হিরো হাঙ্ক মোটরসাইকেল নিয়ে আমার কুয়াকাটা ট্যুর : রিভিউ মুন্না
This page was last updated on 03-Jul-2024 04:53pm , By Shuvo Bangla
আমরা সবাই ভাই ব্রাদার মিলে বাইক নিয়ে খুলনা-মংলা মহাসড়কে অবস্থিত নয়নাভিরাম চন্দ্রমহলে বাইক নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিলাম এই পহেলা বৈশাখে।ঐ দিনই রুপসা ব্রীজে আড্ডা দেওয়ার সময় আমরা ঈদে কোথায় ট্যুর দেওয়া যায় তা নিয়ে আলোচনা করছিলাম।একেক জন একেক জায়গায় যাওয়ার প্রস্তাব দিচ্ছিল যার বেশির ভাগ খুব বেশি হলে যাওয়া আসা মিলে ১২০-১৩০ কিমি হবে।মানে একদিনের ট্যুর আর কি! কিন্তু আমি চাচ্ছিলাম একটু বড় ট্যুর দিতে মানে যাওয়া আসায় অন্তত ৫০০ কিমির মত হবে আর কি! তাছাড়া এমন জায়গা যেতে চাইছিলাম যেখানে আসল এডভেঞ্চার খুজে পাব! তাই আমি কুয়াকাটা যাওয়ার প্রস্তাব দিলাম! প্রায় সাথে সাথেই সবাই রাজি হয়ে গেলো!
হাঙ্ক নিয়ে আমার কুয়াকাটা ট্যুর
শুরু হল কাউন্ট ডাউন!
তখনো প্রায় ৩ মাস বাকি কিন্তু অপেক্ষার পালা যেন শেষ হয়না! ১০-১২ টা বাইক ২৪-২৫ জন যাব এমন ই বিশাল প্লান আমাদের! কিন্তু পরবর্তিতে নানা কারনে সবাই সরে গেলো। রইলাম শুধু আমি আর এক বড় ভাই ইয়াসিন ভাই!
আমরা নাছোরবান্দা! সিদ্ধান্ত নিলাম ইনশাআল্লাহ যাবোই! যোগ্যতা থাকলে একা একাও মজা করা যায়!
দেখতে দেখতে ঈদ চলে আসল! কিছু কারনে এই ট্যুরের ব্যাপারটা অনেক গোপন রেখেছিলাম...যাই হোক ঈদের দিন সকালে আবহাওয়া খারাপ থাকলেও বিকালের দিকে ভালো হতে শুরু করে।মনটা আনন্দে নেচে ওঠে! ভাবলাম কাল শুষ্ক আবহাওয়ার ভিতর আরামসে বাইক টানব :-P। অবশেষে সেই কাঙ্খিত দিনটি এসে গেল! ফজরের নামাজ পড়ে আকাশের দিকে তাকিয়েই মনটা দমে গেলো! আকাশ কালো মেঘে ছাওয়া! মনটা একটু খারাপ হয়ে গেলেও সাথে সাথে সামলে নিলাম কারণ কিছু কারণে একটু জিদ ছিল তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে যত বৈরি আবহাওয়াই হোকনা কেন আল্লাহর রহমতে যাবোই!
যাই হোক আমার কলেজ ব্যাগে জামা কাপড় আগের দিনই গুছিয়ে রেখেছিলাম। ঠিক ৬:২৫ এর দিক আমি আর ইয়াসিন ভাই রওনা দিলাম আল্লাহর নাম নিয়ে।এদিকে পরিবেশ পুরো থম মেরে আছে! যে কোন সময় মূষল ধারে বৃষ্টি শুরু হবে! দেখতে দেখতে আমরা রুপসা সেতু ক্রস করলাম।এর পর প্রতিবেশী সুজন ভাইদের পাম্প থেকে ৯০০ টাকার অকটেন নিলাম সাথে আগের ২-২.৫ লিটার ছিল অর্থাৎ ট্যাঙ্ক এখন কানায় কানায় পূর্ন!
