বিডিমটরসাইক্লিস্ট এর মিশন সেন্টমারটিন দ্বীপ
This page was last updated on 07-Jul-2024 03:06am , By Shuvo Bangla
বিডিমটরসাইক্লিস্ট এর মিশন সেন্টমারটিন দ্বীপ
শীতার্ত কে বস্রদান, এতিম দের সাথে সময় কাটানো আর কিছু বেকারত্ব নিয়ে কাজ ও রক্তদান করমসুচি নিয়েই শুরু হয় বিডিমটরসাইক্লিস্ট এর যাত্রা। দেশজুড়ে তরুন মটোরসাইকেল চালোকদের সমন্নয়ে গঠিত হয় এই বিডিমটরসাইক্লিস্ট এর। বিভিন্ন ভাবে সমাজের সেবা প্রদান করাই এর মূল লক্ষ্য, কিন্তু এর পাশাপাশি দেশ কে সারাদুনিয়াতে পরিচিত করার জন্য নানান সময় নানান ভাবে পরিকল্পনা আনা হলেও আর্থিক অভাবে হয়ে উঠে না।
বিডিমটরসাইক্লিস্ট বাংলাদেশ এর একমাত্র কমিউনিটি যা ধীরেধীরে গড়ে উঠে দেশ এর সবচেয়ে বড় মটোরসাইকেল চালক দের কমিউনিটি হিসাবে, দেশজুরে ছোট বড় অনেক গুলো মটোরবাইকিং গ্রুপের সমন্বয় হয় এখানেই।
মটোরবাইকার দের উতসাহিত করতে বা তাদের কে মোটিভেট করার জন্য বিভিন্ন ইভেন্ট করা হয় আর তার মধ্যে মটোরসাইকেল নিয়ে ঘুরে বেরানো অন্যতম। বিডিএম এই পর্যন্ত বাংলাদেশ এর প্রায় সবগুলো বিভাগ এর ভ্রমন কার্যক্রম পরিচালনা করেছে, যার মাধ্যমে দেশ ও বিদেশের অনেক টুরিস্ট কে আক্রিষ্ট করেছে, সক্ষম হয়ে দেশকে পরিচয় করাতে। যদিও বা এই ট্যুর গুলোতে রাইডার রা তাদের নিজেদের খরচ নিজেরাই বহন করে তবুও কেউ কারপন্ন্য করেনা দেশ কে চেনাতে বা দেশ কে ভালোবাসতে। আমাদের এই ট্যুর গুলোতে আমরা খুবই ভালো সাপোর্ট পাই আমাদের স্থানীয় প্রশাসন ও বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগ থেকে। প্রায় প্রতিটা ট্যুর এর আগেই আমরা তাদেরকে আগাম বার্তা দিয়ে থাকি ইমেইল এর মাধ্যমে যার ভেতরে থাকে রাইডার এর ইনফরমেশন সহ ট্যুরকালীন মটোরসাইকেল এর তথ্য ও ট্যুর এর বিবরনি।
নানান সময় নানান দিকে ট্যুর করলেও সিলেট, রংপুর আর খাগড়াছড়ি ছিল অন্যতম।সিলেট আর খাগড়াছড়ি সবুজের কারনে সারা দুনিয়া ব্যাপি এর অনেক নাম, আর ভালো তামাক হবার কারনে অনেকেই চেনে রংপুর কে।
প্রতিটা ট্যুর এর আগেই রাইডার এর বাছাই পর্ব থাকে, আর সেখান থেকে বেছে নেয়া হয় জায়গা উপযোগী রাইডার দেরকে। সে সব দিকগুলি আমরা বিশেষ ভাবে লক্ষ্য করি তার মধ্যে সেল্ফ কনফিডেন্স, চালানোর সময় সীমা, লাইসেন্স ও বৈধ মটোরসাইকেল অন্যতম।
মিশন সেন্টমারটিন দ্বীপ
ঘটনা চক্রঃ
বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় ট্যুর নিয়ে কাজ করলেও, সেন্টমারটিন ট্যুর ছিল অত্যন্ত দুর্গম ও ভিন্ন, যেখানে সকল রাইডার ছিল অত্যন্ত অভিজ্ঞ, নির্ভীক ও পরিশ্রমী। সেন্টমারটিন ট্যুর এ টোটাল ক্রু ছিলো ১০ জন, তার মধ্যে ঢাকা থেকে রিয়াজ, রাশেদ, হাসান ও ইজরার, সোনারগা থেকে তুহীন, সিলেট থেকে ম্যাক, জাহিদ ও নাইম, কুমিল্লা থেকে ফয়সাল আর খাগড়াছড়ি থেকে সুজন।
ঢাকা থেকে আমরা চারজন রওনা হই ভোর ৬:৩০ মিনিটে, আর দাউদকান্দি ব্রিজের কাছে আমাদের সাথে যোগ হয় তুহিন, কুমিল্লা পোউছে যাই ৯:০০ টার ভিতরেই, সাথে যুক্ত হয় ফয়সাল ভাই। তারপর শুরু হয় অপেক্ষার পালা সিলেটি ভাইদের জন্য। কুমিল্লার নুরজাহান হোটেলের নাস্তা আর চা খেয়ে সময় কাটানোর পর ও মোন ছুটে চলে হাইওয়ের দিকে কিন্তু তখনও অপেক্ষার পালা চলতেই থাকে, অবশেষে দীর্ঘ ২ ঘণ্টা অপেক্ষার পর আমাদের সাথে যুক্ত হয় আমাদের সিলেট থেকে আগত ক্রু নাইম, জাহিদ ভাই ও ম্যাক ভাই, যারা এতক্ষন চালিয়ে আসছিল অত্যন্ত পাহাড়ি পথ আর আঁকাবাঁকা ভাঙ্গা রাস্তা দিয়ে।
এদের মধ্যে জাহিদ ভাই ও ম্যাক ভাই হল প্রবাসী বাঙ্গালী, বাংলাদেশ এর হাইওয়েতে এটাই তাদের প্রথম যাত্রা। যদিও তারা লন্ডন এর অনেক খ্যাতি সম্পন্ন গ্রুপের মেম্বার। যাইহোক কিছুটা দেরি হলেও স্বস্তির শ্বাস ছেরে শুরু করি চট্টগ্রাম এর উদ্দেশ্যে, আর সেখানে অপেক্ষায় আছে আমাদের সর্বকনিষ্ঠ টিম মেম্বার আর খাগড়াছড়ি এর চৌকস রাইডার সুজন। বিভিন্ন ছোট খাটো টি ব্রেক আর চাকায় হাওয়া দেওয়া সহ খুব ভালো ভাবেই পৌছে যাই বন্দর নগরী চট্টগ্রামে। “ক্ষুদার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়” আর এই কথার সম্পৃক্ততা সেখানে যেয়েই টের পেলাম, সবাই যাপিয়ে পরল জামান রেস্টুরেন্ট এর কাচ্চি বিরিয়ানি, চিকেন বিরিয়ানি আর বোরহানির উপর, পেট পূজা শেষ করতে করতেই আমাদের শেষ ক্রু যোগ দেয় আমাদের সাথে, আমরা রেডি হই পরবর্তী যাত্রা কক্সবাজার এর উদ্দেশ্যে।
যাত্রা পূর্বেই কিছুটা ব্রিফিং দেয়া হয় পরবর্তী রাস্তা ও এর ধরন নিয়ে। পটিয়া থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রাস্তা খুবই পিচ্ছিল থাকে কারন ওই একই রাস্তায় বহন করা হয় লবন এর ট্রাক, আর সেই লবন এর পানিই হয়ে দাড়ায় অনেক এক্সিডেন্ট এর কারন এই অকাল মৃত্যুতে ঝরে যায় হাজার তরুন প্রান। যাই হোক, কিছু নির্দেশিকা আর ব্রিফিং এর পর শুরু করি পরবর্তী যাত্রা। বহদ্দারহাট এর নতুন ফ্লাইওভার আর কর্ণফুলী ব্রীজ পার করেই উঠে যাই ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তায়। শুরু হয় আঁকাবাঁকা রাস্তা আর সবুজের খেলা।
