১০৫২ কিলোমিটার বাইক ট্যুর লিখেছেন ইসমাম ভূইয়া
This page was last updated on 09-Jul-2024 02:50am , By Saleh Bangla
কুমিল্লা-ঢাকা-কালাকান্দি-মাওয়া-ভাঙ্গা-মুকসুদপুর-গোপালগন্জ-মোল্লাহাট-ফকিরহাট-বাগেরহাট-মংলা-মোড়েলগন্জ-পিরোজপুর-শিয়ালকাঠি-ঝালকাঠি-বরিশাল-বাকেরগন্জ-পটুয়াখালি-আমতলি-কলাপাড়া-কুয়াকাটা । শেষ বাইক ট্যুর দিছিলাম ৬৫০+ কিমি এর মত কুমিল্লা টু কক্সবাজার + মেরিনড্রাইভ রোড । ঐ ট্যুর এরপর মাথায় বড় একটা বাইক ট্যুর এর প্ল্যান ছিলো। আর সেটা ছিলো কুয়াকাটার দিকে । কিন্তু আগেরটার মত গ্রুপ করে যাওয়া হয় নাই। সাথের বন্ধুরা সবাই জব করে। যাই হোক আসি মূল কথায়।
১০৫২ কিলোমিটার বাইক ট্যুর
দিনটা ছিলো ২৩ সেপ্টেম্বর ( রবিবার )। হঠাৎ করেই এক বন্ধু বলে উঠলো চল যাই আজকেই বাইক ট্যুর হবে। আমি বল্লাম কোথায় ? উত্তর ছিলো অনেক দূরে। সব কিছু কুমিল্লা ফেলে রেখে একটু শান্তির আশায় দূরে যেতে চাই । বুঝতে বাকি রইলো নাহ। একটু ইংগিত পেয়েছি যে খুলনার দিকে। আরকি তারাতারি ব্যাগ এ জামাকাপড় ঢুকাইয়া বের হয়ে গেলাম গন্তব্য নিরূদ্দেশের উদ্দেশ্যে । কুমিল্লার আলেখারচর যাইয়া বাইকটারে ১০ লিটার অকটেন খাওয়াইলাম। ঘড়ি কাটা সন্ধ্যা ৬.৫০ এর সময় , যাত্রা শুরু হইলো। ধানমন্ডি ৩২ এ যাইয়া পৌছলাম রাত ৯.১০ এ। মাঝখানে নিজের মত বিরতি দিয়েছি । আমার বন্ধু নাজমুলরে কল দিলাম। সে আসে পাশেই ছিলো। যোগাযোগ করেই আসছি ।
সে আসার পর একটু ঠান্ডা খেয়ে আপাতত তার বাসা বছিলা, মোহাম্মদপুরে থাকার প্ল্যান করলাম। পরের দিন সকাল ১০ টায় বছিলা থেকে বের হয়ে ঐখান দিয়া চন্ডীপুর সড়ক দিয়া বাইপাস ধরে ঢাকা-মাওয়া হাইওয়েতে উঠলাম। দিলাম থ্রটোল ঘুরছে চাকা, ডেসটিনেশন ষাটগম্বুজ মসজিদ,বাগেরহাট। মাওয়া ঘাটে এসে ফেরিতে উঠলাম। ঐপারে যাইতে লাগলো ১.৩০ ঘন্টার উপর। সন্ধ্যা ৬.৩০ টায় গিয়া ষাটগম্বুজ এর সামনে থামলাম। মাঝখানে যত গুলা হাইওয়ে ছিলো সেগুলা দেখার মত । আহ রাইড করে শান্ত হইয়া গেলাম । সন্ধ্যা ৬ টায় ষাটগম্বুজ মসজিদ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ছেকা খেলাম। কি করবো এখন,কই যাবো তা ভাবতে লাগলাম সাথে হালকা চা নাস্তা সেরে নিলাম। এর মধ্যে ২৬৫ কিমি রাইড হয়ে গেছে। স্থির করলাম মংলা যাবো। রাতটুকু ঐখানে থাকবো । দেরি নাহ করে বাইক স্ট্যার্ট দিলাম। পারি দিতে হবে ৪৪ কিমি। যাক এক থেকে দেড় ঘন্টার মধ্যে