তেল ভরে রওনা দিলাম! কিন্তু কাটাখালির কাছা কাছি আসতেই মূষল ধারে বৃষ্টি শুরু! ঈদের জামা কাপড় গুলো মূহুর্তেই ভিজে চপচপে হয়ে গেলো! তাড়াতাড়ি একটা নিরাপদ জায়গায় বাইক পার্ক করে রেইনকোট পড়তে লাগলাম! কিন্তু আমি একটা চরম ভূল করেছিলাম! রেইন কোটের প্যান্ট নিতে ভূলে গিয়েছিলাম যার কারণে থ্রী কোয়ার্টার পড়ে নিই।কাপড় গুলো ব্যাগে ঢুকিয়ে রওনা দিতে দিতে ৭ টা বেজে গেল! ওহ হ্যা বৃষ্টি কিন্তু অবিরাম মূষল ধারে পড়ছে! কে জানত এই বৃষ্টি আমাদের পুরা সফরসঙ্গি হবে!
প্রচন্ড বৃষ্টির কারনে হেলমেটের ভেতর থেকে কিছুই দেখা যাচ্ছিলনা! নিরুপায় হয়ে তাই হেলমেটের গ্লাস খুলে রেখে চালাতে লাগলাম।বৃষ্টির প্রচন্ড ঝাপ্টা যেন তলোয়ারের মত চোখে মুখে বিধছিল! এদিকে বৃষ্টির কারণে রাস্তা হয়ে গিয়েছিল প্রচন্ড বিপজ্জনক! যারা বাগেরহাট মহাসড়কে গিয়েছেন তারা তো জানেন বাগেরহাট কেমন ঘন গাছপালা পূর্ন এলাকা! এদিকে প্রচন্ড বৈরি আবহাওয়ার কারণে চারদিকে ছিল সন্ধ্যার মতোই অন্ধকার! প্রচন্ড বৃষ্টির কারণে স্পিডও ৪৫-৫০ এর উপর তুলতে পারছিলাম না!
যাই হোক এই অবস্থাতেই আমরা ষাট গম্বুজ মসজিদ পার হলাম। এই আবহাওয়ায় এত সুন্দর মসজিদটা যেন আরো সুন্দর লাগছিল! কিন্তু সদা মানব কোলাহলে মুখরিত মসজিদ টা দেখে মনে হল অনেক দিন এই এলাকায় কেউ আসেনা! রাস্তায় শুধু আমরা দুই জন আর আমার হাংক! অবশেষে আর ১-১.৫ কিমি যেয়ে আমাদের অনিচ্ছা সত্তেও থামতে হল! কেননা মূষলধারে বৃষ্টির কারনে আমাদের জামা কাপড় রেইনকোট ভেদ করে ভিজে চুপচুপে হয়ে গিয়েছিল! তাই আমরা দুই জনে একটি চায়ের দোকানে থেমে জামা কাপড় চিপড়িয়ে আবার পড়ে নিলাম!
আর সিদ্ধান্ত নিলাম যে বেকুটিয়া ফেরী ঘাটের আগে আর থামবনা! আমরা আল্লাহর রহমতে ৮ টার ভিতর বেকুটিয়া ফেরী ঘাটে পৌছে গেলাম। আমি অবাক হলাম এই প্রচন্ড বৈরি আবহাওয়ায় মাত্র ১ ঘন্টায় স্পিড ৪৫-৫০ রেখে প্রায় ৬০ কিলোমিটার কিভাবে আসলাম! যাই হোক ঘাটে এসে দেখলাম ফেরী কেবল ওই পারে যাচ্ছে! মাঝ নদীতে! স্থানীয় কয়েক জন জানালো ফেরী এই পার থেকে ৮:৩০ এর সময় ছাড়বে! বিরক্ত হলাম এই ভেবে যে এত বড় একটা নদীতে কি করে একটা ফেরী চালায়! কচা নদী আকারে আসলেই ভীষন বড়! আমাদের প্লান ছিল ফেরীতে দেরি হলে আমরা ট্রলারে পার হব কিন্তু প্রচন্ড বৃষ্টির কারনে নদী ছিল উত্তাল তাই ট্রলার চলাচল বন্ধ ছিল।ফেরী যেহেতু আসতে অনেক দেরি তাই আমরা ঘাটের একটা হোটেল থেকে পরোটা, ডিমভাজি আর ডালভাজি দিয়ে পেট ভরে নাস্তা খেয়ে নিলাম।পেট ঠিক তো দুনিয়া ঠিক ।
ফেরী অবশেষে আসল আর ওপারে পৌছাতে পৌছাতে আমাদের ৯:১৫ বেজে গেল! ভাবছিলাম আবহাওয়া ভাল থাকলে এতক্ষনে হয়ত বরিশাল চলে যেতাম! যাই হোক ফেরী পার হয়ে ছুটলাম আবার! বৃষ্টির তখনো থামার নাম নেই! মূষলধারে পড়তেই আছে! আর পিরোজপুর পার হবার পর রাস্তা ভাল হলেও অনেক চিপা আর হটাৎ হটৎ ভয়ংকর সব মোড়! বৃষ্টির দিনে যা আরো বিপজ্জনক! অনেক মোড় এমনও আছে যার ওপাশে কি আছে কিছুই দেখা যায়না! আর তা ছাড়া বেয়াদব বাস ড্রাইভার গুলো হর্ন না দিয়েই মোড়ের ওপাশ থেকে দ্রুত গতিতে চলে আসে যার কারণে অনেক সতর্ক থাকতে হয়!
