Hero Passion X Pro রিভিউ । টেস্ট রাইড রিভিউ - টিম বাইকবিডি
This page was last updated on 28-Jul-2024 08:05am , By Ashik Mahmud Bangla
হিরো বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় টু হুইলার ব্র্যান্ড। এবছরেই তারা বাংলাদেশে ২টি কমিউটিং মোটরসাইকেল এবং একটি স্কুটার লঞ্চ করেছে। আজ আমরা নিয়ে এসেছি ওদের মধ্যে একটি বাইক, Hero Passion XPro এর টেস্ট রাইড রিভিউ ।
Hero Passion X Pro রিভিউ
Hero Passion X Pro রিভিউ । টেস্ট রাইড রিভিউ - টিম বাইকবিডি
Hero Passion X Pro সর্বপ্রথম দেখানো হয়েছিলো ২০১৯ সালের ইন্দো বাংলা অটোমোটিভ শোতে। বাইকটি ডিজাইন করা হয়েচ্ছে একটি এক্সিকিউটিভ কমিউটার হিসেবে, এবং টার্গেট করা হয়েছে সেসকল বাইকারদের, যারা ১১০ সিসি সেগমেন্টে সুলভ মূল্যে একটি স্টাইলিশ কমিউটার মোটরসাইকেল কিনতে চান।
হিরো প্যাশন এক্স প্রো বাইকে দেয়া হয়েছে ১১০ সিসি সিঙ্গেল সিলিন্ডার এয়ার কুলড ইঞ্জিন। ইঞ্জিনটি ৯.৪ বিএচপি শক্তি এবং ৯ নিউটন মিটার টর্ক উৎপন্ন করে, এবং এর সাথে রয়েছে একটি ৪-স্পীড গিয়ারবক্স। বাইকটিতে I3S টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়েছে। হিরো এর নিজস্ব এই টেকনোলজি ট্রাফিকের মধ্যে বাইকের ফুয়েল বাচাতে সাহায্য করে। I3s এর পাশাপাশি বাইকটিতে সেলফ এবং কিক স্টার্টার রয়েছে।
ডিজাইন এর ব্যাপারে যদি বলা হয়, তবে আমরা Hero Ignitor এর রিভিউ থেকে ইতিমধ্যেই দেখেছি যে বাইকটি কতটা ভালো ডিজাইন করা ছিলো, এবং এর চাইতে কম সিসি হওয়া সত্ত্বেও Hero Passion X Pro এই মোমেন্টাম ধরে রেখেছে। হিরো প্যাশন এক্সপ্রো বাইকে দেয়া হয়েছে হ্যালোজেন হেডলাইট, বাল্ব ইন্ডিকেটর এবং এর ফুয়েল ট্যাংকের দুপাশে সাইড এয়ার স্কুপ থাকার কারনে বাইকটি অনেকটাই মাসকুলার দেখায়।
এছাড়াও বাইকটিতে X শেপের এলইডি টেইললাইট, এবং শাড়ি গার্ড রয়েছে। ডিজাইন এর দিক থেকে বাইকটি এই সেগমেন্ট এর সকল এক্সিকিউটিভ কমিউটার এর এক্সপেক্টেশন ধরে রেখেছে। বাইকটিতে একটি এনালগ স্পীডোমিটার এর সাথে একটি ডিজিটাল মিটার রয়েছে, যেটা ফুয়েল ট্যাংক ক্যাপাসিটি এবং অডোমিটার শো করে। বাইকটিতে সেফটি ফিচার হিসেবে একটি সাইড স্ট্যান্ড ইন্ডিকেটর রয়েছে। বাইকটির মিটারের ডিজিটাল ইউনিটটাতে নীল ব্যাকগ্রাউন্ড রয়েছে, যার ফলে দিনে এবং রাতে লেখা পড়তে কোন সমস্যা হয় না।
বাইকটিতে এএইচও – অটোমেটিক হেডলাইট অন সিস্টেম এবং ভালো ফুয়েল এফিশিয়েন্সি এর জন্য বিএসফোর ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়াও, বাইকের সেফটি নিশ্চিত করতে বাইকের সামনে দেয়া হয়েছে ২৪০ মিলিমিটার এর ফ্রন্ট ডিস্ক ব্রেক এবং পেছনে দেয়া হয়েছে ১৩০ মিলিমিটার এর ড্রাম ব্রেক। বাইকটির উভয় চাকাতেই টিউবলেস টায়ার দেয়া হয়েছে।
