মিঠামইন - অষ্টগ্রাম - নিকলি - শান্তির চর বাইক ভ্রমণ কাহিনী
This page was last updated on 28-Jul-2024 03:09pm , By Raihan Opu Bangla
বাইক ভ্রমণ এর প্ল্যান ছিল মঙ্গলবার (৪ আগস্ট) আমরা উচিতপুর যাবো। নেত্রকোনা জেলার মদন উপজেলার উচিতপুর হাওড়কে ইদানীং মিনি কক্সবাজার ডাকা হচ্ছে। তো, ভোর ৬ টায় ছয়টা বাইকে আমরা ১২জন রেডি। টিভিএস মেট্রো প্লাসে শাহীন ও সুমন, এপাচিতে সুব্রত ও হাসান, জিক্সার এসএফ এ জাহিদ ও জেকি, জিক্সারে ঝুমন ও জুয়েল, এক্সব্লেডে আমি সাকিব ও শান্ত এবং এফজেড ভি২ তে সোহান ও ফাহাদ।
মিঠামইন - অষ্টগ্রাম - নিকলি - শান্তির চর বাইক ভ্রমণ কাহিনী
এখানেই প্রথম টুইস্ট। বাইক স্টার্ট করার আগের টিম মিটিংয়ে ডেস্টিনেশন পাল্টে গেল। ঠিক করা হল আমরা কিশোরগঞ্জ যাব। সেখানের করিমগঞ্জ চামড়াবন্দর অথবা বালিখোলা ফেরিঘাট দিয়ে মিঠামইন-অষ্টগ্রামের সেই বিখ্যাত রাস্তায় ওঠার চেষ্টা করব। বেরিয়ে পড়লাম সাতটা নাগাদ। আমাদের বাইক ভ্রমণ স্টার্টিং পয়েন্ট পূর্বধলা। এইটা নেত্রকোনারই এক প্রান্তের উপজেলা। পূর্বধলা থেকে শ্যামগঞ্জ, সেখানে এক পেট্রল পাম্প থেকে তেল নিয়ে গৌরিপুর হয়ে উঠে পড়লাম কিশোরগঞ্জের রাস্তায়। যেখানে উঠলাম সেটার নাম কলতাপাড়া ৷ এখান থেকে কিশোরগঞ্জ সদর কম-বেশি ৮০ কিলোমিটার। ইতোমধ্যে তিনটি জেলা ক্রস করা হয়ে গেছে। নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জ।
কলতাপাড়া থেকে নান্দাইল চৌরাস্তা হয়ে ভৈরব বাইপাস পাশে রেখে বেলা পৌনে দশটায় পৌছালাম কিশোরগঞ্জ সদরে। ঢুকতে না ঢুকতেই আবিষ্কার করলাম আমার এক্সব্লেডের পেছনের টায়ারে লিক হয়েছে। বাইক কেনার পর নানা কারণে জেল দেইনি, এখন সেটারই ফল ভূগতে হচ্ছে আরকি। জেল দিয়ে লিক সারাতে গেল একঘন্টা সময়। এগারোটার দিকে আবার যাত্রা শুরু। এবার কিশোরগঞ্জ সদর থেকে করিমগঞ্জ।
করিমগঞ্জ থেকে রাস্তা দুইদিকে বেঁকে গেছে। ডানের রাস্তা গেছে বালিখোলা ফেরিঘাট, সোজা গেছে চামড়াবন্দর। দুইদিক দিয়েই মিঠামইন যাওয়া যায়। বালিখোলার রাস্তায় একটু এগিয়ে দেখলাম পুলিশ সব বাইক আটকে দিচ্ছে। কমপক্ষে একশ' পর্যটক বাইক দেখলাম আটকানো। অগত্যা ঘুরিয়ে গেলাম চামড়াবন্দর। চামড়াবন্দরে পুলিশি ঝামেলা নেই, সমস্যা হচ্ছে ট্রলার পাওয়া। মাঝারি আকারের এক ট্রলার মিঠামইন যাওয়া-আসার জন্য চাইল সাত হাজার। দামদর করতে করতে ঠেকল চার হাজার টাকায়। তখন আরেকটা খবর পেলাম। আমাদের সাথের একজনের এক পরিচিত এসআই মিঠামইনে পোস্টেড। তিনি ফোনে জানালেন, গতকালই এক এক্সিডেন্টে দুইজন মারা দিয়েছে। পুলিশ বাইকসহ কোনো ট্রলার মিঠামইন ভিড়তে দিচ্ছে না। তখন হতাশার ঠেলায় শুরু হল তর্কাতর্কি। কয়েকজন যাইতে চাচ্ছে সিলেট, কয়েকজন ভৈরব, কয়েকজন নিকলি আবার কয়েকজন চাচ্ছে আর কোথাও না গিয়ে ডিরেক্ট বাড়ি ফিরতে। এরমধ্যেই এক রাজশাহীর ভাইয়ের সাথে দেখা। তিনি জিক্সার এসএফ নিয়ে একাই এসেছেন চামড়াবন্দর। তিনিও আমাদের সাথে ভিড়ে গেলেন।
