ছোট বাইক এ দূরপাল্লাঃ সিলেট ভ্রমন
This page was last updated on 06-Jul-2024 09:18am , By Shuvo Bangla
ভ্রমন এর প্রতি আকর্ষণ আর মটরসাইকেল এর প্রতি ভালোবাসা থেকে মূলত বাইক নিয়ে দূর যাত্রায় যাবার ইচ্ছে উদয় হয় । বন্ধু রুশোর সাথে বেশ আলাপ আলোচনাও হয় । কিন্তু মূল প্রতিবন্ধকতা ছিলো আমাদের বাইক । কারন আমার টিভিএস সেন্ট্রা ১০০ সিসি আর রুশোর ফ্রিডম ১০০ সিসি । তার ওপর আমার বাইক ৪৯০০০+ কিঃমিঃ চালানো হয়েছে । ফ্রিডম এর অবস্থাও ফ্রেশ নয় । যদিও আমরা ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা-টাঙ্গাইল সফর কিছুদিন আগেই শেষ করে এসেছি । তারপর ও কিছুটা আশঙ্কা কাজ করছিলো ।
ছোট বাইক এ দূরপাল্লাঃ সিলেট ভ্রমন
তবে প্রবল উৎসাহের কাছে আশঙ্কা বা প্রতিবন্ধকতা হার মানে । শেষ পর্যন্ত আমরা চার জন যাত্রা শুরু করি সিলেট এর পথে জুন এর ১৯ তারিখ । সিলেট ভ্রমন, খরচ বাঁচানোর উদ্দেশ্যে এবং যাত্রা আরো আনন্দময় করার জন্য আমরা চারজন যাই দুটো বাইক এ । খুব ভোরে আমাদের শুরু করার কথা । আমি আগের পুরো রাত উত্তেজনায় ঘুমাতে পারিনি । তাই সবার আগে নির্ধারিত জায়গায় আমিই যাই ।
তারপর এক এক করে সবাই আসে । রিফুয়েলিং করে রওনা দিতে দিতে প্রায় সকাল ৭ টা । যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার দিয়ে সকালের ফুরফুরে আবহাওয়ায় কিছুক্ষন চালাতেই রাত জাগার ক্লান্তি পুরোপুরি দূর হয়ে যায় । ঘুমন্ত শহর, দালান এর মাঝ দিয়ে হু হু করে ছুটে চলার অনুভুতিটা আলাদা । ডেমরা তে রুশোর ফ্রিডম এ সমস্যা দেখা দেয় । ও আগের দিন ড্রাইভ চেন পরিবর্তন করেছে ।
সম্ভবত নতুন চেইন টি সেট হতে সময় নিচ্ছিলো , তাই বাইক এ গতি ওঠানো যাচ্ছিলোনা ৪০-৪৫ এর বেশি । এত সকাল , কোন মিস্ত্রীর দোকান খোলা নেই । আল্লাহ্ ভরসা বলে রওনা দেয়া ছাড়া আর কোনো উপায় রইলোনা । সেভাবেই গেলাম নরসিংদী পর্যন্ত । আমরা আবার অনেক সহিষ্ণু প্রজাতির বাইকার । :P নরসিংদী তে নাস্তা করলাম একটা গ্রাম্য হোটেল এ । ডাল , ডিম সব কিছুতেই একটা গ্রামের তাজা গন্ধ ছিলো ।
আড্ডা , হাসি , বাইক আর আমাদের রাইডার ধরনের সাজগোজ এর কারনে অনেকেই আমাদের প্রতি আগ্রহ দেখায় এবং তাদের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটাই । সেখানে প্রায় আধা ঘন্টা কাটানোর পর আবার যাত্রা শুরু করি । কিছুক্ষন চালোনোর পর ফ্রিডম এর সমস্যা কেটে যায় । তারপর ৬০-৬৫ গতিতে চলতে থাকি । ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক এর রাস্তা বেশ ভালো ।
Also Read: ময়মনসিংহের দর্শনীয় স্থান । কিভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন, খরচ বিস্তারিত
আর সে সময় ট্রাফিক ও খুব বেশি ছিলো না । তাই আমরা বেশ আরাম আয়েশ করে চালিয়ে গেলাম । যেখানে ভালো লাগে থামি । ছবি তুলি , চা খাই , মজা করি । সম্পূর্ণ যাত্রা পথে আমরা প্রায় ৬ বার বিরতি দেই । কারন আমাদের বাইক এর রাইডিং পজিশন ভালো না হওয়ায় শরীরের বিশেষ কোন অংশ ব্যাথা হয়ে জাচ্ছিলো । ;) তাছাড়া দুর্বল , পুরনো ইঞ্জিন কে বিশ্রাম দেবার ও একটা ব্যাপার ছিলো । এভাবে সিলেট পৌঁছাতে প্রায় বিকেল ৪ টা হয়ে যায় ।
যেখানে আমাদের থাকার জায়গা ছিলো সেখানকার লোকজন এর সাথে কথোপকথন - - আপনারা কোথা থেকে আসছেন ? - ঢাকা থেকে । - হুন্ডা নিয়ে আসছেন ? - জী , হুন্ডা নিয়ে । - এই হুন্ডা নিয়ে ? ( চোখ গোল করে ) - হ্যাঁ , এই হুন্ডা নিয়ে । ক্যানো ভাই ? - না , এমনেই । তারপর এমন একটা দৃষ্টি দিয়ে চলে গেলো যে মনে হয় আমাদের পাগল টাইপ এর কিছু ঠাওরেছে । তা ভাবুক , কিছু এসে যায় না । সেদিন আবার সন্ধায় বের হয়ে মাজার গুলো জিয়ারত করলাম , শহর টা একটু ঘুরে দেখলাম । বের হবার সময় শুরু হলো বৃষ্টি যা আমাদের পরবর্তী দুই দিন এর সঙ্গি ছিলো । (বাদবাকি ২য় পর্বে )