Hero Hunk 150DD মাইলেজ ১৯ কিলোমিটার - আশিক রহমান
This page was last updated on 28-Jul-2024 01:20am , By Raihan Opu Bangla
আমি আশিক রহমান । বাড়ি ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলায় মাস্টার্স পড়া অবস্থাতেই ব্যবসা শুরু করি পরাশুনা শেষ করে এখন পুরোপুরি ব্যবসায়ী। অনেকদিন যাবৎ ভাবছি আমার ব্যবহৃত বাইক Hero Hunk 150DD (Dual Disc) বাইকটি নিয়ে একটা রিভিউ লিখব আজ শুরু করতে যাচ্ছি Hero Hunk 150DD (Dual Disc) বাইকটির মালিকানা রিভিউ।বাইক চালানোর হাতে খড়ি Bajaj Champion দিয়ে এটা আমার বাবার বাইক ছিল আমি যখন সপ্তম শ্রেণীতে পড়ি আমার বন্ধুর মাধ্যমে চালানো শিখি এরপর বাবার বাইক টাই মাঝে মাঝে চালাইতাম । অতঃপর Bajaj CT100, Bajaj Platina, Bajaj Discover125, Hero Speed, TVS Apache RTR এবং বর্তমানে Hero Hunk 150DD বাইক চালাচ্ছি।
মূলত বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে হওয়ার কারণে বাইক চালানো শিখতে চাইলে বাবা দিত না কিন্তু বাইকের প্রতি অফুরন্ত ভালোবাসার কারণে বাবা না থাকলে বাইকটির চাবি চুরি করে গোপনে চালাইতাম।
Hero Hunk 150DD বাইক এবং বাইকিং ভালোবাসার কারণ -
ছোটবেলা থেকেই দেখেছি আমার বাবার বাইকের প্রতি অনেক আগ্রহ ছিল এলাকায় তখন হাতেগোনা কয়েকটি বাইক ছিল তার মধ্যে বাবারও একটা ছিল ওনার এই বাইকের প্রতি আকর্ষণ আমাকে অনুপ্রাণিত করে আর বাইকের প্রতি ভালবাসাটা অনেক বাড়িয়ে দেয়।
Also Read: Hero Hunk 150DD Price In Bangladesh
আর একটা পুরুষের কর্মজীবনের গতি সাধারণের তুলনায় ১০ গুণ বাড়িয়ে দেয় একটা বাইক । বাইকিং ভালোবাসার কারণ, নিঃস্বার্থ ভালোবাসা যদি খুজতে যান বাইকারদের সাথে একবার মিশে দেখুন জীবনের ভুল ভেঙে যাবে, আমাদের ফরিদপুর রাইডার্স ক্লাব FRC থেকে শুরু করে প্রত্যেকটা বাইকিং পরিবারের ভাইদের ভালোবাসা দেখলে কলিজা কেটে দিতে মন চায় যাই হোক বাইকিং এর অনেক ঘটনা আছে পরে একদিন পোস্টে লিখবো।
কিভাবে বাইকটি বেছে নিলাম এবং বাইক কেন ব্যবহার করি - মূলত আমার বন্ধুদের দামি দামি বাইক ছিল, আমি দামের উপর নির্ভর করে Hero Hunk 150DD বাইকটি নিয়েছিলাম। বর্তমানে আমি ইন্টারনেট ব্রড ব্যান্ড ব্যবসার সাথে জড়িত আর আমার পুরা ব্যবসাটাই এই বাইকটার উপর নির্ভর করে, সারাদিন বাইকটি নিয়ে এক এক জায়গায় যেতে হয় । এই বাইকটা আমাকে যে সাপোর্ট দিয়েছে তা প্রশংসা করার মত।
বাইকটির দাম এবং বাইকটি কোথা থেকে কিনলাম - আমার হাতে নিজের জমানো টাকা ছিল ৭৫ হাজার বাবাকে বললাম সে দিল ১ লাখ, চিন্তা করলাম এই টাকার মধ্যে 150cc সব থেকে কম দামি বাইক ভালো হবে কোনটা ইন্টারনেটে দেখলাম Hero Hunk 150DD ২০৪০০০ ঈদ অফারে পাওয়া যাচ্ছে ১ লক্ষ ৮৪ হাজার টাকায় তখন Bajaj Pulsar, TVS Apache RTR, Honda Trigger এর থেকে বেশি দাম ছিল।
ইন্টারনেটে সার্চ দিয়ে বাইকবিডি এর মাধ্যমে বাংলাদেশের সমস্ত শো-রুম এর নাম্বার কালেক্ট করি। আমার পছন্দ ছিল সিলভার কালার এই কারণে সমস্ত জায়গায় কল করি সিলভার কালার কোথাও নাই।
