হেলমেট ব্যবহার না করলে স্টার্ট হবে না মোটরসাইকেল
This page was last updated on 28-Jul-2024 04:43am , By Saleh Bangla
হেলমেট পরে মোটরসাইকেল চালানোর আইনি বাধ্যবাধকতা থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা মানা হয় না। জরিমানা ও মামলার ভয় দেখিয়েও প্রশাসন সফল হচ্ছে না এ ব্যাপারে। তাই হেলমেট ব্যবহারে বাধ্য করা যায় কিনা এমন চিন্তা থেকেই নতুন একটি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। যার নাম স্মার্ট বাইক সিস্টেম। এই প্রযুক্তিতে হেলমেট ব্যবহার না করলে মোটরসাইকেল স্টার্টই হবে না। এমনকি নেশাগ্রস্ত থাকালেও মোটরসাইকেল স্টার্ট হবে না।
এমন ব্যতিক্রমী উদ্ধাবনী আবিষ্কার করেছেন কুড়িগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র মতিউর রহমান রিয়াত। রিয়াত ইলেকট্রনিক্স বিভাগের সপ্তম সেমিস্টারের ছাত্র। বাড়ি দিনাজপুর জেলার বোচাগঞ্জ উপজেলার ছাতইল গ্রামে। বাবা ছাতইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও মা ঝর্ণা বেগম গৃহিণী। দু'ভাইয়ের মধ্যে রিয়াত বড়। ছোট ভাই ৯ম শ্রেণির ছাত্র। রিয়াত ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখেন দেশ ও জাতির জন্য কিছু করার। তাই পড়াশোনার পাশাপাশি চালিয়ে যান বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গবেষণা। ইতোমধ্যে ৬টি প্রজেক্টের সফল উদ্ভাবনীর জন্য জেলা ও বিভাগ পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ হবার কৃতিত্ব অর্জন করেছেন তিনি। সর্বশেষ ২০১৬ সালে উইন্ড পাওয়ার মিলের জন্য জাতীয় পর্যায়ে ৩য় স্থান অধিকার করেন তিনি। এবার তার আবিস্কার ‘স্মার্ট বাইক সিস্টেম’।
Motorcycle Helmet Care Tips – Do & Don’t
এই সিস্টেমে চালক হেলমেট না পরে কোনোভাবেই মোটরসাইকেল স্টার্ট করতে পারবে না। এমনকি কোনো আরোহী যদি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় মোটরসাইকেল চালাতে চায় তাহলে হেলমেটের সামনে একটি বায়ু সেন্সর বা ঘ্রাণ সংবেদনশীল সেন্সর ব্যবহার করা হয়েছে। এতে করে অ্যালকোহলের ঘ্রাণ পেলেই মোটরসাইকেলটি স্টার্ট নেবে না। প্রথম অবস্থায় স্টার্ট নিলেও কিছুক্ষণের মধ্যেই তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। এছাড়া সাময়িকভাবে মোটরসাইকেল চুরি হওয়া থেকেও রক্ষা করা যাবে।
Also Read: ICON Airform Helmet Price In BD- BikeBD
এ প্রযুক্তিতে মোটরসাইকেলের নির্দিষ্ট স্থানে একটি ডিভাইস বসানো থাকে। যা ওয়ারলেস নেটওয়ার্কের মাধ্যমে হেলমেটে বসানো অপর ডিভাইসের সঙ্গে সংযুক্ত করা থাকে। চালক ওই নির্দিষ্ট হেলমেট মাথায় না পরলে আরোহী তার বাইকটি চালু করতে পারবে না। ইচ্ছা কিংবা অনিচ্ছাকৃত কেউ যদি হেলমেট ছাড়া বাইক স্টার্ট করতে চায় তাহলে বাইক থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বারবার বলা হবে ‘বাইকটি সক্রিয় করতে অনুগ্রহ করে হেলমেট ব্যবহার করুন’। একই সঙ্গে ডিসপ্লেতেও লেখা উঠবে ‘হেলমেট ব্যবহার আপনাকে সুরক্ষিত রাখবে।’
বাইকের ডিভাইসটি বাইক থেকে বিদ্যুৎ শক্তি ব্যবহার করবে। হেলমেটের উপরে থাকা সোলার কোষ থেকে হেলমেটের ডিভাইসটি বিদ্যুৎ পাবে। এছাড়া পেনসিল ব্যাটারি ব্যবহার করেও হেলমেটের ডিভাইসটি সচল রাখা যায়। এই সিস্টেম তৈরি করতে রিয়াতের খরচ হয়েছে এক হাজার টাকা। আর পুরো সিস্টেমটি তৈরিতে সময় লেগেছে ৫ মাস। এ সিস্টেমের উন্নয়নের জন্য এর সঙ্গে আরও একটি সেন্সর ডিভাইস যুক্ত করার কাজ প্রায় শেষ পর্যায় রয়েছে রিয়াতের। কয়েকদিন যাবৎ একটি মোটরসাইকেলে পরীক্ষামূলক ভাবে চালিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যা পাননি জানিয়ে রিয়াত বলেন, এতে ক্ষতিকর কোনো কিছু নেই যা মানুষের শরিরের জন্য ক্ষতি বয়ে আনে।
কুড়িগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট অধ্যক্ষ ড. মো. নুরে আলম জানান, জেলা পর্যায়ে ‘স্কিলস কম্পিটিশন-২০১৭’ অনুষ্ঠিত হয় গত মাসে। সেখানে ১০টি উদ্ভাবিত প্রযুক্তির মধ্যে রিয়াতের উদ্ভাবিত ‘স্মার্ট বাইক সিস্টেম’ প্রথম স্থান অধিকার করেছে। প্রযুক্তির ব্যবহার সবখানেই ছড়িয়ে পড়েছে। রিয়াতের এই উদ্ভাবিত প্রযুক্তিটি মানুষকে তার সচেতন হবার পাশাপাশি দুর্ঘটনাও কমিয়ে আনতে ভূমিকা রাখাবে বলে তিনি জানান। কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান বলেন, জেলা থেকে বিভাগ এবং সর্বশেষে জাতীয় পর্যায়ে রিয়াতের উদ্ভাবিত স্মার্ট বাইক সিস্টেমের সফলতা কামনা করছি। ইতোমধ্যে জেলা পুলিশিং কমিউনিটির পক্ষ থেকে রিয়াতকে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মেনহাজুল আলম বলেন, ‘আমরা রিয়াতের উদ্ভাবিত ‘স্মার্ট বাইক সিস্টেম’ প্রযুক্তিটি দেখেছি। ২৮ অক্টোবর কমিউনিটি পুলিশিং ডে-তে তার উদ্ভাবিত সিস্টেমের জন্য তাকে কৃতী শিক্ষার্থী সম্মাননা পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। আমরা তার কাছ থেকে প্রজেক্টের ডিটেইল চেয়েছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে এ সিস্টেমের ডিটেইল পাঠানো হবে। তারা এটি কার্যকর মনে করলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবেন।’
তথ্যসূত্রঃ জাগোনিউজ২৪ ডট কম ও বাংলাট্রিবিউন