উত্তরের বাতাস যেন সবাই গায়ের জ্যাকেট ভেদ করেই আসতে চায় খুব কাছাকাছি, এরই মাঝে আকাশ থেকে সূর্য সাহেব বিদায় নেয় আর তার সাথে কুয়াশা এসে আমাদের অপিরিচিত রাস্তাকে করে দেয় আরও বেশী অপিরিচিত ও রোমাঞ্চকর। ৫০ থেকে ৬০কিমি প্রতি ঘন্টায় চালাচ্ছি আমরা, কোথাও বালু আর কোথাও পিচ্ছিল রাস্তা আর কনকনে শীতে হাত যেন জমে আসছে, আর এরই মাঝে চলে এসেছি অনেকটা পথ, আর মাত্র ৬৭ কিলোমিটার বাকি থাকতেই আমরা চা পান করবার জন্য বিরিতি নেই ইনানী রেস্টুরেন্ট এ। গ্রীনলাইন আর সোহাগ এর বাস এর যাত্রীরা যেন খুব অবাক দৃষ্টিতেই তাকাচ্ছিল আমাদের দিকে, কেউ কেউ হাতে থাকা মুঠোফোন এ কিছু ছবিও তুলে নিল। চা পান শেষ করে শুরু করি ডেসটিনেশন কক্সবাজার এর উদ্দ্যেশ্যে।
কাঙ্ক্ষিত সময় এর অনেক পরেই আমরা পৌইছাই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সীবিচ কক্সবাজার এ। আর উপভোগ করি তার ছোঁয়া আর স্রোত এর তান। খানিকটা সময় সবাই যেন ব্যাস্ত ছিল নিজেকে নিয়ে নিজের সমুদ্রের সাথে। সমুদ্রের সাথে কিছুটা একান্ত সময় কাটানোর পর নেমে পরি হোটেল খুঁজে বের করার যুদ্ধ্যে। কিন্তু খুব ই অবাক হলাম যখন প্রথমেই ঢুকে গেলাম সী-প্যালেস হোটেল এ।
হোটেল এর ব্যাপারে আমাদের ছিল অনেক শর্ত। হোটেল হতে হবে আরামদায়ক, আমাদের জন্য ও আমাদের প্রান প্রিয় মোটরসাইকেল এর জন্য, আর সিকিউরিটি থাকতে হবে সরবচ্চ্য। ঠিক সব কিছুই যেন প্যাকেজ আকারে ওয়েইট করছিল আমাদের জন্য ওই সী-প্যালেস হোটেলের লবীতে। রিসিপ্সনে বসা সাইফুল সাহেব যেন খুব অবাক ভাবেই তাকিয়ে ছিল আমাদের দিকে, খুব উৎসাহ ও আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে ছিল আমাদের দিকে। আমি রিসিপ্সনে যেতেই সে আমাকে জিজ্ঞাসা করল আমরা কি ঢাকা থেকে এসেছি? আমরা কি বিডিমটরসাইক্লিস্ট এর? তার কথা শুনে আমি খুবই আনন্দিত হলাম আর বুঝলাম আমাদের এই ট্যুর এর সম্পরকে এখানে সবাই অবহিত, এখানে সবাই আমাদের কে চিনে। একে একে আমরা আবিস্কার করলাম এখানের অনেক এক্সিকিউটিব ই আছেন যারা আমাদের ফেসবুক এর ফ্যানপেজ এর সাবস্ক্রাইবার, মোটরসাইকেল প্রেমিক ও শুভাকাঙ্ক্ষী। আর এরই আদলে ও তাদের অত্যন্ত সৌহার্দপূর্ণ ব্যাবহারে ও বেশকিছু সুবিধা ও হোটেল ভারায় ৫০% এর ও বেশী ছার পাওয়াতে পিঠের ব্যাগ রাখার জায়গা হিসেবে বেছেই নিলাম।
