Hero Xtreme Sports এর সাথে ২৫,০০০ কিঃ মিঃ অভিজ্ঞতা- শাওন
This page was last updated on 07-Jul-2024 10:35am , By Shuvo Bangla
আমার ব্যক্তিগত জীবনে নিজস্ব মোটরসাইকেল সেই ২০১৩ সাল থেকে। প্রথম দিকে মোটরসাইকেল আছে বলতে বুঝতাম এলাকায় ঘুরাঘুরি, তারপর নিজের আবেগে একা একা ঘুরাঘুরি তার সাথে সাথে মোটরসাইকেলের মিটারে কিঃমিঃগুলো যেন খুব দ্রুতই বাড়তে থাকল। ২০১৩ তে স্প্লেন্ডার তারপর মাঝখানে ২০১৪ তে বাইক পরিবর্তন করে হিরো ১২৫ গ্ল্যামার , ২০১৫ তে হাঙ্ক (ডিক্স ব্রেকে অভিজ্ঞতা, ১০০+ কিঃমিঃ গতির রাজ্যে প্রতিনিয়ত আনাগোনা), ২০১৬ তে আমার হাতে আসে হিরো এক্সট্রিম স্পোর্টস। যা আমাকে প্রতিনিয়তই কিছু না কিছু নতুন জিনিসের স্বাদ দিয়েই চলেছে।
Hero Xtreme Sports এর ফার্স্ট ইমপ্রেশন ভিডিও
হিরো এক্সট্রিম স্পোর্টস কিনার পর আামার এলাকার এক বড় ভাই (আজম খান) এর হাত ধরে 'রাইডার আহমেদ সালেহ' ভাইয়ের সাথে পরিচয় আর সালেহ ভাইয়ের হাত ধরেই বাইক কমিউনিটির সাথে আমার পরিচয়। সালেহ ভাই-ই আমাকে দীর্ঘ ভ্রমণের সাথে হাতে কলমে শিক্ষা দিয়েছেন আর উনার হাত ধরেই আমি শিখেছি কিভাবে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে যেতে হয়। আর সালেহ ভাইয়ের সাথে নিজের ছোট ভাইয়ের মত আমাকে যথাসাধ্য উৎসাহ দিয়েছেন জামাল ভাই, উষা ভাই (উইন্ড ব্রেকার্স)। উনাদের মাধ্যমেই নিরাপদ রাইডিংয়ের ব্যাপারগুলো জানতে পেরেছি।
হিরো এক্সট্রিম স্পোর্টস বাইক নিয়ে প্রথমে সালেহ ভাইয়ের সাথে কুমিল্লা বিশ্বরোডে প্রথম দেখা হয় তরু ভাই এবং রুকু ভাইয়ের (হাঙ্ক ব্যাটল) সাথে। তরু ভাই-ই আমাকে বুঝালেন বাইকেও আদর সোহাগ করে চালাতে হয়, না হলে বাইক যে মুহূর্তে আমাকে আঘাত করতে পারে এবং আক্ষরিক অর্থেই বাইক সম্বন্ধিত জ্ঞান আমি তরু ভাইয়ের কাছ থেকে পেয়েছি। তিনি আমাকে তার পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে কিছু দিক নির্দেশনা দিলেন যা আজ পর্যন্ত আমার বাইককে সুস্থ রেখেছে। তারপর প্রায়ই আমি তরু ভাই, রুকু ভাই (সাথে ভাবিদের নিয়ে) ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ঘুরে বেড়িয়েছেন। তাদের দেখাদেখি আমিও এইভাবে একা একা ঘুরেছি কুমিল্লা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সাথে আমার হিরো এক্সট্রিম স্পোর্টসের মিটারে কিঃমিঃ বাড়তে শুরু করে।
হিরো এক্সট্রিম স্পোর্টসের ইঞ্জিনঃ
হিরো এক্সট্রিম স্পোর্টসের ১৪৯.২ সিসিতে রয়েছে ১৫.২ বিএইপি এর ৪ স্ট্রোকের এক সিলিন্ডারের শক্তিশালী ইঞ্জিন, যা খুব সহজেই গতির ঝড় তুলতে সাহায্য করেছে। আমি নিজে ৪ সেকেন্ড ৬০কিঃমিঃ এবং ১১ সেকেন্ডে ১০০+ কিঃমিঃ তুলতে সক্ষম হয়েছি। সবচেয়ে মজার একটা জিনিস হল যখন আরপিএম ৪০০০+ রেখে গিয়ার শিফট করি তখন বাইকটি তখন খুব দ্রুত গতি তুলতে সাহায্য করে। তাছাড়া আমি নিজে এই বাইক দিয়ে ১২৯ কিঃমিঃ তুলতে সক্ষম হয়েছি। বাইকটি যখন ৫ম গিয়ারে ৭০০০+ আরপিএম এ থাকে তখন থেকে সর্বোচ্চ গতির দিকে বাইকটি এগিয়ে যায়।হিরো এক্সট্রিম স্পোর্টসের ইঞ্জিন এয়ার-কুলড বাইকের শ্রেনীতে বাংলাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী বাইক। আমার মতে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই বাইকটি অসাধারণ একটি শক্তিশালী বাইক।
