Hero Thriller 160R Refresh বাইক নিয়ে রাইডিং অভিজ্ঞতা -উল্লাস
This page was last updated on 30-Jul-2024 07:17am , By Shuvo Bangla
আমি আবু তালহা উল্লাস। বর্তমানে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত। আজ আপনাদের সাথে আমি আমার Hero Thriller 160R Refresh বাইকটি নিয়ে মালিকানা রিভিউ শেয়ার করবো ।
আমার বাসা মেহেরপুর সদরে। ছোটবেলা থেকেই বাইকের উপরে অন্যরকম উন্মাদনা ছিলো। দীর্ঘদিন আব্বুর বাইক চালিয়েছি এবার সুযোগ হয়ে উঠেছে দুই চাকার যান্ত্রটাকে নিজের করে পাওয়ার। মহান সৃষ্টিকর্তার চাওয়ায় এবং পরিবারের সহযোগিতায় আমার প্রথম পথচলার সঙ্গী হয় Thriller বাইকটি ।
বাইকটি আমাদের পাশের জেলা চুয়াডাঙ্গা থেকে নেওয়া। কোন এক পড়ন্ত বিকেলে আমি এবং আব্বু দুজন গিয়েছিলাম এবং বাইকটি প্রথম চালানোর পর অনুভূতি ছিলো খুব ভালো । প্রথম দিন প্রায় ৩০ কিলোমিটার রাইড করে বাড়িতে এসেছিলাম।
আজ আমি এ বাইকটির পাওয়ার অনুভূতি এবং এর ভালো ও খারাপ দিক তুলে ধরবো। আমি রিভিও করতে যাচ্ছি বাংলাদেশে অনুমোদিত এবং ইন্ডিয়া থেকে ইম্পোর্টেড বাইক Thriller কে নিয়ে ।
বর্তমান বাজারে বেশ কিছু নামি দামি ব্রান্ড এর বাইক থাকলেও Hero Bangladesh কোন ক্রমে পিছিয়ে নেই। তারাও যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বাজারে লঞ্চ করেছে Thriller বাইকটি। বর্তমানে বেশ কিছু নামি দামি ব্রান্ডের কাতারে তালে তাল মিলিয়ে গতিপথ সঞ্চালন করে এগিয়ে চলছে।
বর্তমান প্রজন্মের পছন্দের তালিকার শীর্ষে রয়েছে এ বাইকটি।বাইকটির গুণগত ফিচার এবং রূপলীলা কথিত কিছু নামিদামী ব্রান্ডকেও হার মানাতে সমর্থ। বাইকটির সৌন্দর্য এবং এর ফিচার সমৃদ্ধতা বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের মনে বেশ খানিকটা জায়গা অর্জন করে নিয়েছে।
আমি বাইকটা কিনেছিলাম আমাদের পাশ্ববর্তী জেলা চুয়াডাঙ্গার হিরোর শোরুম মোল্লা মটরস থেকে। ডাবল ডিস্ক এবিএস এর মূল্য ছিল ২,১৩,০০০ টাকা যার মধ্যে ১০ হাজার টাকা ছাড় চলছিলো। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে চিরাচরিত নিয়মের ন্যায় নামি দামী কিছু ব্রান্ডের বাইকের চল থাকলেও হিরো থ্রিলার বর্তমানে তরুণ থেকে বৃদ্ধ সকলের পছন্দের শীর্ষে।
আমি আমার বাইকটি চালিয়েছি প্রায় ৯০০ কিলোমিটার এর মত। এই বাইকটি আমার পূর্বের চালানো কমিউটার বাইকগুলার থেকে অনেক স্মুথ। এবং এর সিটিং পজিশন, হ্যান্ডেল বার, মাইলেজ এবং স্মার্ট লুকিং সবকিছুর অনবদ্য কম্বিনেশন রয়েছে এই বাইকটিতে ।
এর পূর্বে আমি Hero Splendor plus বাইকটি চালিয়েছি ১ বছরের মত এতে আমি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করলেও থ্রিলার এর মত আত্নতৃপ্তি অনুভূত করিনি।
Hero Thriller 160R Refresh বাইকের কিছু ভালো ফিচার -
- বাইকটিতে স্পোর্টি লুক রয়েছে। যা তরুণ থেকে বৃদ্ধ সকলের নজর কাড়ে।
- বাইকটির গঠনশৈলীতা বেশ খানিক মজবুত। এবং বাইকটির ইঞ্জিন অন্যান্যা ১৬০ সিসি সেগমেন্ট বাইক থেকে বেশ শক্তিশালী। হিরো কোম্পানি দাবী করে এটি ৪.৭ সেকেন্ডে ০-৬০ পর্যন্ত উঠতে সমর্থ।
- Fi ইঞ্জিন সমৃদ্ধ বাইক হওয়ায় এর গতিও বেশ দূর্দান্ত।
