BD Keeway Riderz – KRZ ঢাকা-সিলেট-ঢাকা ট্যুর
This page was last updated on 13-Jul-2024 10:16am , By Saleh Bangla
প্রকৃতিতে শীতের আগমনী বার্তা ভেসে এসেছে, গরমের উষ্ণতা এখন সয়ে এসেছে, সময় এখন মিষ্টি ঠান্ডা বাতাসের। প্রকৃতি পরিবর্তের এই চমৎকার সময়ে BD Keeway Riderz – KRZ আয়োজন করল KRZ ট্যুর। আমাদের এবারের গন্তব্য ছিলো পাহাড় আর নদীর উৎসস্থল সিলেট। গ্রুপে প্রথমবারের মত আয়োজিত হল একাধিক দিনের ট্যুর যা ছিল ১০,১১,১২ নভেম্বর-৩দিনের। সবাই মিলে তৈরী করলাম নতুন ইতিহাস।
BD Keeway Riderz – KRZ ঢাকা-সিলেট-ঢাকা ট্যুর
Keeway Riderz সকাল ৭টায় আমরা রওনা করি (কয়েকজনের কারনে ১ ঘন্টা দেরী করে) আইসিসিবি থেকে মোট ২৩টি বাইক নিয়ে। ভুলতার জ্যাম ঠেলে এগিয়ে নরসিংদীর পাচদোনায় আমরা সেরে নেই নাস্তা। এরপর ভৈরব ব্রীযে সংক্ষিপ্ত ফোটো সেশন করে ফাঁকা রাস্তায় বাইকের ঝড় তুললাম। ২য় বিরতি নেই হবিগঞ্জে, ঠান্ডা খেয়ে ঠান্ডা হয়ে রওনা করলাম। আমরা নামাজ বিরতি নিলাম শ্রীমঙ্গলের কাছাকাছি রাস্তার পাশের একটি মসজিদে। এরপর চা বাগানের অপরূপ সুন্দর রাস্তায় কিছুদূর চালাতেই সাতগাঁও পৌছে গেলাম যেখানে আমাদের BD Keeway Riderz – KRZ সিলেটের ভাইরা অপেক্ষা করছিলেন।
সবার সাথে কুশলাদি বিনিময়ের ও আমাদের ফুল দিয়ে বরণ করে নিলেন সিলেটের ভাইরা। ফোটোসেশন করে রওনা দিলাম সদরের উদ্দেশ্যে। পানসী রেস্টুরেন্টে জম্পেশ খাবার খেয়ে কিছুক্ষন বিশ্রাম নিলাম। এরপর ঢাকার ২৩টি আর সিলেটের ১৩টি, মোট ৩৬টি বাইকের বিশাল বহর নিয়ে পৌছালাম মাধবপুর লেকে। লেকে সূর্যাস্তের সৌন্দর্য উপভোগ আর ফোটোসেশন হল। সিলেটের ভাইদের সাথে একটি সংক্ষিপ্ত মিটিং হলো, তাদের অভাব-অভিযোগ শুনলাম এবং সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা করলাম।
পথিমধ্যে আমাদের Keeway Riderz এর র্যালী ৩ভাগে বিভক্ত হয়ে একত্রিত হতে সময় লেগে যাওয়ায় সিলেট পৌছাতে আমাদের রাত ১০টা বেজে যায়। শহরের জ্যামের মধ্যে সবগুলো বাইক একসাথে হর্ন চেপে শোডাউন করতে করতে পাঁচভাই রেস্টুরেন্টে ঢুকলাম। এমনই শোঅফ হয়েছিলো যে ভেতর থেকে পুলিশ বেরিয়ে এসেছিল! রাতের খাবার সেরে আমরা হোটেল গার্ডেন ইন-এ চেক ইন করলাম। ব্যবহারের জন্য ঠান্ডা পানি নেই, ম্যাট্রেস-বালিশ-কম্বল নেই ইত্যাদি নেইয়ের মধ্যেও আমরা এডজাস্ট করে ক্লান্ত দেহে শুয়ে পড়লাম।
সকাল সকাল উঠে, সবাইকে ঘুম থেকে তুলে, সবাই মিলে হোটেলের কমপ্লিমেন্টারি নাস্তা করলাম। বাইক রেডি করে রওনা দিতে দিতে ১১টা বেজে গেলো। সিলেট শহরে সবার চোখে তাক লাগিয়ে আমাদের বিশাল র্যালী এগিয়ে চলল লালাখালের উদ্দ্যেশ্যে। প্রকৃতি আর আকাশের সৌন্দর্যে আমরা মুগ্ধ হলাম। ফাঁকা রাস্তায় ঝড় তুলে চলে গেলাম আমাদের গন্তব্যে। দুইটি নৌকা ভাড়া করে আমরা বর্ডারের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। নীলচে সবুজ পানি আর পাহাড়ের ঘন সবুজে আমাদের মন আপ্লুত হল। শেষপ্রান্তে গিয়ে আমাদের মধ্যে অনেকে নদীর ঠান্ডা পানিতে গোসল আর ফোটোশ্যুট করে নিলাম।
