইকটিতে বড় সাইজের এলয় রিমের সাথে উচ্চমানের মাল্টিপারপাস গ্রিপের টিউবলেস টায়ার ব্যবহার করা হয়েছে ফলে টায়ার পাংচারের ঝুঁকি কম এবং বেটার কনফিডেন্স এর সাথে যে কোন ধরনের রাস্তায় রাইড করা সম্ভব।
ব্রেক: ব্রেকিং এর জন্য সামনে ৩১০ মিমি ডুয়াল ডিস্ক ৪-পিস্টন ক্যালিপার ও পিছনে ২৫৬ মিমি এর ডিস্ক ও ২ পিস্টন ক্যালিপার ব্রেক রয়েছে। ব্রেকিং কে আরো দ্রুত এবং নিরাপদ করতে বাইকটিতে দেওয়া হয়েছে ডুয়াল চ্যানেল এবিএস সিস্টেম যা বৃষ্টি ও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে খুবই জরুরী। পাশাপাশি, এই বাইকের এবিএস অন অফ ফিচার ও আছে যা ক্ষেত্রবিশেষে অফরোডিং এর জন্য জরুরি।
সাসপেনশন সিস্টেম: বাইকটির সামনে বিশ্ববিখ্যাত Showa ব্র্যান্ডের আপসাইড ডাউন (USD) হাইড্রোলিক শক অ্যাবজর্বার ও পিছনে showa এর মাল্টি এডজাস্টেবল মনোশক অ্যাবজর্বার ব্যাবহার করা হয়েছে যা রাইডিং কে আরামদায়ক করে তুলবে। এছাড়াও বাইকটির অন্যতম উল্লেখযোগ্য ফিচার হচ্ছে ইলেকট্রনিক রিমোট কন্ট্রোল সাসপেনশন এডজাস্টার যা দ্বারা রাইডার কোনপ্রকার টুলস ব্যাবহার ব্যাতিত যখন ইচ্ছা তখনই নিজের সুবিধামত সাসপেনশন এডজাস্ট করতে পারবেন।
মাইলেজঃ Honda Motocorp UK এর তথ্য অনুযায়ী ১৮.৮ লিটারের ফুয়েল ক্যাপাসিটির সাথে প্রতি লিটার জ্বালানী তেলে বাইকটি ২০ কিলোমিটারের মাইলেজ দিতে সক্ষম। তবে পরিবেশ, জ্বালানীর মান এবং রাইডিং স্টাইলের উপর মাইলেজ কম বেশী হতে পারে।
তো, এই ছিল Honda Africa Twin এর বিস্তারিত। স্পেসিফিকেশন এবং আন্তর্জাতিক রিচিউ দেখে সহজেই আন্দাজ করা যায় কেন হোন্ডা তাদের মার্কেটিং এর শেষের দিকে The perfect travel partner- কথাটি ব্যাবহার করেছে। আমরা আশাবাদী সারা বিশ্বের এন্থুজিয়াস্ট দের পছন্দের এই বাইকটি অদূর ভবিষ্যৎ এ বাংলাদেশের এডভেঞ্চার ট্যুরার দের নাগালে অবশ্যই আসবে।
বাইক বিষয়ক সকল জানা ও অজানা তথ্য পেতে বাইকবিডির সাথেই থাকুন।