- বাইকটির ট্যাংক এর ফুয়েল ক্যাপাসিটি ১২ লিটার। যা লং ট্যুরের জন্য বেশ উপকারী। বাইকের বডি কিট গুলো বেশ খানিক শক্ত ও মজবুত।
- Refresh Edition এ ইঞ্জিন গার্ড হিসাবে বেলী প্যাড যুক্ত করেছে। যা বাইকটির স্পোর্টস লুকটিকে আরও একধাপ ত্বরান্বিত করেছে।
- বাইকটির কন্ট্রোলিং চমৎকার। যে কোন বয়সের মানুষ বাইকটিকে সহযেই কন্ট্রোল করতে পারবে। বাইকটির ডাবল ডিক্স ABS ব্রেকিং অনবদ্য। যে কোন নিরাপদ দূরত্বে গাতির গতি রোধে যা চমৎকার ভূমিকা পালন করে।
- বাইকটির হেডল্যাম্প, ইন্ডিকেটর সবই এলইডি বাল্ব সংবলিত যাতে করে বাইকটি রাতে পথ চলতে বেশ সহযোগী এবং ড্যাশিং লুক সমৃদ্ধ। বাইকটিতে পার্কিং মুড রয়েছে যা খুবই কার্যকারী।
- বাইকটিতে সামনে চিকন এবং পিছনে মোটা টায়ার ব্যবহার করা হয়েছে যাতে করে সহযে স্লিপ কাটার সম্ভবনা থাকেনা এবং বাইকটির দুটো চাকাই টিউবলেস যাতে করে লংটার্ম ব্যবহার উপযোগী এবং ছোটখাটো লিকেজ থেকে রেহাই পাওয়া যায় ও ঝামেলা এড়িয়ে চলা যায়।
- আমি বাইকটিতে ১২০ পর্যন্ত স্পিড তুলেছি। এর বেশি হয়ত উঠত তবে আমার সাহস হয়ে ওঠেনি। গাড়ির মাইলেজ আমি সবসময়ই ৪০-৪৭ এমন পাই যা বেশ মনোমুগ্ধকর। অন্যান্য ১৬০ সিসি সেগমেন্ট এর বাইকের তুলনায় এটা বেস্ট ডিল বলে মনে হয়েছে আমার কাছে।
- বাইকটির ডিজিটাল মিটার বেশ ফিচার সমৃদ্ধ এবং স্পোটি লুকিং।
- এটি অকটেনে চলে BS6 ইঞ্জিন হওয়ায় বাইকটি বেশ স্মুথ। বাইকের সকল পার্টস ও সব দোকানে এভিলেবল।
পৃথিবীতে কোন কিছুই স্বয়ংসম্পূর্ণ নয় প্রতিটা জিনিসের ভালো ও মন্দ দিক রয়েছে।
বাইকটির কয়েকটি মন্দ দিক আমার লক্ষ্যণীয় হয়েছে সেগুলো হলো -
- বাইকটি এয়ার কুল সমৃদ্ধ, এটি অয়েল কুলিং হয়লে বেস্ট ডিল হতো।
- বাইকটির মিটার শেলে গিয়ার ইন্ডিকেটর অপশন টা রাখলে ভালো হতো।
- বাইকটি অকটেনে চলে আর আমাদের দেশে ভালো মানের অকটেন পাওয়া দুষ্প্রাপ্য এজন্য বাইকটি পর্যাপ্ত যত্ন নিতে হয়। তাছাড়া এর কিক স্টার্ট সিস্টেম টা একটু ভালো মনে হয়েছে।
- বাইকটির ব্যাটারি আরেকটু মডিফাইড হলে ভালো হতো।
- বাইকটির চেইন সময়মত লুব করা লাগে নতুবা চেইন থেকে শব্দ আসে।
বাইক শুধু একটা যন্ত্রই না এটি কতশত আবেগ অনুভূতির সংমিশ্রণ। আমি বাইকটিতে মোডিফাই করে ফগলাইট,পা দানি এবং সিটকাভার লাগিয়েছি। ১৫০০ টাকার কাছাকাছি খরচ হয়েছে। আমার বাইক কেনার মূল উদ্দেশ্য ছিলো পথচলা এবং সাধ ও সাধ্যের সন্ধিক্ষণে নিজ শখ টা মেটানো। ভালো খারাপ সবকিছু মিলিয়ে হিরো থ্রিলার এখন আমার কাছে আবেগের নাম।
পরিশেষে একটা কথাই বলবো, ধন্যবাদ Hero Bangladesh কে সুন্দর গ্রাফিক্স এবং আরামদায়ক বাইককে সাধ ও সাধ্যের সন্ধিক্ষণে সকলের হাতের নাগালে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। সেই সাথে ধন্যবাদ দিতে চাই BikeBD এর সকল সদস্য এবং টিম বাইক বিডিকে তাদের যুক্তি তর্ক উপস্থাপনে উদ্দয়ী হয়ে আমি বাইকটিতে মনস্থির করেছিলাম এবং আজ তা অনুভূতির জায়গা জুড়ে শীর্যে।
সবার প্রতি রইল একরাশ ভালোবাসা। এবং সকলের প্রতি আহ্বান আমার মতামতকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।সকলে হেলমেট পরে সংযত গতিতে বাইক চালাবেন। নিজে ভালো থাকবেন অন্যদের কেও ভালো রাখবেন। শুভ কামনা রইল BikeBD এর জন্য এবং আরো প্রশস্থ হোক BikeBD প্ল্যাটফর্ম! ধন্যবাদ ।