এর এই ফাকেই অনেক অনেক মানুষের ইন্টারেস্ট আর না জানা তথ্য নিয়ে হাজির হল আমাদের মোটরসাইকেল এর কাছে আবার কেউবা এলো তাদের প্রডাক্ট এর টীভিসি করার জন্য আহবান করতে। যাই হোক অনেক বেশী টায়ার্ড আর ক্ষুদায় সবাই খুব বেশী ক্লান্ত হওয়ায় সবাই রাতের খাবার খেয়েই চলে যাই নিজ রুমে কিন্তু এতটা ক্লান্ত হবার পরও আমাদের ফয়সাল ভাই পরে থাকে তার মোবাইল আর ফেসবুক নিয়ে।
২৬ জানুয়ারি ২০১৪, খুব ভোর বেলাতেই সবাই ঘুম থেকে উঠি, হোটেলের সুস্বাধু বাফেট নাস্তা করেই সবাই ছুটার প্লান করি মেরীন ড্রাইভ ধরে ইনানী যাবার আর সাথে কিছু ফটোশূট করার। অসাধারন মেরীন ড্রাইভ যেনো সব রাইডার দের কাছেই এক অসাধারন রোমাঞ্চকর স্থান। নানাভাবে ফোটশূট আর ঘোরাঘুরি করে ফিরে যাই কলাতলি সী-বীচে আর রাতের খাবার এর জন্য বেছে নেই রেস্টুরেন্ট “কয়লা” কে। অসাধারন আতিথিয়তা আর চরম টেস্টি ফুড সবাই পেট পুরে খেয়ে নিলো, আর মিটিং এ ডিসিশন হোল আগামিকাল আমাদের ফাইনাল মিশন ও রেকর্ড গরার, যা আগে কেও করেনি, হয়ত কেউ কখনো চিন্তাই করেনি মোটরসাইকেল নিয়ে সেন্টমারটিন যাবার কথা। ডিসিশন ফাইনাল, টাইম ফিক্সড, মিশন লকড। রিপোর্ট টাইম দেয়া হোল ভোর ৭:০০টা।
মিশন প্রজেক্ট সেন্টমারটিন দ্বীপঃ
খুব ভোর বেলাতেই সবার ঘুম ভাঙল, হোটেল এর দেয়া নাস্তা পেটে নিয়েই যাত্রা শুরুর বেলায় খেয়াল করলাম আমাদের টীম মেম্বার তুহিন সেখানে উপস্থিত নেই, ওকে ওর রুমে যেয়ে ডাক দিতেই শুনতে পাই “ভাইয়া আমি সেন্টমারটিন যাবো না, আমি পানি কে অনেক ভয় পাই” খুব লক্ষ্য করে দেখলাম, এই ছেলেটা সমুদ্রের পারেও যায়নি, এ শুধুই বাইক চালানর জন্য এসেছে। যাইহোক কিছুটা সুবিধাও হোল, আমাদের হোটেল এর মালামাল রক্ষনাবেক্ষন দায়িত্ব্য তার উপড় চেপে দিয়ে মোটরবাইক স্টার্ট করি ৯ জন “টার্গেট সেন্টমারটিন অ্যান্ড রিটার্ন বাই ইভিনিং” রুট হিসেবে সিলেক্ট করি কক্সবাজার থেকে সাগরের পার ঘেঁষে মেরীনড্রাইভ ধরে, ইনানীর সামনে দিয়ে গর্জন বাগানের ভিতর দিয়ে টেকনাফ থেকে শাহপরীরর দ্বিপ হয়ে সেন্টমারটিন।
প্ল্যান মোতাবেক আমরা রওনা হই সেন্টমারটিন এর পথে মেরিনড্রাইভ হয়ে। রেসিং ট্রাক এর ন্যায় আকাবাকা ঢেউ আর হঠাত কালভারট আবার কোথাও রাস্তার উপরেই গর্জন গাছ নিয়ে বেশ উপভোগ করার মত রাস্তা। সম্পূর্ণ মেরিনড্রাইভ বেশ উপভোগ করে উঠলাম ময়লা আর আবর্জনায় ঘেরা টেকনাফ শহরের ভিতরের দিয়ে চলে গেলাম শাহপরির দ্বিপ এর রাস্তায়। এখানেই শুরু চ্যালেঞ্জ!
