Hero Achiever ২১,০০০ কিলোমিটার মালিকানা রিভিউ - আল মামুন

This page was last updated on 01-Aug-2024 10:50am , By Shuvo Bangla

আমার নাম আব্দুল আল মামুন, বাইক বিডিতে Hero Achiever বাইক নিয়ে এটাই আমার প্রথম লেখা, ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য অনুরধ রইল। আমার বয়স ৫০ বছর, ১২ বছর থেকে মটরসাইকেল চালাই।hero achieverআব্বার হোন্ডা ৫০ সিসি একটা মটরসাইকেল ছিল স্কুল থেকে ফিরে ওইটা মাঝে মাঝে চালাতাম। এস এস সি পরিক্ষার পর আম্মুকে অনেক বুঝিয়ে একটা সেকেন্ড হ্যান্ড বাইক কিনি, সেকেন্ড হ্যান্ড হলেও বাইকটা ছিল একদম নুতন। যিনি কিনেছিলেন সম্ভবত একবার পরে গিয়ে আর চালাতে চান নি। 

বাইকটা ছিল Honda HS100 REG -1985 এই বাইক্টা দিয়ে আমি আমার কলেজ জীবন, চাকুরী জীবন পার করেছি। আজ ৩৫ বছর হয়ে গেলেও বাইকটা এখনো আমার কাছে আছে । এই বাইক নিয়ে আমার অনেক সুখ স্মৃতি যা অন্য সময়ে আলাপ করা যাবে। আজকে বলব আমার এখন কার বাইক Hero Achiever নিয়ে।hero achiever picবরাবর ভ্রমন আমার নেশা। বাইক নিয়ে ভ্রমনের মজাই আলাদা। ২০১৮ সালের দিকে আমি একটা সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি কিনেছিলাম। ওই গাড়ি নিয়ে ফ্যামিলি সহ মইনট ঘাট যাই। মইনট ঘাট থেকে ফেরার পথে গ্যাস শেষ হয়ে গেলে গাড়িতে অকটেন নেই। আমি জানতাম না সেই গাড়ি সম্ভবত ২/৩ বছর তেলে চলে নি। ফলে রাস্তায় বিকল হয়ে যায়। তখনও মইনট ঘাটের রাস্তা এখনকার মত এত সুন্দর ছিল না।

জংগলের মধ্যে বিকল গাড়ি আর সাথে পরিবার নিয়ে বিড়াট বিপদে পড়লাম। ঈদের পরপর হওয়াতে সব ছুটি থাকাতে সম্ভাব্য কোন মিস্ত্রির সন্ধান পেলাম না। পরে অনেক কষ্টে এক সি এনজি পাওয়াতে তাতে ফ্যামিলির সবাইকে পাঠিয়ে দেই আর সিএনজি চালক কে বলি যদি কোণ মিস্ত্রি পান তাহলে এখানে পাঠিয়ে দিয়েন। গল্প বড় করব না, আমি রাত ১২টার দিকে সেইখান থেকে উদ্ধার পেয়েছিলাম।

ফিরে প্রতিজ্ঞা করলাম, গাড়ি নয় আমার বাইকই ভাল, যত তারাতারি সম্ভব এটা বিক্রি করতে হবে। ৩ লাখে কেনা গাড়ি ১.৫ লাখে বিক্রি করে দিলাম। বাইক আমার আছে এবং তার কন্ডিশনও খুব ভাল কিন্তু যেই পরিমানে ফুয়েল খরচ হয় ওটা নিয়ে ভ্রমন করা যায় না। আমি ফুয়েল সাশ্রয়ী বাইক এর রিভিউ গুলি বাইক বিডিতে খুজতে লাগলাম।hero achiever byjid link road ctgহাতে গাড়ি বেচা টাকা আছে খরচ করে ফেললে আর নুতন বাইক কেনা যাবে না। অনেক ঘাঁটাঘাঁটি করে স্টাইলিস বাইক Bajaj V15 পছন্দ হল। কিন্তু কোন শোরুমে Bajaj V15 নাই। এর পর দ্বিতীয় পছন্দ ছিল হিরো হাংক। বাজেট কিছুটা কম আব্বা কে সাথে নিয়ে মিরপুর তালাতলায় হিরোর শোরুমে গেলাম হাংক কিনতে। আর তখনই নজরে পরে Hero Achiever বাইকটি ।

এর আগে আমার সামনে কখনই হিরো এচিভার চোখে পড়েনি বা এই নামে কোন বাইক আছে জানতাম না। Hero Showroom এর ভাই বললেন এই বাইক এর ইঞ্জিন খুবই ভাল আর ফুয়েল সাশ্রয়ী। আমি তাকে বললাম এটা কি লিজেন্ডারি Hero Splendor এর মত। উনি বললেন একটু টেস্ট দিয়ে দেখেন। আমি টেস্ট দিলাম, খুবই স্মুথ ইঞ্জিন আর আই, থ্রি এস এর জন্য অটোমেটিক স্টার্ট অফ হয়ে যায়। 