এবার এই বৃষ্টির ভিতরেও স্পিড ৬৫-৭০ এ রাখছিলাম। এর ভিতরেই রাজাপুর, ঝালকাঠি পার হয়ে ১০:৩০ এর দিক আমরা বরিশাল পৌছে গেলাম। ওহ হ্যা! আসার পথে আমরা নাম জানা না জানা অনেক ছোট বড় নদী পার হয়েছি।যার সবই ব্রীজ হয়ে গেছে! তাছাড়া আরো অগনিত খাল বিলের উপর নির্মিত স্টিলের ব্রীজ পার হয়েছি।বরিশাল রাস্তার দুই পাশের গাছগুলো দেখলে মনে হয় আমি যেন শত বছরের পুরোনো কোন এলাকা দিয়ে যাচ্ছি! এতোই ঘন আর বিশাল গাছ গুলো! ট্রিপ মিটারে দেখলাম ১১০ কিলো আসছি! তারমানে এখনো ডাবল পথ! বরিশালে যখন ই যাই তখন ই অবাক হই এই ভেবে যে একটা বিভাগে এত নদী নালা-খাল-বিল থাকে কি করে! আসলেই বরিশাল নদীর দেশ!
বরিশাল পৌছে আমরা না থেমে পটুয়াখালির রাস্তা ধরলাম।এদিকে বৃষ্টি আল্লাহর রহমতে থেমে গেল তাই তৃতীয় বারের মত একটি নিরাপদ স্থানে বাইক পার্ক করে জামা কাপড় নিংড়ে গামছা দিয়ে শরীর মুছে নিলাম।সাথে একটু শুকনো খাবার আর কোক খেয়ে নিলাম।বরিশাল পার হওয়ার সময় যে দুটি জিনিস সব চেয়ে ভাল লেগেছে তা হল অনেক সুন্দর একটা ব্রীজ(নাম ভূলে গেছি :-P) আর বরিশাল ইউনিভার্সিটি! বরিশাল ইউনিভার্সিটি এতোই সুন্দর যে আমি দূর থেকে কোন প্রাইভেট ভার্সিটি ভেবেছিলাম!
অবশেষে আমরা বাকেরগঞ্জ সহ আরো নাম না জানা অনেক গ্রাম, উপজেলা পার হয়ে পটুয়াখালি পৌছে গেলাম।পটুয়াখালির পর রাস্তা সেই মাপের! যেমন চওড়া তেমনই চারপাশে ঘন গাছপালায় ভরা! অর্থাৎ একজন বাইকারের জন্য লোভনীয় রাস্তা! কিন্তু বৃষ্টির কারণে রাস্তা ছিল অনেক ভেজা আর আকাশ তখনো ছিল কালো মেঘে ঢাকা! তারপরেও সতর্ক থেকে স্পিড এবার ৮০-৮৫ তে রাখলাম।কুয়াকাটা তখনো ৭০ কিমি দূর! এর ভিতর-ই আমরা পায়রা নদী সহ আরো দুটি নদী পার হলাম ফেরীতে।
একটা জিনিস অবাক করার বিষয় এই যে বেকুটিয়া নদী পার হবার অনেক পরে কুয়াকাটার ৪০-৫০ কিমি আগেই ৪ টা ফেরী! আর এর ভিতর শুধুই অবিরাম পথ চলা! যদিও আমরা অনেক ব্রীজ পার হয়েছি এর আগে বেশ আগে যেখানে ফেরী চলত।এক সময় তো ১৩ টা ফেরী পার হওয়া লাগত! কুয়াকাটার কিছু আগে একেবারে খালের মত ছোট একটা নদী আছে যার ব্রীজ নির্মান কাজ শেষ কিন্তু এখনো জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হইনি তাই এখনো সবাই ফেরীতে পারাপার হয়। কিন্তু আমরা ব্রিজের ফুটপথের উপর দিয়ে বাইক চালিয়ে পার হয়ে যাই যেহেতু ব্রিজের মুখ অনেক ডাল পালা দিয়ে আটকানো ছিলো ।
