হিরো হোন্ডা সিবিজেড এক্সট্রিম (২৭০০০ কি.মি ) নিয়ে একটি মালিকানা রিভিউ-ইরফান
This page was last updated on 04-Jul-2024 12:28pm , By Shuvo Bangla
হ্যালো, আমি ইরফান ইব্রাহিম । আমি একজন ছাত্র এবং একই সাথে অ্যাকাউন্টস ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছি । আমি একটি সিবিজেড এক্সট্রিম এর মালিক এবং এখানে আমার সিবিজেড এক্সট্রিম (Hero Honda CBZ xtreme) এর মালিকানা রিভিউ তুলে ধরা হল । এক্সট্রিম মানে হল সর্বোচ্চ সীমা এবং এটা আসলেই সত্য।
হিরো হোন্ডা সিবিজেড এক্সট্রিম (২৭০০০ কি.মি ) মালিকানা রিভিউ
যখন আমি ক্লাস সিক্সে পড়তাম তখন আমি আমার বাবার ভেসপাতে চড়তাম । আমি সেই ভেসপাটি থেকেই বাইক চালানো শিখেছি । এরপর আমি একটি সুজুকি ১০০ সিসি কিনি এবং এটাতে আমার সর্বোচ্চ গতি ছিল ৮০ কিলোমিটার/ ঘণ্টায় ।
সিবিজেড এক্সট্রিম কেনার পূর্বে আমি আমার বন্ধুর বড় ভাইয়ের বাইক চালিয়েছিলাম । বলা যায় আমি এ বাইকটির প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম ।
পরবর্তীতে আমি CBZ Xtreme ২০০৯ মডেলের বাইকটি কিনি এবং এর মাধ্যমেই আপনারা এক্সট্রিম অর্থ পড়লেন । কিন্তু মজার ব্যাপার হল লোকজন এটাকে বলে সিবিজেড এক্সট্রিম কিন্তু আমি এটাকে বলি “পারফর্মেন্স ফ্যাক্টরি”. আমার সর্বোচ্চ গতি ছিল উত্তরা রোডে ১২৫ কি.মি/ঘন্টা যদিও সেটা এখন কমে দাঁড়িয়েছে ১২১ কি.মি/ঘণ্টা । আমি বাইকটিকে রঙ করিয়েছি এবং আপনি বলতেই পারেন যে বাইকটি অনন্য এবং বাংলাদেশে এক পিস। এটা এ পর্যন্ত প্রতি লিটারে ৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত মাইলেজ দিয়েছে ।
অন্যান্য ১৫০ সিসি বাইকের তুলনায় এর পিকআপ অত্যন্ত দ্রুত । পুরানো সিবিজেড এর একটি ১৫০ সিসি ইঞ্জিন ছিল, কিন্তু এর ভালো পিকআপ ছিল না এবং মাইলেজও বর্তমান ইঞ্জিনের মত ছিল না । নিঃসন্দেহে সিবিজেড এক্সট্রিমের জন্য হিরো হোন্ডা এই ইঞ্জিনের উন্নয়ন করেছে । এর দ্রুত গতি তোলার ক্ষমতা বিস্ময়কর । একজন বাইক চালকের কাছে তার বাইক হল সবকিছু এমনকি এটা তার বান্ধবীর সাথেও তুলনীয় হতে পারে । আমার কাছে বাইকই হল সবকিছু । আমার সবচেয়ে দীর্ঘ ভ্রমণ হল ঢাকা-কুমিল্লা-ঢাকা যেটা প্রায় ২২৪ কিলোমিটার । বাইকটি যেন আমার নিঃশ্বাসের সাথে মিশে আছে ।
আপনি কিভাবে বাইক চালান এটা কোন ব্যাপার নয়, যেভাবেই চালান দয়া করে নিরাপদভাবে চালান । দয়া করে কোম্পানিভেদে অরিজিনাল যন্ত্রাংশ ব্যাবহার করুন । অরিজিনাল যন্ত্রাংশের দাম কত সেটা কোন ব্যাপার নয়, এটা হল আপনার জীবনের নিরাপত্তা ও বাইক রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপার । ছোটখাট সমস্যার জন্য বাইকে টুলকিট (যন্ত্রাংশের বক্স) রাখুন কারণ অনেক মহাসড়কে আপনি কোন ধরনের গ্যারেজ খুঁজে পাবেন না,তাই সতর্ক থাকুন । কখনো অতিরিক্ত ওজন নিয়ে চালাবেন না কারণ এটা আপনাকে ভারসাম্যহীন করে দেবে । আত্মবিশ্বাস না থাকলে কখনো মহাসড়কে চালাবেন না কারণ বাংলাদেশের সড়কগুলো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ । বাস ও ট্রাকের চালকেরা খুবই দায়িত্বহীন হয় । যদি তারা চাই তাহলে তারা আপনাকে রাস্তা থেকে ছিটকে দিতে পারে অথবা পাশকাটিয়ে যাওয়ার সময় আপনাকে ধাক্কা দিতে পারে, তারা আসলেই কোন কিছুকে পাত্তা দিতে চায় না । আপনার দুই পাশের আয়নাও ব্যাবহার করুন ।
পালসারের অরিজিনাল হ্যান্ডেল লাগানোর পর এর নিয়ন্ত্রণ আরও ভালো হয়েছে । টর্কের ক্ষমতার সাথে তুলনা করে ব্রেক ব্যবস্থা অত ভালো নয় কারণ ২০০৯ মডেলে পিছনে ডিস্ক-ব্রেক যুক্ত করা হয়নি, তাই এটা বড় ধরনের অসুবিধা । কিন্তু আপনি যদি সম্পূর্ণ ব্রেক-ব্যবস্থা তুলনা করেন তাহলে এটা খারাপ নয়, আপনি আমার উপর আস্থা রাখতে পারেন । টায়ারের ক্ষেত্রে বলা যায় শুধুমাত্র অরিজিনাল এমআরএফ টায়ার ব্যাবহার করুন কারণ স্থানীয় টায়ার স্কিড (পিছলে যাওয়া) করতে পারে এবং আপনাকে অন্যদিকে ফেলে দিতে পারে বিশেষ করে বর্ষাকালে এবং পিছলা স্থানে । আমি পিছনের ইনডিকেটর (সংকেত বাতি) এর কথা উল্লেখ করতে চাই যেগুলো পিছনের এলইডি লাইট বিভাগের অন্তর্ভুক্ত যেটা বাইকটিকে একটি সুন্দর স্পোর্টিং লুক দিয়েছে ।
সাইলেঞ্চারটি সবচেয়ে সক্রিয় বস্তু এবং নিঃসন্দেহে এটি বাংলাদেশের ১৫০ সিসি বাইকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর । গিয়ার শিফট প্যাটার্ন হল ১ডাউন এবং ৪ আপ । এগুলো অন্যান্য ১৫০ সিসি বাইকগুলোর মতই যা বাইকটিতে স্পোর্টিং ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তুলেছে । শর্ট ও মসৃণ গিয়ার শিফটিং । সাসপেনসনের ক্ষেত্রে একটি কথাই বলা যায় অসাধারন ! আপনি কোন ধরনের রাস্তায় চালাচ্ছেন এটা কোন ব্যাপার নয়, আপনার মনে হবে আপনি যেন মেঘের মধ্য দিয়ে চালাচ্ছেন অন্তত আমার মনে হয়েছে এবং নিঃসন্দেহে এখানে উন্নতির আর কোন জায়গাই নেই । আপনি হয়ত জেনে থাকবেন যে সিবিজেড এক্সট্রিম হল বাংলাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী ১৫০ সিসির বাইক । এর ১৪৯ সিসির ইঞ্জিনে ১৪.২ বিএইচপি শক্তি উৎপন্ন হয় । এর সবচেয়ে কাছের প্রতিদ্বন্দ্বী হল বাজাজ পালসার ১৫০, যেটা ১৩.৯ বিএইচপি এর কাছাকাছি শক্তি উৎপন্ন করে । এর গতি তোলার ক্ষমতা অসাধারণ !
পরবর্তীতে আমি বাইকবিডি সম্পর্কে শুনি , আপনারা এখান থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ পাবেন কারণ আমি এখান থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ জিনিস শিখেছি । শেষ কিন্তু ছোট করে দেখার মত নয়- যারা বলে “শুধুমাত্র উড়াই ভাল”- এটা ঠিক নয় । আমার সিবিজেড এক্সট্রিম (Hero Honda CNZ xtreme) সম্পর্কে সবকিছুই এই সিবিজেড মালিকানা পর্যালোচনায় তুলে ধরা হল ।
লেখক: ইরফান ইব্রাহিম
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com - এই ইমেইল এড্রেসে।