Hero Splendor Ismart 100 ২৫,০০০ কিলোমিটার রাইড - আবু হুরায়রা সাকিব
This page was last updated on 27-Jul-2024 04:03pm , By Raihan Opu Bangla
আমি আবু হুরায়রা সাকিব। আমি বর্তমান বসবাসরত আছি নড়াইল জেলার আলাদাতপুরে। আজ আমি আমার সদ্য ব্যবহার করা Hero Splendor Ismart 100 বাইকের ২৫,০০০ কিলোমিটার পথ রাইড করার সব অভিজ্ঞতা আপনাদের মাঝে শেয়ার করবো।
ছোটবেলা থেকেই বাইকের স্বপ্ন দেখতাম। মনে করতাম এবং ভাবতাম আমি একটা সময় বাইক কিনবো এবং সারা বাংলাদেশ ঘুরে বেড়াবো আমার নিজের বাইক নিয়ে। আমার জীবনের প্রথম বাইক হচ্ছে এই Hero Splendor Ismart 100 বাইক।
বাইককে ভালবাসার কয়েকটি কারণ -
বাইকে ভালোবাসার প্রধান এবং প্রথম যে কারণ সেটি হচ্ছে বাইক হচ্ছে এমন একটি বাহন যেটা দিয়ে আপনি ইচ্ছা করলে যে কোন সময়ে, যেখানে খুশি সেখানে যেতে পারবেন। একদম স্বাচ্ছন্দে এবং খুব দ্রুত যেতে পারবেন যেটা আপনি অন্য কোন বাহনে কখনোই পারবেন না।
আমি বর্তমান যে বাইকটি ব্যবহার করছি সেটা হচ্ছে Hero Splendor Ismart 100 । এটি ১০০সিসি সেগমেন্টের বাইক। বাইকটি কেনার আগে ইউটিউব থেকে অনেক রিভিউ দেখেছি। আমি যখন বাইক কিনতে গেলাম তখন শো-রুমে যেয়ে Hero Splendor Ismart 100 লাল-কালো কালারের বাইকটি দেখে একেবারেই পছন্দ হয়ে যায়।
যদিও এর অনেক গুলো কালার ছিলো। আর বাইকটি পছন্দ হবার পেছনে কারণ হচ্ছে, আমার মামার একটি HERO HONDA NXG বাইক ছিল। সেটা দিয়েই আমার জীবনে প্রথম বাইক চালানো শেখা। Hero Ismart 100 ছিলো NXG এর পরের ভার্সন। তার জন্য Hero Splendor Ismart 100 নিয়ে নিলাম।
আমি কেন Hero Splendor Ismart 100 বাইক টি বেছে নিলাম?
সেটার একমাত্র বা প্রধান কারণ হচ্ছে, আমি আগেই বলেছি যে, আমি প্রথম বাইক চালানো শিখেছি হচ্ছে Hero Honda NXG 100 মডেলটি দিয়ে। যেটা ছিল আমার মামার। প্রথম চালানো বাইকের প্রতি একটা ভালোলাগা এবং ভালোবাসা আগে থেকেই ছিলো।
পরে মার্কেটে এসে দেখি Hero এবং Honda কোম্পানি পৃথক হয়ে Hero কোম্পানি বাজারে Hero Splendor Ismart 100cc বাইকটি NXG এর নতুন ভার্সন রুপে লঞ্চ করেছি । তাই এই বাইকটি বেছে নিলাম। আমি বাইকটি কিনেছিলাম ২০১৬ সালের ১১ ই নভেম্বর এবং তখন এই বাইকটি মূল্য ছিল ১ লক্ষ ৪১ হাজার ৯০০ টাকা। তখন আমি বাইকটি ক্রয় করেছিলাম চুকনগর বাজার এর Hero শো-রুম থেকে।