অবশেষে আমরা কুয়াকাটা বাস স্ট্যান্ডে পৌছে গেলাম।বাস স্ট্যান্ড এর একটু পরেই রাস্তাটা একটু উচু মত।উচু মত জায়গাটা পার হতেই নজরে পড়ল নীল জলরাশিতে পরিপূর্ন অপরুপ সুন্দর সাগর কন্যা কুয়কাটা সী-বিচ! একটানে একবারে বিচে যেয়ে থামলাম! ঘড়ির কাটায় তখন ১:৪৫ বাজে ট্রিপ মিটারে ২১২ কিমি। সমুদ্রের অপার সৌন্দর্য আমাদেরকে মোহাচ্ছন্ন করে দিল! অনেক্ষন কেউ কারো সাথে কথা বললাম না! মনে হচ্ছিল এই পরিবেশটা যেন আমাদের হাজার বছরের চেনা।আমাদের সাথে যেন অথৈ জলরাশির অনেক পুরোনো মিতালি! আমাদের কাকভেজা দীর্ঘ ভ্রমন ক্লান্তি যেন মূহুর্তেই উবে গেল!
অবশেষে ইয়াসিন ভাইয়ের ডাকে ঘোর ভাংলো। হ্যা,হোটেলে উঠতে হবে! এতক্ষন ভিজে জামা কাপড় পড়ে আছি একবার ঠান্ডা লেগে গেলে সব শেষ! সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ আমাকে যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছিল! কিন্তু অনেক কষ্টে তখন নিজের ঝাপ দেয়ার ইচ্ছাটাকে দমন করলাম তখনকার মত । এর পর আমরা পূর্ব নির্ধারিত হোটেল সৈকতে উঠলাম। পর্যাপ্ত সুবিধা সহ ছিম ছামের ভিতর ভালোই লাগল হোটেলটা। আমি একেবারে কোনার রুম নিলাম,একে তো ঘরটা আলোকময় আর সব চেয়ে বড় কথা জানালা দিয়ে তাকালেই চোখে পড়ে সী বিচ!
আমরা ব্যাগেজ রেখেই লাঞ্চ করে নিলাম স্থানীয় এক হোটেল থেকে।যেটা ছিল ট্যুরের একমাত্র বাজে অভিজ্ঞতা!যাই হোক আমরা লাঞ্চ করে ঘন্টাখানেক রেস্ট নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। কিছুক্ষন রেস্ট নেবার পর আমরা সী-বিচে যাওয়ার জন্য তৈরি হই।দুজনের-ই পড়নে থ্রী কোয়ার্টার আর গেঞ্জি । এবার আর বাইক নিলাম না, হেটেই সী-বিচে চলে গেলাম।কক্সবাজার, কুয়াকাটা, জামতলা সী-বিচ মিলিয়ে আমি প্রায় ১৪-১৫ বার সমুদ্র সৈকতে গিয়েছি কিন্তু প্রতিবার-ই মনে হয়েছে যেন এই প্রথম সী-বিচ দেখলাম!