টেকনাফ থেকে প্রায় ৮কিমি মোটরসাইকেল চালানোর পর লবন ক্ষেত এর রাস্তায় যেয়ে দেখি সবই ঠিক আছে কিন্তু যেখানে রাস্তা থাকার কথা ঠিক সেখানেই ফাকা খোলা মাঠ। চোখ আকাশে উঠলো, মাথায় বাজ পরল, বুঝে উঠতে পারছিলাম না ঠিক কি করব। তাৎক্ষণিক ভাবে সেখানেই মোটোরসাইকেল ঘুরিয়ে ৫০০মিটার এর মাঝে এক বাজারে যেয়ে জিজ্ঞাসা করি শাহপরির জেটিতে যাবার কোন বিকল্প রাস্তা আছে কিনা? সবাই খুব অবাক ভীত ও সংকীর্ণ, স্থানীয়দের মতে আমাদের ব্যাবহার কৃত মোটরসাইকেল নিয়ে ঐ রাস্তায় যাওয়া কোনভাবেই সম্ভব নয়। তার পরেও আমরা সবাই আমাদের লক্ষ্যে যাবার জন্য প্রস্তুত, আমাদের ট্রলার এর সারেং ইসমাইল ও শাহপরীরদ্বীপে হাজীর। তখনও জানি না কীভাবে যাবো ঐ শাহপরীরদ্বীপের জেটিতে। লোকের দেখানো রাস্তা দিয়ে যেতে যেতেই পথে বাধা হয়ে দাড়ালো বিজিবি ৪২ ব্যাটেলিয়ান, আর আল্লাহপাকের অশেষ রহমতে তারা আমাদের এই মুভমেন্ট সম্পর্কে আগে থেকেই অবগত ছিলেন কক্সবাজার এর এসপি সাহেব এর মাধ্যমে (ধন্যবাদ চিটাগং রেঞ্জ পুলিশ, কক্সবাজার পুলিশ ও ৪২ বিজিবিকে)।
সেখান থেকে উপস্থিত কোম্পানি কমান্ডার সাহেব আমাদের কে কাচা মাটির রাস্তা দেখান সাথে এটাও বলে দেন “ এই রাস্তায় মোটরবাইক নিয়ে যাওয়া সম্ভব না ” কোন বাধাই যেন মানার নয়, কোন ভয় ই যেন পাবার নয়, এ যেন পাওয়ার অফ ফ্রীডম। দেখানো রাস্তায় চলা শুরু করে বুঝলাম আমাদের বাইকের চাকা এই মাটির রাস্তার জন্য পারফেক্ট নয়, তাও চলে যাচ্ছি বেশ যুদ্ধ করেই। পথি মধ্যে জাহিদ ভাই নামাজ এর জন্য ব্রেক নিলেন, আর আমি কিছুটা সামনে যেয়ে আরো বিস্মিত হই আর দেখি সেখানেই রাস্তা শেষ, যাবার আর কোন রাস্তাই নেই, আর যে জায়গাটায় বাইক নিয়ে দাড়িয়ে আছি সেই জায়গার নাম “জাইল্লা পাড়া”, নতুন রাস্তা বানানর জন্য মাটি কেটে পাহার গড়েছে সেখানকার ঠিকাদার।