Also Read: Hero Splendor Ismart 100 Price In Bangladesh
বাইক কিনতে যাওয়ার আগের রাতে আমি বাইক কেনার আনন্দে ঘুমাইতে পারছিলাম না। আমার কাছে বাইক কেনার আগ মুহুর্ত ও মনে হয়েছিল যে, বাইক আমার কাছে একটা স্বপ্ন। আমি বাইক কিনতে গিয়েছিলাম আমার বড় মামা কে সঙ্গে নিয়ে। নড়াইল থেকে চুকনগরে বাসে করে গিয়েছিলাম। যাবার পথের প্রতিটা মুহূর্ত ছিলো অন্যরকম এক অনুভূতি, যেটা এভাবে লিখে প্রকাশ করাটা আমার কাছে কষ্টকর ।
আগেই বলেছিলাম বাইকটি ছিল আমার কাছে স্বপ্ন। আমি যখন ক্লাস টু তে পড়তাম, তখন থেকে স্বপ্ন দেখতাম যে, একদিন বাইক কিনবো এবং নিজের বাইক নিয়ে ঘুরে বেড়াবো। অবশেষে বাইকটি কিনেছিলাম আমি যখন ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং এর সেমিস্টার এব উঠি। এতবছর পর প্রথম নিজের বাইক নিজে বাইক রাইড করাটা ছিলো অনেক আনন্দের। চুকনগর থেকে নড়াইল পর্যন্ত আমি নিজেই চালিয়ে এসেছিলাম। নতুন বাইক চালানোর মজাই অন্যরকম।
বাইকটি চালানোর মুল কারন হচ্ছে -
প্রথমেই একটি বাইক কিনতে গেলে আমরা দেখি মাইলেজ। যেহেতু বাইকটিতে মাইলেজ ৬৫ থেকে ৭০ কিলোমিটার প্রতি লিটারে পাওয়া যায়। অল্প টাকাই অনেক বেশি ভ্রমণ করতে পারি। আর বাইক নিয়ে ভ্রমণ আমার কাছে অনেক ভালোলাগার একটি বিষয় ।
এই বাইক নিয়ে আমি কম খরচে অনেক পথ ভ্রমন করতে পারি। ১০০সিসি সেগমেন্ট নরমালি প্রতিটা বাইকে যে ফিচার গুলো থাকে এইটা তো সবই ছিল। তবে স্পেশাল যে ফিচারটি ছিল সেটা হচ্ছে আইস্মার্ট প্রযুক্তি। যেটা হচ্ছে I
smart সুইচটি অন করা থাকলে চলতি অবস্থায় গাড়ির স্টার্ট বন্ধ হয়ে গেলে বা কোথাও পার্কিং করে দাড়ালে চাবি সক্রিয় থাকা অবস্থায় ক্লাস চেপে ধরলেই স্টার্ট হয়ে যায়। এটা হচ্ছে বাইকের তেল সাশ্রয়ী করার জন্য একটা অন্যতম প্রযুক্তি। যেটা ব্যবহার করে আমার বাইকের ফুয়েল অনেক সাশ্রয় হয়েছে।
আমি প্রতিদিন যখন আমার নিজের বাইকটি রাইড করি তখন ভেতরে একটা অন্যরকম ভালোলাগা বা একটা অনুভূতি সৃষ্টি হয়।মন খারাপ থাকলে বাইকটি নিয়ে বেরিয়ে পরি যানযট মুক্ত বা নির্জন কোন এলাকাই। তখন মন আপনা আপনিই ভালো হয়ে যায়।আসলে বাইক হচ্ছে এমন একটি বাহন, যেটা আপনি যখন চালাবেন তখন দেখবেন আপনার আশপাশ দিয়ে সবকিছু দেখতে সুন্দর লাগছে। মনে হয় প্রকৃতির কাছে নিজেই হারিয়ে যাচ্ছি।
এবার আসি আমার বাইক সার্ভিসিং প্রসঙ্গে -
