Bajaj Platina 100 ১ লাখ ২৪ হাজার কিলোমিটার রাইড রিভিউ - তাজুল ইসলাম
This page was last updated on 16-Jul-2024 10:57am , By Ashik Mahmud Bangla
আমি তাজুল ইসলাম লাম। আজকে আপনাদের জানাবো আমার Bajaj Platina 100 বাইকটির কিছু অভিজ্ঞতা। এই বাইকটি আমার বাবা কিনেছিলেন ৬ বছর আগে। এই বাইকটি দিয়েই বাইক রাইড করা শিখি এবং এখনো এই বাইকটি ব্যবহার করছি।
Bajaj Platina 100 ১ লাখ ২৪ হাজার কিলোমিটার রাইড রিভিউ - তাজুল ইসলাম
একদম শুরু থেকে বলি। বাবা যখন বাইক কিনতে যান তখন উনার প্রধান প্রয়োজন ছিল মাইলেজ। কোনো বাছাই ছাড়াই বাবার অভিজ্ঞতা থেকে তিনি Bajaj Platina 100 বাইকটি পছন্দ করেন। কারণ তখন বাছাই করার জন্য ইউটিউব ছিলনা। ২০১৬ সালে রাইডিং শেখার পরে থেকেই এই বাইকটি আমার কাছে আছে। এখন বলি বাইকের ১,২৪,০০০ কিলোমিটার রাইড করার অভিজ্ঞতা।
যদিও এই ১,২৪,০০০ কিলোমিটার আমি একা চালাইনি তার পরেও এর অনেকটুকুই আমার রাইড করা। প্রথম যখন এই বাইকটি আমার হাতে আসে তখনও এটি ছিল তেজী ঘোড়ার মতো। বাইক যতদিন রাইড করেছি এই বাইকে এখনো দূর্ঘটনার শিকার হইনি। আসলেই এই বিষয়টি আমাকে অবাক করে। ৮০কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা গতিতেও বাইকটি রাস্তায় খুব ভালো ভাবেই স্টেবল থাকে কিন্তু ব্রেকিং ফিডব্যাক কিছুটা দুর্বল।
এমন গতিতে হুট হাট করে এই বাইক থামানো কষ্টকর । ১০০সিসি সেগমেন্ট এর আরো অনেক বাইক চালিয়েছি। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলছি এই বাইকের কন্ট্রোলিং এই সেগমেন্টে অন্যতম সেরা।
এখন বলি বাইকের বর্তমান অবস্থা। তেজী ঘোড়াটা এখন অনেকটাই দমে গেছে। ইঞ্জিনের পাওয়ার কমে গেছে প্রচুর। এটি হয়েছে রিং পিস্টন পরিবর্তন করার পরে থেকে। এই পর্যন্ত মোট দুইবার রিং পিস্টন পরিবর্তন করতে হয়েছে এবং আরো একবার পরিবর্তন করার সময় হয়ে এসেছে।
বাইকটির ভালো দিকগুলো -
- ভালো দিক বলতে গেলে প্রথমেই আসবে বাইকের লম্বা সিট। এই সিটটা খুবই আরামদায়ক। যারা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে রাইড করেন তাদের জন্য খুবই ভালো এই বাইক।
- এই বাইক থেকে সর্বোচ্চ মাইলেজ পেয়েছি ৭০+ কিলোমিটার প্রতি লিটারে। এখনো ৫৫-৬০ কিলোমিটার প্রতি লিটার এর নিচে যায়না মাইলেজ। এখন নতুন প্লাটিনা গুলোর মাইলেজ ৭০-৭৫ কিলোমিটার প্রতি লিটার ।
- এর বিল্ড কোয়ালিটি যথেষ্ট ভালো । এখনো বাইকটি মজবুত অবস্থায় রাস্তায় চলছে।
- এই বাইকের স্পেয়ার পার্টস বাংলাদেশে প্রত্যন্ত অঞ্চল গুলোতেও পাওয়া যায় এবং দাম টাও অন্যান্য বাইকের তুলনায় কম।
- বাইকটি যে কোন রোড কন্ডিশনের জন্য পার্ফেক্ট একটি বাইক ।
বাইকটির খারাপ দিকগুলো -
- প্লাটিনা তে এখনো সামনে পেছনে ড্রাম ব্রেক দেওয়া হয়। ব্রেকিং ফিডব্যাক তেমন ভালোনা।
- এর হেডলাইটের আলো রাতের বেলা রাইড করার জন্য যথেষ্ট না। সামনে কী আছে তা ভালো দেখা যায়না। এসি অপারেটেড হেডলাইট।
- চাকাটা খুব বেশি চিকন।