বাইকটির টায়ারের সাইজ কিছুটা ছোট দেয়া হয়েছে, কারন বাইকটি ডিজাইন করা হয়েছে শহরে এবং হাইওয়েতে আরামদায়কভাবে কমিউট করার জন্য। সাসপেনশন এর কথা বলতে গেলে, বাইকটির সামনে টেলিস্কোপিক ফর্ক রয়েছে, এবং পেছনে দেয়া হয়েছে ৫ স্টেপ এডজাস্টেবল ডুয়েল শক এবজর্বার। বাইকটিতে একটি ৯.২ লিটারের ফুয়েল ট্যাংক রয়েছে, এবং বাইকটির কার্ব ওয়েইট হচ্ছে ১১৯ কেজি।
শহরে বা হাইওয়েতে রাইড করার সময় বাইকের ওজন কোনপ্রকার সমস্যা তৈরী করে না, এবং ছোট পার্কিং স্পেসেও বাইকটি খুব সহজেই নড়াচড়া করা যায়।
Hero Passion X Pro – পারফর্মেন্স
মাইলেজঃ যেকোন কমিউটার মোটরসাইকেল এর সবচাইতে গুরুত্বপূর্ন ব্যাপার হচ্ছে এর মাইলেজ। ঢাকা শহরে আমরা মাইলেজ পেয়েছি ৫০ কিমি/লিটার, এবং হাইওয়েতে ৫৫ কিমি/লিটার মাইলেজ পেয়েছি। এখানে উল্লেখ করা ভালো যে, ঢাকা শহরে বাইকটি টেস্ট করার সময় রাইডিং স্টাইল ছিলো সেইফ এবং ধীর, এবং হাইওয়েতে রাইড করার সময় সুযোগ পেলেই বাইকের স্পীড ৮০ কিমি/ঘন্টায় চালানো হয়েছে। বাইকটি ২০০০ কিলোমিটার রাইড করার পরে আপনি বাইকের আসল মাইলেজ পাবেন।
টপ স্পীডঃ হিরো প্যাশন এক্সপ্রো বাইকের টপ স্পিড আমরা পেয়েছি ১০২ কিমি/ঘন্টা
ব্রেকিংঃ বাইকটির ব্রেকিং ছিলো আশাতীত, এবং এটা আমাকে আসলেই অবাক করে দিয়েছে। বাইকটির সামনের ২ পিস্টন ক্যালিপারসমৃদ্ধ ২৪০ মিলিমিটার ডিস্ক ব্রেক বাইকের ব্রেকিং সক্ষমতা অনেক বেশি বাড়িয়ে দিয়েছে। আমি খুবই সন্তুষ্ট যে তারা এই প্রাইজ রেঞ্জের একটা বাইকে ভালো ব্রেকিং সিস্টেম দিয়েছে।
হ্যান্ডলিংঃ আমি হিরো ইগনাইটর রাইড করেছি, এবং সেই তূলনায় প্যাশন এক্সপ্রো নিয়ে আমি খুবই সন্তুষ্ট। বাইকটির স্লীক ডিজাইন এবং ভালো টার্নিং রেডিয়াস এর কারনে আপনি ঢাকায় ভারী ট্রাফিকের মধ্যে বাইকটিকে খুব সহজেই রাইড করতে পারবেন, এবং ছোটখাটো গ্যাপ দিয়েও সহজেই পার হয়ে যেতে পারবেন। এমনকি, একজন পিলিয়ন নিয়েও বাইকটি ম্যানুভার করতে কোন সমস্যা হয় না। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, বাইকটিতে আরেকটু মোটা টায়ার দেয়া হলে বাইকটির হ্যান্ডলিং আরেকটু ভালো হতো। তবে, মোটা টায়ার দিলে বাইকের মাইলেজ তূলনামুলকভাবে কমে যাবে, যেটা কমিউটিং মোটরসাইকেল এর জন্য বেশ বড় একটি ইস্যু।