ঈদের ডিসকাউন্টে সেল হয়ে গেছে এদিকে ঈদের দ্বিতীয় দিন অফারের সময় আছে মাত্র একদিন। কল দিতে দিতে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের সামনে সোনারগাঁও মটরস থেকে জানতে পারলাম ওনাদের কাছে এক পিস আছে ডাবল ডিস্ক সিলভার কালার সব মিলে গেলেই সাথে সাথে বুকিং দিলাম। বাইক কিনতে যাবার দিনের ঘটনা - ফরিদপুর থেকে কুমিল্লা তখন আমার কাছে অনেক দূর কারণ আমি এর আগে কুমিল্লা কখনো যাইনি।
ঈদের তৃতীয় দিন রওনা হলাম কয়েকজনকে বললাম সাথে যেতে কেউ গেল না একাই বেরিয়ে পড়লাম। ভাগ্য ভালো ছিল জানলাম চাচাতো ভাই একটা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে বদলি হয়ে আসছে। সুতরাং নিশ্চিন্তে চলে গেলাম পৌঁছানোর পরে ম্যানেজার খুব আন্তরিক এতদুর থেকে গেছি আরও দুই হাজার টাকা ডিসকাউন্ট দিলো।
প্রথমবার Hero Hunk 150DD বাইকটি চালানোর অনুভূতি -
বাইক রেডি হওয়ার পরে ফুল ট্যাংকি তেল নিয়ে রওনা হলাম ফরিদপুরের উদ্দেশ্যে । ৩০-৪০ কিলোমিটার গতিতে ফরিদপুরের পথে রোদ-বৃষ্টি কিন্তু আমি কোথাও থামিনি। কারণ যেতে হবে এই গতিতে বারোটায় কুমিল্লা থেকে রওনা হয়ে রাত ৯ টায় বাসায় ফিরলাম ।
Hero Hunk 150DD এর ফিচারগুলো - এয়ারকুল ফোর স্ট্রোক সিঙ্গেল সিলিন্ডার ইঞ্জিন 149.2 সিসি, পাওয়ার 10.6kw (14.4 ps)@8500 আরপিএম, 12.80nm টর্ক, @6500 আরপিএম, 0-60kmph 5 সেকেন্ডে সেলফ এবং কিক স্টার্ট।
বাইকটি কতবার সার্ভিস করিয়েছি এবং কোথা থেকে কিভাবে - প্রথমদিকে ফ্রি সার্ভিস করিয়েছি ছয়টা ফরিদপুর শো-রুম থেকে ৫টা এবং ঢাকা তেজগাঁও প্রধান সার্ভিস সেন্টার থেকে একটা বর্তমানে আমার উপজেলা বোয়ালমারী থেকে অভিজ্ঞ মেকার দিয়ে সার্ভিস করি এই পর্যন্ত বড় কোন সমস্যা হয়নি ইঞ্জিন অয়েল চেঞ্জ ইত্যাদি আমি নিজে করি।
২৫০০ কিলোমিটার পূর্বে ও পরে বাইকের মাইলেজ - ২৫০০ কিলোমিটার পূর্বে আমি আমার হিরো হাঙ্ক এর মাইলেজ পেয়েছি ১৯কিলোমিটার প্রতি লিটারে বিশ্বাস করবেন না জানি কিন্তু কেন সে বিষয়ে পরে নিচের অতিরিক্ত কয়েক লাইন কষ্ট করে পড়ে নিবেন তাহলে বুঝবেন। ৩৫০০ কিলোমিটার এরপরে আমি মাইলেজ পেয়েছি ৫৩ কিলোমিটার প্রতি লিটারে এখন পর্যন্ত ৫০+ পাচ্ছি লিটারে এক সপ্তাহ আগেও মেপেছি।
কিভাবে আমি বাইকের যত্ন ও মেইনটেন্যান্স করি - কাজের বাইরে সুযোগ পাইলেই প্রতিমাসে ১-২ বার ওয়াশ করার চেষ্টা করি, ইঞ্জিন অয়েল সরাসরি ডিলারের কাছ থেকে কিনি । মাঝে মাঝে এয়ার ফিল্টার, অয়েল ফিল্টার, রোটার ফিল্টার, টায়ারের এয়ার প্রেসার এগুলো আমার প্রায় সময় সুযোগ পেলে চেক করি, মেকারের কাছে বসে থেকে কাজ করানোর চেষ্টা করি।
বাইকটিতে ব্যবহার করা ইঞ্জিন অয়েল - একটা বাইকের প্রধান হচ্ছে তার ইঞ্জিন অয়েল আর এটার দিকে লক্ষ না করলে নিশ্চিত পস্তাতে হবে। আমি হ্যাভোলিন ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করি আর হিরো বাইকের গ্রেড হচ্ছে 10w30। দীর্ঘদিন হ্যাভোলিন ব্যবহারে আমি সন্তুষ্ট ভালো পারফর্মেন্স পাই, প্রতি ১০০০ কিলোমিটার পর পর পরিবর্তন করি।