এক জেলে কে রাস্তার কথা জিজ্ঞাসা করতেই সে যে পথা দেখালো তা ছিলো অসম্ভব আর শুনেই গাইয়ের লোম শিউড়ে উঠলো কিন্তু মোন তো আর মানে না, মানার কথাও না, ঘরীতে তখন বাড়োটার ও বেশী বাজে। কখন যাবো সেন্টমারটিন আর কখন ই বা ব্যাক করব কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না, আবার বুঝতেও চাইছি না। জেলের দেখানো রাস্তায় মানুষের বাসার ভিতর দিয়ে বালুর বস্তার উপর দিয়ে লাফ দিয়েই দেখি সোজা নাফ নদীর তীরে, মনে মনে ভাবলাম সব রাস্তায় চালানো হোল এই ট্যুরে শুধু এটাই বাকি ছিলো, অচেনা রাস্তায় ও নতুন অভিজ্ঞতায় এড হোল নদীর পার, অনেক পিচ্ছিল পাড় দিয়ে উঠলাম সাইক্লোন সেন্টার এর মাঝদিয়ে আর খুঁজে পেলাম জেটিতে যাবার রাস্তা আর দূর থেকেই দেখতে পাচ্ছিলাম সেই অপেক্ষয়মান ইসমাইল সাহেব কে।
বেশ স্বস্তির শ্বাস ছেড়ে মোটরবাইক নিয়ে ছুটে গেলাম জেটির শেষ প্রান্তে আর দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে ইসমাইল কে বললাম বাইকগুলোকে ট্রলার এ লোড করতে। আমাদের আয়রনম্যান নাইম আর ইসমাইল তার দুই সঙ্গী দেরকে সাথে নিয়ে একে একে ৯টা মটরবাইক লোড করলো, আর এটাই ছিলো ইসমাইলের ২৯ বছরের মাঝী জিবনে প্রথম মোটোরসাইকেল লোডিং এর ঘটনা আর সাক্ষী হোল আমাদের এই বিশ্ব রেকর্ড গড়ার।
সময় তখন দুপুর ২টা, নোঙ্গর উঠিয়ে যাত্রা শুরু হোল ৯টা মোটোরসাইকেল নিয়ে প্রথম ট্রলার এর, উদ্দেশ্য সেন্টমারটিন দ্বীপ, বাংলাদেশ এর সর্বশেষ ভুমি। উত্তরদিক থেকে প্রচণ্ড বাতাসে সমুদ্র ছিলো অনেক উত্তাল, সাথের কোন সঙ্গীকেই বুঝতে দিলাম না যে সাগর মেলা উত্তাল, আকাশে প্রখড় রোদ কিন্তু বড় বড় ঢেঊ এ আছড়ে পরছে আমাদের বহন করা কাঠের ট্রলারটা। খুব উৎসাহ নিয়ে ট্রালারের একেবারে সামনে দাড়িয়ে সবাইকে বেশ উৎসাহ দিচ্ছিলাম আর ভিতরে ফিল করছিলাম কোন রোলার কোস্টারের সামনে দাড়িয়ে ভ্রমন করার কথা। হঠাত এক বিশাল ঢেউ এ বারি খেয়ে প্রায় চার ফুট উপরে উঠে যাই, মনে হয়েছিলো এই বুঝি শেষ। কিন্তু বিজ্ঞানের সেই গতির সুত্রমতে একই জায়গায় ভূপাতিত হই আর মনে হয় জীবনটা দ্বিতীয় বারের মত ফিরে পেলাম।
বেশ থ্রিলের মধ্যে দিয়ে প্রায় ঘন্টা ৩ পর পৌছে গেলাম আমাদের স্বপ্নের মিশন সেন্টমারটিন দ্বীপে। হাজারো মানুষের ভীর ছিলো সেখানে সবাই খুব উৎসুক ভাবেই দেখতে লাগছিলো এমন কি দায়িত্ব রত কোস্টগারড ও নৌবাহিনীর ভাইজানরাও বুঝে উঠতে পারছিলেন না ঠিক কি হতে যাচ্ছে। উৎসাহিত জনতার আর আমাদের সকলের সহযোগিতায় আমরা আমাদের ভালোবাসার মোটরসাইকেল গুলোকে অত্যন্ত যত্ন করে সেন্টমারটিনের যেটিতে ৯ মোটরসাইকেল এর বহরের চাকা লাগে। মনে বাজে আনন্দের বীণ।