বাইক ঘুরিয়ে রওনা হলাম জাফলঙের উদ্দ্যেশ্যে। পথিমধ্যে একটি রিসোর্টের হোটেলে খাবার খেয়ে গ্রুপ ফোটোশুট করে রওনা করলাম। ভাঙ্গা-ধুলাময় রাস্তায় ঝাঁকি খেতে খেতে জাফলং পৌছলাম সন্ধ্যায়। বাইক থেকে নেমেই কয়েকজন বিকেলের শেষ আলোটুকুয় যতটুকু সম্ভব অপরূপ নদী বিধৌত জাফলং আর পাহাড়ের খাজে গড়ে ওঠা ভারতের শিলং-কে দেখে নিলাম। এরপর তামাবিল স্থলবন্দর দেখে আর সীমানা পিলারের সাথে ছবি-সেলফি তুলে সবাই সিলেটের উদ্দ্যেশ্যে রওনা দিলাম।
গতরাতের মতোই পাচভাই রেস্টুরেন্টে রাতের খাবার সেরে হোটেলে উঠলাম। ওহ, বলতে ভুলে গেছি সকালবেলা আমাদের মধ্যে BD Keeway Riderz – KRZ এর ৫ জন ভাই জরুরী প্রয়োজন দরুন ঢাকায় ফেরত যান। তাদের জন্য মনটা ভীষণ খারাপ থাকলেও শাপেবর হিসাবে এই রাতে আমরা সবাই ঠিকমত রুম আর জিনিস-পত্র পাই! এই রাতে আর তাড়াহুড়া নেই; সবাই যে যার মতো রুমমেটদের সাথে আড্ডা দিয়ে, মজা করে, আস্তেধীরে ঘুমাতে যাই।
সকালে বাফেট নাস্তা (জোস ছিলো) করে রিল্যাক্স মুডে চা-পানি খেয়ে, সিলেটের ভাইদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ১১টায় রওনা করি ঢাকার উদ্দেশ্যে। এরপর আমরা ধুন্মাধুর টেনে যে যার বাইকের টপস্পিড তুলতে তুলতে চলে আসি শায়েস্তাগঞ্জ। হোটেল আলসালাদিয়ায় গরম গরম খাবার খেয়ে রওনা দিলাম সাতছড়ির উদ্দ্যেশ্যে। পাহাড়ী-জঙ্গলময় রাস্তার অপরূপ সৌন্দর্যে আমরা বিমোহিত হলাম। ছবি আর ভিডিও করতে করতে হাইওয়েতে উঠে এলাম। ভৈরব ব্রীজের সংলগ্ন এলাকায় ফয়সাল ভাই তার শ্বশুরবাড়িতে আমাদের আপ্যায়ন করলেন। রওনা দেয়ার সময় খেয়াল হলো রাকিব ভাইয়ের চাকা লিক হয়ে গেছে তাই, অনেক খোজাখুজি করে একটি লিকের দোকান থেকে জেল ভরে নিয়ে আমরা রওনা করলাম।
এরপর বাকি ভাঙ্গা-চোরা রাস্তা আমরা ধীরেসুস্থে পেরিয়ে ভুলতা পৌছে যাই। পথিমধ্যে সিলেট যাবার সময় আমাদের সঙ্গী জিক্সার রাইডারদের পেয়ে যারপনাই অবাক হয়ে গেলাম! রাস্তায় থেমে আমরা একে অপরের সাথে পরিচিত হলাম তারপর একসাথে রওনা হলাম। বলে রাখা দরকার ফেরার পথে BD Keeway Riderz – KRZ এর অনেকেই নিজ নিজ গন্তব্যে আলাদা হয়ে যান, তাই আমাদের র্যালী ধীরে ধীরে ছোট হয়ে আসছিলো। শেষমেষ ভুলতা আসতে আসতে আমরা পাঁচজন হয়ে যাই!
পূর্বাচল এক্সপ্রেস হাইওয়েতে শেষবারের মতো আমরা খেলাধূলা করে, সবাই সবার কাছে থেকে বিদায় নিয়ে যে যার বাসায় চলে যাই। এভাবেই আমাদের ঐতিহাসিক এই ট্যুরটি আলহামদুলিল্লাহ কোন বালা-মসিবত ছাড়া সম্পন্ন হয়। ধন্যবাদ সবাইকে BD Keeway Riderz – KRZ এর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ট্যুরে এতে অংশগ্রহণ করার জন্য, সিলেটের ভাইদের প্রোগ্রামটি সংগঠিত করার জন্য এবং স্পিডোজকে বরাবরের মতো আমাদের পাশে থাকার জন্য।
লিখেছেনঃ তানভির মেহেদি