আসলে এটাই মজা! এবার আর কোন বাধা মানলাম না! দুজনেই যেন ছেলেবেলায় ফিরে গেলাম! ইচ্ছমত ঝাপাঝাপি করলাম! পানি ছিটালাম! বহুদিন পর অনেক হাল্কা মনে হচ্ছিল নিজেকে! আসলে শহরের গৎবাধা জীবন আমাদেরকে যান্ত্রিক করে ফেলেছে যার থেকে হয়ত আমরা চিরমুক্তি পাবোনা কিন্তু মাঝে মাঝে প্রকৃতির সান্নিধ্য আমাদেরকে মহান আল্লাহতালার অপূর্ব সৃষ্টি দেখার সৌভাগ্য করে দেয় যা আমাদের একদিকে যেমন মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠত জানার তাওফিক করে দেয় তেমনি মানসিকতার আমূল পরবর্তন আনে।
যাই হোক এর পর আমাদের বয়সি কিছু ছেলেদের সাথে ফুটবল খেললাম।নিজেকে কিছু সময়ের জন্য ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ভাবাও শুরু করলাম । এর ভিতর আমি আবার হোটেলে ফিরে বাইক নিয়ে এসে পানির ভিতর ডন স্টাইলে কিছুক্ষন বাইক চালালাম আর আশে পাশের মানুষদের ফ্রি তে গোসল করালাম এর ভিতর এক ফটোগ্রাফার এসে ছবি তুলতে চাইল আমরাও বিভিন্ন স্টাইলে সেই মাপের কিছু ছবি তুললাম । এরই মাঝে মাগরিবের সময় হয়ে গেল নামাজ পড়ার জন্য হোটেলে ফেরার পথে দেখলাম এক হোটেলে কাকড়ার ফ্রাই বিক্রি হচ্ছে। আগে কোন দিন টেস্ট করা হয়নি তাই ভাবলাম এই এডভেঞ্চারে আরেকটু নতুনত্ন আনা যাক! আমি সবচেয়ে ছোট সাইজের তাই বেছে নিলাম।প্রথমে একটু অভক্তি লাগলেও পরে ভালোই লাগল! প্রায় চিংড়ির মতই লাগল।অনেক দিন পর আনন্দঘন দুই ঘন্টা কাটিয়ে হোটেলে ফিরতে ফিরতে ফিরতে আজান দিয়ে দিল। যদিও আকাশ কালো মেঘে ঢেকে থাকার কারণে সূর্যাস্ত দেখতে পারিনি বলে একটু খারাপ লাগছিলো।
মাগরিবের নামায পড়ে আবার বের হলাম! এবার স্থানীয় মার্কেটে ঢুকলাম। সমুদ্রের ঝিনুক দিয়ে কত পদের যে অলংকার একেকটা দোকানে দেখলে অবাক হতে হয়! মনে হয় যে সব কিনে ফেলি! কিন্তু কিনব কার জন্য? গিফট দেওয়ার তো কেউ নেই! মাকে ফোন দিলাম মাও ঐ গুলা পড়েনা। শেষমেষ কয়েকটা ব্রেসলেট কিনলাম। ইয়াসিন ভাইও তার বোন দের জন্য অনেক কিছু কিনলেন! এরপর আমরা আচাড় আর চাটনীর দোকানে ঢুকলাম! আম, তেতুল, জলপাই সহ কত পদের যে চাটনী পাওয়া যায় তার হিসেব নেই! আমি কয়েক প্যাকেট তেতুল আচাড় কিনলাম(এখন খাচ্ছি আর লিখছি :-D) সরি আপনাদের জিভে জল এনে দেওয়ার জন্য ।
Also Read: ঢাকা টু পতেঙ্গা, কক্সবাজার, টেকনাফ ট্যুর - ভ্রমন অভিজ্ঞতা লিখেছেন তানভীর
ইয়াসিন ভাইও বিভিন্ন প্রকার আচাড় কিনলেন। এরপর সোজা বিচে চলে গেলাম।কিছুক্ষন দুইজনে ঢেউয়ের ভিতরে হাটলাম।এরপর বিচের ছোট খাট ভাড়া নিলাম(আসল নাম ভূলে গেছি :-P) আরবী মাসের ২ তারিখ তার উপর আবার আকাশ কালো মেঘে ঢাকা তাই চাদ মামাকে দেখা যাচ্ছিলনা!তারপরেও সমুদ্র সৈকতের অন্ধকার রাত মনের ভিতর এক অদ্ভুত অনুভূতির সৃষ্টি করে যা বলে বা লিখে বোঝানো দায়! দুজনে পাশাপাশি আধশোয়া হয়ে সমুদ্রের মাতাল করা উত্তাল ঢেউ দেখছিলাম আর গল্প করছিলাম! এর ভিতরেই প্রায় দুই ঘন্টা কেটে গেল! কখন যে এত সময় চলে গেল টের-ই পেলাম না! অবশেষে উঠতে হল কেননা বীচে লোক কমতে শুরু করেছে।বেশি নির্জন স্থানে থাকা নিরাপদ না!