- ইঞ্জিনের পাওয়ার আর একটু দরকার ছিল।
- হাইওয়েতে লং রাইড করলে পাওয়ার ড্রপ করে।
টপস্পিড- টপ স্পিড কতো তা কখনো চেক করা হয়নি। কারণ স্পিড অনেক ধীরে ধীরে উঠে। সর্বোচ্চ ৮০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা স্পিড তুলেছিলাম ২/১ বার কিন্তু বর্তমান কন্ডিশনে এখন আর এই স্পিড তোলা অসম্ভব। যত্ন- সবথেকে মজার বিষয় হলো এই বাইকের যত্ন নিতে বাড়তি কিছু করতে হয়না। শুধু সময়মতো ইঞ্জিন ওয়েল পরিবর্তন করতে হয়। 20w50 গ্রেডের যেকোন ইঞ্জিন ওয়েল ব্যবহার করতে পারেন।
পারফরমেন্স ড্রপ করেনা। অনেকেই বাড়তি যত্ন নেওয়ার জন্য অকটেন ব্যবহার করেন। তবে এই বাইকে তার কোন প্রয়োজন নেই। প্রথম বার রিং-পিস্টন পরিবর্তন করতে হয়েছিলো ৮০০০০ কিলোমিটার পরে। তখনো বাইকের পাওয়ার ভালো ছিল। এর পরে দ্বিতীয় বার পরিবর্তন করা হয় ৯৯০০০ কিলোমিটারে থাকা অবস্থায়। মূলত এইবার রিং পিস্টন পরিবর্তনের পরে থেকেই পাওয়ার কমে যাওয়াটা বুঝতে পারি।
কিন্তু এইবার টর্ক সাপ্লাইয়ে ভালো উন্নতি দেখা যায়। ০-৪০ পর্যন্ত খুব তাড়াতাড়ি উঠে যায়। ভালোই চলছিল দ্বিতীয় সার্ভিসের পরে। এর মধ্যে শুধু হয় কার্বুরেটরে সমস্যা। তেলের ওভার ফ্লো হওয়া শুরু হয়। মূলত এই কার্বুরেটর সমস্যার পর থেকেই পাওয়ারে আরো পতন দেখা দেয়। ৬০ কিলোমিটারের উপরে আর গতি উঠতে চায়না।
এখনো স্টক কার্বুরেটর ই আছে। পরিবর্তন করা হয়নি। এবার রিং-পিস্টন এবং কার্বুরেটর একসাথে পরিবর্তন করা হবে। আশাকরি এতে তেজী ঘোড়াটা আবার তেজ ফিরে পাবে। তবে এক্ষেত্রে সবার জন্য উপদেশ রইলো ইঞ্জিনের যেকোন কাজ শুরু মাত্র দক্ষ টেকনিশিয়ান দ্বারাই করাবেন। এখন পেছনে অ্যপোলো টায়ার ব্যবহার করছি যা খুব ভালো গ্রিপ দেয়। ট্যুর- এখন বলি কিছু ভ্রমণের অভিজ্ঞতা।
Bajaj Platina 100 কখনো বড় কোনো ট্যুরে নিয়ে যায়নি। তবে পাশাপাশি কয়েকটা উপজেলায় ঘুরেছি। ৭০-১০০ কিলোমিটারের কিছু ছোট ভ্রমন করেছি। অভিজ্ঞতা খুবই সুন্দর। এতই আরামদায়ক এই বাইকের যে ঘন্টা কয়েক রাইড করলেও কোনো অসুবিধা হয়না।
কিন্তু একবার ২০১ গম্বুজ মসজিদ থেকে আসার পথে ইঞ্জিন গরম হওয়ার সমস্যা পেয়েছিলাম ইঞ্জিন অতিরিক্ত গরম হয়ে বাইক বন্ধ হয়ে যায়। ইঞ্জিন জ্যাম হয়ে যায়। কিক লিভার নিচের দিকে নামছিল না। পরে ইঞ্জিন টা একটু ঠান্ডা হওয়ার পরেই সবকিছু আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়।
এখন বলি এই বাইকটা কাদের জন্য নেওয়ার উচিত হবে। যেহেতু ১০০ সিসি বাইক তাই পাওয়ার টা তেমন ভালোনা। মূলত যারা পরিবার নিয়ে চলার মতো একটি আরামদায়ক বাইক অথবা বাণিজ্যিক কাজের জন্য বেশি মাইলেজ পাবেন এমন বাইক চান তারা প্লাটিনা ১০০ চোখবন্ধ করে নিতে পারেন। Bajaj Platina 100 হচ্ছে এমন একটি বাইক যেটি যত্ন নিয়ে ব্যবহার করলে আপনি অবশ্যই প্রেমে পরে যাবেন। ধন্যবাদ।
লিখেছেনঃ তাজুল ইসলাম লাম
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।