Hero Hunk 150 এর টপ স্পিড ১২৭ কিলোমিটার/ঘণ্টা - অন্তর
This page was last updated on 27-Jul-2024 11:46am , By Raihan Opu Bangla
আমি অন্তর । আমি একজন ছাত্র এবং ফ্রিল্যান্সার। আমি বাস করছি ঢাকার উত্তরাতে। আমি বর্তমানে একটি Hero Hunk 150 বাইক ব্যবহার করছি । আজ আমি আমার এই বাইকটি নিয়ে কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো ।
বাইকের প্রতি ছোট বেলা থেকেই একটা অন্যতম আগ্রহ কাজ করতো। ছোট বেলায় মামার সাথে বায়না ধরতাম বাইকে ঘুরার জন্য, যখন বাইক চালাতে জানতাম না। আর সেই কারণে ২০০৮ সালে যখন ক্লাস সেভেন এ পড়ি আমার কাজিনের কাছে বাইক চালানো শিখি। বাইকটি ছিলো Yamaha RX100 । আজ আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করবো আমার ব্যবহৃত Hero Hunk 150 ২০১৭ মডেল এর বাইকটি নিয়ে।
বাইকটি আমি প্রায় ২ বছর চালিয়েছি। আমি ভ্রমণ পিপাসু মানুষ ,আর মটো ট্রাভেল করা আমার শখ। বাইকটি আমি প্রায় ২১,০০০ কিলোমিটার রাইড করেছি । পাহাড়ি রাস্তা, সমতলে যা দেশের প্রায় বেশির ভাগ জায়গায় এবং সেই রাইডের অভিজ্ঞতায় বাইকটির ভাল মন্দ দিক আপনাদের মাঝে তুলে ধরার চেস্টা করবো।
Hero Hunk 150 কেনার কারন -
আমাকে অনেকেই প্রশ্ন করে থাকে তুমি এই যুগে এসেও এই বাইকটি কেন কিনলেন? জবাবে আমি সাধারনভাবেই বলি এই বাইকটি কেনার অন্যতম প্রধান কারন হচ্ছে বাজেট। এই সেগমেন্ট এ Hero Hunk 150 যেন সাধ্যের মধ্যে সবটুকু সুখ। যে কোনো বাইকের ক্ষেত্রে আমরা প্রথমে যে বিষয় টি যাচাই করি তা হচ্ছে বাইকের পারফর্মেন্স তারপর আউটলুক, ব্রেকিং সিস্টেম, বিল্ড কোয়ালিটি ইত্যাদি যা আমি ধাপে ধাপে আপনাদের সাথে শেয়ার করছি ।
Click To See Hero Hunk 150 Price In Bangladesh
আউটলুক -
আউটলুক এর কথা বলতে গেলে Hero Hunk 150 বাইকটির আউটলুক আমার কাছে বেশ ভালই লেগেছে। কিন্তু সমসাময়িক চিন্তা করতে গেলে সেই ২০১২ সাল থেকে একই রকম ডিজাইন এর হাংক বাংলাদেশে চলে আসছে। যার বডি স্ট্রাকচার চেঞ্জ করে একটু বেশি স্পোর্টি আর মাসকুলার করে আনাটা আমার কাছে উত্তম মনে হয়েছে। তবে এই সেগমেন্ট এর অন্যান্য যে কোনো ১৫০ সিসির বাইকের তুলনায় অতটাও খারাপ নয়।
পারফর্মেন্স -
পারফরমেন্স একটি বাইকের মুল এবং প্রধান বিষয়। হিরো হাংকে রয়েছে ১৪৯.২ সিসির এয়ারকুল্ড ফোর স্ট্রোক এর ইঞ্জিন যার মেক্সিমাম পাওয়ার ১০.৬ কিলোওয়াট@ ৮৫০০ আর পি এম এবং সেই সাথে এটি ১২.৮ নিউটন মিটার @৬৫০০ টর্ক উৎপন্ন করতে পারে।
এই বাইকটির ইনিশিয়াল পাওয়ার সাপ্লাই ভাল যা হাইওয়ে তে ওভারটেকিং বা স্পিড তুলতে আমাকে কখোনো হতাশ করেনি। এবং কি টানা শত শত কিলোমিটার পাড়ি দিয়েছি কখোনো আমাকে এর ইঞ্জিন হতাশ করেনি।বাইকটি ৫ সেকেন্ড সময়ের মধ্যে ৬০+ স্পিড তুলতে সক্ষম। বাইকটি রাইড করে আমি এ পর্যন্ত টপ স্পিড পেয়েছি সিংগেল ১২৭ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা এবং পিলিওন সহ ১১৯ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা (স্টক অবস্থায়)।
Click To See Hero Hunk 150 Price In Bangladesh
ব্রেকিং এবং টায়ার -
Hero Hunk 150 এ রয়েছে ডাবল ডিস্ক এবং সিংগেল ডিস্ক এডিশন। আমি ডাবল ডিস্কের টি ব্যবহার করছি যেটাতে সামনের ব্রেকে ব্যবহার করা হয়েছে ২৪০ মিলিমিটার ডিস্ক ব্রেক এবং পেছনের ব্রেক হিসেবে এটাতে দেয়া হয়েছে নিশিন এর ২২০ মিলিমিটার ডিস্ক ব্রেক। যাতে আমি পেয়েছি ব্রেকিং এ খুব ভালো সাপোর্ট। বাইকটিতে সামনের চাকায় ব্যবহৃত হয়েছে ৮০/১০০*১৮ টায়ার এবং পেছনের চাকায় ব্যবহৃত হয়েছে ১০০/৯০*১৮ যা ১৫০ সিসি সেগমেন্ট অনুযায়ী প্রয়োজনের তুলনায় কম।