এরপর আমরা খাবার খেতে হোটেলে ঢুকলাম। অবশ্যই দুপুরের সেই জঘন্য হোটেল না! এই হোটেলটা বিকালেই দেখেছিলাম।বাইরে থেকে ভালোই লেগেছিল। দুজনে রুপচাদা মাছ, ডিমভাজা , সবজি, ডাল দিয়ে ভরপুর ভূরিভোজন সারলাম।বিশাল সেই রুপচাদার অস্থির টেস্ট এখনো জিভে লেগে আছে । এরপর রাত ১০:৩০ এর দিকে হোটেলে ফিরে আসলাম। হোটেলে দুজনে টিভি দেখতে দেখতে আর আড্ডা মারতে মারতে কখন যে রাত ১২ টা বেজে গেল খেয়াল-ই করিনি! ঘুমিয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।কেননা সূর্য উদয় দেখতে উঠতে হবে আর তাছাড়া বাসা থেকে ফোন আসছিল অতি জরুরী কারণে কাল খুলনায় ফিরতেই হবে।
ভোর ৫ টায় এলার্মের শব্দে ঘুম ভেংগে গেল! সাথে সাথে আবিষ্কার করলাম বাইরে মূষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে! সূর্য উদয় দেখার আশা প্রায় শেষ! যাই হোক ফজরের নামায পড়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম বৃষ্টি থামে কিনা! কিন্তু নাহ বৃষ্টি যেন সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে লাগল! অনেক ইচ্ছা ছিল ভোরে উঠে সব জায়গায় ঘুরে দেখব! যাই হোক এর ভিতরেই আমরা ব্যাগ গুছিয়ে ফেললাম। ৮ টার দিকেও যখন বৃষ্টির পরিমান কমলোনা তখন ভাবলাম আর দেরি করা যায়না! সমুদ্র এলাকা বলা যায়না একবার সব কিছু ডুবে গেলেই শেষ! তাড়াতাড়ি রেইনকোট পড়ে নাস্তা করতে বের হলাম। এত প্রবল বৃষ্টির ভিতর রেইনকোট পড়েও কোন লাভ হলনা! নিমিষেই ভিজে একাকার হয়ে গেলাম।যাই হোক দুজনে ৬ টি করে পরোটা, ২ টি করে ডিমভাজি আর ডালভাজি দিয়ে আরেকটি ঐতিহাসিক ভোজন পর্ব সারলাম ।
হোটেলে ফিরে গোসল করে রেডি হয়ে বের হতে হতে ৯:৩০ বেজে গেল।তখনো কিন্তু বৃষ্টি এতটুকুও কমেনি! সমুদ্র এলাকার বৃষ্টির দাপট সেদিন হাড়ে হাড়ে টের পেলাম! যাই হোক আল্লাহর নাম নিয়ে আরো ৬০০ টাকার তেল নিয়ে রওনা হলাম।এত বৃষ্টি হচ্ছিল যে চোখ ঠিকমত খোলা রাখতে পারছিলাম না! এরপরেও স্পিড ৬৫-৭০ রাখলাম।এর ভিতর ফেরী ছাড়া আর কোন বিরতি না নিয়ে ১২:৩০ এর দিকে বরিশাল পৌছে গেলাম।বরিশাল পৌছে ১৫-২০ মিনিটের একটা ব্রেক নিলাম। পথ এখনো প্রায় ১০৬-৭ কিমি বাকি আর সবচেয়ে বড় নদীটা। যাই হোক এবার একটানে প্রায় ৫০ কিমি পার হয়ে বেকুটিয়া ফেরী ঘাটে পৌছালাম।ততক্ষনে বৃষ্টি থেমে গেছে! তাই আমরা খুব দ্রুত-ই ট্রলারে কচা নদী পার হলাম। নদী পার হয়ে মনে হল এবার বাসার দিকে যাচ্ছি! পথ তখনো ৫৫-৫৬ কিমি বাকি! আর ব্রেক নিলাম না! একটানে পিরোজপুর-বাগেরহাট পার হয়ে রুপসা ব্রীজে এসে থামলাম ঠিক ৩ টার দিক। এরপর কিছুক্ষন ঘোরাফেরা করে আল্লাহর রহমতে নিরাপদে বাসায় ফিরে আসলাম।
(সমাপ্ত )
লেখক ঃ Hunk Munna