পৌছে গেলাম। মংলা পোর্ট এ গিয়ে বুঝতে পারলাম যে ঐপারে শহর । কি আর করা চলে গেলাম ঐ পারে, ট্রলারে করে পার করলাম বাইক। গিয়ে হোটেল নিলাম, ফ্রেশ হলাম এবং বেড়িয়ে পরলাম । অনেক কিছুই করেছি বলা যাবে নাহ । যাই হোক অনেক বার এইপার সেইপার আসলাম আর গেলাম। ভালো লাগছে ঘাটের টোল দিতে । বেশি নাহ মাত্র এক টাকা। যাই হোক কিছু খেয়ে ঘুমিয়ে পরলাম, সকাল সকাল উঠে নাস্তা করলাম আর একটু মংলা শহরটা ঘুরে নিলাম। ভালোই লাগলো। তখনো ঠিক করিনি কই যাবো । হঠাৎ করে কেনো যানি মোড়েলগন্জ যেতে ইচ্ছা হলো। চলে গেলাম মোড়েলগন্জ। মংলার দিকে একটা বাইপাস ছিলো। আশে পাশে ছোট বিলের মত, ভালোই লাগছিলো। কিন্তু বেশ খানিকটা পর যে রাস্তা পাইছি আহ কি আর বলবো। পুরাই এক্সট্রিম। বাইক ডানে নিলে বামে যায়, বুঝতেই পারছেন। লোহার কিছু কালভার্ট পারি দিছি আর আত্মা গেছে আর আসছে । এতটা ভয়ানক ছিলো। যাক অবশেষে মোড়েলগন্জ।। ঐখানে পুরাতন জেলখানা ছিলো। একনজরে দেখা হয়ে গেলো। ঐখানে বিকাল বেলায় দুপুরের খাবার খেলাম ইলিশ দিয়ে। মাঝখানে বাইকটারে গোসল করিয়ে নিলাম। যাক একটু জিরিয়ে নিলাম আর একটা ছোট কাজ ছিলো আমার বন্ধুর সেটাও সেরে নিলো। এবার কই যাবো? বন্ধু বললো বাগেরহাট এ। বুঝতে পারছি সে ষাটগম্বুজে যাবে। কিন্তু আজকেও তো সময়মত যেতে পারবো নাহ। সুতরাং অন্য কিছু ভাবলাম। হঠাৎ করেই চেচিয়ে বললাম চলো যাই কুয়াকাটায়। সাথের বন্ধুটি বললো মাথা ঠিক আছে? আমি বললাম তুই বস আমি চালাই কিন্তু তার পর যামু। ম্যাপ এ দেখলাম বরিশাল হয়ে যেতে হবে প্রায় ২০০ কিমি। মোড়েলগন্জ থেকে ডিরেক্ট আমতলি উঠার বাইপাস ম্যাপ এ শো করছে। যেটা অনেকটা পথ কমিয়ে দেয়। কিন্তু কিছু ট্রাক ড্রাইবার এবং লোকেদেরকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম যে বাইপাস টা আমাদের জন্য ঠিক হবে নাহ। কিছু পথ নাকি বন্ধ আছে। এর থেকে ভালো বরিশাল হয়ে যাওয়া। ভাবলাম সময় বাচাইতে যাইয়া বিপদে পরার থেকে ঘুরে যাই তাও ভালো। সন্ধ্যা তখন ৬ টা। সাথের বন্ধুটি বললো কোন সময়ে কুয়াকাটা ঢুকবো। আর এখন সিজন নাহ সব কিছু ফেবারে নাও থাকতে পারে। আমি ভাবিনি এত কিছু, ভাবছি শুধু একটাই যে যাবোই যাবো। আল্লাহ ভরসা মাগরিফের আযান দিলো , কোনো কথা না বাড়িয়ে বাইক আবার স্টার্ট দিলাম । হেডফোন কানে লাগিয়ে পছন্দের প্লে-লিস্ট করে হেলমেট পরলাম এবং যাত্রা শুরু। কিছুদুর যাওয়ার পর ফেরিঘাট। নাম মনে নাই। ঐ ঘাটে ফেরি দারানোই ছিলো কিন্তু ছাড়তে বিলম্ব হবে। অনেকখানি খালি ছিলো। আমাদের হাতে সময় কম তাই অন্যদের মত আমরাও বড় ট্রলারে করে ঐপারে গেলাম। ১০-১৫ মিনিট লাগলো।