একঘন্টা আলোচনার পর ঠিক হল নিকলি যাব। নিকলি হচ্ছে কিশোরগঞ্জেরই আরেকটা হাওড়। চামড়াবন্দর থেকে যেতে লাগল এক ঘন্টা পঞ্চাশ মিনিট। রাস্তা বেশি না, মাত্র ৬০ কিলোমিটার কিন্তু প্রচন্ড সরু এবং প্রচুর ট্রাফিক। নিকলি পৌঁছে বেড়িবাঁধের শেষ মাথায় গিয়ে নৌকা ভাড়া করলাম। ঘাটের পাশেই ৩০ টাকা করে বাইক পার্কিং এর জায়গা আছে। সেখানে বাইক পার্ক করে চেপে বসলাম নৌকায়। গন্তব্য শান্তির চর। নিকলি থেকে ট্রলারে একঘন্টা লাগে। যাওয়া-আসা মিলিয়ে ভাড়া ১৫০০/-।
শান্তির চরের একটা জায়গা একদম রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্টের মতো সারি সারি গাছ পানিতে ডুবে আছে। এখানে ট্রলার ভেড়ালে আশেপাশে থেকে ডিঙিতে করে পেয়ারা, আম ইত্যাদি ফলমূল বিক্রি করতে আসে স্থানীয়রা। আমরা পেয়ারা নিয়েছিলাম, খেতেও ভালো। সেখানে গোসল টোসল করে নিকলি ফিরলাম মাগরিবের আজানের ঠিক সাথে সাথে। নিকলিতে খাওয়াদাওয়া শেষে নামলাম বাড়ির পথে। ফেরার পথে বৃষ্টির কবলে পড়লাম। তার ওপর সিঙ্গেল লেনের হাইওয়ে। আট-দশটা লাইট জ্বালিয়ে ময়মনসিংহ টু সিলেট-চট্টগ্রামের সব বাস এই হাইওয়ে দিয়েই যায়। যাইহোক, আস্তে-ধীরে চলতে চলতে বাড়ি ফিরলাম রাত বারোটায়।
মাঝখানে নান্দাইল চৌরাস্তার আগে আগে আমাদের একটা বাইক ছোট এক্সিডেন্ট করে। বাসের চাপ খেয়ে রাস্তার ধারে কাদায় নামতে বাধ্য হয়, পিলিয়ন লাফ দিয়ে নেমে পড়ে। যে চালাচ্ছিল তারও তেমন কিছু হয় নি। এইভাবেই শেষ হল আমাদের ১৮ ঘন্টাব্যাপী বাইক ভ্রমণ ও হাওড় ট্যুর। আমার বাইকের ওডোমিটার অনুযায়ী আমরা ২৮৮ কিলোমিটার কাভার করি সারাদিনে। ঢাকা থেকে যেভাবে যাবেনঃ বাইকে যেতে চাইলে প্রথমে ময়মনসিংহ যাবেন। ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ ১১৬ কিলোমিটার। শহরের শম্ভুগঞ্জ ব্রিজ পেরিয়ে শম্ভুগঞ্জ বাজারে ঢুকবেন।
এখান থেকে ডানে কিশোরগঞ্জ, বামে শেরপুর ও সোজা গেলে নেত্রকোনা। শম্ভুগঞ্জ থেকে কিশোরগঞ্জ শহর ৬৫ কিলোমিটার। শহরের ভেতর দিয়ে সোজা যাবেন একরামপুর পর্যন্ত। এখান থেকে ডানে নিকলির রাস্তা, সোজা গেলে করিমগঞ্জ চামড়াবন্দর। কিশোরগঞ্জ থেকে নিকলি ও চামড়াবন্দর যাথক্রমে ৩০ ও ২৫ কিলোমিটার। তবে হাওড়ে যখনই ট্রলারে উঠুন না কেন অবশ্যই সন্ধ্যা নামার আগে ঘাটে ফিরবেন কারণে এদিকে ডাকাতের উৎপাত রয়েছে।
লিখেছেনঃ সাকিব আব্দুল্লাহ
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।