আমার গ্রে কালার টা পছন্দ হল। দাম ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। নুতন বাইকে আব্বা কে সাথে নিয়ে ফিরলাম। আমার স্ত্রী যে আগেই আমাকে বলেদিয়েছিল লাল রং এর বাইক যেন না কিনি। কারন আমার পুরতান বাইক লাল আর যেই গাড়িটা বিক্রি করেছিলাম সেইটাও লাল। তাই সে লাল নিতে বারন করেছিল।

নুতন বাইক কিনে সেইদিন চালানোর অনুমতি থাকে। যতক্ষন না আপনি নুতন নম্বর পাচ্ছেন ততক্ষন আপনি প্রধান সরকে চালাতে পারবেন না। আমার ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকা সত্তেও আমি চালাতে পারতেছিনা, তখন খুব প্যারা লাগতেছিল। যাই হোক একসপ্তাহের মধ্যে আমার নম্বর পেয়ে যাই।hero achiever bike priceআমি এই প্রযন্ত প্রায় ২২হাজার কিলোমিটার চালিয়েছি। আমি বাইক কেনার এক সপ্তাহ পরে নম্বর পেয়ে যাই আর তার পরের দিন স্ত্রী কে সাথে করে সাতছড়ি উদ্যানের দিকে রওনা হই। আসা যাওয়ায় ৩০০ কিলোমিটার আর এতেই আমার ব্রেকিং প্রিয়ডের অর্ধেক কভার হয়ে যায়। 

আমি খুব একটা স্পিডে বাইক চালাই না। ব্রেকিং প্রিয়ডের সময় ৫০ এর বেসি স্পিড উঠাইনি। আমি বরাবর ৪/৫ আরপিএম এর ভিতরে বাইক চালাই। রাস্তা অনুকুলে থাকলে কখনও ৮০ উঠাই। টপ স্পিড কখনো উঠাইনি আর বলতে পারব না এই বাইকের টপ স্পিড কত।

আমাদের এমন কি পাশের দেশের মার্কেটে এই হিরো এচিভার একটি ফ্লপ বাইক। কারন এর লুকিং ভাল না, ফিচার কম, রিয়ার টায়ার চিকন, সাউন্ড ভালো না। অনেক অভিযোগ এই বাইক নিয়ে।

আমার এই বাইক ক্রয়ের সময় এটাই চেয়েছিলাম যেন এটা ফুয়েল সাশ্রয়ী, শক্তপক্ত আর চালিয়ে আরাম পাওয়া যায় কিনা। হ্যাঁ, এটা চালিয়ে আরাম, ঘন্টার পর ঘন্টা চালানো যায়। আমি ৩ দিন হাইওয়েতে ১০৮৭ কিলোমিটার রাইড করেছি। এবং এক দিনে ৫১৭ কিলোমিআর রাইড করেছি।hero achiever bikeহাইওয়েতে ৫৫+ মাইলেজ পেয়েছি। আমি Hero Bike এর রিকমেন্ডেড ইঞ্জিন অয়েল হিরো অয়েল ব্যবহার করি। প্রথম ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করি ৩০০ কিলোমিটারে এর পর ১০০০ কিলোমিটার পর । 

Hero Achiever নিয়ে কিছু কথা

পাওয়ার – 

এই বাইকের পাওয়ার কম নয় আমি বান্দারবান –নীলগিরি –থানছি-ডিম্পাহার-আলি কদম হয়ে কক্সবাজার প্রযন্ত খুব সাচ্ছন্দে চালিয়েছি।hero achiever picস্পিড- 

আমি খুব একটা স্পিডিং করি না। আমার পাশ দিয়ে অনেক সময় ব্যাটারি অটো অভারটেক করে চলে যায়। আমি কখন ৮০ এর উপরে স্পিড উঠাইনি। এর ওভারটেকিং পাওয়ার খুব ভাল। বাইকটা হাইওয়েতে ভালো পার্ফরমেন্স দেয় । সবাই বলে ওভার স্পিডে এই বাইক ব্যালান্স ভাল নয়, হয়ত ঠিক, তবে আমি স্পিড স্টার নই।

মডিফিকেশন - 

আমি মডিফিকেশন করতে পছন্দ করি না, নেহায়েত প্রয়জন না পড়লে। আমি রাতে চালানর জন্য স্টক হেডলাইটটি পরিবর্তন করে এলইডি লাগিয়ে নিয়েছি আর কানেকশনটি এসির বদলে ডিসি করে নিয়েছি। কেননা এসি কানেকশনে লাইট থ্রটল রেসপন্সের সাথে উঠা নামা করে। 