বর্তমানে আমার বাইকটি ২৫ হাজার কিলোমিটার অতিক্রম করেছে। এ পর্যন্ত অনেক বার সার্ভিসিং করিয়েছি এবং প্রথম যে চারটি সার্ভিস ফ্রি থাকে, সেই চারটি সার্ভিস আমি হিরো শোরুম থেকেই করিয়েছিলাম। আর বাদ বাকি সার্ভিস গুলো আমি আমার বাসার পাশের সার্ভিস সেন্টার থেকেই করিয়েছি বা করি।
২৫০০ কিলোমিটার পূর্বে আমার বাইকটির মাইলেজ ছিল ৫০ থেকে ৫৫ কিলোমিটার প্রতি লিটার এবং যখন ব্রেক ইন পিরিয়ড বা ২৫০০ কিলোমিটার শেষ হই তার পর থেকে আমার বাইকের মাইলেজ পেয়েছি ৬৫ থেকে ৭০ কিলোমিটার। যেটা এই সেগমেন্ট আমি মনে করি সবচেয়ে সেরা।
Also Read: Hero Bike Price In Bangladesh
এবার আসি আমার বাইকের মেইনটেনেন্স সম্পর্কে -
যেহেতু আমার বাইকটি একটা কমিউটার বাইক তাই আমার বাইকটি মেইনটেইন এর জন্য বেশি টাকা খরচ হয় না। প্রতি সপ্তাহে একবার বাইকটি পরিষ্কার করি। প্রতি পাঁচ হাজার কিলোমিটার পর এয়ার ফিল্টার চেঞ্জ করি এবং ২০০০ - ২২০০ কিলোমিটার পর পর আমি আমার ইঞ্জিন অয়েল চেঞ্জ করি।
আমি আমার বাইকে যে ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করি, সেটা হচ্ছে MOTUL 10w30 গ্রেড এর সেমি-সিন্থেটিক ইঞ্জিন অয়েল। এটা হিরো মটরস এর রিকমেন্ডেড ইঞ্জিন অয়েল গ্রেড। আমি এটি ব্যবহার করে আসতেছি ব্রেকিং পিরিয়ড এর পর থেকেই। পারফর্মেন্স খুব স্মুথ এবং দুর্দান্ত। বাইকের ইঞ্জিন সাউন্ড অনেক সুন্দর আছে এখনো। বাইকের পার্টস পরিবর্তন বিষয়ে বলতে গেলে এখনও পর্যন্ত আমার বাইকের সেইভাবে কোন পার্টস পরিবর্তন করাতে হয়নি।
আমার বাইকের বয়স চলছে প্রায় ৩.৫ বছর। ১৫ হাজার কিলোমিটার চলার পর আমার বাইকের বল রেসার চেঞ্জ করিয়েছিলাম ১ বার। ক্লাস কেবল আর এক্সিলেটরের কেবল দুবার চেঞ্জ করেছি এয়ার ফিল্টার দুইবার চেঞ্জ করিয়েছি। ২৫ হাজার কিলোমিটার অতিক্রম করার পর চেইন স্প্রোকেট একবার চেঞ্জ করেছি।
মিটারের ক্যাবল পরিবর্তন করেছি ২ বার।মিটার পেনিয়াম চেঞ্জ করেছি ২ বার। বাকি সব কিছু এখনো স্টকের তাই আছে যেমন - টায়ার, ক্লাস প্লেট, ব্যাটারি ইত্যাদি । তার জন্য ধন্যবাদ হিরো মটরকপ কে।
বাইকের মডিফিকেশন বলতে গেলে কোন মডিফিকেশনের বাইকে করিনি। কারণ এটা আমি প্রয়োজন মনে করি নাই। তবে কিছু স্টিকার লাগিয়েছি। যেহেতু আমার বাইকটি হচ্ছে একটি ১০০সিসি সেগমেন্টের বাইক। এটা দিয়ে আসলে খুব বেশি স্পিড তোলা সম্ভব না এবং ওঠানোও ঠিক না। তারপরও আমি ৯৫ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায় স্পিড উঠিয়েছি এবং সেটি দুই থেকে তিনবার উঠেছি মাত্র।