ভাইব্রেশনঃ বাইকটির ইঞ্জিনটি রিফাইনড এবং স্মুথ, এবং পাওয়ার ডেলিভারি সমান্তরাল। কেবলমাত্র হাইআরপিএম এ কিছুটা ভাইব্রেশন অনুভব করা যায়। সাধারনত ৭০ কিমি/ঘন্টা এর চাইতে বেশি স্পিড তুললে ফুটপেগ এবং সামনের হেডলাইটের ফেন্ডারে কিছুটা ভাইব্রেশন অনুভব করা যায়। বাইকটির গিয়ারবক্স স্মুথ, এবং গিয়ারবক্স থেকে কোনপ্রকার শব্দ পাওয়া যায় না। একমাত্র যেই জিনিসটি নিয়ে আমার অভিযোগ সেটা হচ্ছে বাইকের সেকেন্ড গিয়ার। বাইকটি সেকেন্ড গিয়ারে থাকলে লো স্পীডে বাইকটি মুভ করতে কিছুটা বেগ পেতে হয়, এবং তখন ফার্স্ট গিয়ারে শিফট করে মুভ করতে হয়।
হেডলাইটঃ বাইকটির এসি হেডলাইট মাঝেমধ্যেই বিরক্তির কারন হয়ে দাড়াতে পারে। বাইকটির হেডলাইট সেগমেন্টের সেরা নয়, এবং রাত্রিবেলা ৮০ কিমি/ঘন্টা গতিতে বাইক চালালে বাইকের সামনে সবকিছু দেখতে খুবই কষ্ট হয়।
সাসপেনশনঃ বাইকের সাসপেনশনগুলো সফট। রাফ রোডে এগুলো বেশ ভালো ফিডব্যাক দেয়, তবে এরা আরেকটু সফট হলে আরো বেশি ভালো হতো। শহরে ভারী পিলিয়ন নিয়ে রাইড করেও আমরা সাসপেনশন থেকে ভালো ফিডব্যাক পেয়েছি।
টায়ারঃ বাইকের মাইলেজ এর উন্নতি করার জন্য বাইকে কম প্রশস্ত টায়ার ব্যবহার করা হয়েছে, তবে আমি খুবই সন্তুষ্ট যে বাইকের টায়ারগুলো টিউবলেস টায়ার।
এছাড়াও বাইকের টায়ারের গ্রিপ আমাকে খুবই ইমপ্রেস করেছে, এমনকি ভেজা রাস্তাতেও নরমাল স্পিডে রাইড করার সময়ে আমি বাইকের টায়ার থেকে যথেষ্ট ভালো গ্রিপ পেয়েছি।
I3S টেকনোলজিঃ হিরো এর এই প্রযুক্তিটি ঢাকা শহরের ট্রাফিকের মধ্যে বেশ উপকারী। তবে, অনেকেই এই টেকনোলজিতে কিছুটা বিরক্ত হতে পারেন, সেক্ষেত্রে রাইডার এই I3S টেকনোলজি অফ করে রাখতে পারবেন।
Hero Motorcycles At Indo-Bangla Automotive Show 2019
Hero Passion X Pro - রিভিউ
ভালো দিকসমূহঃ
- বাইকটি দেখতে খুবই সুন্দর এবং স্টাইলিশ
- ইঞ্জিনের পাওয়ার সেগমেন্ট অনুযায়ী খুবই ভালো
- সামনের ডিস্ক ব্রেক ভালো ফিডব্যাক দেয়
- সাসপেনশন ফিডব্যাক যথেষ্ট ভালো
- দাম অনুযায়ী বিল্ড কোয়ালিটি বেশ ভালো
- শহরে এবং হাইওয়েতে ভালো হ্যান্ডলিং
- কমিউটার বাইক হওয়া সত্ত্বেও টিউবলেস টায়ার রয়েছে যা খুবই উপকারী
খারাপ দিকসমূহঃ
- যেহেতু এটা একটি এক্সিকিউটিভ কমিউটার, তাই হিরো হয়তো আরেকটু প্রশস্ত টায়ার দিতে পারতো।
- হেডলাইটটা মোটেও শক্তিশালি নয়
- ২য় গিয়ারের রেশিও ঠিকঠাক নেই, কোম্পানির উচিত ছিলো ২য় গিয়ার রেশিও টিউন ডাউন করে দেয়া।
- যদিও এটা অনেকটাই রাইডিং স্টাইলের উপর নির্ভর করে, তবে অন্যান্য ১১০ সিসি মোটরসাইকেল এর তূলনায় মাইলেজ ফিগার সামান্য কম।
আমার মনে হয়, ১,০৬,০০০ টাকা প্রাইজট্যাগ নিয়ে এই বাইকটি সেগমেন্টের সেরা বাইকগুলোর মধ্যে একটি।
পূর্বে হিরো ইগনাইটর, এবং এখন এই Hero Passion X Pro টেস্ট করার পরে আমি বলবো, হিরো বাংলাদেশের কমিউটিং মোটরসাইকেল সেগমেন্টকে খুবই গুরুত্বের সাথে নিয়েছে, এবং এই সেগমেন্টে তাদের সকল বাইককে স্টাইলিশ এবং রিফাইন্ড করছে।