আমি একটা পেনিয়ার বাঁ সাইডে বক্স লাগিয়ে নিয়েছি। এতে রেইন কোট, টুকি টাকি রাখার একটা ব্যবস্থা হয়েছে।hero achieverচিকন চাকা- 

এই বাইকের সবচেয়ে খারাপ দিক হল রিয়ার টায়ার অনেক চিকন, অন্তত হাংক এর স্ট্যান্ডার্ড টা রাখতে পারত। যাই হউক মনে হয় প্রাইস এডযাস্ট করার জন্য হিরো এটা করে থাকবে। তবে চিকন চাকা হলেও এর টায়ারের মান অনেক ভাল। সিয়ারস এর সিকুরা জুম টায়ারে এখনো স্কিড করি নাই । সামনের চাকায় ডিস্ক ব্রেক আর পিছনে ড্রাম ব্রেক। 

অনেকেই জানতে চায় ব্রেক কেমন কাজ করে? আসলে মোটরসাইকেল ব্রেকিং ও কিন্তু একটা আর্ট এর ব্যাপার। যে যেভাবে

এটাকে রপ্ত করতে পারে। আমি ডিম পাহাড়ের ঢালুতে যখন নামি তখন অনেক বাইকার কে দেখি তাদের বাইকের ডিস্কে পানি দিয়ে ঠান্ডা করতেছে। আমি বেসিরভাগ রিয়ার ব্রেক ইউস করি আর সামনেরটা যখন ইউস করি তখন ২ আঙ্গুল সামনে রেখে ছেড়ে ছেড়ে ব্রেক ধরি। 

২১ হাজার কিলোমিটার একবার সামনের ব্রেক সু পরিবর্তন করি। যদিও করার দরকার ছিল না।hero achiever bikeড্যাস বোর্ড – 

এর মিটার একদম ম্যানুয়াল, স্পিড, আরপিএম এবং মেইল কাউন্ট করা যায়। অতিসাধারন মিটার। যারা ডিজিট্যাল মিটার পছন্দ করেন তাদের এই মিটার ভাল লাগবে না। অনেকের গিয়ার ইন্ডিকেটর না থাকলে চালাতে সমস্যা হয়। আমার কাছে এটা তেমন সমস্যা মনে হয়নি।

রাইডিং কম্ফোর্ট - 

এর গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স খুবই খারাপ, পিছনে পিলিয়ন নিলে যে কোন স্পিড ব্রেকারে এর স্টান্ড ঘষা খায়। যার জন্য অনেক সময় চালাতে বিরক্ত লাগে। এর হ্যান্ডেল বার আমার কাছে খুব ভাল লাগে। এর সিট একটু লম্বা, ২জনে খুব আরাম করে বসা যায়। প্রথম যখন আমি এটা চালাই আমার মনে হচ্ছিল আমি কোন গদিতে বসে চালাচ্ছি। এর রেয়ার সাসপেন্সন একটু হার্ড।

আসলে এই দামে একটু তো এডজাস্ট করে নিতেই হয়। আমি বাইক রাইডে হর্ন বাজাইনা বললেই চলে। ওভারটেক এমনভাবে করি যেন আমাকে ওই গাড়ির ড্রাইভার দেখতে পায়, এমন কি ওভার টেকিং এও হর্ন বাজাই না। হর্ন না বাজানো টা আসলে আমার অভ্যাস হয়ে গেছে। 

আমি স্পিডিং করি না আবার কম স্পিডেও চালাইনা। বাইক চালানোর সবচেয়ে বড় যোগ্যতা হল আপনার ধৈর্য । যে যত বেশি ধৈর্য ধরতে পারবে সে তত সাছন্দে ভ্রমন উপভোগ করতে পারবে। আমি ৩৫/৩৬ বছর যাবত বাইক রাইড করতেছি এ যাবত আমার এক্সিডেন্ট রেকর্ড নাই আলহামদুলিল্লাহ্‌ ।hero achiever bike price

বাইক আসলে আমার কাছে একটা ইমসনের জায়গা। আমার পুরাতন বাইক এইচ হান্ডেড এস আমার কলিজার টুকরা আজো আমি তাকে যত্নে রেখেছি। এখন আমি হিরো এচিভার চালাই হউক ফ্লপ বাইক, এর পাওয়ার + কম্ফোর্ট + মাইলেজ আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমি জানতাম আমার পরিচিত অনেকেই এই বাইক পছন্দ করবে না, তাতে কি আমি যখন এটা ক্রয় করি তখনি একবারে ১০ বছরের ট্যাক্স পে করে ফেলি। 

এই বাইকের রি-সেল ভ্যালু ভাল না। তাতে সমস্যা কি আমি সেল করবোনা তো ! যারা আমাকে এতক্ষন আমার রিভিউ পরলেন , সবাইকে ধন্যবাদ।

 লিখেছেনঃ আব্দুল আল মামুন

 
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।