মাইলেজ -
হিরো হাংক বাইকটিতে রয়েছে ১২.৮ লিটার ক্যাপাসিটির ফুয়েল ট্যাংক (রিজার্ভ-২.২লিটার)। Hero Hunk 150 ২০১৭ মডেল এর মাইলেজ নিয়ে আমি সন্তুষ্ট। সিটিতে রাইডিং এর সময় আমি এর মাইলেজ পেয়েছি ৪০-৪২ কিলোমিটার প্রতি লিটার এবং হাইওয়ে তে ৪৫+- কিলোমিটার প্রতি লিটার।
বিল্ড কোয়ালিটি -
বিল্ড কোয়ালিটির কথা বলতে গেলে আমি বলবো এর বিল্ড কোয়ালিটি আমি ভাল পেয়েছি। বাইকের কালার, ফিনশিং থেকে শুরু করে প্রতিটি অংশের কোয়ালিটি আমার কাছে মোটামুটি ভালই মনে হয়েছে।
হেডলাইট এবং ব্যাটারি -
বাইকটিতে রয়েছে ১২ ভোল্ট-৩৫/৩৫ ওয়াট এর (মাল্টি রিফ্লেকটর) হ্যালোজেন হেডলাইট যা সিটি তে চলাচল এর উপোযোগী হলেও হাইওয়ে তে পুরাই নিরাশ করে যার দরুন আমাকে আফটারমার্কেট এল ই ডি বালব ইন্সটল করে নিতে হয়েছে। বাইক টির ব্যাটারি ১২ ভোল্ট-৪ এম্পিয়ার এম এইচ ব্যাটারী পারফরমেন্স ভাল, বাইকে এক্সট্রা হর্ন, ফগলাইট লাগানোর পরেও সাপোর্ট ভাল পেয়েছি।
Click To See Hero Hunk 150 2019 - First Impression
সাসপেনশন এবং চেসিস -
এর সামনে রয়েছে দুটি টেলিস্কোপিক হাইড্রলিক শক এবজর্বার এবং পেছনে রয়েছে সুইং আর্ম সাসপেনশন সাথে নাইট্রক্স গ্যাস রিজার্ভার যা আমাকে সিটি, হাইওয়ে, ভাঙা রাস্তায় সবখানে খুব ই ভালো সাপোর্ট দিয়েছে এবং সারাদিন চালিয়েও কোনো ব্যাক পেইন হ্যান্ড পেইন তেমন অনুভুত হয়নি।
এর চেসিস এ রয়েছে টিউবুলার ডায়মন্ড ফ্রেম যা ১৪৬ কেজি কার্ব ওয়েটের বাইক টিকে খুব ভালো ব্যালেন্স প্রদান করে এবং রাইডিং এর সময় এই বাইকের ওয়েট ডিস্ট্রিবিউশন ভাল।
মিটার -
হিরো হাংক এ রয়েছে হাফ ডিজিটাল কনসোল যেখানে আপনি পাবেন ডিজিটাল স্পিডোমিটার, ডিজিটাল ওডোমিটার এবং ট্রিপ মিটার। আর সাথে আছে ক্লক, আরপিএম মিটার এবং ফুয়েল গেস মিটার হিসেবে আছে এনালগ সিস্টেম ।
পার্টস এভেইবিলিটি -
হিরো হাংকের পার্টস এভেইবিলিটি ভাল যা প্রয়োজনের সময় দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় ও পেয়েছি। আমি এ পর্যন্ত পার্টস চেঞ্জ করেছি যা রেগুলার - ব্রেক প্যাড, এয়ার ফিল্টার, এবং ১৭,১০০ কিলোমিটারে চেইন স্প্রকেট সেট। তবে বাইকের দাম কম হলেও পার্টসের দাম তুলনামূলক বেশি।
Hero Hunk 150 বাইকটির কিছু ভাল দিক -
- ইঞ্জিন পারফরমেন্স
- কম্ফোর্টনেস
- বিল্ড কোয়ালিটি
- স্পিড
- ব্রেকিং
- দাম
Hero Hunk 150 বাইকটির কিছু খারাপ দিক -
- চিকন চাকা
- হাই আরপিএম এ প্রচুর ভাইব্রেশন করে
- হেডলাইট এসি, কম আলোর হেডলাইট
- এক্সস্ট সিস্টেম এর সাউন্ড একটু স্পোর্টি হলে ভাল হতো
Hero Hunk 150 এর চ্যাসিস এর ওয়েট ডিস্ট্রিবিউশন ভাল, তাই চিকন চাকা স্বত্ত্বেও ব্রেকিং মোটামুটি ভাল । দামের বিবেচনা করতে গেলে হিরো হাংকই সেরা এই সেগমেন্ট এ । আমি আমার হিরো হাংক ২০১৭ নিয়ে সন্তুষ্ট আছি কিন্তু সিংগেল মনোশক করে মোটা টায়ার করে আর মাসকুলার বডি কিট করে হাংক ম্যানুফ্যাকচার যেন এখন সময়ের দাবি। সবাই সাবধানে বাইক রাইড করবেন। সর্বদা হেলমেট পড়ে বাইক রাইড করবেন। লিখায় ভুল ত্রুটি মার্জনীয়। ধন্যবাদ।
লিখেছেনঃ অন্তর
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।