আমার কাছে বাইকটির পাঁচটি ভালো দিক -
- বাইকের মাইলেজ টা ৬৫থেকে ৭০ কিলোমিটার প্রতি লিটারে পাই আমি। হাইওয়েতে ৬৫-৭০ এবং সিটিতে পাই ৫৫-৬০।
- বাইকের সামনে ও পেছনে উভয়েরই টিউবলেস টায়ার
- আই স্মার্ট প্রযুক্তি থাকাতে বাইকটিতে তেল অনেক শাস্ত্রী হয়
- বাইকটির সাথে রাস্তার গ্রপিং টা অনেক স্মুথ
- যদিও ড্রাম ব্রেক, তার পরেও কন্ট্রোলিং এই সেগমেন্ট এ সেরা
- গাড়িটি ছোট হলেও দেখতে খুবি আকর্ষণীয় সাথে এর স্টাইলিস্ট গ্রাবরেইল টি।
আমার কাছে বাইকের খারাপ দিক গুলো -
- গাড়িটর সিটিং পজিশন আমার কাছে ভালো লাগিনি। দীর্ঘ সময় রাইড করলে ব্যাকপেইন হবে। ১০০ সিসি সেগমেন্টের অন্য গাড়ির সিটিং পজিশন এর চেয়ে ভালো।
- গাড়ির হেডলাইটের আলো অনেক কম। স্টকের লাইট দিয়ে হাইওয়ে তে চালানো কষ্টকর ব্যাপার।
- এর সাথে দেওয়া স্টক হর্ন খুব চিপ কোয়ালিটি।
- ৪০/৫০ কিলোমিটার চলার পর প্রচুর পাওয়ারলস করে। যেটা দিয়ে কোন যানবাহন কে ওভারটেক করা কষ্ট সাধ্য।
- চাবি দিয়ে সিট খোলা যাই না। সিট খুলতে গেলে দুপাশে দেওয়া নাট খুলতে হই। তার জন্য সিটের নিচে কিছু সহজে রাখতে পারবেন না। যেটা আমার কাছে খারাপ দিক বলে মনে হয়েছে।
বাইক নিয়ে অনেকবার লম্বা ভ্রমণ করা হয়েছে। নড়াইল থেকে গোপালগঞ্জ টোটাল মেলে ২৫০ কিলোমিটার। ওভারল ভালোই লেগেছিল। তবে আমার এবং আমার পিলিয়নের বসতে মোটামুটি কষ্ট হচ্ছিলো। যদিও বাইকটি ট্যুরে জন্য বানানো না। তবে আমি মাঝে মাঝে সময় পেলে ভ্রমণে বেরিয়ে পরি। পরিশেষে বলতে গেলে বাইকটি এককথায় আমার কাছে অসাধারণ বলে মনে হয়েছে।
আমার কাছে মনে হয় পৃথিবীতে যত দামি বাইক হোক না কেন তার কিছু ভালো দিক কিছু খারাপ দিক তিতা মিঠা অবশ্যই থাকবে। আপনারই পছন্দ করতে হবে আপনার সাথে কোন বাইকটি যাবে। সবকিছু চিন্তা করলে ১০০সিসি সেগমেন্টের মধ্যে স্টাইলিশ এবং মাইলেজ এর কথা যদি চিন্তা করেন, তাহলে বাইকটি হবে দুর্দান্ত এবং এতে আছে আইস্মার্ট প্রযুক্তি যেটা আপনার ফুয়েল ইফিশিয়েন্সি অনেক বাড়িয়ে দেবে। আমার কাছে বাইকটি ব্যবহার করে ভালোই লাগছে।
লিখেছেনঃ আবু হুরায়রা সাকিব
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।