বাইকের যে যে পার্টস পরিবর্তন করেছি এবং কেন - এয়ার ফিল্টার পরিবর্তন করেছি কয়েকবার কারণ আমাদের দেশে ধুলা-ময়লার প্রকোপ অনেক বেশি আর এটা ইঞ্জিনের ফুসফুস বলা চলে। ব্রেক প্যাড কয়েকবার পরিবর্তন করেছি কারণ এটা তো নিত্য ঘষায় ক্ষয় হওয়ার জিনিস, হেড লাইট এলইডি লাগিয়েছি বেশি আলোর জন্য, হর্ন এক্সট্রা লাগিয়েছি বেশি সাউন্ড এর জন্য, চেইন স্পোকেট সেট পরিবর্তন করেছি কারণ ক্ষয় হয়ে গিয়েছিল, বল রেসার পরিবর্তন করেছি দুর্বল হয়ে গিয়েছিল।
ইঞ্জিন এর নিচে অ্যাপাচি এর ইঞ্জিন কিট লাগিয়েছি একটু স্পোর্টি লুকস এবং কাদা ময়লা থেকে ইঞ্জিন কে রক্ষা করার জন্য। আমি তেমন স্পিড উঠানোর সুযোগ পাই নাই তারপর একবার ১১৪ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা পর্যন্ত স্পিড তুলেছিলাম ।
বাইকটির কিছু ভালো দিক -
- এটার কন্ট্রোল আমার কাছে সন্তোষজনক
- মাইলেজ ৩৫০০ এরপরে থেকে অবিশ্বাস্য ভালো পেয়েছি
- রেডি পিকআপ অনেকটাই সন্তোষজনক
- লুক আমার কাছে ভালই লাগে
- উচ্চ গতিতে ভাইব্রেশন খুবই কম করে
বাইকটির কিছু খারাপ দিক -
- পেছনের টায়ার চিকন
- হেড লাইটের আলো খুবই কম তবে এক্সট্রা লাগিয়ে নিলে ওকে
- সাথে থাকা হর্নের সাউন্ড সন্তোষজনক না
- পাটর্স এর দাম বেশি মনে হয়
- ইঞ্জিন কিল সুইচটা থাকলে ভালো হতো যদিও আমার সমস্যা হয় না।
লং ট্যুর - আমার Hero Hunk 150DD নিয়ে আমি গত বছর সাজেক গিয়েছিলাম পাহাড়ি রাস্তা সাথের বন্ধুদের সব দামি বাইক মনে করেছিলাম কেমন হবে। কিন্তু আমাকে এতটাই সন্তুষ্ট করেছে এর পাওয়ারফুল ইঞ্জিন অন্য নামি দামি বাইক এর তুলনায় বেশ সার্ভিস দিয়েছে, যা আমার কল্পনার থেকেও অনেক বেশি। সিটিং পজিশনটা আরামদায়ক হওয়ার দরুন আমি ব্যাক পেইন খুবই কম পেয়েছি। এককথায় লং ট্যুর এর জন্য পারফেক্ট একটা বাইক, হাতের কব্জিতেও কোন প্রকার প্রেসার পড়ে না।
চূড়ান্ত মতামত ও পরামর্শ - বাইকটা এক কথায় ৪-৫ বছর চালাচ্ছি আমি সত্যিই আমার বাইকটি নিয়ে খুবই সন্তুষ্ট বিশেষ করে এর মাইলেজ স্মুথনেস কন্ট্রোল সবদিক দিয়ে, আমার জীবনের একটা অঙ্গ হয়ে গেছে এটা। উপরে বলেছিলাম মাইলেজ ৩৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটার প্রতি লিটারে পেয়েছি। তার কারণ নতুন বাইকের কার্বুরেটর নষ্ট ছিলো কোন সার্ভিস সেন্টার বুঝতে পারেনাই।
মূলত এত তেল এবং কালো ধোঁয়া হওয়ার কারণ এটা, স্পার্ক প্লাগ এই সময় চার থেকে পাঁচটা পরিবর্তন করা হয়েছে। যে ২২০০০ টাকা ডিসকাউন্ট পেয়েছিলাম সেটার থেকে বেশি খরচ হয়েছিল এই ভোগান্তিতে তেজগাঁও হেড সার্ভিস সেন্টার পর্যন্ত গিয়েছি সমাধান দিতে পারেনাই, ইঞ্জিন হেড পরিবর্তন করে দিয়েছে। কিন্তু ঠিক হয়নাই, অনেক ঝামেলার পরে স্থানীয় এক অভিজ্ঞ মেকার এর মাধ্যমে বুঝলাম কার্বুরেটর নষ্ট।
সরাসরি ইন্ডিয়া থেকে আমার বন্ধুর মাধ্যমে অরিজিনাল কার্বুরেটর এনে লাগানোর পরে দেখি মাইলেজ ৫৩ কিলোমিটার পর্যন্ত পাচ্ছি। তাই বলবো গোবরে পদ্মফুল ফোটে স্থানীয় মেকার পেরেছে হেড সার্ভিস সেন্টার যেটা পারেনি। পরিশেষে বলি শেষ ভালো যার সব ভালো তার It’s My Super Bike. লেখাটি সম্পূর্ন আমার ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে দিলাম ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ।
লিখেছেনঃ আশিক রহমান
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।