ট্রলারে থাকা এক ভদ্রলোক বাইক এর রেজি নং দেখে আমাদের দিকে বার বার তাকাচ্ছে। বললাম কি ভাই কিছু কইবার চান নাকি? জবাবে আপনারা কুমিল্লা থেকে আসছেন? হমম ভাই । কোথায় যাবেন ? বললাম কুয়াকাটা। আরকি ওনি কিছু জ্ঞান দিলো। আর বললো যে বরিশাল থেকে কুয়াকাটার দিকে নতুন সড়ক হয়েছে সাবধানে যাবেন। রাস্তার বর্ডারে চুন দেয় নাই। আরো নানান টিপস দিলো, যাই হোক ঐপারে পৌছে আবার যাত্রা শুরু। শুনলাম কুয়াকাটায় পৌছতে হলে আরো ২ টা ফেরিঘাট টপকাইতে হবে । আহ কি শুনলাম । বরিশাল ঢুকার আগে ঝালকাঠি একটা বিরতি দিলাম। কিছু হালকা নাশতা করার পর একটা পানের দোকান পেলাম যেটায় হরেক রকমের মসলা দিয়ে পান বানায়। ৫০ টাকার ২ টা পান দুই বন্ধু মুখে দিলাম আর বাইকে স্ট্যার্ট দিলাম। আহ কি ফিলিং ।মুখে রসে ঠুসঠুস করছে, আকাশে রুপালি চাঁদের আলো, রাস্তার দুইধারে বৃক্ষের সারে, চারিদিকে অন্ধকার, নির্জন রাতে হাইওয়েতে আমরা সামনে হেডলাইটের আলো কানে বাজতেছে প্রিয় গান আহ কই হযে হারিয়ে গেলাম বললে বিশ্বাস হবে নাহ । শুধু মাত্র বাইকাররাই বুজবে। পৌছেগেলাম বরিশাল। একটু চা টা খেয়ে আবার যাত্রা।
হঠাৎ করেই চোখে পরলো বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। একটু দেখে রওনা দিলাম। অহ মোর খোদা, কি রাস্তা করলোরে। পুরাই অবাক। এত সুন্দর সড়ক থাকলে আর কি লাগে। কিছু ব্রিজ পেলাম যা বলার বাহিরে। ৭০-৮০ কিমি স্পিডে তখন চারপাশ মাখন লাগছিলো। বাকেরগন্জ, পটুয়াখালি, আমতলি, কলাপাড়া সব টপকায়া আসলাম। ওহ মাঝখানে আরো দুইটা ফেরিঘাট পার হয়েছি। ফেরি তো দেরি হবে কারন রাত অনেক বাস, ট্রাক কম। তাই ট্রলার ই আমাদের ফেরির কাজ করেছে। কিছু অংশে রাস্তা প্রচুর খারাপ ছিলো। কিছু রাস্তায় কাজ চলছিল । স্পিড ২০ এর মত কিন্তু অবস্থা খুব খারাপ বুঝতেই পারছেন । পাছার মাংস শক্ত হয়ে গেছে । তাই একটু দারিয়ে একজন আরেকজনেরটা ম্যাসাজ করে নিতাম । যাক কলাপারা থেকে কুয়াকাটা মাত্র ২৪ কিমি । মনে একটু শান্তি এলো। ঘড়িতে তখন বাজে রাত ১২ টা। আমরা মোড়েলগন্জ থেকে একটা ধারনা করছিলাম যে ১২.৩০ এর মধ্যে কুয়াকাটা পৌছাবো । সর্বোচ্চ গতি হবে ৬৫ - ৮০ কিমি এর মত। সব কিছুই প্লান মত হলো কিন্তু যখন আমতলি ছিলাম তখন কুয়াকাটার আকাশে এক কঠিন কালো মেঘ দেখতে পাই। বিশ্বাস করতে পারবেন নাহ মনে ভয় পেয়েছিলাম। বলতে ভুলে গেছি যে যখন আমরা পটুয়াখালি পার হই তখন রাস্তার দুইধারে অনেক মানুষকে স্থির দারিয়ে থাকতে দেখি। কেউ কেউ বসে আছে দেখতাম।।
