হোন্ডা সিজি১২৫ নিয়ে বগালেকে
This page was last updated on 04-Jul-2024 09:51am , By Shuvo Bangla
‘এই গরমে মরার জন্য বগালেক!’-অধিকাংশ মানুষের প্রতিক্রিয়া এমনই, যখন তারা শুনলো আমি বগালেক যাচ্ছি। তাদের যুক্তি এই গরমে বগালেকে যাওয়া মানে শরীরের শক্তি ক্ষয়, স্টেমিনার অপচয় কিংবা এতে শরীর খারাপ করতে পারে ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু আমার সিদ্ধান্ত পরিষ্কার-আমি দুই সিজনে বগালেক ভ্রমণ করতে চাই, হয় বর্ষাকালে নয়তো গ্রীষ্মে। কারণ এই দুই সময়েই আপনি রুমা বাজার থেকে বগালেক পর্যন্ত ইটবাঁধানো, যাকে অফরোডও বলা হয়, সেই রাস্তার আসল মজা টের পাবেন।
আমি অ্যাডভেঞ্চার পছন্দ করি, যেখানে অ্যাডভেঞ্চারের সুযোগ বেশি সেটাই আমাকে বেশি টানে। বর্ষায় অফরোডগুলো কর্দমাক্ত ও পিচ্ছিল হয়ে যায়, তাছাড়া উঁচু-নিচু খানাখন্দও তৈরি হয়। সেজন্যই তখন এসব রাস্তায় বাইক চালানো সত্যিই কঠিন হয়ে পড়ে। আর বাইকটি যদি কমিউটার শ্রেণির হয় তবে তো কথাই নেই!
তবে বর্ষায় একটা সুবিধা পাওয়া যায়, ঠাণ্ডা আবহাওয়া ও শীতল বায়ু, যা আপনার দেহমনে প্রশান্তি ছড়িয়ে দেয়। কিন্তু গ্রীষ্মে দুর্ভোগের সীমা ছাড়িয়ে যায়। একে তো অত্যধিক গরমে গা জ্বালা করে, তার ওপর আবার অফরোডগুলোতে ধুলা-বালু সব ছেয়ে ফেলে! আর এমন সময়ে যদি আপনাকে বাইক নিয়ে বগালেকের পথে উঁচু পাহাড়ে উঠতে হয়, যে রাস্তা আবার শুকনো ধুলিপূর্ণ, তবে তো বাইকের ইঞ্জিনের ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা হয়ে যায়!
যাহোক, আমার যাত্রার প্রথম দিন থেকেই শুরু করি। আসলে ঢাকা থেকে বগালেকের উদ্দেশে আমার রওয়ানা করার কথা ছিলো ৫ মে। কিন্তু আমার বন্ধু শিশির চাচ্ছিলো আমি তার সঙ্গে ৪ মে রাতে কক্সবাজার যাই, সেখান থেকে পরে একসঙ্গে বগালেক। তবে শেষ পর্যন্ত বিশেষ কারণবশত সে যেতে পারলো না এবং ৬ মে দুপুর ২টায় আমাকে একাই যাত্রা শুরু করতে হলো।
Also read: সর্বশেষ ১২৫সিসি বাইক নিউজ বাংলাদেশ
কক্সবাজার থেকে লামা, আলীকদম, থানচি, বাড়পাড়া, নীলগিরি হয়ে রুমা বাজর পৌঁছাতে আমার ৪ ঘণ্টা লেগে যায়। সারা পথ জুড়েই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যর সমাহার মনোমুগ্ধকর, ওয়াসিফ ভাইকে ধন্যবাদ এমন পথের দিশা দেওয়ার জন্য। আর যেহেতু এর আগেও আমি বগালেক গিয়েছি, ফলে এবার আগে থেকেই সব যোগাযোগ করা ছিলো। সেখানে পৌঁছেই হোটেল রুম প্রস্তুত পেয়েছি।
যাহোক, সন্ধ্যা ৬টার পর এখানে আঁধার নেমে আসে। তাই গোসল সেরে খাবার খেয়ে ঘুমাতে চলে গেলাম। পরদিন সকাল ১০টায় বের হলাম বগালেকের উদ্দেশে। সেখানে যাওয়ার জন্য আর্মির নির্ধারিত কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়, সেসব অবশ্য আমাদের নিরাপত্তার জন্যই।
১. প্রথমেই আপনার নাম, ঠিকানা, পেশা ইত্যাদি রুমা বাজারে অবস্থিত আর্মি ক্যাম্পে লিপিবদ্ধ করতে হবে। ২. রুমা বাজার থেকে আপনাকে একজন স্থানীয় গাইড ভাড়া করতে হবে। সে আপনাকে পথ দেখিয়ে নিরাপদে জায়গামতো নিয়ে যাবে। এজন্য আপনাকে গাইডকে দিনপ্রতি ৫০০ টাকা দিতে হবে। আর আপনি যদি গাইড না নেন তবে আর্মির শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। ৩. বগালেক বা কেওক্রাড্ং থেকে রুমায় ফিরে এসে আবারো আর্মি ক্যাম্পে রিপোর্ট করতে হবে, যে আপনি সুস্থভাবে ফিরে এসেছেন। এই তিনটি নিয়ম অবশ্যই মেনে চলতে হবে। সেজন্য আমিও রুমা থেকে একজন গাইড ভাড়া নিয়েছিলাম।
এই যাত্রায় সবচেয়ে কঠিন কাজ ছিলো পিলিয়ন নিয়ে দশ বছরের পুরনো হোন্ডা সিজি১২৫ এ চড়ে পাহাড়ে চড়াটা! কিন্তু আমার আস্থা ছিলো আমি পারবো এবং আমি তা করেওছি। বগালেক ভ্রমণ শেষে ইচ্ছা ছিলো কেওক্রাডং ঘুরে আসবো। কিন্তু আর্মি অনুমতি দিলো না, তাই যাওয়াও হলো না।
যাহোক, এরপর আমরা রুমায় ফিরে আসি। আসলে বগালেকে থাকার কোনো কারণই নেই আমার। কারণ, আমি মূলত পথ চলতে পছন্দ করি, গন্তব্যে পৌঁছে বিশ্রাম নিতে না। দুপুর সাড়ে তিনটায় লাঞ্চ শেষ করে এবার ৪টার দিকে ঢাকার পথে যাত্রা শুরু করলাম। বান্দরবান থেকে কেরানিহাট, চট্টগ্রাম, ফেণী, কুমিল্লা হয়ে রাত ২টার দিকে ঢাকায় ফিরে আসি। বাইক ও বাইকারদের জন্য কিছু টিপস ১. প্রথমেই নিশ্চিত হয়ে নিন আপনার বাইক এমন অফরোডে চলার জন্য উপযুক্ত। ২. অফরোড টায়ার ব্যবহার করুন। ৩. হাল্কা ওজনের বাইক ব্যবহার করা সুবিধাজনক। ৪. প্রচুর পানি পান করুন। ৫. কখনোই ঘাবড়ে যাবেন না, সবসময় মাথা ঠাণ্ডা রাখুন। বিশ্বাস রাখুন, আপনি পারবেন।
হোন্ডা সিজি১২৫ নিয়ে বগালেকে ভ্রমণের ভিডিও দেখুন
–আবু সাইদ