একে একে সব গুলো মোটরসাইকেল স্টার্ট করে চলে যাই বাজারের দিকে আর ততক্ষনে সূর্য সাহেব আবারো বিদায় নেন। এবার পরলাম আরো বড় চিন্তায়, খাওয়ার খাবার সময় সবাই ডিসিশন নিলো আজ সবাই এই সেন্টমারটিনেই রাত্রি যাপন করবে যদিও সাথে কাউরো কোন অতিরিক্ত কাপড় মোবাইলের চারজার বা প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই নেই তারপরেও উত্তাল সমুদ্রকে মাথায় রেখে সবাই এই সিদ্ধান্তেই অটল রইল। সে সুবাদে হোটেল হিসেবে বেছে নিলাম “নীল দিগন্ত” হোটেল কে।
পেট পূজার পর পর সবাই মিলে ছুটে চললাম যেটির পাশ দিয়ে নেমে চলা রাস্তায় সাগরপারে, বালুতে মোটরসাইকেল চালানোর অভিজ্ঞতা যাদের নাই তাদের কাছে ঐ পথে মোটোরসাইকেল চালানো এক কথায় অসম্ভব। একে একে ৯টা বাইক নিয়ে আমরা যখন সাগরপার দিয়ে যাচ্ছিলাম ঠিক তখনই লুকিং গ্লাসে খেয়াল করলাম শত শত শিশু কিশোর আমাদের মোটোরসাইকেল এর পিছনে দৌড়ে আসছে, খানিকক্ষণ দাঁড়ালাম, তাদের সাথে বেশকিছু ফটো তুল্লাম আর তাদের আবেগ বুঝার চেস্টা করলাম।
সেখান থেকে পর্যটন হোটেল এর রাস্তা ধরে নারিকেল বাগান এর ভিতর দিয়ে ধানক্ষেত এর মাঝদিয়ে পাড়ি জমাই আমাদের নেয়া হোটেল নীল দিগন্তে।
আমরাই প্রথম কোন গ্রুপ বা মোটোরসাইকেল কমিউনিটি যারা ৯টা মোটোরসাইকেল নিয়ে এই সাহসী অভিযান এ নেমেছি। নীল দিগন্তে অনেক বিদেশী পর্যটক ছিলেন যারা আমাদের দেখে অনেক উৎসাহিত হয়েছেন, শুনেছেন আমাদের যাত্রার গল্প অনেক আমাদের সাথে ছবি তুলেছেন আবার কেউ কেউ বাংলাদেশ এর বিভিন্ন জায়গা সম্পর্কে জানার পাশাপাশি আমাদের সাথে মোটোরসাইকেলে ট্যুর দেবার কথাও ব্যাক্ত করেছেন। অনেক গল্প সী-বিচে দৌড়ানো, আকশে তারা দেখা আর লাল কোড়ালের বারবিকিউ এর মাধ্যমে রাত্রী শেষ করে ভোর ৬টায় সেন্টমারটিন থেকে বিধায় নেই আমাদের এই ৯ মোটরসাইকেল বাহী নৌবহর।
বাড়ী ফেরাঃ
একদিনের এই সেন্টমারটিন ট্রিপের সমাপ্তিটা শেষ হল অনিশ্চয়তা, থ্রিল, এডভেঞ্চার, সাহসিকতা আর মায়াভরা দুইদিনে।