ভূত FM এর কিছু গল্প গানের ফাকে মনে পরে যায় আর ভয় পেতে থাকি। আবার এতটা নাহ আমরা হাসি মজাও করি। অনেক কে আবার ভয় ও দেখিয়েছি। এক লোক হাটছিলো আর আমরা চিৎকার দিয়ে বলে উঠি কুয়াকাটা আমরা আসছি। লোকটি ও মা গো করে চেচিয়ে উঠে । যাক মূল প্রসংগে আসি। আমতলি তে দেখা মেঘটি আমরা কলাপাড়া পার হয়ে যখন কুয়াকাটার দিকে ঢুখলাম তখন পেলাম। বৃষ্টি প্রাথমিক অবস্থায় গুড়ি গুড়ি ছিলো। আমরাও একটা চায়ের দোকান খুজছিলাম মনে মনে। হঠাৎ করে বৃষ্টি বেড়ে গেলো আর সামনে কিছুই দেখা যাচ্ছিলো নাহ। কিছুদূর যেতেই একটা চায়ের দোকান পেলাম আর গিয়ে থামলাম। ততক্ষনে ভিজে শেষ। চায়ের দোকানে দেখি কাকুরা ( পুলিশ) বসে আছে। তারা তখন সবাই বাংলা ছবির দিকে মগ্ন ছিলো। একজন ঝিমাইতে ছিলো । আমাদের দিকে তাকিয়ে চোখ আবার বাংলা ছবির পর্দায় নিয়ে গেলো । ভিজা শরীর মুছতে মুছতে চা খেয়ে নিলাম। মাঝখানে ২ টা ব্রিজ এর উপর দিয়া আসলাম। তার মধ্যে একটা শেখ জামাল সেতু ছিলো। রাতের বেলায় সেতু গুলোকে সুন্দর দেখাচ্ছিল। বৃষ্টি টা হালকা কমে গুড়ি গুড়ি করে পরতে লাগলো। আর ৮ কিমি পরেই কুয়াকাটা তাই দেরি নাহ করে ৮ কিমি শেষ করার পথে বেরিয়ে পরলাম।
শেষ পর্যন্ত আমরা কুয়াকাটায় প্রবেশ করলাম। ঘড়ির কাটা তখন ঠিক রাত ১.৩০. অনুমান করা সময়ের থেকে ১ ঘণ্টা বেশি সময় লাগছে তবে আমরা খুব সুন্দরভাবে পৌছাইছি। একটা চায়ের দোকানে বসে আপাতত হালকা কিছু খেয়ে পেটটা ভরাইলাম। পরে দোকানদার মামা থেকে একটা ভালো হোটেল এর খোজ নিয়া যোগাযোগ করে হোটেলে উঠলাম। ভ্রমনের ৮০% হয়ে গেছে। বাকি আছে ষাটগম্বুজ মসজিদ। সুতরাং বুধবার বেরিয়ে পরতে হবে সকাল সকাল। দুই, তিন ঘন্টা ঘুরাঘুরি করে বাগেরহাট এর উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরবো এমনটা প্ল্যান করে ঘুমিয়ে পরলাম। ঘুম এতটাই গভির ছিলো যে উঠতে দেরি হয়ে গেলো। সকাল ১০.৩০ এর সময় হোটেল থেকে বের হয়ে নাস্তা সেরে বিচের দিকে রওনা দিলাম। বেশি একটা রাস্তা নাহ হোটেল থেকে মাত্র ৩০০ মিটার দুরত্ব। সী বিচটা দেখে সফরটা সার্থক হলো । ঘুমে সময় বেশি দিয়ে দেওয়ায় ঘুরাঘুরি বেশি একটা করা হয়নি। লাল কাঁকড়ার দ্বীপে যাওয়া হয় নি।