হিরো এক্সট্রিম স্পোর্টসের চাকা ও রিমঃ
হিরো এক্সট্রিম স্পোর্টসের সামনে ও পিছনে রয়েছে টিউবলেস চাকা। যা আমার দূরের যাত্রারে রেখেছে নিশ্চিন্ত। কেননা টিউলেস হওয়ায় আমি নিশ্চিন্তে অফ রোডগুলোতেও যেতে পেরেছি। বাইকটির সামনের চাকা (৮০/১০০) ও পিছনের চাকা (১১০/৯০) আর সামনের রিম (১৮"*১.৮৫) পিছনের রিম (১৮"*২.১৫) হওয়ায় এর কন্ট্রোলিং ছিল আমার কাছে অসাধারণ।
হিরো এক্সট্রিম স্পোর্টসের আয়তন ও ওজনঃ
হিরো এক্সট্রিম স্পোর্টস বাইকটি লম্বায় ২১০০মিঃমিঃ, প্রস্থে ৭৮০ মিঃমিঃ এবং উচ্চতায় ১০৮০ মিঃমিঃ হওয়ায় একে প্রথম দেখায়-ই যে কেউ আরেকবার ফিরে দেখতে বাধ্য। কিন্তু এর উচ্চতা একটু বেশি হওয়ায় আমার প্রথমে একটু সমস্যা হত তারপর ব্যালান্স হয়ে গেছে ( আমি নিজে ৫ফুট ৮ইন্চি)। বাইকটির ওজন একটু বেশি (১৪৭ কেজি), যা রানিং অবস্থায় ভালো ব্যালান্সে সাহায্য করে।
হিরো এক্সট্রিম স্পোর্টসের ব্রেকঃ
আমার বাইকটির সামনে রয়েছে ডিক্স ব্রেক আর পিছনে ড্রাম ব্রেক। যার ফলে বাইকটিকে জরুরি মুহূর্তে নিমিষেই নিজের কন্ট্রোলে আনা সম্ভব। বিশেষ করে আমি বেশ কয়েকবারই ৬৫+ কিঃমিঃ স্পিডে পিছনের সামনের ব্রেক সমন্বয় করে ধরেছি কিন্তু বাইকটি কোন ভাবেই ঘুরে যায়নি বা এর চাকা পিছলে যায়নি। আমার মতে এর ব্রেকিং ক্ষমতা অসাধারণ।
হিরো এক্সট্রিম স্পোর্টসের সাসপেনশনঃ
বাইকটিতে সামনে রয়েছে টেলেসকোপিক হাইড্রোলিক টাইপের আর পিছনে রয়েছে ৫ স্টেপের সংমিশ্রিত গ্যাস রিসারভিওর সাসপেনশন, যা ভাঙ্গাচূড়া রাস্তায় নিশ্চিত করেছে সর্বোচ্চ আরাম এবং ঝাকুনি থেকে মুক্তি। এর ফলে বাইকটি আমার দূরের যাত্রায় আমাকে রেখেছে প্রাণবন্ত।
হিরো এক্সট্রিম স্পোর্টসের লুকঃ
বাইকটি সামনে লাইট (হ্যালোজেন) ও ইন্ডিকেটর (ক্লিয়ার লেন্স), পিছনের ব্রেকিং লাইট (এলইডি) ও ইন্ডিকেটর (ক্লিয়ার লেন্স) এর আলোক ব্যবস্থাকে খুবই পরিমার্জিত রেখেছে। তাছাড়া এর ট্যাংকির ওপরের শেডগুলোও বাইকটিকে আকর্ষণীয় করার ক্ষেতে যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছে। এছাড়া এর সাইলেন্সার সিলিন্ডারের ওপরের কাভারটিও একে আরও আকর্ষণীয় করেছে।
হিরো এক্সট্রিম স্পোর্টসের মাইলেজঃ
আমার মতে, বাংলাদেশে ১৫০ সিসি সেগমেন্টে এই বাইকের মাইলেজকে টেক্কা দেওয়ার ক্ষমতা কোন বাইকেরই নেই। কেননা প্রথম ৫০০০ কিঃমিঃ পর্যন্ত আমি শুধু অকটেন ব্যবহার করেছি, এক্ষেত্রে শহরে পেয়েছি ৩৮+ কিঃমিঃ এবং মহাসড়কে ৪৩+কিঃমিঃ। তারপর ৫০০০-১০০০০ কিঃমিঃ পর্যন্ত চালিয়েছি পেট্রোলে তখন মাইলেজ পেয়েছি শহরে ৪২+ কিঃমিঃ আর মহাসড়কে ৪৮+ কিঃমিঃ। তারপর ১০০০০- ২৫০০০ কিঃমিঃ (এখন পর্যন্ত) অকটেন ও পেট্রোলের সংমিশ্রনে চালিয়েছি সেক্ষেত্রে মাইলেজ পেয়েছি শহরে ৪৮+ কিঃমিঃ এবং মহাসড়কে ৫৪+ কিঃমিঃ। উল্লেখ্য এই হিসেবটা আমার বাইকে তেল নেয়ার পর অতিক্রান্ত কিঃমিঃকে মোট তেলের পরিমাণ দ্বারা ভাগ করে।
সর্বশেষে বলতে চাই, হিরো এক্সট্রিম স্পোর্টস বাইকটি আমাকে কোন ভাবেই নিরাশ করেনি। আর সালেহ ভাই, তরু ভাইকে বিশেষ আন্তরিক ধন্যবাদ আমাকে বাইকিং কমিউনিটির সাথে পরিচয় করানোর জন্য। উপরোক্ত সম্পূর্ণ লিখায় কেন ভূলত্রুটি হলে ক্ষমাশুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন।
ধন্যবাদ।।