দু একটা ছবি তুলে নিয়ে বেলা ১২.৪০ এর দিকে বেরিয়ে পরলাম বাগেরহাট এর দিকে। যেই হাইওয়ে দিয়ে রাতের বেলা ইনজয় করলাম সেই হাইওয়ে দিয়ে দিনের বেলার ফিলটা নিতে নিতে বাগেরহাট পৌছালাম সেই আবার সন্ধ্যা ৬.৩০ টায় । আজকেও হলো নাহ । কি করবো এখন। একবার চাইছিলো রাতেই ঢাকা ব্যাক করবো। আবার মন বলছে মিস করলেই মিস। মনের কথায় রাখলাম। থেকে গেলাম আরো একটা দিন বাগেরহাটে। বাইকের ইন্জিন অয়েল পরিবর্তন করে নিলাম। সাথেই হোটেল ছিলো হোটেলে উঠলাম। ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পরলাম। একটু এইদিক সেইদিক হাটা হাটি করলাম। তারপর একটা ভেরার হোটেলে ঢুকলাম। তাদের সব খাবার লাকরির মাধ্যমে রান্না করে। তাই ইচ্ছা করে এমন খাবার হোটেলে ঢুকলাম এই ভেবে যে লাকরির রান্না করা খাবারের স্বাদ নিবো বলে। ভাত, মুরগি, চিংড়ি, ভাজি নিয়ে রাতের খাবার আল্লাহর রহমতে শেরে নিলাম। একটা গরুর দুধের চা খেয়ে হোটেলে ঢুকে পরলাম। সকাল সকাল উঠে বাগেরহাটে ঘুরে কুমিল্লায় পৌছাবো এই উদ্দেশ্যে ঘুমিয়ে পরলাম। যেমন কথা তেমন কাজ। সকাল ৭ টায় উঠে ফ্রেশ হয়ে ৭.৩০ এর মধ্যে হোটেল থেকে বেরিয়ে পরলাম। নাস্তা করে প্রথমে গেলাম দেখতে খাঁন জাহান আলী সমাধি দেখতে। পাশেই খাঁন জাহান আলী দিঘী ছিলো। কিছুক্ষন এইদিক সেইদিক ঘুরা ঘুরি করে ষাটগম্বুজের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরলাম। ক কিমি পথ। একটানে গিয়ে পৌছালাম । অসশেষে দুইবারের পর ষাট গম্বুজের দেখা পেলাম। আহ কি অপরূপ । কিছুক্ষন ঘুরাঘুরির পর বেরিয়ে পরলাম। ট্যুর এর ১০০% কমপ্লিট। একটা ডাবের দোকানে ডাব খেয়ে একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে আছি। এইটাই ভাবছি যে আবার ফিরতে হবে যান্ত্রিক শহরটায়। বাইকে উঠলেই ডেসটিনেশন হবে কুমিল্লাই। এত ভেবে কি আর হবে। ফিরতেই যখন হবে এত নাহ ভেবে উঠে পরলাম।
বাইক স্ট্যার্ট দিয়ে কুমিল্লার দিকে রওয়ানা দিলাম। ঘরির কাটা তখন ১১ টা বাজে। পারি দিতে হবে ৩০০ কিমি পথ। ফকিরহাট, মোল্লাহাট, গোপালগন্জ, মুকসুদপুর, ভাঙ্গা হয়ে পৌঠালাম কাঁঠালবাড়িয়া ফেরি ঘাটে । ফেলে এসেছি সব কয়টা হাইওয়েতে কিছু স্মৃতি। দেখলাম কুমিল্লা ফেরি নামে একটা ফেরি ঘাটে দাড়িয়ে আছে। কথা বলে জানতে পারলাম এইটা এখন ছারবে। উঠে পরলাম। ১০ মিনিট পরেই ফেরি ছাড়লো। কিছুদূর যাওয়ার পর সময়টা কেমন জানি পরিবর্তন হয়ে গেল। যাক ভালোই লাগছিলো। মাওয়া ঘাটে পৌছালাম, সময় লাগলো ১.৩০ ঘন্টার মত। মাওয়া ঘাট থেকে বেরিয়ে যখনি ঢাকা-মাওয়া হাইওয়েতে তে উঠলাম হালকা গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পেলাম। সামনের আকাশে তাকিয়ে দেখি অন্যদিকে ভেঙ্গে চুরে বৃষ্টি আসছে। যত সামনে আগাচ্ছি বৃষ্টি বাড়ছে। একটা পর্যায় আমরা পুরাপুরি ভিজে যাই। এক প্রকার গোসলের মতই ছিলো। আহ কি দিয়া মুছবো সব ভিজা । ঐখানেই ১.৩০ ঘন্টার মত বৃষ্টি কমার অপেক্ষা করছিলাম। অবশেষে কিছুটা কমে আসলে আমরা বেরিয়ে পরি। কিছুটা পথ চালানোর পর ঠান্ডা অনুভব করি। তাই একটা জায়গায় সাইড করে সার্ট টা পরিবর্তন করে নিলাম। যাক এখন ঠিক আছি। ধীরে ধীরে আগাইতে ছিলাম।
যাক ঢাকা ঢুকলাম। ১ ঘন্টার মধ্যেই হানিফ মেয়র ফ্লাইওভার হয়ে যাত্রাবাড়ি বেড়িয়ে কাঁচপুরে এসে একটা চা বিরতি দিলাম। আর ৮০ কিমি পরেই কুমিল্লা। চা টা খেয়ে কুমিল্লার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। মেঘনা, দাউদকান্দি সেতু পার হতেই একটা ট্রাফিক জ্যাম পেলাম। ডানে বামে করে এগুতে থাকলাম। সবার সামনে এসে দেখি আর্মির একটা আম্বুলেন্স এ্যাকসিডেন্ট করছে। তাই রাস্তায় আর্মিরা ট্রাফিক ক্লিন করছে। যাক বাইকের আবার জ্যাম কি। বেরিয়ে পরলাম সহজে। শেষ চান্দিনা এসে লাস্ট বিরতি দেই। তারপর সোজা বাসার সামনে রাত ৮.০০ এ পৌছায় সুন্দরভাবে আল্লাহর অশেষ রহমতে। কেউ কারোর দিকে তাকাতে পারছিলাম নাহ।। প্রত্যেকের জামা কাপড় এ কাদা পানির ছিটকা পরে খূব খাড়াপ অবস্থা। শেষ পর্যন্ত মিশন সম্ভব হলো। আমাদের বাইক ট্যুর সফল হলো । বাইক ট্যুর টি ছিলো ১০৫২ কিমি এর মত । এর মাঝে ছিলো অনেক আনন্দ, ছিলো অনেক অর্জন, ছিলো অনেক অভিজ্ঞতা। আমরা রাইড করতে ভালোবাসি বলেই আমরা এই ট্যুরটা করতে পেরেছি। মনে থাকবে অনেক স্মৃতি, ভুলতে পারবো নাহ সারা রাতে রাইড করার মুহুর্তগুলোকে । এগুলাই কোন এক সময় মনে করিয়ে দিবে কিছু সৃতি। মিস করেছি সাথের কিছু বন্ধুদের। সবাইকে নিয়ে যেতে পারলে হয়তো আনন্দের ভাগটা শতপূর্ণ হতো। যাক সামনে এর থেকে আরো বড় কিছু হবে ইনশাল্লাহ যদি বেঁচে থাকি । ব্যস্ততার কারণে অনেক দেরি হল রিভিউ দিতে । সময় নিয়ে পড়ার জন্য সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ ।
লিখেছেনঃ ইসমাম ভূইয়া